Friday, November 9, 2007
বধ
আমার ক্লাসমেট খাদিজার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী চলে গেল কয়েক মাস আগে। সম্ভবত জুলাইতে। হলে থাকত খাদিজা। আপাদমস্তক কালো বোরকায় ঢাকা। আমার কাছের কেউ ছিল না। তবু যেদিন ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ওর মৃত্যুর খবর পাই, অসহায় একটা অনুভূতি হয়েছিল। জলজ্যান্ত একটা মেয়ে হঠাৎ নাই হয়ে গেল, সেটাও কিনা নিজের হাতে নিজের মৃত্যু। ওর আত্মহত্যার কারণ জানতে পারিনি। কেউ কেউ বলেছে প্রেমঘটিত। ওর মোবাইলের সিম নাকি ভেঙ্গে টুকরা করা, রুমে এমন কোন নিশানা পাওয়া যায়নি যেখান থেকে কোন দ্বিতীয় ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু জানা যায়। ইত্যাদি ইত্যাদি। এর পরপর ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা শোকসভা জাতীয় আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আমাদের টিচাররা অনেক কথাই বললেন। শাহনাজ সিনহা ম্যাম বললেন নিজেদের সমস্যা শেয়ার করতে, কারণ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত হল চরমতম ভুল। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যারের একটা কথা মনে আছে। একবার হলের এক মেয়ে নাকি প্রেমিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে আত্মহত্যা করেছিল। স্যার যখন খবর পেয়ে হাসপাতালে যান মেয়েটা তখন মৃত। মেয়েটার বাবার হতভম্ভ চোখের সামনে এক করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তার কিছু বছর পর ওই মেয়ের প্রেমিককে স্যার দেখেন নিউমার্কেটের সামনে। সঙ্গে লোকটার স্ত্রী আর সন্তান। অর্থাৎ সারমর্ম হল একটা অন্য মানুষের জন্য জীবনটাকে ধ্বংস করে দিয়ে কি লাভ হল? পুরোটুকুই তো ক্ষতি, নিজের আর নিজের পরিবারের। রোকেয়া হলে একটা সেমিনার হয়েছিল মেয়েদেরকে জন্য, আত্মহত্যার প্রবণতার খারাপ দিক নিয়ে। মেয়েদেরকে নিয়ে যেমন সেমিনার হল, সমাজ সংসার পরিবারের লোকদেরকে নিয়ে কি তেমনটা হবে? তাদেরকে কি কেউ বোঝাবে যে জীবনে অনেক বড় কোন ভুল করে বসা কোন মেয়ের উপর ক্রোধ নিয়ে চড়াও হবার আগে অন্তত তাকে মানসিকভাবে স্থির হওয়ার সময়টা হলেও পরিবারের দেয়া উচিত? আর পাড়াপ্রতিবেশীদেরকে কি কেউ জানাবে যে কাউকে অপবাদ দিয়ে নিজেকে খুব উঁচু জায়গায় তোলা যায় না? কিংবা জানালে বা বোঝালে আদৌ কি কেউ কর্ণপাত করবে? খবরের কাগজে, খবরের কাগজের বাইরে কত কত আত্মহত্যা ঘটে রোজ রোজ! মফস্বল আর গ্রামের দিকে তো বাচ্চা বয়সী মেয়েরা পর্যুদস্ত হয়ে অহরহ মরে গিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। কে খবর রাখে। আমার ধারণা, এভাবে নিজের হাতে মৃত্যুকূপ সাজালেও মরার আগ মুহূর্তে মানুষের মধ্যে তীব্রভাবে একটা বাঁচার আকুতি জন্মায়। কিন্তু তখন ফেরত আসার কোন উপায় থাকে না। কারণ মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় সবার চোখের আড়ালে। আমরা কি অন্যের দোষত্রুটি বের করতে গলদঘর্ম না হয়ে বরং সহানুভূতিশীল হতে পারি না? আর আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারি না যে তুমি ভুল বুঝছ? অন্যের অপরাধের জন্য, বা যা ঘটেছে তার জন্য আমরা তোমার দিকে আঙ্গুল তুলে তোমাকে ঘৃণা করছি না।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment