Wednesday, November 7, 2007
মন
কিছুদিন আগে www.natural7wonders.com এ সুন্দরবন আর কক্সবাজারকে ভোট করলাম। পৃথিবীর সাতটা প্রাকৃতিক এলাকা বাছাই করা হবে সৌন্দর্যের ভিত্তিতে। এক নাম্বারে দিলাম সুন্দরবন আর দুই নাম্বারে কক্সবাজার। আমি এই দুইটা জায়গার কোনটাই এখনো সরাসরি দেখিনি। টিভি আর ছবিতেই যতটুকু দেখা। তবে কথা হচ্ছে বাংলাদেশের বাইরের অন্যান্য জায়গা তো আরো অদেখা। সেক্ষেত্রে নিজের দেশকে ভোট করাটাই বেটার মনে হল। একটা সাগর আর আরেকটা অরণ্য। বেশ বিপরীত। ভারতের ‘সানন্দা’ পত্রিকায় আগে দেখতাম ওদের কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিতে গেলে একটা প্রশ্ন থাকত, আপনার কোনটা বেশি ভাল লাগে, সাগর না পাহাড়? এই প্রশ্নটা আমার বেশ পছন্দ। অনেক সময়ই দেখেছি এটা একটা উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন। সাগর প্রিয় না পাহাড়। আমি নিজের কাছে উত্তর দিলে সবসময় বলি পাহাড়। দুইটার যেকোন একটা জায়গায় যাবার সুযোগ পেলে আমি পাহাড়ী কোন জায়গাই বাছাই করব। আর যেখানে ইচ্ছা যেতে পারলে প্রথমেই বান্দরবন। সাগর আর পাহাড় নিয়ে এই প্রশ্নটা কেন করা হয় জানিনা। আমার ধরে নিতে ভাল লাগে যে এর মধ্যে মানুষের প্রকৃতি বা ব্যক্তিত্বের কোন একটা দিক ফুটে ওঠে। বিভিন্ন আপাত অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, কুইজ বা কোন ছবির বিশ্লেষণ থেকে ব্যক্তিত্ব ব্যাখ্যা করা ব্যাপারটার প্রতি আমার আকর্ষণ আছে। হতে পারে এটা পুরোপুরি সঠিক হয়না। তারপরও এধরণের কিছু পেলে আমি সিরিয়াসলি সমাধান করি। তবে ফলাফলের মধ্যে চরিত্রের শুধু ভাল ভাল জিনিসগুলো না দিয়ে সবমিলিয়েই দেয়া উচিত। একবার দেখেছিলাম হাতের লেখার ধরণ দেখে মানুষ বোঝার উপায়। তো শেষ করার পর রেজাল্ট থেকে জানলাম আমিসহ সকলেই আসলে গুণের আধার। অনেকটা এরকম, যার লেখা বাম দিকে হেলানো সে মহৎ আর যার বাম দিকে হেলানো সে উদার। খুবই হতাশ হয়েছিলাম। সাইকোলজি খুব interesting একটা বিষয়। এবং সেই সাথে খুব confusing ও। মনোবিজ্ঞানকে একবাক্যে বিজ্ঞান বলাতে আমার সামান্য আপত্তি আছে। মানুষের মনস্তত্ত্বকে মনে হয় না বিজ্ঞানের মত প্লাস মাইনাসে বসিয়ে বা সূত্রে সাজিয়ে ব্যাখ্যা করে ফেলা যায়। আরেকটা মজার জিনিস আছে, রাশি। বিশ্বাস না করলেও মনোযোগ আমি ঠিকই দিই। ছোট থাকতে আমাদের মধ্যে হাত দেখা বলতে সীমাবদ্ধ ছিল কার কয়টা ছেলেমেয়ে হবে। দেখা যেত আমরা প্রায় প্রত্যেকেই বাংলাদেশের আদমশুমারিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে চলেছি। আসলে সত্যিই কি মানুষের ভাগ্য জানা যায়? বা আঙ্গুলে গোমেদ পাথর আকিক পাথর বাঁধিয়ে জীবনের মোড় ঘুরানো যায়? তাহলে তো আর এত হা হুতাশ থাকত না। আবার এটাও সত্যি যে বিপদের সময়ে, দুর্বলতার সময়ে আমরা একমাত্র আমাদের rationality কে আঁকড়ে ধরে রাখি না। অনমনীয় মনের বর্ম ভেদ করে অনেক কুসংস্কারও ঢুকে পড়ে। সারাজীবন সবরকম গোঁড়ামিকে অন্ধবিশ্বাসকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়া মাও সন্তানের মৃত্যুশয্যার সামনে এসে তাবিজ কবচ পানি পড়া ঝাড়ফুঁকের কাছে আশ্রয় নেন। এটাও মনের একটা বিচিত্র দিক। আমাদের অস্তিত্বের পুরোটা জুড়ে আছে মন। অথচ সারা শরীর কেটেকুটে তার সন্ধান পাওয়া যায় না। মস্তিষ্ককে মন বলে চালিয়ে দেয়া কি ঠিক হবে? সব অর্থ আর অনর্থের মূল আমাদের যেই মন, তা আসলে একতাল শুভ্র আর ধূসর পদার্থ, একথাটা এক বাক্যে মেনে নিতে গেলে সেই মনটাই কি দ্বিধার দোলাচালে দুলতে থাকে না?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment