অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় canopy শব্দটা শিখেছিলাম। এর অর্থ হল চাঁদোয়া। আর পুরো ব্যাপারটার মানে বোঝার জন্য মোক্ষম উদাহরণ হল ঢাকা চট্টগ্রাম রোডের অনেকদূর পর্যন্ত চলে যাওয়া গাছের ছাউনি। রাস্তার দুই পাশ থেকে উঁচু গাছের ডালপালা রাস্তাকে ঢেকে রাখে। এই ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবার সময় ভালমত চোখে পড়েনি। কারণ আমার সিটটা সুবিধাজনক জায়গায় ছিল না। সম্ভবত শীতের জন্য গাছের পাতারও কমতি ছিল। এবার বেশ লম্বা সফর দিয়ে এলাম বাড়ি থেকে। ঢাকা শহর থেকে বেরিয়ে যেতে পারলে পথটা সুন্দর হয়ে যায়। আবার একটু পরপর মাইলফলক থাকে রাস্তায়, লেখা থাকে চট্টগ্রাম এত কিলোমিটার, একটু পর সংখ্যাটা এক দুই করে কমে আসে। আমি হিসাব করতে থাকি আর কতদূর বাকি। বছরে মাত্র একবারই যাওয়া হয় আমার। সেই যাওয়া নিয়েও ঘ্যানঘ্যানানির শেষ নেই। দুই একদিন পরই আমার কষ্ট লাগতে থাকে। হঠাৎ করেই প্রেসক্লাব, শাহবাগ অথবা বেইলি রোডের জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করতে শুরু করে যেন আমার প্রাণভোমরা কদম ফোয়ারার শলা বা এই জাতীয় আর কোথাও বিপদজনক ভঙ্গীতে লটকে আছে। হৃদয়ের এই ক্ষরণ আবার বাবা মা বা ছোটচাচা ছাড়া কাউকে দেখানোও যায়না। ধাড়ি মেয়ের ন্যাকামি মনে করবে অন্যেরা। তবে কিন্তু সবসময়ই একই ঘটনা হয়; যাওয়ার আগে যেতে ইচ্ছা করেনা আর ঢাকায় ফেরার আগে ইচ্ছা করে আরেকদিন থেকেই যাই না কেন।
প্রথম কয়েকদিন ছিলাম দাদাবাড়ি। একতলা ইটের বাড়ি। কিছু বছর আগেও ছিল একটা টিনের চালের বেড়ার ঘর। সেটাও আবার বহুকালের ঝড়ঝাপ্টার কারণে পুবদিকে মুখ করে মাটির সঙ্গে সত্তর ডিগ্রি কোণে হেলানো। এখন ছোটখাটো বিল্ডিং।ন আমাদের রুমটাই সবচেয়ে ভাল। এবার দেখলাম প্রায় সবার উঠানে ধান মাড়াই করার একটা বিচিত্র মেশিন। ছোটরাও কাজ করতে পারে। এবছর ধান উঠানোর পরপরই ঈদ হল। তবে এবার নাকি ফলন খুব খারাপ হয়েছে। গ্রামের পথে হাঁটতে কিন্তু খুব ভাল লাগে। দুই পাশে ক্ষেত, আর রাস্তার দুই ধারে একের পর এক শিম গাছ। একটু পরপর গাছির খোঁচায় গায়ে সিঁড়ি হয়ে যাওয়া খেজুর গাছ, মোচা ঝুলতে থাকা কলাগাছ, চালকুমড়ার বা লাউয়ের মাচা আর চিনতে না পারা বাকি সব গাছপালা তো আছেই। খানিকক্ষণ পরপর ঘুঘু আর শালিক নেচে যায়। গ্রামে যাওয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল পথে পথে ঘুরে বেড়ানো। ক্ষেতের শীষ থেকে ছিঁড়ে নেয়া আধপাকা ধান থেকে বের করা চাল আবার বিশেষ মজা। যদিও আমি জানি এটা বিলাসি মনগড়া স্বাদ, সত্যিকার কিছু না। তবে রাত নামার পর সময় কাটানোটা বড়ই কঠিন। রাত যেন কাটেই না, কাটেই না। সাড়ে দশটা বাজতেই শুয়ে পড়তে হয়। কিছু করার থাকে না। চাচাতো ভাইবোনেরা বেশি ছোট আর বড়রা বেশি বড়। কয়েকদিন পর নানাবাড়ি চলে গেলাম। এখানেও রান্নাঘর আর স্টোররুমের (মানে যেখানে লাকড়ি ধানের গোলা এসব জিনিস ছিল) অংশটা মিলিয়ে গিয়ে ওখানে একটা ইটের বাড়ি হচ্ছে, আপাতত অর্ধসমাপ্ত। ছাদের উপর বসে পেট ভরে রোদ খেয়েছি। নানাবাড়ির মূল ঘরটা হল মাটির। আমার সবসময়ই মনে হয় প্রবল বৃষ্টি হলে এই সাধের মাটির ঘর বিশাল একতাল কাদাতে পর্যবসিত হবে এবং ধরণীর বুকে লেপ্টে মিশে যাবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দেখি নিরাপদ আছে। আমাদের অঞ্চলে মাটির বাড়ি তেমন দেখা যায়না। এই বিষয়ে একটা জ্ঞান অর্জন করেছি আমি। তা হ্ল যেসব এলাকা মোটামুটি সাগরের কাছাকাছি সেসব জায়গার মাটি লবণাক্ত হওয়ার কারণে ঝরঝরে হয়, তাই মাটি দিয়ে ঘর বানানো হয় না। যাই হোক নানাবাড়িতে ভালই কাটলো। ফুপুর বাড়ি গেলাম, খালার বাড়ি গেলাম। “চান্দের গাড়ি”তে চড়লাম। সবই ভাল লেগেছে। আমি আবার প্রতিবারই পাঁচমিশালি কুচোমাছ, খইয়ের মোয়া, গজা এসব জিনিসের জন্য আহ্লাদ করি। ওখানে এগুলো অন্যরকম স্বাদের। এবার ছিল বেশ ঠান্ডা। মজার ব্যাপার হল ভোরে আর রাতে মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের করা। অনেক শীত পড়লেও এটা ঢাকায় পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
আমাদের ওদিকে কোথাও যাওয়া আসা একটা কঠিন কাজ। হেঁটে হেঁটে বড় রাস্তায় উঠতে হয়। তারপর অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় সি এন জি অথবা বিলুপ্তপ্রায় হলুদ বেবিট্যাক্সির জন্য। প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রী হলে একেকটা বাহনে কমপক্ষে পাঁচজন বসবে এটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক। তিনজন পেছনের সিটে আর বাকি দুই জন হল ড্রাইভারের দুইপাশে। তাছাড়া বাচ্চাকাচ্চা আর ব্যাগট্যাগ তো আছেই। আরেকটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, বাড়ি থেকে অনেক দূরে বাজার, কিন্তু মোটামুটি সবাই সবার পরিচিত। সবাই বিকালের দিকে বাজারে যায়। সপ্তাহে দুই দিন হল হাট আর বাকি দিন বাজার। হাট এবং বাজার। আমরা তো ঢাকা থেকে সরাসরি যাই দাদাবাড়ি। বেশ প্রত্যন্ত অঞ্চল। নতুন কেউ আসলেই লোকজনের কাজ হল হাঁ করে তাকিয়ে থাকা। এটা আমার একেবারেই পছন্দ না। তবে স্কুলে পড়ার সময় বাজারে নেমে আমার প্রথম কাজ ছিল পথচারী এবং তাকিয়ে থাকা লোকজনকে বুঝিয়ে দেয়া যে আমরা যে শুধু বাইরে থেকেই এসেছি তা না, আমরা হলাম ‘ঢাকা’র মানুষ। বিশেষ করে আমি ওই শহরের মেয়ে যেটা তাদের বেশিরভাগই কেবল টিভিতে দেখেছে বা বইপত্রে পড়েছে। তাই আমার দায়িত্ব ছিল জোরে জোরে আব্বুআম্মুর সাথে ‘শুদ্ধ’ ভাষায় কথা বলা। মাঝে মাঝে একটু চিন্তায় পড়ে যেতাম আচ্ছা ওরা ঠিকঠাক বুঝতে পারল তো যে আমি ঢাকা থেকে এসেছি, আবার অন্য কোন শহর মনে করল না তো। আমাকে আহামরি গোছের ভাবল তো। আমার একেবারে পিচ্চিকালে মেঘনা ব্রিজ ছিল না, ছিল ফেরি। টিভি ছিল আরো কম ঘরে। আর মোবাইল ফোনের বিস্তার তো ছিলই না। তাই তখন ঢাকা যে কিছুটা মূল্যবান ছিল একথা বলতে গলায় জোর দেয়া যায় বৈকি।
একটা কথা না বললেই না; গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়েরা অল্পবয়স থেকেই অনেক কাজকর্ম করতে শেখে। এটা একটা খুব ভাল বৈশিষ্ট্য। কিন্তু গ্রামের মানুষ সহজ সরল, তাদের মনটা কোমল কিংবা বেঁচে বর্তে দিন কাটিয়ে দিতে পারলেই তাদের মুখে স্বর্গীয় হাসি খেলা করে এসব পুস্তকি কথাবার্তা আমার কখনোই সত্যি মনে হয় না। ওখানে সংস্কার কুসংস্কার আর রীতিনীতির বেড়াজাল বরং একটু বেশিই স্থূল। রসিকতাগুলো অন্যরকম যেটা আমি কমই মাথায় ঢোকাতে পারি। এটিকেট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নারী পুরুষের ব্যবধান খালি চোখে ভালমত ধরা পড়ে। আর আশি ভাগ কথাবার্তার বিষয়বস্তু হল পারিবারিক ঘটনাবলী। আমি যে মানাতে পারি না এর কারণ শুধুমাত্র অনভ্যস্ততাও অবশ্য হতে পারে। যখন আলাপচারিতার মধ্যে বসে থাকি, কথা শুনতে শুনতে একসময় মনে হয় আমি আসলেই এখানকার মানুষ না। হতে পারে গ্রামের বাড়ি দেখতে অনেক সুন্দর হয়, মেঠো পথে দম নিয়ে হাঁটতে পারা যায়, প্রকৃতির স্পর্শ পাওয়া যায়, কিন্তু আমার জন্য আমার যন্ত্র শহরই ভাল। জন্মভুমির একটা মায়া আছেই। নইলে ডাস্টবিন, ট্রাফিক জ্যাম আর কালো ধোঁয়ার কাছে ফিরে আসতে এত ভাল লাগত?
Monday, December 31, 2007
Sunday, December 9, 2007
গ্রামভ্রমণ
প্রায় সপ্তাহ দুয়েক পর কুরবানির ঈদ। ঈদ আমার কাছে আহামরি কোন আনন্দের বিষয় না। তার উপর এবার আমাকে থাকতে হবে আমাদের গ্রামের বাড়িতে। দাদাবাড়িতে ঈদ আর ঈদের দুই দিন পর নানাবাড়িতে সফর। এই বাসৎরিক বেড়ানোটা একসময় ছিল খুবই আনন্দের। ঢাকায় ফিরে আসার আগে আমি কান্নাকাটি জুড়ে দিতাম। তখন উঠান দাপিয়ে খেলার সঙ্গী ছিল, খবরদারি করার জন্য কলেজে পড়া বড় আপুরা ছিল, সারাদিন মাঠেঘাটে চরে বেড়ানোর আগ্রহও ছিল। এখন সেই তুলনায় আমি নিঃসঙ্গ। বড়রা নিজের পরিবার গড়ে নিয়েছে, সমবয়সীদের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য নেই, আর ছোটরা একটু বেশিই ছোট। তবে সময়টা খারাপ কাটে না। গৎবাঁধা রোজনামচার একঘেয়েমি দূর হয়। এখন শীতকাল, তাই গ্রামে বেড়ানোটা বরং ভাল হবে। তবে একটা জিনিস খুব মিস করব; কচুরীপানার ফুল। আগে গ্রামে যাবার পথে রাস্তায় ধারে ধারে পুকুর ভরা কচুরীপানার ফুল দেখা যেত। আর আমি বেবিট্যাক্সি থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতাম। এই কয়েক বছরে ঈদটা সরে আসার কারণে ফুল ফোটার সময়টা ধরতে পারিনা। আর হয়ত পানা পুকুরের সংখ্যাও আগের মত নেই। দুঃখের ব্যাপার! আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোর তালিকা করতে চাইলে এক অথবা দুই নাম্বারে থাকবে জংলা পুকুর ভর্তি জ্বলজ্বলে কচুরীপানার ফুল। গাঢ় সবুজের পটভূমিতে হালকা বেগুনি রঙের স্থির আগুন। শুধু যে দেখতে সুন্দর তা না, দৃষ্টি ছাড়িয়ে যেন মনস্তত্ত্বে পৌঁছে যায়। জলজ উদ্ভিদ বলে চোখকাড়া উজ্জ্বল রঙ। এই ফুলটা আবার ছিঁড়ে আনলে বিবর্ণ দেখায়, তাছাড়া নেতিয়েও পড়ে একটু পর। এজন্য কখনো ঢাকার ফুলের দোকানে একে দেখা যায় না। আমার সবচেয়ে প্রিয় ফুল কোনটা একথা কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে না কেন? কচুরীপানা নিয়ে আদিখ্যেতা করার একটা সুযোগ পেতাম। বেলী তো কেবল বিপুল ভোটের ব্যাবধানে দ্বিতীয় নাম।
আমার দাদাবাড়ির গ্রামে ইলেকট্রিসিটির নামসর্বস্ব খুঁটি এখনো বসেনি। নিকট ভবিষ্যতেও পৌঁছার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং সন্ধ্যার পর হ্যারিকেনের রাজত্ব। আমি অনেকদিন পর জানতে পেরেছি যে গ্রামে একেকটা পরিবারের অংশকে বলতে হয় ঘর, আর অনেকগুলো ঘর নিয়ে একেকটা বাড়ি। তাই বাড়ি সাধারণত অনেক বড় হয়। এখানে ঘর বলতে রুম বুঝি, ওখানে বাসার পুরো জায়গাটা নিয়েই নাকি ঘর। একটু অদ্ভুত। আমাদের ‘বাড়ি’টা বেশ ছোট, অল্প কয়েকটা ‘ঘর’। তাই বেড়াতে গেলে আশেপাশের সবার সঙ্গে দেখা হয়, আদর যত্ন পাই। খুব ভাল লাগে তখন। চুপচাপ ধরণের। উপভোগ্য আরেকটা জিনিস হল ধোঁয়ার গন্ধ, পাতা পোড়ানোর গন্ধের সাথে অচেনা অন্য কিছু একটার মিশেল। খুব সুন্দর নেশা নেশা গন্ধটা। আমি নাক উঁচু করে খানিকটা খেয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। সেখানে চা হয় অন্যরকম। কোনটাতে গরুর দুধের তীব্র ঘ্রাণ, কোনটা আবার খুব কড়া মিষ্টি। সেই তুলনায় নানাবাড়ি বেশ বড়, মানুষও বেশি। ইলেকট্রিসিটি শেষ বিকাল থেকে রাতের খাবার সময় পর্যন্ত ছুটিতে থাকে। আমার স্বস্তিবোধটা কেন যেন এখানে কিছুটা কম। ছোটদের দলে ভিড়তে বাধে আর বড়দের আলাপের বিষয়বস্তু আমার ভাল লাগেনা। এই বয়সেও বার তের বছরের জ্যাঠা ছেলে ফটিকের মত নো ম্যান’স ল্যান্ডে পড়ে থাকি। সে যাই হোক, কুরবানির ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়া বাধ্যতামূলক। যেতে হয় সাধারণত ঈদের আগের দিন। আর কি ভয়ংকর জ্যাম রাস্তায়! সাত সকালে বাসের জন্য স্টপেজে গিয়ে অপেক্ষা করতেই থাকি করতেই থাকি। সেই বাস যদিও একসময় আসে, গন্তব্যে পৌঁছতে কখনো কখনো সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। গ্রামে গেলেই টিভি নিউজপেপার আর ইন্টারনেটের জগত থেকে বিচ্ছেদ। মোবাইলের নেটওয়ার্কও বেশিরভাগ সময় খুব দুর্বল থাকে। তখন হঠাৎ করেই বোদ্ধা হয়ে পড়ি, যেন এসব আমি খুব বুঝি, এসব ছাড়া আমার যেন চলেই না। সব মিলিয়ে খারাপ যায় না সময়টা। সপ্তাহ খানেক পরে যখন ঢাকায় ফিরে আসি সেটাও আবার একটা আনন্দ; Home, sweet home টাইপের। তাই আমি এখন মনে মনে রেডি হচ্ছি ঈদের জন্য।
আমার দাদাবাড়ির গ্রামে ইলেকট্রিসিটির নামসর্বস্ব খুঁটি এখনো বসেনি। নিকট ভবিষ্যতেও পৌঁছার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং সন্ধ্যার পর হ্যারিকেনের রাজত্ব। আমি অনেকদিন পর জানতে পেরেছি যে গ্রামে একেকটা পরিবারের অংশকে বলতে হয় ঘর, আর অনেকগুলো ঘর নিয়ে একেকটা বাড়ি। তাই বাড়ি সাধারণত অনেক বড় হয়। এখানে ঘর বলতে রুম বুঝি, ওখানে বাসার পুরো জায়গাটা নিয়েই নাকি ঘর। একটু অদ্ভুত। আমাদের ‘বাড়ি’টা বেশ ছোট, অল্প কয়েকটা ‘ঘর’। তাই বেড়াতে গেলে আশেপাশের সবার সঙ্গে দেখা হয়, আদর যত্ন পাই। খুব ভাল লাগে তখন। চুপচাপ ধরণের। উপভোগ্য আরেকটা জিনিস হল ধোঁয়ার গন্ধ, পাতা পোড়ানোর গন্ধের সাথে অচেনা অন্য কিছু একটার মিশেল। খুব সুন্দর নেশা নেশা গন্ধটা। আমি নাক উঁচু করে খানিকটা খেয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। সেখানে চা হয় অন্যরকম। কোনটাতে গরুর দুধের তীব্র ঘ্রাণ, কোনটা আবার খুব কড়া মিষ্টি। সেই তুলনায় নানাবাড়ি বেশ বড়, মানুষও বেশি। ইলেকট্রিসিটি শেষ বিকাল থেকে রাতের খাবার সময় পর্যন্ত ছুটিতে থাকে। আমার স্বস্তিবোধটা কেন যেন এখানে কিছুটা কম। ছোটদের দলে ভিড়তে বাধে আর বড়দের আলাপের বিষয়বস্তু আমার ভাল লাগেনা। এই বয়সেও বার তের বছরের জ্যাঠা ছেলে ফটিকের মত নো ম্যান’স ল্যান্ডে পড়ে থাকি। সে যাই হোক, কুরবানির ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়া বাধ্যতামূলক। যেতে হয় সাধারণত ঈদের আগের দিন। আর কি ভয়ংকর জ্যাম রাস্তায়! সাত সকালে বাসের জন্য স্টপেজে গিয়ে অপেক্ষা করতেই থাকি করতেই থাকি। সেই বাস যদিও একসময় আসে, গন্তব্যে পৌঁছতে কখনো কখনো সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। গ্রামে গেলেই টিভি নিউজপেপার আর ইন্টারনেটের জগত থেকে বিচ্ছেদ। মোবাইলের নেটওয়ার্কও বেশিরভাগ সময় খুব দুর্বল থাকে। তখন হঠাৎ করেই বোদ্ধা হয়ে পড়ি, যেন এসব আমি খুব বুঝি, এসব ছাড়া আমার যেন চলেই না। সব মিলিয়ে খারাপ যায় না সময়টা। সপ্তাহ খানেক পরে যখন ঢাকায় ফিরে আসি সেটাও আবার একটা আনন্দ; Home, sweet home টাইপের। তাই আমি এখন মনে মনে রেডি হচ্ছি ঈদের জন্য।
Friday, November 30, 2007
দেশ
সন্ধ্যায় বেইলি রোড থেকে রিকশা করে বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তায় বের হলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ট্রাফিক সিস্টেমের কি ভয়ঙ্কর অবস্থা। যে যেভাবে ইচ্ছা চালাচ্ছে। নিয়ম কানুন তো অনেকই আছে। কিন্তু সেটা মানাটা তো আর ঘাড়ে ধরে করানোর কাজ না। নিজের সিভিক সেন্স নিজেকেই বজায় রাখতে হয়। যখন বাসে থাকি, দেখি স্টপেজ আসার আগেই মানুষ বাস থেকে নেমে পড়ার জন্য পাগল। সেই স্টপেজও এমন কিছু দূরে না, সেখানে নেমে কেবল একটু হাঁটলেই গন্তব্যে চলে যাওয়া যায়। এটুকু কষ্টও করতে ইচ্ছা করে না কারো। এতই আরামের কাঙাল লোকজন! তুমুল গতিতে যখন গাড়ি চলে, একটা গাড়ির গতির সাথে দিকের সাথে অন্যান্য গাড়িগুলোর চলাচলও সম্পর্কিত। অথচ যাত্রীরা মাঝপথে বলে উঠে, থামান থামান নামব। তখন এক গাড়ির গায়ের উপর আরেক গাড়ির হামলে পড়ার যোগাড়! একটু গেলেই কিন্তু স্টপেজ। যদি গাড়ি না থামে, ড্রাইভারের দোষ; আর যদি এসবের জন্য কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলেও ড্রাইভারেরই দোষ। বড়ই আজব! আমাদের এমন এক দেশ! কত সমস্যা। আরেকটু ছোটবেলায় তো আমি কথায় কথায় বলতাম, আমি এই দেশে থাকব না। আমি নিউজিল্যান্ডে থাকব, অস্ট্রেলিয়াও খারাপ না। আমার আসলেই ইচ্ছা ছিল। কিছুটা বড় হবার পর থেকে অনেক মায়া লাগে। মনে হয় আমি অন্য দেশে যাব কেন, কেন থাকব অন্য দেশে। বাইরের দেশে কি এত আরাম করে প্রাণ খুলে গাল ভরে কথা বলা যায়? ফুচকা খাওয়া যায়? বারান্দায় দাঁড়ালে শাড়ি পরা পাঞ্জাবি পরা মানুষ দেখা যায়? ওখানে কি বাচ্চারা ভালভাবে বাংলা শিখতে পারে? কিজানি। যারা থাকে তাদের নানারকম অভিজ্ঞতা। কারো ভাল লাগে, কারো মন্দ লাগে। কেউ বলে একবার গেলে আর আসতে মন চায় না। আবার কেউ কেউ বলে অভ্যাস হয়ে যায়। কিন্তু নতুন করে ‘থাকা’ অভ্যাস করা কি কম ঝক্কি? হয়তবা এসব একেবারেই আমার ভাববাদী কথা। যখন কেউ চাকরি পায়না, পেলে চলার মত যথেষ্ট বেতন পায়না, বাজারে গেলে দামের আঁচে সেদ্ধ হয়, সমাজের লোকজন কটুকথা বলে তখন এত আহ্লাদ করে দেশে থাকার গোঁ ধরে রাখা যায় না। নাহয় কেনইবা পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে কেউ কেউ কোন কাজের নিশ্চয়তা ছাড়াই ভবিতব্যের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে ভিনদেশে যাত্রা করে। মনের আনন্দে নিশ্চয়ই না। কিন্তু যখন কোন স্বচ্ছল ব্যাক্তির কাছে ভবিষ্যতের প্ল্যানিং জানতে চাইলে ‘এই দেশে থেকে কি হবে’ জাতীয় আক্ষেপ শুনতে হয়, সেটা বড়ই কানে লাগে। কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই আমি আগে ভাগে ঠিক করে রাখব যে আমি এখানে থাকব না? আমি যে পড়াশোনা করার সুযোগ পেলাম যেটা কিনা সবার ভাগ্যে জোটে না, আমি যে নিজের মনস্তত্ত্বকে সুষম আকৃতি দেয়ার পরিবেশ পাচ্ছি যা কিনা এদেশের তথাকথিত সুবিধাবঞ্চিতরা পায়না, আমার কি উচিত না তাকে কাজে লাগানো? আর আমি যদি একজন সত্যিকারের “মানুষ” হতে পারি, সেই মানুষটাকে এখানেই রেখে দিই না কেন? যদি আমি এখানে ভালভাবে বেঁচে থাকতে পারি, কি দরকার পরের দুয়ারে কড়া নাড়ার? জানিনা এই স্পিরিট সারাজীবন ধরে রাখার মত সুখে আমি থাকতে পারব কিনা। এমন আশা আর স্বপ্ন তো আছেই, শুধু বাংলাদেশই আমার মধ্যে থাকবে না, আমিও বাংলাদেশের মধ্যেই থাকব।
Tuesday, November 20, 2007
দুর্যোগ
এবারের মত দুর্যোগ আমি আগে দেখিনি। এই সিডর নাকি স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহতম। এখন পর্যন্ত আমার জিবদ্দশায় বড়রকম ঘূর্ণিঝড় ছিল ১৯৯১ এর ২৯শে এপ্রিলে। সেটা প্রায় প্রতিবছর স্মরণ করা হয়। ছোট ছিলাম, ঢাকায়ই ছিলাম। তাই সেবার তেমন কিছু বুঝতে পারিনি, শুধু টিভিতে দশ নাম্বার মহাবিপদ সংকেতের ঘোষণা দেখাচ্ছিল বারবার। আর বাবা মাকে দেখেছিলাম গ্রামের বাড়ির জন্য চিন্তিত। এবার তো ঝড়ের দিন রাতের বেলা কি ভয়াবহ শোঁ শোঁ শব্দ বাতাসের! ইলেকট্রিসিটি চলে গিয়ে আর আসার নাম নেই পুরো শহরে। পানির অভাব। রাস্তায় রাস্তায় বেশকিছু বিলবোর্ড মোচড়ানো, গাছ উপড়ানো। এটা কেবল ঢাকার কথা, সিডর যেখানে কেবল শুঁড় বুলিয়ে গেছে। সত্যিকারের তান্ডব যেসব জায়গার উপর দিয়ে গেছে সেসবের কথা তো চিন্তা করা যায় না। ঝড়টার আয়তন বাংলাদেশের আয়তনের চেয়েও বড়। কোন একটা চরাঞ্চলে সাহায্যকারীরা গিয়ে দেখে এখানে সেখানে মৃতদেহ পড়ে আছে অনেক। কি বীভৎস! এসব কিছু মিলিয়েও নাকি ক্ষতির তীব্রতা কম, যেহেতু সুন্দরবনে ধাক্কা খেয়ে সিডরের তেজ কিছুটা কমে গিয়েছিল। টিভিতে খবর দেখতে বসলে অবস্থার নমুনা জেনে দেখে হতভম্ভ হয়ে যেতে হয়। হেলিকপ্টার থেকে একেকটা বস্তা ফেলা হয় আর সেটা নিয়ে টানাটানি করে কিছু মানুষ। হেলিকপ্টার এসে নামে আর ক্ষুধার্ত মানুষের একটা বিরাট দঙ্গল ছুটে আসে। স্বামীর হাতের মুঠি থেকে ছুটে হারিয়ে গেছে স্ত্রী, মায়ের বুক থেকে উড়ে গেছে ছোট্ট বাচ্চা। হঠাৎ করে যদি আমি দেখি আমার বাড়িঘর পরিবার পরিজন সবকিছু কয়েক নিমিষের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেছে আমার তখন কেমন লাগবে? আর যাদের জীবনে সত্যিকার ঘটে গেল তারা কি ভয়ংকরভাবে বেঁচে আছে! শত মাইল দূরে বসে আমি বা অন্য কেউ কিছুই অনুমান করতে পারব না। এমনিতেই রিলিফের ঘাটতি, তার মাঝে নিশ্চয়ই এর কিছু অংশ পকেটস্থ করার তালে থাকবে প্রভাবশালী কেউ কেউ। এটা সত্যি আমাদের দেশ অনেক ঘুষখোর আছে, অনেকে চাকরির বেতনে চলতে না পেরে অন্যায় করে। কিন্তু নিঃস্ব মানুষের প্রাপ্য চুরি করে তেলা মাথায় তেল দিতে গেলে অনেক অনেক বেশি নীচ হতে হয়। প্রকৃতিই বা এমন নিষ্ঠুর হবে কেন? আমাদের ভাঙাচোরা দেশটার কপালেই এত দুর্গতি হতে হবে? এক জায়গায় ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে জীবনের সমাপ্তি তো আরেক জায়গায় নদী ভাঙতে ভাঙতে বসতভিটা বিলীন। তার মাঝে যে কোন সময় হতে পারে বিরাট ভূমিকম্প। ধীরে ধীরে সাগরের পানির লেভেল উপরে উঠছে। হঠাৎ হয়ে যায় সিডর। পৃথিবী বুড়ো হচ্ছে, জরাগ্রস্ত হচ্ছে। কিছুদিন আগে একটা প্রতিবেদনে দেখাচ্ছিল কয়েকজন বিদেশি পরিবেশবিদ গবেষণা করতে এসে নাকি বিরূপ প্রকৃতির সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের খাপ খাইয়ে নেয়ার নমুনা দেখে মুগ্ধ। আর তারা হিসাব করে বের করেছে যে আমাদের দেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনার সামনে অনেক নাজুক। প্রতিবেদনের শেষদিকে বলা হল, আশা করা হচ্ছে যে তাদের সার্বিক রিপোর্ট জেনে যেসব উন্নত দেশ পরিবেশ ভারসাম্যহীনতার জন্য মূলত দায়ী তাদের টনক নড়বে। টনক নড়বে না হাতি! যেন পৃথিবীর বাকি অংশের মানুষদের নিয়ে তাদের কোনরকম মাথাব্যথাও আছে। সিডর কেটে যাবার পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্যের জন্য ফান্ড হচ্ছে দেশের সবখানে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রত্যেকেরই ভালবাসা আর সামর্থ্যের সম্মিলন ঘটবে সেখানে।
Wednesday, November 14, 2007
ভার্সিটি
সারা ক্যাম্পাসে কিছুদিন ধরে অনেক ছেলেমেয়ের আনাগোনা। কারণ ভর্তি ফরম এর কাজ চলছে। লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম কেনো, অতি সাবধানে ফিল আপ কর এবং ঠিকমত জমা দাও, এত সহজ না। টি এস সি কলাভবন সমেত সারা এলাকায় সাজ সাজ রব। প্রায়ই দেখা যায় বয়স্ক অভিভাবক বা ভর্তিচ্ছু কেউ একে ওকে জিজ্ঞেস করছে অমুক বা তমুক জায়গায় কিভাবে যেতে হবে। আমি তখন মনে মনে বলি, আরে সেইটা তো একটু ওইদিকে গেলেই হয়। আমি যখন নতুন ছিলাম, কি যে প্যাঁচানো লাগত। বিশাল ক্যাম্পাস, কলাভবনের তিন চারটা গেট, এত ডানে বাঁয়ে ঘুরেফিরে চিনে চিনে ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত যেতে যেতে তো ঘাম ছুটে যাবে। ওদের মনে হয় এখন ওই অবস্থা চলছে। কয়টা দিন পরে ওরাও হাতের তালুর মত পরিচিত বানিয়ে ফেলবে জায়গাটাকে। একদম প্রথমবার যখন জুনিয়র আসল, অর্থাৎ আমাদের পরের ব্যাচ, আমরা মোটেও খুশি হইনি। ইচ্ছা ছিল সারাজীবন ফার্স্টইয়ারে পাইয়ের মানের মত ধ্রুব হয়ে থাকব। তা আর হল কই! সেশনজটের ছোঁয়া লাগার পরও যেন হুটহাট করেই অনেকখানি শেষ করে ফেললাম। তাই নতুনদের কলকাকলি দেখি আর ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলি। কেন যে প্রথম বছরটা শেষ করলাম। তার পেছন পেছন বাকী বছরগুলোও কালের গর্ভে হারিয়ে যাবার জন্য পাল্লা দিয়েছে। এটা সত্যি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ব্যাপারটার মধ্যে এখনও অনেকখানি প্রেস্টিজ জড়িয়ে আছে; সে পাশ করে বেরুতে যত দেরিই লাগুক না কেন। আর সত্যি কথা বলতে গেলে প্রথম দিকে তো ডিপার্টমেন্ট আর ভার্সিটির নাম ভাঙিয়েই মুড নিতাম। পড়াশোনা চুলোয় যাক, নতুন পরিচিত লোকজন কতক্ষণে জানতে চাইবে কি পড়ি কোথায় পড়ি সেদিকে চেয়ে থাকতাম। বড়দের কেউ কেউ আবার বলে বসত, খুব ভাল খুব ভাল। তখন আর পায় কে। ধরেই নিতাম আমার জন্য তার সম্ভ্রমের পেয়ালা উপচে পড়ছে। এখন বুঝি এসব ভাবনা আসলে ছেলেমানুষি (আমার ভাব অবশ্য সবটা চলে যায়নি, যাবেও না)। আবার নতুন করে ভার্সিটি লাইফ শুরু করতে ইচ্ছা হয়। শুরু বলতে আমি একা পেছনে যাব না, অবশ্যই সময়টাকেও পিছিয়ে নিব। কিন্তু ফরম নিয়ে ব্যস্ত ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে একথাটা বলতেই আজকে দুই বন্ধু প্রবল আপত্তি করল। একজন বলল, আবার পড়তে আসার কোন দরকার নেই। আর আরেকজন বলল, মোটেই না, বড় যখন হয়েছ, আর ছোট হতে চাওয়ার কোন মানে নেই। আরে বাবা, বড় হয়েছি দেখেই তো ছোট হতে চাই। সামনে আছেটা কি? পাশ টাশ করে বের হয়ে যাব। ফ্যা ফ্যা করে ঘুরব চাকরির জন্য। সবাই বলবে, নো নো নো, এই যোগ্যতা? অভিজ্ঞতা আছে? নেই? তাহলে আপাতত সার্টিফিকেট ধোয়া পানি খেয়েই উঠে পড় বাছা, এখানে হবে না। “কি কর মা?” “জ্বী চাচা, মানে এখন ঠিক কিছু করি না।“ সঙ্গে সঙ্গে তার সম্ভ্রমের পেয়ালা শুকিয়ে ঠনঠন করতে থাকবে। বেকার শব্দটা কেমন যেন অবহেলা মেশানো। শুনলেই মনে হয় একজন পেটরোগা যুবক, বেলা বারোটায় ঘুম থেকে ওঠে আর একটু পরপরই খোঁচা খোঁচা দাড়িসমৃদ্ধ চিবুকখানা চুলকাতে চুলকাতে হাই তুলতে থাকে। কপাল ভাল, মেয়েদেরকে কেউ “বেকার” বলে না। তবে কয়েক বছর পর বলতে শুরু করবে আশা(!) করি। আমি কিন্তু কাউকে বেকার বলি না। ইংরেজিতে বরং ভাল শব্দ আছে, unemployed. মানে দাঁড়ায়, ‘অনিযুক্ত’ টাইপের কিছু একটা। পরিশেষে ইহাই প্রার্থনা, আমি, আমার বন্ধুরা এবং অন্যেরাও ভাল ভাল কাজ করার সুযোগ পাক... ... ...
ভার্সিটির শুরু ছিল, তাই একটা শেষ তো থাকবেই, কি আর করা। এই বাচ্চারা এত কষ্ট করে সারাটা দিন খরচ করে ফরমের গতি করল, এত প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিবে, নাহয় তাদের কেউ কেউ রেজিস্ট্র খাতায় আমাদের পরের পৃষ্ঠায় নাম লেখালোই।
ভার্সিটির শুরু ছিল, তাই একটা শেষ তো থাকবেই, কি আর করা। এই বাচ্চারা এত কষ্ট করে সারাটা দিন খরচ করে ফরমের গতি করল, এত প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিবে, নাহয় তাদের কেউ কেউ রেজিস্ট্র খাতায় আমাদের পরের পৃষ্ঠায় নাম লেখালোই।
Sunday, November 11, 2007
তত্ত্ববাদী
আমি মনে হয় আঁতেল টাইপের হয়ে যাচ্ছি। শুধু simile metaphor allegory এসব চলে আসে মাথায়। আজকে টেবিলের উপর এক ঠোঙা চিনাবাদাম দেখেও আমার মধ্যে উচ্চমার্গীয় তত্ত্বের নাচানাচি শুরু হল। সেদিন এক বন্ধু বাদাম কিনেছিল। বেচারীর দুই টাকার আধমুঠো বাদামের মধ্যে নষ্টই গেল কয়েকটা। তার উপর আবার আমার হাভাতে চোখের জুলজুলে চাহনি উপেক্ষা করতে না পেরে দানছত্রও করতে হয়েছে। তাই কাল উদাস হয়ে বাবাকে বলেছিলাম বাদামে কত ভিটামিন অথচ কতদিন বাদাম খাই না! আজকে দেখি হাজির। আমার তো মনেই ছিল না, তাঁর ঠিকই মনে ছিল। ভাবলাম, বাবা মাকে কত কষ্ট দিই, তাদের সন্তুষ্টির জন্য জীবনে কিছু করতে পারব তো? সঙ্গে খানিকটা ভাবের কথাও জুড়ে গেল। মনে হল, পরিবার যেন বাদামের মত। বাবা মা উপরের দুই পরত খোসা হয়ে ভেতরের আমাদেরকে সারাক্ষণই ঘিরে রাখেন। আর আমরা বেশিরভাগ সময়েই প্রয়োজনেরটা রেখে আঙ্গুলে ভেঙে হাতে কচলে বাকি সবটা ফেলে দিই। তবে এই তুলনাটা মোটেও যথাযথ হয়নি। আমার আঁতলামি বোঝানোর জন্য উল্লেখ করলাম।
অন্তরীক্ষ
নতুন একটা গ্রহ পাওয়া গেছে। গ্রহটা আমাদের সৌরজগতের বাইরে। পৃথিবী থেকে দূরত্ব সম্ভবত ৪১ আলোকবর্ষ। কিছুদিন পরপরই নতুন নতুন গ্রহ নক্ষত্র ধূমকেতু এটা সেটার সন্ধান পাওয়া যায়। তাতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কোন প্রভাব পড়ে না। মহাবিশ্বের কাছে আমরা কত ক্ষুদ্র! রাতের আকাশের দিকে তাকালে শহরে তেমন কিছুই চোখে পড়ে না। তবে গ্রামের দিকে যেখানে ইলেকট্রিসিটি নেই সেখানে অগুণতি তারা দেখতে পাওয়া যায়। কালপুরুষ, লুব্ধক, সপ্তর্ষিমন্ডল এসব খুঁজে দেখতে খুব উৎসাহ পেয়ে বসে। শুয়ে থেকে এমনভাবে যদি আকাশের দিকে তাকানো যায় যেন দৃষ্টির সীমানায় আকাশ ছাড়া আর কোন কিছু না আসে, তখন কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়। মনে হয় আমি পৃথিবীর চূড়ায় খুব নাজুক একটা জায়গায় আছি। একটুখানি নড়াচড়া করলেই টাল খেয়ে গোলাকার জিনিসটার গা বেয়ে গড়াতে গড়াতে অজানা অসীমে বিলুপ্ত হয়ে যাব। সেই সাথে নিজেকে অতি তুচ্ছও মনে হয়। হয়ত এসবের জন্যই প্রকৃতির সাথে মানুষের এত মাখামাখি। অধরা আকাশ, বিশাল নদী, বিরাট পাহাড় বা কূলহারা সমুদ্রের সামনে একধরণের হাহাকারের মত লাগে। মনে হয় I am nothing but an insignificant human being! আমার ধারণা এরকম সময়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও খারাপ ভাবনা দূরে সরে যায়। নিজেকেই যেখানে ক্ষুদ্র লাগে সেখানে নিজের ভেতরকার ক্ষুদ্রতা আরও ক্ষুদ্র হয়ে পড়ে।
Friday, November 9, 2007
বধ
আমার ক্লাসমেট খাদিজার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী চলে গেল কয়েক মাস আগে। সম্ভবত জুলাইতে। হলে থাকত খাদিজা। আপাদমস্তক কালো বোরকায় ঢাকা। আমার কাছের কেউ ছিল না। তবু যেদিন ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ওর মৃত্যুর খবর পাই, অসহায় একটা অনুভূতি হয়েছিল। জলজ্যান্ত একটা মেয়ে হঠাৎ নাই হয়ে গেল, সেটাও কিনা নিজের হাতে নিজের মৃত্যু। ওর আত্মহত্যার কারণ জানতে পারিনি। কেউ কেউ বলেছে প্রেমঘটিত। ওর মোবাইলের সিম নাকি ভেঙ্গে টুকরা করা, রুমে এমন কোন নিশানা পাওয়া যায়নি যেখান থেকে কোন দ্বিতীয় ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু জানা যায়। ইত্যাদি ইত্যাদি। এর পরপর ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা শোকসভা জাতীয় আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আমাদের টিচাররা অনেক কথাই বললেন। শাহনাজ সিনহা ম্যাম বললেন নিজেদের সমস্যা শেয়ার করতে, কারণ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত হল চরমতম ভুল। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যারের একটা কথা মনে আছে। একবার হলের এক মেয়ে নাকি প্রেমিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে আত্মহত্যা করেছিল। স্যার যখন খবর পেয়ে হাসপাতালে যান মেয়েটা তখন মৃত। মেয়েটার বাবার হতভম্ভ চোখের সামনে এক করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তার কিছু বছর পর ওই মেয়ের প্রেমিককে স্যার দেখেন নিউমার্কেটের সামনে। সঙ্গে লোকটার স্ত্রী আর সন্তান। অর্থাৎ সারমর্ম হল একটা অন্য মানুষের জন্য জীবনটাকে ধ্বংস করে দিয়ে কি লাভ হল? পুরোটুকুই তো ক্ষতি, নিজের আর নিজের পরিবারের। রোকেয়া হলে একটা সেমিনার হয়েছিল মেয়েদেরকে জন্য, আত্মহত্যার প্রবণতার খারাপ দিক নিয়ে। মেয়েদেরকে নিয়ে যেমন সেমিনার হল, সমাজ সংসার পরিবারের লোকদেরকে নিয়ে কি তেমনটা হবে? তাদেরকে কি কেউ বোঝাবে যে জীবনে অনেক বড় কোন ভুল করে বসা কোন মেয়ের উপর ক্রোধ নিয়ে চড়াও হবার আগে অন্তত তাকে মানসিকভাবে স্থির হওয়ার সময়টা হলেও পরিবারের দেয়া উচিত? আর পাড়াপ্রতিবেশীদেরকে কি কেউ জানাবে যে কাউকে অপবাদ দিয়ে নিজেকে খুব উঁচু জায়গায় তোলা যায় না? কিংবা জানালে বা বোঝালে আদৌ কি কেউ কর্ণপাত করবে? খবরের কাগজে, খবরের কাগজের বাইরে কত কত আত্মহত্যা ঘটে রোজ রোজ! মফস্বল আর গ্রামের দিকে তো বাচ্চা বয়সী মেয়েরা পর্যুদস্ত হয়ে অহরহ মরে গিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। কে খবর রাখে। আমার ধারণা, এভাবে নিজের হাতে মৃত্যুকূপ সাজালেও মরার আগ মুহূর্তে মানুষের মধ্যে তীব্রভাবে একটা বাঁচার আকুতি জন্মায়। কিন্তু তখন ফেরত আসার কোন উপায় থাকে না। কারণ মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় সবার চোখের আড়ালে। আমরা কি অন্যের দোষত্রুটি বের করতে গলদঘর্ম না হয়ে বরং সহানুভূতিশীল হতে পারি না? আর আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারি না যে তুমি ভুল বুঝছ? অন্যের অপরাধের জন্য, বা যা ঘটেছে তার জন্য আমরা তোমার দিকে আঙ্গুল তুলে তোমাকে ঘৃণা করছি না।
Wednesday, November 7, 2007
মন
কিছুদিন আগে www.natural7wonders.com এ সুন্দরবন আর কক্সবাজারকে ভোট করলাম। পৃথিবীর সাতটা প্রাকৃতিক এলাকা বাছাই করা হবে সৌন্দর্যের ভিত্তিতে। এক নাম্বারে দিলাম সুন্দরবন আর দুই নাম্বারে কক্সবাজার। আমি এই দুইটা জায়গার কোনটাই এখনো সরাসরি দেখিনি। টিভি আর ছবিতেই যতটুকু দেখা। তবে কথা হচ্ছে বাংলাদেশের বাইরের অন্যান্য জায়গা তো আরো অদেখা। সেক্ষেত্রে নিজের দেশকে ভোট করাটাই বেটার মনে হল। একটা সাগর আর আরেকটা অরণ্য। বেশ বিপরীত। ভারতের ‘সানন্দা’ পত্রিকায় আগে দেখতাম ওদের কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিতে গেলে একটা প্রশ্ন থাকত, আপনার কোনটা বেশি ভাল লাগে, সাগর না পাহাড়? এই প্রশ্নটা আমার বেশ পছন্দ। অনেক সময়ই দেখেছি এটা একটা উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন। সাগর প্রিয় না পাহাড়। আমি নিজের কাছে উত্তর দিলে সবসময় বলি পাহাড়। দুইটার যেকোন একটা জায়গায় যাবার সুযোগ পেলে আমি পাহাড়ী কোন জায়গাই বাছাই করব। আর যেখানে ইচ্ছা যেতে পারলে প্রথমেই বান্দরবন। সাগর আর পাহাড় নিয়ে এই প্রশ্নটা কেন করা হয় জানিনা। আমার ধরে নিতে ভাল লাগে যে এর মধ্যে মানুষের প্রকৃতি বা ব্যক্তিত্বের কোন একটা দিক ফুটে ওঠে। বিভিন্ন আপাত অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, কুইজ বা কোন ছবির বিশ্লেষণ থেকে ব্যক্তিত্ব ব্যাখ্যা করা ব্যাপারটার প্রতি আমার আকর্ষণ আছে। হতে পারে এটা পুরোপুরি সঠিক হয়না। তারপরও এধরণের কিছু পেলে আমি সিরিয়াসলি সমাধান করি। তবে ফলাফলের মধ্যে চরিত্রের শুধু ভাল ভাল জিনিসগুলো না দিয়ে সবমিলিয়েই দেয়া উচিত। একবার দেখেছিলাম হাতের লেখার ধরণ দেখে মানুষ বোঝার উপায়। তো শেষ করার পর রেজাল্ট থেকে জানলাম আমিসহ সকলেই আসলে গুণের আধার। অনেকটা এরকম, যার লেখা বাম দিকে হেলানো সে মহৎ আর যার বাম দিকে হেলানো সে উদার। খুবই হতাশ হয়েছিলাম। সাইকোলজি খুব interesting একটা বিষয়। এবং সেই সাথে খুব confusing ও। মনোবিজ্ঞানকে একবাক্যে বিজ্ঞান বলাতে আমার সামান্য আপত্তি আছে। মানুষের মনস্তত্ত্বকে মনে হয় না বিজ্ঞানের মত প্লাস মাইনাসে বসিয়ে বা সূত্রে সাজিয়ে ব্যাখ্যা করে ফেলা যায়। আরেকটা মজার জিনিস আছে, রাশি। বিশ্বাস না করলেও মনোযোগ আমি ঠিকই দিই। ছোট থাকতে আমাদের মধ্যে হাত দেখা বলতে সীমাবদ্ধ ছিল কার কয়টা ছেলেমেয়ে হবে। দেখা যেত আমরা প্রায় প্রত্যেকেই বাংলাদেশের আদমশুমারিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে চলেছি। আসলে সত্যিই কি মানুষের ভাগ্য জানা যায়? বা আঙ্গুলে গোমেদ পাথর আকিক পাথর বাঁধিয়ে জীবনের মোড় ঘুরানো যায়? তাহলে তো আর এত হা হুতাশ থাকত না। আবার এটাও সত্যি যে বিপদের সময়ে, দুর্বলতার সময়ে আমরা একমাত্র আমাদের rationality কে আঁকড়ে ধরে রাখি না। অনমনীয় মনের বর্ম ভেদ করে অনেক কুসংস্কারও ঢুকে পড়ে। সারাজীবন সবরকম গোঁড়ামিকে অন্ধবিশ্বাসকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়া মাও সন্তানের মৃত্যুশয্যার সামনে এসে তাবিজ কবচ পানি পড়া ঝাড়ফুঁকের কাছে আশ্রয় নেন। এটাও মনের একটা বিচিত্র দিক। আমাদের অস্তিত্বের পুরোটা জুড়ে আছে মন। অথচ সারা শরীর কেটেকুটে তার সন্ধান পাওয়া যায় না। মস্তিষ্ককে মন বলে চালিয়ে দেয়া কি ঠিক হবে? সব অর্থ আর অনর্থের মূল আমাদের যেই মন, তা আসলে একতাল শুভ্র আর ধূসর পদার্থ, একথাটা এক বাক্যে মেনে নিতে গেলে সেই মনটাই কি দ্বিধার দোলাচালে দুলতে থাকে না?
Sunday, November 4, 2007
পেপার
কালকের পেপারে সাংবাদিকদের ছোট ছোট অভিজ্ঞতা নিয়ে কয়েকটা লেখা বের হয়েছে। পড়তে ভাল লাগল। কেউ ফটোগ্রাফার, কেউ রিপোর্টার। কাজ করতে গিয়ে কত সময় কত কিছুর সামনে পড়তে হয়, কত কিছু দেখা হয় জানা হয়। সাংবাদিকদের কাজ ভীষণ পরিশ্রমের। সংবাদ সংগ্রহ করে আনা, আবার সেটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে আমাদের তৃষ্ণা নিবারণের মত যথেষ্ট আকার প্রকার দেয়া। তার মধ্যে আবার কারো সম্বন্ধে একটু এদিক ওদিক কথা বলে ফেললেও ফাঁড়া। মোটেও সহজ না। আসলে যারা ফিল্ডে গিয়ে কাজ করেন সেটা যেই পেশাই হোক, তাদেরকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। নানারকম মানুষ, নানারকম তাদের ব্যবহার। ধৈর্য্য ধরে রাখা মুশকিল। নিজেদেরকেও লাঞ্ছনা গঞ্জনার কবলে পড়তে হয় কত। সাংবাদিকদের হাতে কোন ইস্যুতে মানুষের সমর্থন বা অসমর্থন তৈরি করার শক্তি থাকে। কেউ কেউ তার অপব্যবহারও করে। তবে কিছু বিষয় আমার একেবারেই পছন্দ না। কেউ একবার সেলিব্রেটি হয়ে গেলে তার জীবন গেল। দেশে বিদেশে কাকে কার সঙ্গে কোথায় দেখা গেছে, কার বিয়ে কেন ভাঙলো, কার সাথে কার গোপন প্রেম এসব ফলাও করে ছাপার কি আছে? আমারা যারা পাঠক তাদেরও উচিত না এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি মাতামাতি করা। নিজের যেই ব্যাপারটা আমরা নিজের কাছে রাখতে চাই, অন্যের বেলায় সেটা জানার জন্য ছটফটানি করাটা কী ঠিক? তাছাড়া আমি এই কথাটার সাথে একমত না যে যারা জনপ্রিয় বা যারা কবি লেখক অথবা শিল্পী, মানুষের প্রতি তাদের একটা “দায়বদ্ধতা” আছে। বিশেষ দায়বদ্ধতার প্রশ্ন যদি আসে, মানুষের উন্নয়ন দেখার জন্য যাদেরকে নির্বাচন করা হয়, তাদেরই সেটা বেশি থাকার কথা। তাছাড়া দায়বদ্ধতা আমাদের সবারই আছে। দেশের মানুষের কাছে পরিচিত বা আদৃত ব্যক্তির মানুষকে প্রভাবিত করার সুযগ বেশি, এটা সত্যি। তার মানে এই না যে আমরা আশা করব সারাক্ষণ সেদিকে নজর দিয়েই তাদেরকে যে কোন পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্যই নিজস্ব ইচ্ছা অনিচ্ছার মূল্য আছে।
আজকে একটা ভাল জিনিস পড়লাম। পরিসংখ্যান বলছে গত কয়েক বছরে মেয়েরা তুলনামূলকভাবে এগিয়ে গেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিভিন্ন পেশাতে মেয়েদের উপস্থিতির হার আগের থেকে বেশি। গ্রামে নিরক্ষর মহিলারা সংসারের হাল ধরছে এরকম উদাহরণ দিনে দিনে বাড়ছে। এসব জেনে খুব ভাল লাগল। এর অর্থ হল মানুষের মানসিকতা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। আর্থিকভাবে সমর্থ হলে পরিবারে মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে সমস্যা আগের চেয়ে কমছে। অভিভাবকরা মেয়েদের লেখাপড়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাদের যে চাকরি করা দরকার এই ব্যাপারটাও এখন অপেক্ষাকৃত উদারভাবে নিতে পারছে মানুষ। যদিও আমি জানিনা এর পেছনে স্বচ্ছলতার খোঁজটাই বড় কারণ কিনা। কারণ যেটাই হোক, দেশের কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াটাই সুখের বিষয়। তবে মেয়েদের শিক্ষা আর পেশাজীবনের সমর্থক বাড়লেও পারিবারিকভাবে তাদের ওজন একই অনুপাতে বাড়েনি। অনেক পরিবারেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, রোজকার কাজের ভাগাভাগি বা মতের মূল্যায়নে মেয়েরা এখনো তাদের কাউন্টারপার্টের কাছে শাসিতই বলা চলে। এটারও পরিবর্তন হবে নিশ্চয়ই। আমার আকাঙ্খা মেয়েরা স্বাধীন হবে, যোগ্যতা দিয়ে বড় হবার যোগ্য হবে, দৃষ্টিভঙ্গীর দিক থেকে উদার হবে, মানসিকভাবে কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না এবং একদিন হাতে যথাযথ ক্ষমতা পেলে সেটাকে পুরুষের বিরুদ্ধে কিছুতেই ব্যবহার করবে না। লিঙ্গবৈষম্য শব্দটার প্রয়োজনীয়তা বিলুপ্ত হোক।
আজকে একটা ভাল জিনিস পড়লাম। পরিসংখ্যান বলছে গত কয়েক বছরে মেয়েরা তুলনামূলকভাবে এগিয়ে গেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিভিন্ন পেশাতে মেয়েদের উপস্থিতির হার আগের থেকে বেশি। গ্রামে নিরক্ষর মহিলারা সংসারের হাল ধরছে এরকম উদাহরণ দিনে দিনে বাড়ছে। এসব জেনে খুব ভাল লাগল। এর অর্থ হল মানুষের মানসিকতা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। আর্থিকভাবে সমর্থ হলে পরিবারে মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে সমস্যা আগের চেয়ে কমছে। অভিভাবকরা মেয়েদের লেখাপড়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাদের যে চাকরি করা দরকার এই ব্যাপারটাও এখন অপেক্ষাকৃত উদারভাবে নিতে পারছে মানুষ। যদিও আমি জানিনা এর পেছনে স্বচ্ছলতার খোঁজটাই বড় কারণ কিনা। কারণ যেটাই হোক, দেশের কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াটাই সুখের বিষয়। তবে মেয়েদের শিক্ষা আর পেশাজীবনের সমর্থক বাড়লেও পারিবারিকভাবে তাদের ওজন একই অনুপাতে বাড়েনি। অনেক পরিবারেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, রোজকার কাজের ভাগাভাগি বা মতের মূল্যায়নে মেয়েরা এখনো তাদের কাউন্টারপার্টের কাছে শাসিতই বলা চলে। এটারও পরিবর্তন হবে নিশ্চয়ই। আমার আকাঙ্খা মেয়েরা স্বাধীন হবে, যোগ্যতা দিয়ে বড় হবার যোগ্য হবে, দৃষ্টিভঙ্গীর দিক থেকে উদার হবে, মানসিকভাবে কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না এবং একদিন হাতে যথাযথ ক্ষমতা পেলে সেটাকে পুরুষের বিরুদ্ধে কিছুতেই ব্যবহার করবে না। লিঙ্গবৈষম্য শব্দটার প্রয়োজনীয়তা বিলুপ্ত হোক।
Thursday, November 1, 2007
কবিতা
আজকে ভার্সিটি গেলাম না। Auden এর কবিতার একটা ক্লাস ছিল। কবিতা আমার জন্য কোন কালেই স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয় না। একেবারেই যে বুঝিনা বা একেবারেই পড়ি না তা বলব না। কিন্তু ঠিক পছন্দের না। এক বন্ধুর একটা বই আমার কাছে অনেকদিন ছিল। জীবনান্দের কবিতার সংকলন। আমি দুই তিনটার বেশি পড়তে পেরেছি বলে মনে পড়ছে না। জীবনানন্দ আরো বেশি জটিল লাগে। যেসব কবিতায় একটা গল্প আছে বা সাধারণ ছন্দে লেখা সেসবই আমার জন্য সহজবোধ্য। সঞ্চয়িতা থেকে বেছে বেছে কাহিনীভিত্তিক কবিতাগুলো পড়েছি। রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ আমার সবচেয়ে প্রিয় বই। ছোটগল্প এত সুন্দর করে লেখা যায়! এই বইয়ের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পটা পড়ে প্রতিবারই মন খারাপ হয়। ‘মধ্যবর্তিনী’, ‘দিদি’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘রাজপথের কথা’, ‘সুভা’ সবই অসাধারণ। গল্প, উপন্যাস বা সিনেমার শেষটা সুখী সুখী না হয়ে কমবেশি দুঃখ থাকলেই আমার বেশি ভাল লাগে। ক্লাস নাইনে এক টিচার প্রশ্ন করেছিলেন আমাদের বাংলা বইয়ের কোন গল্পটা আমাদের সবচেয়ে পছন্দ। আমি বললাম, ছুটি। তারপরের প্রশ্ন, ছুটি কেন। বললাম, শেষটা দুঃখের হলে আমার ভাল লাগে। এবার প্রশ্ন, দুঃখের গল্প কেন ভাল লাগে। আর কি বলব আমি। কেন ভাল লাগে তা তো কখনো ভেবে দেখিনি। আর সবকিছুর তো বিশেষ কারণও থাকে না। আরেকদিন একই টিচার আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোন জিনিসটায় বেশি আগ্রহ পাও, জীবজগতের খুঁটিনাটি নাকি মহাবিশ্বের গ্রহনক্ষত্র? আমি বেছে নিলাম মহাবিশ্ব। আবারও একই কথা, কেন? আমি এই টাইপের একটা উত্তর দিয়েছিলাম, মহাবিশ্ব নাগালের অনেক দূরে, এজন্য এটা বেশি আকর্ষণীয়। সেই শিক্ষিকা কেন যেন আমার দিকে বেশি লক্ষ্য করতেন। সুতরাং তাকে আমার শাশুড়ী বলা আমার বন্ধুদের জন্য স্বাভাবিকই ছিল। কারণ ক্লাসে কেউ কোন টিচারের স্নেহের পাত্র হওয়া মানেই তার ছেলের বউ। ছেলে থাকুক বা না থাকুক, ছেলের বয়স যতই হোক।
কবিতার কথা লিখতে গিয়ে কোথায় চলে গেলাম। প্রাইমারিতে পড়ার সময় আমার একটা হলুদ রঙের খাতা ছিল, ‘সহজাত কবিপ্রতিভা’র বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য। অনেক ছড়া ছিল সেখানে, অর্ধসমাপ্ত গল্প ছিল কয়েকটা। সেই খাতা খুলে নিজের ছন্দ মেলানোর ক্ষমতা দেখে বহুবার মুগ্ধ হয়েছি। নীচে তারিখ দিয়ে রাখতাম, পরে কবির বিভিন্ন বয়সের লেখা নিয়ে সংকলন বের হলে যেন সমস্যা না হয়। বিদেশি পটভূমিতে একটা উপন্যাস লেখার কাজও শুরু করেছিলাম। তবে শীঘ্রই ক্লাস সিক্সে উঠব বলে ব্যস্ততার কোন সীমা ছিল না। ফলে দুই পৃষ্ঠা পর্যন্ত গিয়েও উপন্যাসটা শেষ পর্যন্ত শেষ হল না। এটা একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে বলা যায়। কেননা সেসব গল্প উপন্যাস একটুখানি পড়ে দেখলেই বেশ যেন চেনা চেনা মনে হওয়ার একটা চান্স থাকত। তবে আমার ছড়া নিয়ে কোন অভিযোগের সুযোগ নেই, পুরোপুরি মৌলিক। হলুদ খাতাটা যদি হারিয়ে না যেত! সে নিজে তো হারালোই, আমার সবেধন নীলমণি সেই বিন্দু পরিমাণ সৃজনশীলতাটাকেও বগলদাবা করে নিয়ে গেল। এখন তো মাথা কুটেও কঞ্জুস কলমের ডগা থেকে কিছু বের করতে পারব না। অবশ্য এটা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই, শুধু খাতাটার জন্য যা একটু আফসোস হয়। তা হোক। জীবন যখন জীব জড় দুই নিয়েই, আনন্দ বেদনা কেবল মানুষকে ঘিরে হবে কেন, বস্তুবাচক বিশেষ্য নিয়েও হতে পারে।
কবিতার কথা লিখতে গিয়ে কোথায় চলে গেলাম। প্রাইমারিতে পড়ার সময় আমার একটা হলুদ রঙের খাতা ছিল, ‘সহজাত কবিপ্রতিভা’র বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য। অনেক ছড়া ছিল সেখানে, অর্ধসমাপ্ত গল্প ছিল কয়েকটা। সেই খাতা খুলে নিজের ছন্দ মেলানোর ক্ষমতা দেখে বহুবার মুগ্ধ হয়েছি। নীচে তারিখ দিয়ে রাখতাম, পরে কবির বিভিন্ন বয়সের লেখা নিয়ে সংকলন বের হলে যেন সমস্যা না হয়। বিদেশি পটভূমিতে একটা উপন্যাস লেখার কাজও শুরু করেছিলাম। তবে শীঘ্রই ক্লাস সিক্সে উঠব বলে ব্যস্ততার কোন সীমা ছিল না। ফলে দুই পৃষ্ঠা পর্যন্ত গিয়েও উপন্যাসটা শেষ পর্যন্ত শেষ হল না। এটা একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে বলা যায়। কেননা সেসব গল্প উপন্যাস একটুখানি পড়ে দেখলেই বেশ যেন চেনা চেনা মনে হওয়ার একটা চান্স থাকত। তবে আমার ছড়া নিয়ে কোন অভিযোগের সুযোগ নেই, পুরোপুরি মৌলিক। হলুদ খাতাটা যদি হারিয়ে না যেত! সে নিজে তো হারালোই, আমার সবেধন নীলমণি সেই বিন্দু পরিমাণ সৃজনশীলতাটাকেও বগলদাবা করে নিয়ে গেল। এখন তো মাথা কুটেও কঞ্জুস কলমের ডগা থেকে কিছু বের করতে পারব না। অবশ্য এটা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই, শুধু খাতাটার জন্য যা একটু আফসোস হয়। তা হোক। জীবন যখন জীব জড় দুই নিয়েই, আনন্দ বেদনা কেবল মানুষকে ঘিরে হবে কেন, বস্তুবাচক বিশেষ্য নিয়েও হতে পারে।
আকাশকুসুম
আমেরিকায় কালকে ছিল হ্যালোউইন। সন্ধার পর বাচ্চারা নানারকম বিচিত্র পোশাক পরে বন্ধুবান্ধব নিয়ে বাইরে বের হয়। তারপর প্রতিবেশীদের বাড়ির দরজায় টোকা দিয়ে বলে “trick or treat?” বেশিরভাগই খাবার দাবার ধরিয়ে দিয়ে বিদায় করে। এরকম কয়েকটা বাড়ি ঘুরলেই ঝুলিতে বেশ অনেক চকলেট জুটে যাবে। তারপর ঘরে ফিরে সেসব সাবাড় করার পালা। বিশাল একটা মিষ্টিকুমড়ার ভেতরে বাতি রেখে সেটাকে নাকি বাড়ির পোর্চ বা বারান্দায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়। তার আগেই কুমড়াটার পেটের নাড়িভুঁড়ি বের করে গায়ে চোখ নাক মুখের আকার দিয়ে রাখা হয়েছে। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হবে একটা চেহারা ভাঁটার মত জ্বলছে। হ্যালোউইন সম্বন্ধে আমি অন্তত এমনটাই জানি। শুনে তো বেশ মজার মনে হয়। আর আফসোস হয় এমনটা আমাদের দেশে নেই বলে। বাচ্চারা আমাদের বাসায় ভূত সেজে এসে যদি বলত trick or treat, আমি বলতাম, ok trick. দেখিই না ওরা কেমন করে ফাঁদে ফেলতে চেষ্টা করে। আমি জিতে গেলে তো আমার চকলেট আমারই থাকল। আর হারলে ওরা একটু আনন্দ পেল। ইউরোপ আমেরিকার কিছু কিছু জিনিস আমার বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়। যেমন ফ্যান্সি ড্রেস পার্টি। যে যেমন খুশি একটা কিছু সেজে এল। হতে পারে সেটা ভিনগ্রহের প্রাণী অথবা মধ্যযুগের সেনাপতি। তারপর ওদের স্কুলগুলো দেখলেও খুব পড়তে ইচ্ছা করে। ভেন্ডিং মেশিন থেকে জিনিস বের করা, ফাঁকা ফাঁকা রাস্তা, নববর্ষ আর বড়দিনের উৎসব, বন্ধুদের নিয়ে ক্যাম্পফায়ার, কিছুদিনের জন্য এসবের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসতে পারলে মন্দ হয় না। আমার খুব নিউজিল্যান্ড আর গ্রিসে যেতে ইচ্ছা করে। নিউজিল্যান্ড বললেই খুব ঠান্ডা আর সুন্দর একটা জায়গার ছবি চোখে ভেসে ওঠে। আর গ্রিস ভাবলেই মনে হয় যেন ওখানে পা ফেললেই আমি অনেক অনেক বছর আগের একটা সময়ে চলে যাব। পথে প্লেটো সক্রেটিসকে দেখা যাবে। স্টেডিয়ামের মত দেখতে থিয়েটারে নাটক চলবে। দারুণ ব্যাপার! আমাকে প্যারিসে যেতে হবে লুভ জাদুঘরে একবার ঢুঁ মেরে আসার জন্য, রোমে গিয়ে জুলিয়াস সিজারের রাজত্ব পর্যবেক্ষণ করতে হবে, স্পেনে তো না গেলেই না, দেখতে হবে জার্মানি শুনলেই যে আমার একটা কাঠখোট্টা জায়গা মনে হয় সেটা সত্যি কিনা। এ তো গেল কেবল ইউরোপের একটা অংশ। আফ্রিকা আর ল্যাটিন আমেরিকা তো পড়েই রইল। এত ফিরিস্তি দিতে গেলে উপন্যাস হয়ে যাবে। তবে দরকার ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া হবে না। বেশি সাধাসাধি করলে বড়জোর দুবাই, ব্যস। কিন্তু এত সময় সুযোগ কোথায় পাই! টাকা পয়সাই বা কোত্থেকে আসবে! খুবই চিন্তার বিষয়।
Wednesday, October 31, 2007
হোস্টেল
একই ছাদের নীচে থাকলে মনের সাথে মনের একটা নৈকট্য সৃষ্টি হয়ে যায়। বারবার দেখা হয়, অনেক কথা হয়, সুখদুঃখ ভাগাভাগি হয়। আমি দাম্পত্যজীবনের কথা বলছি না, হোস্টেল লাইফের কথা বলছি। কাছাকাছি বয়সের অনেকগুলো মানুষ একসঙ্গে থাকে ঘুমায় খায় দায়। যেন একটা গোষ্ঠি তৈরি হয়। হোস্টেল জীবনের ভাল আর মন্দ নিয়ে এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ আর অনভিজ্ঞদের নানারকম মত আছে। তাই মোটমিলিয়ে চার দলের চারটা রকম দাঁড়িয়ে যায় বক্তব্যের। যেমন আমাদের দেশ আর সামাজিক অবস্থা, তাতে আনন্দের ভাগটা ছেলেদের রাজকপালেই কিছুটা বেশি জোটে। গভীর রাতে বেরিয়ে গিয়ে দল বেঁধে হাঁটা ধরল, গান গাইতে গাইতে সূর্য জাগিয়ে ফেলল। মেয়েরাও খারাপ সময় কাটায় না। খাবার সময় ছাড়া হোস্টেলে ঘড়ি একটা মোটামুটি অচল যন্ত্র। রাত তিনটায় ঘুমাতে গেলেও মা বলবে না, এতক্ষণ জেগে থাকলে শরীর খারাপ করবে কিংবা দুপুর বারোটার দিকে হাই তুলতে তুলতে বিছানা ছাড়লেও বাবা বলবে না, অপদার্থকে আরো ঘুমাতে বল, এখনো সন্ধ্যা হয়নি। এসব মজার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়ার মত খারাপ পয়েন্টও আছে অনেক। তবে স্কুলের হোস্টেল লাইফের কথা ভাবলে একটু খারাপ লাগে। যারা ক্যাডেট কলেজে পড়ে, ক্লাস সেভেনের বাচ্চাকাল থেকেই নিয়মকানুনের শেকলের মধ্যে ঢুকে পড়তে হয়। প্রথম প্রথম বাড়ির জন্য মন কেমন করে, কান্না পেয়ে যায়। সেই কাজটাও করতে হয় লুকিয়ে। কারণ ওই বয়সে আবার বিশাল ইগো। ক্যাডেটে পড়া ছেলেমেয়েরা বের হয়ে আসার পর তিন রকম কথা বলে। একদল বলে তারা ছয় বছর বলতে গেলে কারাগারে কাটিয়েছে। আরেকদল মনে করে এমন মজার লাইফ আর হয় না। আর তৃতীয় দলের ধারণা ভাল মন্দের কোনটাই কোনটার থেকে বেশি না। তৃতীয় দলেই সদস্য বেশি। আমার নিজের কাছে স্কুল আমল থেকেই হোস্টেলে থাকাটা ঠিক পছন্দ হয় না। একটা গন্ডির মধ্যে থাকতে হয়। তাছাড়া পরিবারের মত ভালবাসা বা আবহ কি অন্য কোথাও পাওয়া যায়? এটা ঠিক যে এভাবে থেকে ওরা আমাদের থেকে খারাপ কিছু হয়ে যায় না। তারপরও কেন যেন আমার ভাল লাগে না কলেজে ওঠার আগে হোস্টেলে থাকাটা। সেক্ষেত্রে আমার জন্য সুখের কথা হল আমাকে ক্লাস সেভেনে থাকতে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেয়ার আর কোন উপায় এখন নেই।
বাস্তব
একটা সময় ইউনিভার্সিটি পড়ুয়াদের জীবনের প্রতি অন্যধরণের মোহ ছিল। অর্থাৎ স্কুলকালে। কাছ থেকে কাউকে দেখা হয়ে ওঠেনি। তবে নাটক সিনেমা দেখে যতদূর বুঝতাম তা হল অনেক বড় হলে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে হয়। সেটা অনেক বিশাল জায়গা, স্কুলের মত ছোট্ট না। সেখানে মাঝেমাঝে ক্লাস করতে হয় তবে পড়াশোনা করা লাগে না বললেই চলে। যখন ইচ্ছা বাসায় ফেরা যায়। সুন্দর সুন্দর জামা পরে যাওয়া যায়। আর ইউনিভার্সিটির আপুরা অনেক কিছু বোঝে, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করে। একা একা মার্কেটে যায়। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন হল স্বাধীন জীবন এবং আমিও একদিন নিঃসন্দেহে আপুদের মত ‘বড়’ হব। এখন ক্যাম্পাসে ঘুরলে দেখি সেই আপুদের বেশিরভাগই আমার চেয়ে ছোট ক্লাসে পড়ছে। কিন্তু তবু নিজেকে বড় হয়েছি বলে মনে হয়না। আমার সমবয়সী কেউ চাকরি করতে পারে এটা বিশ্বাস করা কঠিন লাগে। কারণ সারাজীবন জেনেছি চাকরি ‘বড়’রা করে। সত্যি বললে অনার্স মাস্টার্স এসব এখনো নিজের কানে ‘বড়’দের বিষয়ের মত শোনায়। একটা ব্যাপার অবশ্য ভাবনার সঙ্গে মিলে যায়। তা হল আসলেই এখানে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিষয়ে আলোচনা চলে। মোটামুটি থার্ড ইয়ার চলে এলেই ক্যারিয়ার নিয়ে সিরিয়াসলি মাঠে নেমে যায় বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী। স্কলারশিপের চেষ্টা চলে। সিভি জমা দেয়া হয়। পার্টটাইম কিছু করা যায় কিনা সেদিকে চোখকান খোলা রাখতে হয়। তাছাড়া মেয়েদের মধ্যে বিয়ের হাওয়া লাগতে শুরু করে। আড্ডা দিতে বসলে দেখা যায় পেশাগত আর সাংসারিক বিষয় আশয় অহরহ কথায় উঠে আসে। মনোমালিন্যও হয় প্রেম ভালবাসা, ভুল বোঝাবুঝি, ব্যাক্তিত্বের সংঘাত সংক্রান্ত ভারী ভারী কারণে। সবাই বড়দের মত কথা বলে, কাজ করে। আমি নিজেও এসবকিছুর বাইরের কেউ না। এককথায় বলতে গেলে এখন মনে হয় বড় হওয়ার মধ্যে এত আনন্দের তেমন কিছু নেই। বড় হতে থাকলেই মানুষের খুব উদাস উদাস হয়ে পেছনের দিনে ফেরত যেতে ইচ্ছা করে। ততটুকু পেছনে যখন আনন্দ বুঝতে পারার মত বয়স ঠিকই হয় কিন্তু সেই সাথে জীবনের কঠিন কঠিন ব্যাপারগুলো মাথায় ঢোকানোর মত প্রাপ্তবয়স্কতাও আসে না।
বাস্তবতা শব্দটার একটা নেগেটিভ চেহারা আছে। মধুর বাস্তবতা কথারটার চেয়ে কঠিন বাস্তবতা কথাটাই আমাদের বেশি পরিচিত। সেই বাস্তবতা এমনই কঠিন যে তা থেকে পালাতে ইচ্ছা করে। আর তাকে পাশ কাটিয়ে পালানোর মনোবৃত্তি আছে এমন মানুষের সংখ্যাও এতই বেশি যে তাদের জন্য escapist বলে একটা শব্দ চালু করতে হয়েছে। কিটস শেলি ঘরানার কবিরা আবার বাস্তবকে দূরে ঠেলে কিছুক্ষণ কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করার চেষ্টা করেন। কবিরা বিখ্যাত মানুষ বলে আলাদা গুরুত্ব। কিন্তু সব মানুষেরই কি বাস্তবকে নিয়ে কমবেশি অসন্তুষ্টি নেই? বাস্তব...বাস্তবতা...জীবনঘনিষ্ঠতা...জীবন। তাহলে জীবনটাই তো দেখা যাচ্ছে একটা খারাপ জিনিস। অথচ এত কষ্ট হলেও জীবনের গায়ে এতটুকু আঁচ লাগার ভয়ে আমরা সিঁটিয়ে থাকি। জীবনের ঘানি তো অনেক টানিয়াছ, এইবার কলুর ইচ্ছা তোমার ছুটি হউক... যমের মুখে এমন কথা শুনলে কেউ কি হাসিমুখে মেনে নিতে পারে? মানুষের মধ্যে একই সঙ্গে কতসব বিচিত্র বৈপরিত্য!
বাস্তবতা শব্দটার একটা নেগেটিভ চেহারা আছে। মধুর বাস্তবতা কথারটার চেয়ে কঠিন বাস্তবতা কথাটাই আমাদের বেশি পরিচিত। সেই বাস্তবতা এমনই কঠিন যে তা থেকে পালাতে ইচ্ছা করে। আর তাকে পাশ কাটিয়ে পালানোর মনোবৃত্তি আছে এমন মানুষের সংখ্যাও এতই বেশি যে তাদের জন্য escapist বলে একটা শব্দ চালু করতে হয়েছে। কিটস শেলি ঘরানার কবিরা আবার বাস্তবকে দূরে ঠেলে কিছুক্ষণ কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করার চেষ্টা করেন। কবিরা বিখ্যাত মানুষ বলে আলাদা গুরুত্ব। কিন্তু সব মানুষেরই কি বাস্তবকে নিয়ে কমবেশি অসন্তুষ্টি নেই? বাস্তব...বাস্তবতা...জীবনঘনিষ্ঠতা...জীবন। তাহলে জীবনটাই তো দেখা যাচ্ছে একটা খারাপ জিনিস। অথচ এত কষ্ট হলেও জীবনের গায়ে এতটুকু আঁচ লাগার ভয়ে আমরা সিঁটিয়ে থাকি। জীবনের ঘানি তো অনেক টানিয়াছ, এইবার কলুর ইচ্ছা তোমার ছুটি হউক... যমের মুখে এমন কথা শুনলে কেউ কি হাসিমুখে মেনে নিতে পারে? মানুষের মধ্যে একই সঙ্গে কতসব বিচিত্র বৈপরিত্য!
Sunday, October 28, 2007
শস্য
এবার মনে হচ্ছে ভাল শীত পড়বে। অবশ্য প্রতিবারই কিছু একটা দেখে আমি এই একই জিনিস আন্দাজ করে ফেলি। আর প্রতিবারই ভাবি আরে বুদ্ধি থাকলে এসব বুঝতে পারা কোন ব্যাপারই না। এখন হেমন্তকাল। নবান্নের ঋতু। নবান্নের কতটুকুই বা অবশিষ্ট আছে এখন! আজকাল তো ধান কাটার কাজ বছর জুড়েই চলতে থাকে। এ নিয়ে উৎসব করার সময় বা আগ্রহ থাকে না। এখন কেবল কার্তিক চলছে, তাতেই ভোরের দিকে একটু ঠান্ডা পড়ে। বৃষ্টি মৌসুম পেছনে ফেলে এসেছি বেশ কিছুদিনের জন্য। হেমন্তের বৃষ্টি ফসলের জন্য খারাপ সংকেত। এটা আমি জানি খনার বচন থেকে। “ যদি বৃষ্টি আগনে, রাজা যায় মাগনে “। আবার শীতের শেষে বৃষ্টি হওয়া ভাল লক্ষণ। “ যদি বৃষ্টি মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পূণ্যি দেশ “। খনার বচন বেশ ইন্টারেস্টিং। তার জন্ম সম্ভবত ময়মনসিংহে, সময়টা আমার জানা নেই। খনা সম্পর্কে আমি কেবল আর এতটুকুই শুনেছি যে তার জনপ্রিয়তায় তার শ্বশুরের ঈর্ষা হয়েছিল। তাই খনার জিভ কেটে ফেলে লোকটা। যেন এসব বচন টচন সে আর না দিতে পারে। এই কাহিনী সত্যি কিনা জানি না। তবে প্রকৃতির ব্যবস্থাটা কিন্তু দারুণ। শীতের শাকসবজি ভাল হবে যখন তার গায়ে কুয়াশা পড়বে। আবার বর্ষাকালের ফসলে বৃষ্টির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। গরমের ফলও নিশ্চয়ই ঠিকমত তাপ না পেলে ভাল হয়না। খনার আমলে এসব মেনে চলা প্রয়োজন ছিল। এই শতাব্দীতে খাবারদাবারের উৎস হাইব্রিড জাত। জৈষ্ঠ্য মাসে পাকা টমেটো মামুলি ব্যাপার। অন্যদিক দিয়ে দেখলে এখন গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর যুগ। বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হচ্ছে, ভূমিকম্প দোরগোড়ায় ইত্যাদি ইত্যাদি। এজন্যই হয়ত এখন বয়স্কদের মুখে ইলিশের স্বাদ কমে গেছে, আম লিচু পানসে লাগে, কোথায় সেই খালে বিলে মাছের দাপাদাপি...এসব আক্ষেপ শোনা যায়। তারপরও মানুষ পৃথিবীতে আছে, উৎপাদন চলবে, কৃষি চলবে। নারকেল কুল আপেল কুল এরকম নতুন সব প্রজাতি যুক্ত হবে ফসলের অভিধানে। শেষ করার আগে খনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার আরেকটা বচন জুড়ে দিচ্ছি।
“ কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত “।
“ কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত “।
আমার খেলনা আমার বই
ঢাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার আমাদের বাসা থেকে দূরে না। দুই একদিন আগে প্রবর্তনা পূর্ণিমা হয়ে গেছে। দেখলাম মঠের সামনের জায়গাটায় ছোট ছোট কয়েকটা দোকানপাট বসে গেছে। মেলার মত। তখনি আমার অনেক বছর আগের মেলার কথা মনে পড়ে গেল। ঈদের দিন বা তার পরের দিন বিকালে আব্বুর সঙ্গে কমলাপুর মাঠের মেলায় যেতাম। এখন গ্রামবাংলার মেলার চিত্র হিসাবে আমরা যেমন ছবি ভেবে নিই সেরকম ছিল ওই মেলা। সন্ধ্যায় যখন বাসায় ফিরতাম হাতে একটা পলিথিন থাকত। পলিথিন ভর্তি আমার শখের জিনিসপত্র। সবচেয়ে প্রিয় ছিল মাটির পুতুল হাঁস-মুরগী এসব। সাথে ছোট্ট পিঁড়ি-বেলন বাঁশি বেলুন আর প্লাস্টিকের আরো এটা সেটা। তার মধ্যে কাঠের একটা পুতুল অনেকদিন ছিল আমার কাছে। এখন হারিয়ে গেছে। আর একটা কাঠের হাতি এখনো আছে। আশা করি এটা হারাবে না, খুব দুঃখের ব্যাপার হবে তাহলে। প্লাস্টিকের পশুর সেট ছিল আমার একটা। বাবা মায়ের তরফ থেকে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্টের উপহার। ছিল লেগো সেট। চুম্বক, নষ্ট রেডিওর নাড়িভুঁড়ি নাড়াচাড়া করতে গিয়ে মনে হত আমি বিরাট শিশুপ্রতিভা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি। ব্যাটারিওয়ালা মেম পুতুলের কথা তো না বললেই না। আমি মেম পুতুল বলতাম না। এই নামটা তখনই অলরেডি বিলুপ্ত। পরে বই থেকে জেনেছি। পুতুলটা মামার দেয়া। নাম ছিল তুলতুল। গায়ে গোলাপি উলের পোশাক আর টুপি। শান্ত স্বভাব, কখনোই বিরক্ত করেনি। সত্যি কথা বলতে এতদিন পর আমি এদের কাউকেই মিস করি না। তবে জীবনের প্রথম গল্পের বইটা হারানোর দুঃখ কখনোই যাবে না। ঠাকুরমার ঝুলি। ক্লাস ওয়ানের কথা সেটা। ওই অসাধারণ গন্ধ আর কোন কিছুতে নেই। বাজারে বহু ঠাকুরমার ঝুলি আছে। কিন্তু ঠিক ওই বইটা পাইনি আমি পরে। এখানে একটা ব্যাপারে আমি আমার বাবা মা কে বিশেষ ধন্যবাদ দিই। তা হল, আমাকে স্কুলজীবনে গল্পের কিনে দেয়া হত যথেষ্ট। হাইস্কুলে ওঠার পর ওপরতলার আপুর বিশাল সংগ্রহ থেকে প্রায়ই যে একসঙ্গে অনেকগুলো ধার করতাম সেখানেও নিষেধ ছিল না। অমুক টাইপের বা তমুক লেখকের প্রবেশ নিষিদ্ধ এমনটাও না। আজকে লিখতে বসে হঠাৎ করে আমার কৃতজ্ঞতা নতুন করে জেগে উঠছে। আমি জানি না সবার বাবা কলিগের কাছ থেকে নিজের উদ্যোগে মেয়ের জন্য বইপত্র নিয়ে আসেন কিনা কিংবা চাকরিজীবী মায়েরা মেয়ের ফরমায়েশের উপন্যাসের খোঁজে অফিসের লাইব্রেরি ঘাঁটার কষ্ট করেন কিনা। আমার ভাগ্য ভাল। আরেকটা জিনিস আমি বিশ্বাস করি যে গল্পের বইয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ না থাকলে একটা মানুষ কিছুতেই ভালভাবে এবং শুদ্ধভাবে মাতৃভাষায় কোনকিছু লিখতে পারে না।
Thursday, October 25, 2007
শীতচিন্তা
আজকাল আমার জানালা গলে রোদ আসে। এর অর্থ শীত আসছে। জানালায় রোদ আসার মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন আনন্দ আছে। আমি জানি এটার উৎস কি। উৎস হল স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, বিশাল অবসর আর গল্পের বই পড়া, সেই সাথে কিছুদিনের মধ্যে নতুন ক্লাসে ওঠা, নতুন নতুন বইখাতাতে নাম লেখা অর্থাৎ সবমিলিয়ে একটু বড় হওয়া। সেই সঙ্গে বাঁধাকপি ফুলকপি শিম আর টমেটোকে ভুলে গেলে চলবে না। কেবল গাজরটাকে একটু সহ্য করে নিলেই হল। এতদিন পর কোনকিছুই আর আগের মত নেই। শুধু শীত আসার খুশিটাই ঝুলে ঝুলে টিকে আছে কিছুটা। আমি অবশ্য শীতের পিঠা খাওয়া বা খেজুরের রসের খুব ভক্ত এমনটা বলা যাবে না। তবুও শীতের সঙ্গে এসব ঐতিহ্যের নাম না জুড়ে দিলে চলে না। এই জুড়ে দেয়াটাও একটা ঐতিহ্য। সাহিত্যের জগতে শীত তেমন একটা স্নেহের পাত্র বলা যায় না। শীতকে বরং বিবর্ণতা, শুষ্কতা বা নিষ্প্রাণতার প্রতীক হিসাবেই দেখা হয়। গাছগুলো হুড়মুড় করে পাতা ঝরানোর জন্য পাগল না হয়ে গেলে হয়ত এই ঋতুটার রূপক অর্থ আরেকটু অন্যরকমই হত। আমাদের দেশে তো তুষার পড়ে না। ব্যাপারটা কেমন আমি জানি না। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকব আর উপর থেকে কিনা কুচি কুচি বরফ পড়তে থাকবে। ভাবতে বেশ রোম্যান্টিক। কিছুক্ষণ দাপাদাপি করলাম, আইসবল ছুঁড়লাম, তারপর আমার লগহাউসে ঢুকে ফায়ারপ্লেসের আগুনটা উস্কে দিলাম। এই সময়ের মধ্যে নিশ্চয়ই কফিও রেডি হয়ে যাবে। কফি অর্ধেক হতে না হতেই দেখি বাইরে তুমুল তুষারঝড়। না আজকে আর আপেল পাড়া হল না। ভেবেছিলাম খানিকটা সাইডার বানিয়ে রাখব। (সাইডার মানে আপেলের জুস। এই পর্যায়ে কল্পনার গাড়ি মোড় নিয়ে লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের গল্পের দিকে চলে যেতে থাকল...)
কয়েক দিন পরই রোদটা কোমল হতে শুরু করবে। আলো ঠিকই থাকবে কিন্তু তেজ থাকবে না। শীতকালের রোদের একটা হালকা গন্ধ আছে। সেটা শুধুমাত্র পড়ন্ত দুপুরে পাওয়া যায়। তবে ঝামেলা হল এসময় সন্ধ্যাটা বড় তাড়াতাড়ি নেমে আসে। আসে তো আসেই। গড়িয়ে গড়িয়ে রাত পর্যন্ত যেতে তার যেন অনন্তকাল লেগে যায়। সূর্য মশায়ের ঘুম ভাঙতেও তেমনই দেরি। লম্বা লম্বা রাত, ছোট্ট ছোট্ট দিন। এর মাঝেই একদিন পড়বে উত্তর গোলার্ধের ক্ষুদ্রতম দিন ২৩শে ডিসেম্বর। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন যথারীতি ক্ষুদ্রতম রাত। যত মেরুর দিকে যাব, দিনরাতের বৈষম্য বাড়তে থাকবে। মেরুর আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। পুরো পৃথিবীটাই নাকি একটা চুম্বকের মত। আমাদের চুম্বক উত্তর দিক দেখানোর জন্য যেদিকে মুখ বাড়িয়ে রাখে সেটা নাকি ভৌগলিক দক্ষিণ আর চুম্বকের দক্ষিণ নাকি বিশ্বচুম্বকের উত্তর। সবই অনেক আগের পড়া, ঠিকঠাক বললাম কিনা কে জানে। পড়াশোনার ব্যাপার কি মনে থাকে নাকি? না মনে থাকার কথা? এতদিন ধরে পড়েও আমি ঠিক জানিনা শেলির বা ব্রাউনিং এর বা কোলেরিজের লেখার স্টাইল কিরকম হয় যেটা কিনা পরীক্ষার ভারী ভারী লেখার জন্য দরকারি। অথচ ড্যান ব্রাউনেরটা ঠিকই বলতে পারব। আর টিভিতে নতুন বিজ্ঞাপন আসলে সেটার জিঙ্গেল হাবিবের কম্পোজিশন কিনা তা বোঝা তো এক মুহূর্তের ব্যাপার।
কয়েক দিন পরই রোদটা কোমল হতে শুরু করবে। আলো ঠিকই থাকবে কিন্তু তেজ থাকবে না। শীতকালের রোদের একটা হালকা গন্ধ আছে। সেটা শুধুমাত্র পড়ন্ত দুপুরে পাওয়া যায়। তবে ঝামেলা হল এসময় সন্ধ্যাটা বড় তাড়াতাড়ি নেমে আসে। আসে তো আসেই। গড়িয়ে গড়িয়ে রাত পর্যন্ত যেতে তার যেন অনন্তকাল লেগে যায়। সূর্য মশায়ের ঘুম ভাঙতেও তেমনই দেরি। লম্বা লম্বা রাত, ছোট্ট ছোট্ট দিন। এর মাঝেই একদিন পড়বে উত্তর গোলার্ধের ক্ষুদ্রতম দিন ২৩শে ডিসেম্বর। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন যথারীতি ক্ষুদ্রতম রাত। যত মেরুর দিকে যাব, দিনরাতের বৈষম্য বাড়তে থাকবে। মেরুর আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। পুরো পৃথিবীটাই নাকি একটা চুম্বকের মত। আমাদের চুম্বক উত্তর দিক দেখানোর জন্য যেদিকে মুখ বাড়িয়ে রাখে সেটা নাকি ভৌগলিক দক্ষিণ আর চুম্বকের দক্ষিণ নাকি বিশ্বচুম্বকের উত্তর। সবই অনেক আগের পড়া, ঠিকঠাক বললাম কিনা কে জানে। পড়াশোনার ব্যাপার কি মনে থাকে নাকি? না মনে থাকার কথা? এতদিন ধরে পড়েও আমি ঠিক জানিনা শেলির বা ব্রাউনিং এর বা কোলেরিজের লেখার স্টাইল কিরকম হয় যেটা কিনা পরীক্ষার ভারী ভারী লেখার জন্য দরকারি। অথচ ড্যান ব্রাউনেরটা ঠিকই বলতে পারব। আর টিভিতে নতুন বিজ্ঞাপন আসলে সেটার জিঙ্গেল হাবিবের কম্পোজিশন কিনা তা বোঝা তো এক মুহূর্তের ব্যাপার।
Wednesday, October 24, 2007
পুরাণ
গ্রীক পুরাণের গল্পগুলো বেশ ভাল লাগে। ইলেক্ট্রা, ইডিপাস রেক্স, ইলিয়ড, ওডিসির মত আরো অনেক অনেক বিখ্যাত রচনার বিষয় এসেছে এসব কাহিনী থেকে। তবে সবচেয়ে পরিচিত সম্ভবত ট্রয় নগরীর গল্প। একজন নারীর জন্য প্রলয়ংকারী যুদ্ধ বলা হলেও মূল গল্পটা পড়ে দেখলেই জানা যায় এখানে হেলেনকে যুদ্ধের একমাত্র কারণ বলা ভুল। পাখনাওয়ালা কিউপিডের জন্য সাইকির ভালবাসা, আকিলিসের সর্বনাশা গোড়ালি, প্রমিথিউসের আগুন চুরি, সাগরের অধিশ্বর পসেইডন ইত্যাদি অগুণতি কাহিনী। নার্সিসাস নামের এক সুন্দর তরুণ পানিতে তার অসাধারণ রূপের ছায়া দেখে নিজেরই প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। তাই নিজের প্রতি বাড়াবাড়ি রকম মুগ্ধতার ইংরেজি নাম ‘নার্সিজম’। ক্লাসের পড়ার ভেতর এসব মাঝে মাঝে চলে আসে। নতুবা স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তির মানুষের দুই তিনটার বেশি ঘটনা মনে রাখার কথা না। পুরাণের দেব দেবীদের প্রায় সবার সঙ্গেই সবার কোন না কোন সম্পর্ক আছে, এতে প্যাঁচ বাড়ে বৈ কমে না। আর তাদের মধ্যে সবসময় লেগে আছে ঝগড়া বিবাদ হিংসা বিদ্বেষ। অনেক সময় মর্ত্যের মানুষও এসব রেষারেষির কারণ। তারা একটু সন্তুষ্ট হলেই পুরষ্কারের ব্যবস্থা আবার একটু অসন্তুষ্ট হলেই তীব্র রোষানলে পড়তে হত মানুষকে এমনকি দেবালোকবাসীদেরকেও। অনেকটা ছোটদের রূপকথার মত এসব গল্প। পার্থক্য হচ্ছে রূপকথার মত এসব ততটা সরল না। অনেক ঘটনা একে অপরের সাথে জড়িত। তবে বেশিরভাগ গল্পতেই যেন সামনে কি হতে যাচ্ছে বুঝতে পারা যায়। তারপরও ভাল লাগে। গ্রীক পুরাণের সংগ্রহ হিসাবে এডিথ হ্যামিল্টনের ‘মিথলজি’ একটা বিখ্যাত বই। একটা গল্প বলতে ইচ্ছা হচ্ছে।
তরুণ ভাস্কর প্যাগম্যালিয়ন এর ছিল অসাধারণ প্রতিভা। কিন্তু সে মেয়েদের ঘৃণা করে। তার ধারণা ছিল এমন যে প্রকৃতি নারীদের তৈরি করেছে সীমাহীন দোষের আধার করে। তার সংকল্প সে কখনোই বিয়ে করবে না। নিজের শিল্প নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছা তার। একদিন সে একটা মূর্তি তৈরি করল, খুব সুন্দর এক মেয়ের। কারণ হতে পারে, জীবন থেকে যত সহজে সরিয়ে রাখতে পেরেছে মন থেকে তত সহজে নারীচিন্তাকে সে দূরে রাখতে পারেনি। অথবা হয়ত একটা নিখুঁত নিষ্প্রাণ নারী তৈরি করে সে পুরুষদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিল সত্যিকার নারীদের খুঁতগুলো। অসামান্য একটা ভাস্কর্য জন্ম নিল তার হাতের ছোঁয়ায়। আর এটাই প্যাগম্যালিয়নের জন্য কাল হয়ে উঠল।
দিনরাত খাটতে লাগল সে মূর্তিটার পেছনে। ধীরে ধীরে তা হতে লাগল আরো বেশি মনোহর, আরো বেশি চোখজুড়ানো। দেখে বোঝাই যায়না এ কোন মানবী না বরং সাধারণ একটা মূর্তি। প্যাগমিলিয়ন তার সৃষ্টির গভীর প্রেমে পড়ে গেল। বাস্তবের প্রেমিকার মতই আচরণ পেতে লাগল সেই পাথরের টুকরা। যতই সুন্দর পোশাক গায়ে চড়াক, যেভাবেই ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিক, যেমনই যত্ন নিক, এক বিন্দু আবেগের জন্ম দিতে পারলো না সে মূর্তিটার মাঝে। প্রবল দুঃখে উন্মাদপ্রায় প্যাগম্যালিয়ন। কারণ সারাজীবন এই নিষ্প্রাণকেই ভালবাসতে হবে তার। এমন অদ্ভুত প্রেমিক মনোযোগ কাড়ল প্রেমের দেবী ভেনাসের। তার ইচ্ছা হল এই ভগ্নহৃদয় তরুণের জন্য কিছু করার। ভেনাসের ভোজের দিন, সারা সাইপ্রাস দ্বীপে উৎসব। বেদীতে বেদীতে ধূপের সুবাস। রাজ্যের সমাগত প্রেমিকদের মধ্যে ছিল প্যাগম্যালিয়নও। তার প্রার্থনা, সে যেন তার মূর্তিটির মত মোহনীয় কোন পার্থিব রমণীকে খুঁজে পায়। কিন্তু ভেনাস ঠিকই বুঝতে পারলেন ভাস্কর আসলে ঠিক কি চায়।
বাড়ি ফিরে প্যাগম্যালিয়ন দাঁড়াল তার ভালবাসার প্রস্তরকীর্তির সামনে। হাত বুলিয়ে দিল তার গায়ে। চমকে গেল সে। তার কি মনের ভুল নাকি সত্যিই সে উষ্ণতা টের পেল? মূর্তির ঠোঁট, নাক, মুখ, বাহু সারা শরীর আস্তে আস্তে পালটে যেতে লাগল। কব্জির নীচে ধমনীর স্পন্দন জন্ম নিল। কাঠিন্য সরে গিয়ে জেগে উঠতে লাগল প্রাণ। বিস্মিত তরুণের গভীর আলিঙ্গনের স্পর্শে প্রাণহীন মূর্তি মানবীতে পরিণত হল। তার চোখের দিকে চেয়ে মিষ্টি হাসি দিল তার আরাধ্য। প্যাগম্যালিয়নের এই আত্মার আত্মীয়ের নাম রাখা হল গ্যালাটি। ভেনাস নিজে উপস্থিত থেকে তাদের বিয়েতে আশীর্বাদ দিলেন।
তরুণ ভাস্কর প্যাগম্যালিয়ন এর ছিল অসাধারণ প্রতিভা। কিন্তু সে মেয়েদের ঘৃণা করে। তার ধারণা ছিল এমন যে প্রকৃতি নারীদের তৈরি করেছে সীমাহীন দোষের আধার করে। তার সংকল্প সে কখনোই বিয়ে করবে না। নিজের শিল্প নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছা তার। একদিন সে একটা মূর্তি তৈরি করল, খুব সুন্দর এক মেয়ের। কারণ হতে পারে, জীবন থেকে যত সহজে সরিয়ে রাখতে পেরেছে মন থেকে তত সহজে নারীচিন্তাকে সে দূরে রাখতে পারেনি। অথবা হয়ত একটা নিখুঁত নিষ্প্রাণ নারী তৈরি করে সে পুরুষদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিল সত্যিকার নারীদের খুঁতগুলো। অসামান্য একটা ভাস্কর্য জন্ম নিল তার হাতের ছোঁয়ায়। আর এটাই প্যাগম্যালিয়নের জন্য কাল হয়ে উঠল।
দিনরাত খাটতে লাগল সে মূর্তিটার পেছনে। ধীরে ধীরে তা হতে লাগল আরো বেশি মনোহর, আরো বেশি চোখজুড়ানো। দেখে বোঝাই যায়না এ কোন মানবী না বরং সাধারণ একটা মূর্তি। প্যাগমিলিয়ন তার সৃষ্টির গভীর প্রেমে পড়ে গেল। বাস্তবের প্রেমিকার মতই আচরণ পেতে লাগল সেই পাথরের টুকরা। যতই সুন্দর পোশাক গায়ে চড়াক, যেভাবেই ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিক, যেমনই যত্ন নিক, এক বিন্দু আবেগের জন্ম দিতে পারলো না সে মূর্তিটার মাঝে। প্রবল দুঃখে উন্মাদপ্রায় প্যাগম্যালিয়ন। কারণ সারাজীবন এই নিষ্প্রাণকেই ভালবাসতে হবে তার। এমন অদ্ভুত প্রেমিক মনোযোগ কাড়ল প্রেমের দেবী ভেনাসের। তার ইচ্ছা হল এই ভগ্নহৃদয় তরুণের জন্য কিছু করার। ভেনাসের ভোজের দিন, সারা সাইপ্রাস দ্বীপে উৎসব। বেদীতে বেদীতে ধূপের সুবাস। রাজ্যের সমাগত প্রেমিকদের মধ্যে ছিল প্যাগম্যালিয়নও। তার প্রার্থনা, সে যেন তার মূর্তিটির মত মোহনীয় কোন পার্থিব রমণীকে খুঁজে পায়। কিন্তু ভেনাস ঠিকই বুঝতে পারলেন ভাস্কর আসলে ঠিক কি চায়।
বাড়ি ফিরে প্যাগম্যালিয়ন দাঁড়াল তার ভালবাসার প্রস্তরকীর্তির সামনে। হাত বুলিয়ে দিল তার গায়ে। চমকে গেল সে। তার কি মনের ভুল নাকি সত্যিই সে উষ্ণতা টের পেল? মূর্তির ঠোঁট, নাক, মুখ, বাহু সারা শরীর আস্তে আস্তে পালটে যেতে লাগল। কব্জির নীচে ধমনীর স্পন্দন জন্ম নিল। কাঠিন্য সরে গিয়ে জেগে উঠতে লাগল প্রাণ। বিস্মিত তরুণের গভীর আলিঙ্গনের স্পর্শে প্রাণহীন মূর্তি মানবীতে পরিণত হল। তার চোখের দিকে চেয়ে মিষ্টি হাসি দিল তার আরাধ্য। প্যাগম্যালিয়নের এই আত্মার আত্মীয়ের নাম রাখা হল গ্যালাটি। ভেনাস নিজে উপস্থিত থেকে তাদের বিয়েতে আশীর্বাদ দিলেন।
Tuesday, October 23, 2007
ছোট্ট জীবন
মাঝে মাঝে একটা কথা ভাবলে খুবই দুঃখ লাগে। সেটা হল আমি কত কত কিছু জানিনা। পৃথিবীতে জ্ঞানের কোন সীমা নেই আর আমি কিনা এখনো কিছুই জানলাম না। ইতিহাস বলি, বিজ্ঞান বলি, শিল্প বলি বা দর্শন বলি কত কি আছে জানার আর শেখার অথচ আমরা বাঁচি অল্প কয়টা বছর। তার মধ্যে বইপুস্তক ধরে দেখার সুবিধাটাই বা পায় কয়জন আর ধরে দেখে তাকে ধারণ করার চেষ্টাই বা করে কয়জন। গ্রন্থগত বিদ্যার কথা বাদই দিলাম, জীবনকে চোখ মেলে দেখার মত সময়টা সুযোগটাও হয় কয়টা মানুষের। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে অন্যের যাপিত জীবন বা নিজের অযাপিত জীবন নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা মাথাতেও কি আসে? হঠাৎ জন্ম হঠাৎ মৃত্যু, তার মাঝে কিছুদিন কেবল একটু শ্বাস-প্রশ্বাস। পৃথিবীতে এসে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতেই আবার বিদায় নিতে হয়। মানুষ আরো অনেক বছর বাঁচতো যদি! আসলে কি আদৌ কোন লাভ হত? পৌরাণিক চরিত্র টিথোনাস অমরত্ব চেয়ে নিয়েছিল। কিন্তু অসীম যৌবন চাওয়ার কথা তার মনে আসেনি। তার ফল হল এই যে সে বেঁচে থাকছে তো থাকছেই, মৃত্যু আর আসে না, কিন্তু সে বেঁচে আছে একটা জরাগ্রস্ত লৌলচর্ম বৃদ্ধ হয়ে। আসলে আয়ুর দোষ দিয়েও বা কি হবে। জ্ঞান পুরোপুরি আয়ুর সাথে সম্পর্কিত না। সারাটা জীবন আমরা একটা ছককাটা ঘরের মধ্যেই কাটিয়ে দিই। এই ঘর থেকে ওই ঘর আবার ওই ঘর থেকে এই ঘর। উপনিষদে মানবজীবনকে চারটা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। শেষভাগটা হল সন্ন্যাস। সাংসারিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে অরণ্যাচারী হয়ে দিন কাটানোর মত বলা যায়। কিন্তু মানুষ তো সমাজজীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। আশা ভালবাসার সঙ্গীর মত উপহারও সমাজ থেকে আসে, আবার সারাটা রাত গাছের নীচে জোনাকীর নাচ দেখার ইচ্ছাটাকেও ধামাচাপা দেয় সমাজ। লোকচক্ষুর বোঝা থেকেও মুক্তি নেই, জনজীবন থেকে সরে গিয়ে বাঁচতেও বাধা।
Sunday, October 21, 2007
আমার ডায়রি লেখা
আমি জানতাম “পিকুর ডায়েরী” সত্যজিৎ রায়ের কোন উপন্যাস। আজকে দেখলাম এটা একটা ছোটগল্প। বইটা ছোটগল্পের, তাই উপন্যাসের কোন অংশকে সংক্ষিপ্ত করে তুলে দেয়াও হতে পারে। পিকু সাত আট বছরের বাচ্চা একটা ছেলে। ডায়রি লেখে খুব আগ্রহ করে। অজস্র বানান আর যতির ভুল, তবু মূল বিষয়টা ধরতে পারা যায়। আমার মনে হয় এটা খুব কঠিন, বড়দের পক্ষে ছোটদের সাইকোলজি বোঝা। ছোটদের মনের গলি-ঘুপচি চিনে চিনে ঘুরতে পারাটা চাট্টিখানি কথা না। মানুষের বয়স বাড়লে তারা শৈশব মনে রাখে ঠিকই কিন্তু সূক্ষ্ম বিষয়গুলো হারিয়ে যায়। হঠাৎ করে বই পড়তে পড়তে কখনো মনে পড়ে যায়, আরে তাই তো, আমিও তো এমন সময়ে এমন কোন ঘটনার পর এমন করেই ভাবতাম। বই পুস্তকে অনেকবার পড়েছিলাম যে ডায়রি লেখা একটা খুব ভাল অভ্যাস। রোজনামচা লিখে রাখলাম, তারপর সেটা থেকে অনেক সময়ে আমরা দেখে অনেক কিছু শিখব। এসব জেনেছিলাম। তাই কয়েকবার খুব আঁটঘাট বেঁধে মোটাসোটা ডায়রি যোগাড় করে লেখা শুরু করেছিলাম। প্রায় প্রতিবারই কাজটা মাঝপথে থেমে গেছে। সারাদিনের ঘটনাপঞ্জী লিখতে হলে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আর রাতেরবেলা পায় ঘুম। কিসের ডায়রি লেখালেখি। পরে কলেজ পাশ করার পর স্কুলজীবনের অর্ধসমাপ্ত একেকটা ডায়রির পাতা উল্টে দেখতে খারাপ লাগত না। অতি তুচ্ছ সব ঘটনা। জামার রঙ নকশা বা স্কুলের ঘন্টার শব্দ কেমন অথবা নারকেল গাছের অপমৃত্যু সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। লিখতে লিখতে ভাবতাম, বড় হলে হয়ত এই ডায়রি ঘেঁটে দেখতে গেলে শিক্ষণীয় বিষয়গুলি চোখেই পড়বে না বরং হাসাহাসি করব। বড়রা দরকারি ব্যাপার নিয়ে হাসাহাসি করতে পছন্দ করে। সত্যি সত্যি যখন পড়তে গেলাম, হাসি পায়নি। তবে তুচ্ছ মনে হয়েছে বেশিরভাগ লেখার সাবজেক্টই। সবচেয়ে মজার যেটা লক্ষ্য করেছি তা হ্ল, সব লেখাতেই একটা এমন ছাপ আছে যে আমার বয়স কম হলেও আমি অনেক কিছুই বুঝি, অনেক কিছুই জানি যেটা মানুষ আমাকে দেখে ধারণাই করতে পারবে না। ডায়রিগুলো আমি রাখিনি। মনে হয়েছে আমি ঠিক কোন মুহূর্তে কি ভেবেছিলাম তার খুঁটিনাটি বর্ণনা আমার প্রয়োজন নেই। কখনো যদি কেউ দেখে ফেলে? আমার নিজের ব্যাপার শুধু আমার নিজের জন্য। সেসবকে যেই পরিস্থিতিতে যেভাবে বিবেচনা করব সেটাই যথেষ্ট। তাছাড়া প্রত্যেকেরই কিছু কিছু ভাবনা থাকে যার কোন লিখিত ডকুমেন্ট থাকা উচিত না। কেবল হৃদয় আর মস্তিষ্ক মিলে যতটুকু ধরে রাখবে ততটুকুই থাকবে।
Friday, October 19, 2007
বই
কিছুদিন আগে স্কুলজীবনে কেনা একটা বই অনেকদিন পর আবার পড়লাম। প্রজাপতি প্রকাশনের ‘রবিনহুড’। বিষয়বস্তু সেই মধ্যযুগের কিংবদন্তী রবিনহুড। বইয়ের শুরুতেই বলে নেয়া আছে, আদপেই যে এই নামের ঠিক এই চরিত্রের কোন লোক কখনো ছিল সে ব্যাপারটা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। সেটা নিয়ে আমি কখনোই মাথা ঘামাইনি। নটিংহ্যাম শহর, শেরউড জঙ্গল, ব্লু বোর সরাইখানা, তীর ছোঁড়া প্রতিযোগিতা সব মিলিয়ে রবিনহুডের দস্যুজীবনটা রঙ চড়ানো গল্পে খুব আকর্ষণীয় লাগার কথা। আমার লেগেছে। এখন এরকম কোন মানুষ থাকলে খারাপ হত না। পুকুরচোরদের শিক্ষা হত। সেই সময় রবিনহুড আমার খুব প্রিয় একটা চরিত্র ছিল। চরিত্র না বলে বলা উচিত ব্যাক্তিত্ব। আফসোস হত কেন কয়েকশ বছর আগে নটিংহ্যামে জন্ম নিলাম না। তাহলে আমি অবশ্যই শেরউডে থাকতাম। তখন জেনেছিলাম একটা ছবিও আছে কেভিন কস্টনারের, Robinhood, the prince of thieves. ছবির নামে আমার আপত্তি, রবিনহুড কখনোই ‘চোর’ ছিল না। এতদিন পর বইটা পড়ে ভাল লাগলেও শেরউডে চরে বেড়াতে মোটেও ইচ্ছা হয়নি। আগের মত মুগ্ধও হইনি। যখন খুব ভাল লাগা পুরানো কোন বই আবার পড়ি, আমি একটু বিচার করারও চেষ্টা করি আমার দৃষ্টিভঙ্গী, মানসিকতা কতখানি বদলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুভূতি প্রথমবারের চেয়ে অনেকটা অন্যরকম হয়। একই ঘটনাকেই মস্তিষ্ক ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে। বনফুলের ছোটগল্প ‘পাঠকের মৃত্যু’র মত, যেখানে একটা খুব ভাল লাগা গল্পের বই কয়েক বছরের ব্যবধানে একজন পাঠকের কাছে নিতান্ত পানসে হয়ে যায়। ভাগ্যিস মানুষ বইয়ের মত স্থির না। সময়ের সঙ্গে মানুষ যদি না বদলাতো তাহলে কিছুতেই একজন মানুষকে বেশিদিন ভাল লাগতো না।
Tuesday, October 16, 2007
পার্থক্য
আজকে টিভিতে একটা জিনিস দেখে খুবই মেজাজ খারাপ হল। প্রায়ই দেখা যায় কোন ছেলে যখন আরেকজন ছেলেকে চ্যালেঞ্জ করতে যায় বা তার ‘পৌরুষ’ নিয়ে টিটকারি দিতে চেষ্টা করে, তখন বলা হয়, সে যদি অমুক কাজটা না পারে বা তমুক করতে ভয় পায় তাহলে যেন সে চুড়ি পরে বসে থাকে। ছেলেদের কাছে এটা আঁতে ঘা লাগার মত একটা কথা, চুড়ি পরতে বলা। অর্থাৎ প্রকারান্তরে তাকে মেয়ে বলা। আমি ভাবছি। চুড়ি পরা কি ভীতুর লক্ষণ? মেয়েরা বুঝি খুব ভীতু। কি সর্বনাশের কথা! রিনিক ঝিনিক চুড়ির ঝংকার নিয়ে কত গান কত কাব্য লেখা হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ছেলেরাও তো খুব ফ্যাশনেবল ভাব নিয়ে চুড়ি পরে। নাকি ওইটার ব্রেসলেট বা অন্য নাম বলতে হয়? না না আসলে ‘পুরুষ’ কে ‘নারী’ বলা মানে তাকে চরম অপমান করা। যেমন আমরা জানি মানুষ হল সৃষ্টির সেরা; এখন আমাকে কেউ গরু গাধা খ্যাঁকশিয়াল এসব কিছু বললে আমি কি হাসিমুখে মেনে নেব? কিন্তু কথা হচ্ছে মেয়েরা নিম্ন শ্রেণী হল কেন? ভীতুই বা কিভাবে হল? ধরলাম, নির্জন পথঘাট পেলে মেয়েরা দল বেঁধে বিপরীত লিঙ্গকে আক্রমণ করে না, মেয়েরা কথায় কথায় জোর খাটায় না, মেয়েরা পরিবারের সুখের জন্য প্রয়োজনে নিজের সাধ আহ্লাদ ভুলে গিয়েও খুশি থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু এসব এমন খারাপ ব্যাপার কিসের? কত ছেলেও তো এরকম হয়। মানে মানুষ হলে এমন স্বভাব থাকার কথা। আমরা উপলব্ধি করিনা আমাদের একেকজনের জন্মের পেছনে, আমাদের বড় হয়ে ওঠার পরোক্ষে একজন ব্যক্তির দীর্ঘকালের পরিশ্রমের কথা। যেসব মানুষগুলো দিনের পর দিন কষ্ট চেপে আরেকটা প্রাণকে নিজের মধ্যে ধারণ করার, তার জীবনের সাফল্যের জন্য নিজেদের সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকার তীব্র সাহস আর ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে আসে, তাদেরকে ভীতু, নীচু বা হেয় ভাবার প্রবণতা কি অক্ষমদের হীনমন্যতা থেকেই সৃষ্টি নয়?
