Sunday, October 28, 2007

আমার খেলনা আমার বই

ঢাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহার আমাদের বাসা থেকে দূরে না। দুই একদিন আগে প্রবর্তনা পূর্ণিমা হয়ে গেছে। দেখলাম মঠের সামনের জায়গাটায় ছোট ছোট কয়েকটা দোকানপাট বসে গেছে। মেলার মত। তখনি আমার অনেক বছর আগের মেলার কথা মনে পড়ে গেল। ঈদের দিন বা তার পরের দিন বিকালে আব্বুর সঙ্গে কমলাপুর মাঠের মেলায় যেতাম। এখন গ্রামবাংলার মেলার চিত্র হিসাবে আমরা যেমন ছবি ভেবে নিই সেরকম ছিল ওই মেলা। সন্ধ্যায় যখন বাসায় ফিরতাম হাতে একটা পলিথিন থাকত। পলিথিন ভর্তি আমার শখের জিনিসপত্র। সবচেয়ে প্রিয় ছিল মাটির পুতুল হাঁস-মুরগী এসব। সাথে ছোট্ট পিঁড়ি-বেলন বাঁশি বেলুন আর প্লাস্টিকের আরো এটা সেটা। তার মধ্যে কাঠের একটা পুতুল অনেকদিন ছিল আমার কাছে। এখন হারিয়ে গেছে। আর একটা কাঠের হাতি এখনো আছে। আশা করি এটা হারাবে না, খুব দুঃখের ব্যাপার হবে তাহলে। প্লাস্টিকের পশুর সেট ছিল আমার একটা। বাবা মায়ের তরফ থেকে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্টের উপহার। ছিল লেগো সেট। চুম্বক, নষ্ট রেডিওর নাড়িভুঁড়ি নাড়াচাড়া করতে গিয়ে মনে হত আমি বিরাট শিশুপ্রতিভা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি। ব্যাটারিওয়ালা মেম পুতুলের কথা তো না বললেই না। আমি মেম পুতুল বলতাম না। এই নামটা তখনই অলরেডি বিলুপ্ত। পরে বই থেকে জেনেছি। পুতুলটা মামার দেয়া। নাম ছিল তুলতুল। গায়ে গোলাপি উলের পোশাক আর টুপি। শান্ত স্বভাব, কখনোই বিরক্ত করেনি। সত্যি কথা বলতে এতদিন পর আমি এদের কাউকেই মিস করি না। তবে জীবনের প্রথম গল্পের বইটা হারানোর দুঃখ কখনোই যাবে না। ঠাকুরমার ঝুলি। ক্লাস ওয়ানের কথা সেটা। ওই অসাধারণ গন্ধ আর কোন কিছুতে নেই। বাজারে বহু ঠাকুরমার ঝুলি আছে। কিন্তু ঠিক ওই বইটা পাইনি আমি পরে। এখানে একটা ব্যাপারে আমি আমার বাবা মা কে বিশেষ ধন্যবাদ দিই। তা হল, আমাকে স্কুলজীবনে গল্পের কিনে দেয়া হত যথেষ্ট। হাইস্কুলে ওঠার পর ওপরতলার আপুর বিশাল সংগ্রহ থেকে প্রায়ই যে একসঙ্গে অনেকগুলো ধার করতাম সেখানেও নিষেধ ছিল না। অমুক টাইপের বা তমুক লেখকের প্রবেশ নিষিদ্ধ এমনটাও না। আজকে লিখতে বসে হঠাৎ করে আমার কৃতজ্ঞতা নতুন করে জেগে উঠছে। আমি জানি না সবার বাবা কলিগের কাছ থেকে নিজের উদ্যোগে মেয়ের জন্য বইপত্র নিয়ে আসেন কিনা কিংবা চাকরিজীবী মায়েরা মেয়ের ফরমায়েশের উপন্যাসের খোঁজে অফিসের লাইব্রেরি ঘাঁটার কষ্ট করেন কিনা। আমার ভাগ্য ভাল। আরেকটা জিনিস আমি বিশ্বাস করি যে গল্পের বইয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ না থাকলে একটা মানুষ কিছুতেই ভালভাবে এবং শুদ্ধভাবে মাতৃভাষায় কোনকিছু লিখতে পারে না।

No comments: