Thursday, November 1, 2007

কবিতা

আজকে ভার্সিটি গেলাম না। Auden এর কবিতার একটা ক্লাস ছিল। কবিতা আমার জন্য কোন কালেই স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয় না। একেবারেই যে বুঝিনা বা একেবারেই পড়ি না তা বলব না। কিন্তু ঠিক পছন্দের না। এক বন্ধুর একটা বই আমার কাছে অনেকদিন ছিল। জীবনান্দের কবিতার সংকলন। আমি দুই তিনটার বেশি পড়তে পেরেছি বলে মনে পড়ছে না। জীবনানন্দ আরো বেশি জটিল লাগে। যেসব কবিতায় একটা গল্প আছে বা সাধারণ ছন্দে লেখা সেসবই আমার জন্য সহজবোধ্য। সঞ্চয়িতা থেকে বেছে বেছে কাহিনীভিত্তিক কবিতাগুলো পড়েছি। রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ আমার সবচেয়ে প্রিয় বই। ছোটগল্প এত সুন্দর করে লেখা যায়! এই বইয়ের ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পটা পড়ে প্রতিবারই মন খারাপ হয়। ‘মধ্যবর্তিনী’, ‘দিদি’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘রাজপথের কথা’, ‘সুভা’ সবই অসাধারণ। গল্প, উপন্যাস বা সিনেমার শেষটা সুখী সুখী না হয়ে কমবেশি দুঃখ থাকলেই আমার বেশি ভাল লাগে। ক্লাস নাইনে এক টিচার প্রশ্ন করেছিলেন আমাদের বাংলা বইয়ের কোন গল্পটা আমাদের সবচেয়ে পছন্দ। আমি বললাম, ছুটি। তারপরের প্রশ্ন, ছুটি কেন। বললাম, শেষটা দুঃখের হলে আমার ভাল লাগে। এবার প্রশ্ন, দুঃখের গল্প কেন ভাল লাগে। আর কি বলব আমি। কেন ভাল লাগে তা তো কখনো ভেবে দেখিনি। আর সবকিছুর তো বিশেষ কারণও থাকে না। আরেকদিন একই টিচার আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোন জিনিসটায় বেশি আগ্রহ পাও, জীবজগতের খুঁটিনাটি নাকি মহাবিশ্বের গ্রহনক্ষত্র? আমি বেছে নিলাম মহাবিশ্ব। আবারও একই কথা, কেন? আমি এই টাইপের একটা উত্তর দিয়েছিলাম, মহাবিশ্ব নাগালের অনেক দূরে, এজন্য এটা বেশি আকর্ষণীয়। সেই শিক্ষিকা কেন যেন আমার দিকে বেশি লক্ষ্য করতেন। সুতরাং তাকে আমার শাশুড়ী বলা আমার বন্ধুদের জন্য স্বাভাবিকই ছিল। কারণ ক্লাসে কেউ কোন টিচারের স্নেহের পাত্র হওয়া মানেই তার ছেলের বউ। ছেলে থাকুক বা না থাকুক, ছেলের বয়স যতই হোক।

কবিতার কথা লিখতে গিয়ে কোথায় চলে গেলাম। প্রাইমারিতে পড়ার সময় আমার একটা হলুদ রঙের খাতা ছিল, ‘সহজাত কবিপ্রতিভা’র বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য। অনেক ছড়া ছিল সেখানে, অর্ধসমাপ্ত গল্প ছিল কয়েকটা। সেই খাতা খুলে নিজের ছন্দ মেলানোর ক্ষমতা দেখে বহুবার মুগ্ধ হয়েছি। নীচে তারিখ দিয়ে রাখতাম, পরে কবির বিভিন্ন বয়সের লেখা নিয়ে সংকলন বের হলে যেন সমস্যা না হয়। বিদেশি পটভূমিতে একটা উপন্যাস লেখার কাজও শুরু করেছিলাম। তবে শীঘ্রই ক্লাস সিক্সে উঠব বলে ব্যস্ততার কোন সীমা ছিল না। ফলে দুই পৃষ্ঠা পর্যন্ত গিয়েও উপন্যাসটা শেষ পর্যন্ত শেষ হল না। এটা একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে বলা যায়। কেননা সেসব গল্প উপন্যাস একটুখানি পড়ে দেখলেই বেশ যেন চেনা চেনা মনে হওয়ার একটা চান্স থাকত। তবে আমার ছড়া নিয়ে কোন অভিযোগের সুযোগ নেই, পুরোপুরি মৌলিক। হলুদ খাতাটা যদি হারিয়ে না যেত! সে নিজে তো হারালোই, আমার সবেধন নীলমণি সেই বিন্দু পরিমাণ সৃজনশীলতাটাকেও বগলদাবা করে নিয়ে গেল। এখন তো মাথা কুটেও কঞ্জুস কলমের ডগা থেকে কিছু বের করতে পারব না। অবশ্য এটা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই, শুধু খাতাটার জন্য যা একটু আফসোস হয়। তা হোক। জীবন যখন জীব জড় দুই নিয়েই, আনন্দ বেদনা কেবল মানুষকে ঘিরে হবে কেন, বস্তুবাচক বিশেষ্য নিয়েও হতে পারে।

1 comment:

মুক্তপাখি said...

কবিতার খাতাটা কোথায়?
আমার দেখতে ইচ্ছা করছে...