ঈদ
এবারের ঈদটা চলে গেল দেখতে দেখতে। ঈদের দিন রাস্তায় বের হওয়া রঙিন রঙিন মানুষ দেখতে বেশ লাগে। সামর্থ্যবান সবার গায়ে নতুন পোশাক। ছোটদের হাতে আবার বেলুন। সকালের দিকে মেঘ মেঘ ছিল। কয়েকটা ফোঁটাও পড়েছিল। পরে আর থাকেনি সেটা। অনেকদিন ঈদের দিন বৃষ্টি হয়না। নাকি আমার মনে পড়ছেনা? সে যাই হোক, রোজার চলে যাওয়ায় এখন একটু খারাপও লাগছে। আবার সেই হিসাব করা প্রতিদিনকার জীবন শুরু হচ্ছে। ঘুম থেকে ওঠ, ভার্সিটি যাও, বাসায় ফেরো, বইপত্রে হাত লাগানোর চেষ্টা কর, খাও, ঘুমাও এই তো। কিছুদিন পরপর দারুণ দারুণ সব ঘটনা ঘটলে মন্দ হয়না।
Friday, October 12, 2007
অলস সময়, অলস ভাবনা
ঘুম নিয়ে আমার একটা বক্তব্য আছে। সেটা হল, the less you sleep, the more you get to enjoy. ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমরা কত সময়ই না নষ্ট করি। অল্প কয়েক বছরের ছোটখাট জীবন, তার তিন ভাগের এক ভাগ নাকি মানুষ ঘুমিয়ে কাটায়। এই পরিসংখ্যানটা অবশ্য আমার না, পেপারে পড়েছিলাম। কি অপচয়! সুতরাং সুস্থ থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ঘুমালেই হল। মজার ব্যাপার হল ঘুম খুবই আকর্ষণীয় বস্তু। মাতাল ঘুমের মাঝখান থেকে ডেকে তুলে স্বর্গেও নেয়া যাবেনা। সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হল তন্দ্রা, তীব্র ঘুম চেপে বসার আগের সময়টা। আর সেই সাথে যদি একটা রোমাঞ্চকর স্বপ্ন দেখে ফেলা যায় তাহলে তো ষোলআনা। অপচয়ের মাত্রা খানিকটা কমে আসবে।
ইউনিভার্সিটি প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ। এসময় যেই জিনিসটা সবচেয়ে ভাল শিখেছি তা হল ঘুম কত প্রকার ও কি কি। যেহেতু রুটিনমাফিক ক্লাসে যাওয়া আসা নেই তাই দিনের কাজকর্মে একটা জড়তা এসে গেছে। ছক এলোমেলো হয়ে গেছে। তার মধ্যে আবার রোজার দিন। দেরীতে ঘুমাই দেরীতে উঠি। আজকে দুপুরে এক বন্ধুর সঙ্গে বসে একটা ছবি দেখলাম। বেশ পুরানো। ব্যাক টু দ্য ফিউচার, ফার্স্ট পার্ট। হলিউদের ছবিজগতে বেশ পরিচিত নাম। মনে আছে এই ছবিটা আমি প্রথম দেখি ক্লাস সিক্সের শেষ দিকে, বা সেভেনের প্রথম হবে। বিটিভিতে মুভি অব দ্য উইক নামে একটা স্লট ছিল, এখন আছে কিনা আমি জানিনা। সেখানেই পরপর তিন সপ্তাহে তিনটা পার্ট দেখেছিলাম। এবার দেখে যতখানি বুঝেছি তখন এত বুঝিনি। তবুও খুব ভাল লেগেছিল। তারপর ক্লাসে গিয়ে আলোচনা। কি মজার একটা ছবি, নায়কটা কি কিউট। যত দূর মনে পড়ে একটা এরকম ভাবও এসেছিল, হ্যাঁ আমি ইংলিশ মুভি দেখি তো, বুঝি তো, না বোঝার কি আছে। হ্যাঁ যারা অভিনয় করে তাদেরকেও চিনি, যেমন, মাইকেল জে ফক্স। তার বেশ কিছু বছর পর জেনেছিলাম, মাইকেল জে ফক্সের কি যেন একটা কঠিন অসুখ হয়েছে, বেশিদিন বাঁচবে না। মন খারাপ লেগেছিল। আহা বাচ্চা বাচ্চা টাইপের লোকটা, মারাই যাবে এত তাড়াতাড়ি? পরে সম্ভবত তার অসুখটা সেরে গেছে। এখন কি সে অভিনয় করে? নাম তো শুনিনি অনেকদিন। ইন্টারনেট ঘেঁটে খুঁজে দেখা যেতে পারে।
আমাদের ছোটবেলায় একটাই টিভি চ্যানেল ছিল। অবশ্য সেই ছোটবেলা মিলিয়ে যাবার আগেই দেশে স্যাটেলাইট চলে আসে। অবাক লাগত। একসঙ্গে কয়েকটা চ্যানেল? মানে কয়েকরকম অনুষ্ঠান চলবে, দেখা যাবে যেটা খুশি? অনেকদিন পর্যন্ত এটা উচ্চবিত্ত পরিবারেই সীমাবদ্ধ ছিল। আমাদের জন্য ছিল বিটিভি। সেখানে অয়োময় (এই শব্দটার মানে এখনো জানা হয়ে ওঠেনি), কোথাও কেউ নেই, রূপনগর এমন আরও অনেক নাটক মনোযোগ দিয়ে দেখতাম আমরা, মানে সেই সময়কার বাচ্চারা। আমাদের বাসায় কম্পিউটার, টেলিফোন এসব তখন ছিল না। ডাকবিভাগের হলুদ রঙের সিল মারা খামে চিঠি আসত চাচাদের...ভাইয়া, পত্রে শতকোটি সালাম নিবেন, ভাবীকেও তদ্রূপ জানাবেন...তারপর দেশের বাড়ির নানা খবর। এখনও কি স্কুলের বইয়ে প্রিয় শখ লেখা হয় ডাকটিকেট সংগ্রহ? এখন নিশ্চয়ই ছোটরা শখ বদলে ফেলেছে। ফেলে দেয়া প্রিপেইড কার্ড বা পোকেমনের স্টিকার বরং যোগাড় করা সহজ। কিংবা সিরিয়াস ধরণের শিশুরা হয়ত ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দেখে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করে। যস্মিন যুগে যদাচার।
ইউনিভার্সিটি প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ। এসময় যেই জিনিসটা সবচেয়ে ভাল শিখেছি তা হল ঘুম কত প্রকার ও কি কি। যেহেতু রুটিনমাফিক ক্লাসে যাওয়া আসা নেই তাই দিনের কাজকর্মে একটা জড়তা এসে গেছে। ছক এলোমেলো হয়ে গেছে। তার মধ্যে আবার রোজার দিন। দেরীতে ঘুমাই দেরীতে উঠি। আজকে দুপুরে এক বন্ধুর সঙ্গে বসে একটা ছবি দেখলাম। বেশ পুরানো। ব্যাক টু দ্য ফিউচার, ফার্স্ট পার্ট। হলিউদের ছবিজগতে বেশ পরিচিত নাম। মনে আছে এই ছবিটা আমি প্রথম দেখি ক্লাস সিক্সের শেষ দিকে, বা সেভেনের প্রথম হবে। বিটিভিতে মুভি অব দ্য উইক নামে একটা স্লট ছিল, এখন আছে কিনা আমি জানিনা। সেখানেই পরপর তিন সপ্তাহে তিনটা পার্ট দেখেছিলাম। এবার দেখে যতখানি বুঝেছি তখন এত বুঝিনি। তবুও খুব ভাল লেগেছিল। তারপর ক্লাসে গিয়ে আলোচনা। কি মজার একটা ছবি, নায়কটা কি কিউট। যত দূর মনে পড়ে একটা এরকম ভাবও এসেছিল, হ্যাঁ আমি ইংলিশ মুভি দেখি তো, বুঝি তো, না বোঝার কি আছে। হ্যাঁ যারা অভিনয় করে তাদেরকেও চিনি, যেমন, মাইকেল জে ফক্স। তার বেশ কিছু বছর পর জেনেছিলাম, মাইকেল জে ফক্সের কি যেন একটা কঠিন অসুখ হয়েছে, বেশিদিন বাঁচবে না। মন খারাপ লেগেছিল। আহা বাচ্চা বাচ্চা টাইপের লোকটা, মারাই যাবে এত তাড়াতাড়ি? পরে সম্ভবত তার অসুখটা সেরে গেছে। এখন কি সে অভিনয় করে? নাম তো শুনিনি অনেকদিন। ইন্টারনেট ঘেঁটে খুঁজে দেখা যেতে পারে।
আমাদের ছোটবেলায় একটাই টিভি চ্যানেল ছিল। অবশ্য সেই ছোটবেলা মিলিয়ে যাবার আগেই দেশে স্যাটেলাইট চলে আসে। অবাক লাগত। একসঙ্গে কয়েকটা চ্যানেল? মানে কয়েকরকম অনুষ্ঠান চলবে, দেখা যাবে যেটা খুশি? অনেকদিন পর্যন্ত এটা উচ্চবিত্ত পরিবারেই সীমাবদ্ধ ছিল। আমাদের জন্য ছিল বিটিভি। সেখানে অয়োময় (এই শব্দটার মানে এখনো জানা হয়ে ওঠেনি), কোথাও কেউ নেই, রূপনগর এমন আরও অনেক নাটক মনোযোগ দিয়ে দেখতাম আমরা, মানে সেই সময়কার বাচ্চারা। আমাদের বাসায় কম্পিউটার, টেলিফোন এসব তখন ছিল না। ডাকবিভাগের হলুদ রঙের সিল মারা খামে চিঠি আসত চাচাদের...ভাইয়া, পত্রে শতকোটি সালাম নিবেন, ভাবীকেও তদ্রূপ জানাবেন...তারপর দেশের বাড়ির নানা খবর। এখনও কি স্কুলের বইয়ে প্রিয় শখ লেখা হয় ডাকটিকেট সংগ্রহ? এখন নিশ্চয়ই ছোটরা শখ বদলে ফেলেছে। ফেলে দেয়া প্রিপেইড কার্ড বা পোকেমনের স্টিকার বরং যোগাড় করা সহজ। কিংবা সিরিয়াস ধরণের শিশুরা হয়ত ন্যাশনাল জিওগ্রাফি দেখে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করে। যস্মিন যুগে যদাচার।
স্কেচ
এমন কারো সাথে আমার পরিচয় নেই যে পেন্সিল স্কেচ করতে পারে। থাকলে যে আমার খুব লাভ হবে তা না। এমনিতেই। ছবি আঁকা বিষয়টার উপর আমার একটা মায়া আছে। একজন চিত্রশিল্পী আমার কাছে ঈর্ষণীয় ব্যাক্তি। আর সে যদি পেন্সিল স্কেচ করায় হাত পাকিয়ে থাকে তাহলে তো আরো। দাবি করব না যে আমি পেইন্টিং খুব বুঝি। বরং বলা যায়, বিমূর্ত চিত্রকলা জাতীয় কোনকিছুর থেকে আমি সাধারণ পেইন্টিংই বেশি পছন্দ করি। যেটার অর্থ একটু ভালভাবে তাকিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, উচ্চমার্গীয় তত্ত্ব হাতড়াতে হয়না। আমাদে পেপারের সাহিত্য সাময়িকীতে একটা কলাম দেয়। গুণীজনদের ভাললাগা মন্দলাগা নিয়ে। একটা প্রশ্ন থাকে, কোন ছবি এখনও চোখে লেগে আছে। তারা সবাই কমবেশি নানা দেশ ঘুরে আসা মানুষজন। কারো পছন্দ গুয়ের্নিকা, কারো সানফ্লাওয়ার, কারো মোনালিসা বা দ্য লাস্ট সাপার। আমারও একটা পছন্দের ছবি আছে। আমাকে তো কেউ জিজ্ঞেস করে না, তাই নিজেকেই আগ বাড়িয়ে বলতে হয়। একবার চারুকলার এক এক্সিবিশনে একটা পেন্সিল স্কেচ দেখেছিলাম। ছবির বিষয় মতিঝিলের দিককার একটা স্কাই ভিউ। খুব সম্ভবত সেখানকার কোন উঁচুতলার ছাদ থেকে তোলা কোন ফটোগ্রাফ দেখে আঁকা হয়েছে। যেভাবেই আঁকা হোক না কেন, এখনও পর্যন্ত আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ছবি সেটা। সেটা যে আসলে একটা সাদাকালো ফটো না, হাতে আঁকা ছবি, বিশ্বাস করা কঠিন। দুঃখের কথা হল সেই ছবিটার নাম বা আঁকিয়ের নাম আমার মনে নেই। একটা প্রতিযোগিতার প্রথম বা দ্বিতীয় ছবি ছিল। সেখানেই আরো কিছু চমৎকার পেইন্টিং দেখেছি। সবই পেন্সিলে করা। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা দুমড়ানো কনডেন্সড মিল্কের কৌটা, খাটের নীচের ফিতা খোলা কেডস, কুঁচকানো টেবিলক্লথ সবকিছু এত বেশি নিখুঁত! মানুষ যে কেমন করে এত সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকতে পারে!
Thursday, October 11, 2007
ফেমিনিন+ইজম
নারীবাদ বলে একটা শব্দ আছে। ইংরেজিতে যেটা নাকি হচ্ছে ফেমিনিজম। অক্সফোর্ড ডিকশনারির মতে, ফেমিনিজম মানে নারীদের জন্য অধিকার দাবির পক্ষে মতবাদ। আমার মোটেও পছন্দ না এসব ঘোলাটে অর্থ। নারীর আবার আলাদা অধিকার কি? তার মানে কি মানুষের অধিকার বলে কিছু নেই? পুরুষ আর নারীর জন্য দুই রকম? আবার তা থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হলে সেটার পুনরুদ্ধার নিয়ে যদি কেউ সোচ্চার হয়, তখন তাকে একটা বিশেষ মতবাদের অনুসারী বলে মানতে হবে? এসব পুরুষদের তৈরী নিশ্চয়ই।
আজকে এক বন্ধুর রেজাল্ট জেনে একটা কথা মনে পড়ল। ছেলেরা এমনটা প্রায়ই বলে থাকে, বিশেষ করে কোন পরীক্ষার রেজাল্টের পর যদি দেখা যায় তালিকায় মেয়েদের রেজাল্ট তুলনামূলকভাবে বেশি ভাল। সেটা হল, মেয়েরা সারাদিন ঘরে থাকে, বেশি পড়াশোনা করে, তাদের রেজাল্ট তাই ভাল হয়। আর তারা বাইরে থাকে, তাই এত পড়ালেখা করা হয়ে ওঠেনা। বড়ই হাস্যকর কথা। যেন ফলাফলের মধ্যে ছেলে আর মেয়ের আলাদা রাঙ্কিং একটা দরকারি বিষয়, যেন তাদেরকে একটা যুক্তি দেখাতে হবে কেন মেয়েরা তাদের চেয়ে ভাল করল এবং যেন তাদেরকে কেউ মাথার দিব্যি দিয়েছে, বাইরে বাইরে সময় কাটানোর জন্য। ঘরে থাকলেই পড়াশোনা হয়ে যায়, আর মেয়েরাও ঘরে বসে কেবল বই খাতার মাঝেই ডুবে থাকে। সে যাক, টিন এজারদের কত রকম কমপ্লেক্স থাকে। কিন্তু একদিন টিভিতে একই ধরণের একটা অনুষ্ঠান দেখে বিরক্তিবোধ হল। বেশ একটা নারী পুরুষ নিয়ে টক শো। ভাবলাম হয়ত ইন্টারেস্টিং কিছু হবে। কিন্তু হতাশ হতে হল। টিন এজ অনেক আগেই পেরিয়ে আসা তরুণ তরুণীরা সেই একই কাসুন্দি ঘাঁটতে ব্যস্ত। ছেলেরা আগোছালো, তারা টাকা পয়সার হিসাব গুলিয়ে ফেলে, মেয়েরা সাজতে বেশি সময় নেয়, তারা শপিং করতে গেলে সারাদিন লাগিয়ে দেয় এইসব নিয়ে তর্ক পাল্টা তর্ক। ওই বন্ধু পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছে। ভাবছি তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে সে বাইরে ব্যস্ত না হয়ে বেশি বেশি বাসায় থাকতো কিনা।
আজকে এক বন্ধুর রেজাল্ট জেনে একটা কথা মনে পড়ল। ছেলেরা এমনটা প্রায়ই বলে থাকে, বিশেষ করে কোন পরীক্ষার রেজাল্টের পর যদি দেখা যায় তালিকায় মেয়েদের রেজাল্ট তুলনামূলকভাবে বেশি ভাল। সেটা হল, মেয়েরা সারাদিন ঘরে থাকে, বেশি পড়াশোনা করে, তাদের রেজাল্ট তাই ভাল হয়। আর তারা বাইরে থাকে, তাই এত পড়ালেখা করা হয়ে ওঠেনা। বড়ই হাস্যকর কথা। যেন ফলাফলের মধ্যে ছেলে আর মেয়ের আলাদা রাঙ্কিং একটা দরকারি বিষয়, যেন তাদেরকে একটা যুক্তি দেখাতে হবে কেন মেয়েরা তাদের চেয়ে ভাল করল এবং যেন তাদেরকে কেউ মাথার দিব্যি দিয়েছে, বাইরে বাইরে সময় কাটানোর জন্য। ঘরে থাকলেই পড়াশোনা হয়ে যায়, আর মেয়েরাও ঘরে বসে কেবল বই খাতার মাঝেই ডুবে থাকে। সে যাক, টিন এজারদের কত রকম কমপ্লেক্স থাকে। কিন্তু একদিন টিভিতে একই ধরণের একটা অনুষ্ঠান দেখে বিরক্তিবোধ হল। বেশ একটা নারী পুরুষ নিয়ে টক শো। ভাবলাম হয়ত ইন্টারেস্টিং কিছু হবে। কিন্তু হতাশ হতে হল। টিন এজ অনেক আগেই পেরিয়ে আসা তরুণ তরুণীরা সেই একই কাসুন্দি ঘাঁটতে ব্যস্ত। ছেলেরা আগোছালো, তারা টাকা পয়সার হিসাব গুলিয়ে ফেলে, মেয়েরা সাজতে বেশি সময় নেয়, তারা শপিং করতে গেলে সারাদিন লাগিয়ে দেয় এইসব নিয়ে তর্ক পাল্টা তর্ক। ওই বন্ধু পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছে। ভাবছি তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে সে বাইরে ব্যস্ত না হয়ে বেশি বেশি বাসায় থাকতো কিনা।
Wednesday, October 10, 2007
ফুল
বেশ মেঘলা আজকের দিন, আজকের রাত। মেঘ মন্দ না। বৃষ্টিটাই যা মাঝেমাঝে বাড়াবাড়ি করে রাগিয়ে দেয়। এই রাতেও বাইরে মানুষজনের শব্দ। একটা অপরিচিত ফুলের ঝাঁঝও যেন আসছে। কিছুদিন আগে একটা নতুন জিনিস জানলাম। সেটা হল শিউলি ফুলের আরেক নাম হচেছ সেঁউতি। শিউলি ফুল আমার খুব পছন্দ। সাদা রঙের ফুল আমার সবচেয়ে ভাল লাগে। বেশির ভাগ সাদা ফুল মনে হয় রাতের বেলা ফোটে। গন্ধটা হয় একটু কড়া। খুব ছোটবেলায় আমরা যে বাসাটায় থাকতাম তার সামনে একটা কামিনীর গাছ ছিল। গভীর রাতে সুন্দর গন্ধ আসত। আর সকালে দেখা যেত নিচে একরাশ সাদা ফুল পড়ে আছে। তখন থেকেই কামিনী গাছ মানেই আমার কাছে রূপকথার গাছ। গাঢ় বাকল আর পাতাওয়ালা অভিজাত একটা গাছ। এখনও আমি সেটা মানি। আমাদের সবারই কিছু ধারণা আছে যেগুলো আমরা শৈশব থেকে লালন করি। অর্থহীন, ভিত্তিহীন কিন্তু আমারা তবু সেসবকে মনের মধ্যে পুষে রাখি। এটা কোন ছেলেমানুষি না। এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।
Subscribe to:
Posts (Atom)