Friday, November 30, 2007

দেশ

সন্ধ্যায় বেইলি রোড থেকে রিকশা করে বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তায় বের হলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ট্রাফিক সিস্টেমের কি ভয়ঙ্কর অবস্থা। যে যেভাবে ইচ্ছা চালাচ্ছে। নিয়ম কানুন তো অনেকই আছে। কিন্তু সেটা মানাটা তো আর ঘাড়ে ধরে করানোর কাজ না। নিজের সিভিক সেন্স নিজেকেই বজায় রাখতে হয়। যখন বাসে থাকি, দেখি স্টপেজ আসার আগেই মানুষ বাস থেকে নেমে পড়ার জন্য পাগল। সেই স্টপেজও এমন কিছু দূরে না, সেখানে নেমে কেবল একটু হাঁটলেই গন্তব্যে চলে যাওয়া যায়। এটুকু কষ্টও করতে ইচ্ছা করে না কারো। এতই আরামের কাঙাল লোকজন! তুমুল গতিতে যখন গাড়ি চলে, একটা গাড়ির গতির সাথে দিকের সাথে অন্যান্য গাড়িগুলোর চলাচলও সম্পর্কিত। অথচ যাত্রীরা মাঝপথে বলে উঠে, থামান থামান নামব। তখন এক গাড়ির গায়ের উপর আরেক গাড়ির হামলে পড়ার যোগাড়! একটু গেলেই কিন্তু স্টপেজ। যদি গাড়ি না থামে, ড্রাইভারের দোষ; আর যদি এসবের জন্য কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলেও ড্রাইভারেরই দোষ। বড়ই আজব! আমাদের এমন এক দেশ! কত সমস্যা। আরেকটু ছোটবেলায় তো আমি কথায় কথায় বলতাম, আমি এই দেশে থাকব না। আমি নিউজিল্যান্ডে থাকব, অস্ট্রেলিয়াও খারাপ না। আমার আসলেই ইচ্ছা ছিল। কিছুটা বড় হবার পর থেকে অনেক মায়া লাগে। মনে হয় আমি অন্য দেশে যাব কেন, কেন থাকব অন্য দেশে। বাইরের দেশে কি এত আরাম করে প্রাণ খুলে গাল ভরে কথা বলা যায়? ফুচকা খাওয়া যায়? বারান্দায় দাঁড়ালে শাড়ি পরা পাঞ্জাবি পরা মানুষ দেখা যায়? ওখানে কি বাচ্চারা ভালভাবে বাংলা শিখতে পারে? কিজানি। যারা থাকে তাদের নানারকম অভিজ্ঞতা। কারো ভাল লাগে, কারো মন্দ লাগে। কেউ বলে একবার গেলে আর আসতে মন চায় না। আবার কেউ কেউ বলে অভ্যাস হয়ে যায়। কিন্তু নতুন করে ‘থাকা’ অভ্যাস করা কি কম ঝক্কি? হয়তবা এসব একেবারেই আমার ভাববাদী কথা। যখন কেউ চাকরি পায়না, পেলে চলার মত যথেষ্ট বেতন পায়না, বাজারে গেলে দামের আঁচে সেদ্ধ হয়, সমাজের লোকজন কটুকথা বলে তখন এত আহ্লাদ করে দেশে থাকার গোঁ ধরে রাখা যায় না। নাহয় কেনইবা পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে কেউ কেউ কোন কাজের নিশ্চয়তা ছাড়াই ভবিতব্যের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে ভিনদেশে যাত্রা করে। মনের আনন্দে নিশ্চয়ই না। কিন্তু যখন কোন স্বচ্ছল ব্যাক্তির কাছে ভবিষ্যতের প্ল্যানিং জানতে চাইলে ‘এই দেশে থেকে কি হবে’ জাতীয় আক্ষেপ শুনতে হয়, সেটা বড়ই কানে লাগে। কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই আমি আগে ভাগে ঠিক করে রাখব যে আমি এখানে থাকব না? আমি যে পড়াশোনা করার সুযোগ পেলাম যেটা কিনা সবার ভাগ্যে জোটে না, আমি যে নিজের মনস্তত্ত্বকে সুষম আকৃতি দেয়ার পরিবেশ পাচ্ছি যা কিনা এদেশের তথাকথিত সুবিধাবঞ্চিতরা পায়না, আমার কি উচিত না তাকে কাজে লাগানো? আর আমি যদি একজন সত্যিকারের “মানুষ” হতে পারি, সেই মানুষটাকে এখানেই রেখে দিই না কেন? যদি আমি এখানে ভালভাবে বেঁচে থাকতে পারি, কি দরকার পরের দুয়ারে কড়া নাড়ার? জানিনা এই স্পিরিট সারাজীবন ধরে রাখার মত সুখে আমি থাকতে পারব কিনা। এমন আশা আর স্বপ্ন তো আছেই, শুধু বাংলাদেশই আমার মধ্যে থাকবে না, আমিও বাংলাদেশের মধ্যেই থাকব।

No comments: