একটা সময় ইউনিভার্সিটি পড়ুয়াদের জীবনের প্রতি অন্যধরণের মোহ ছিল। অর্থাৎ স্কুলকালে। কাছ থেকে কাউকে দেখা হয়ে ওঠেনি। তবে নাটক সিনেমা দেখে যতদূর বুঝতাম তা হল অনেক বড় হলে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে হয়। সেটা অনেক বিশাল জায়গা, স্কুলের মত ছোট্ট না। সেখানে মাঝেমাঝে ক্লাস করতে হয় তবে পড়াশোনা করা লাগে না বললেই চলে। যখন ইচ্ছা বাসায় ফেরা যায়। সুন্দর সুন্দর জামা পরে যাওয়া যায়। আর ইউনিভার্সিটির আপুরা অনেক কিছু বোঝে, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করে। একা একা মার্কেটে যায়। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন হল স্বাধীন জীবন এবং আমিও একদিন নিঃসন্দেহে আপুদের মত ‘বড়’ হব। এখন ক্যাম্পাসে ঘুরলে দেখি সেই আপুদের বেশিরভাগই আমার চেয়ে ছোট ক্লাসে পড়ছে। কিন্তু তবু নিজেকে বড় হয়েছি বলে মনে হয়না। আমার সমবয়সী কেউ চাকরি করতে পারে এটা বিশ্বাস করা কঠিন লাগে। কারণ সারাজীবন জেনেছি চাকরি ‘বড়’রা করে। সত্যি বললে অনার্স মাস্টার্স এসব এখনো নিজের কানে ‘বড়’দের বিষয়ের মত শোনায়। একটা ব্যাপার অবশ্য ভাবনার সঙ্গে মিলে যায়। তা হল আসলেই এখানে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিষয়ে আলোচনা চলে। মোটামুটি থার্ড ইয়ার চলে এলেই ক্যারিয়ার নিয়ে সিরিয়াসলি মাঠে নেমে যায় বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী। স্কলারশিপের চেষ্টা চলে। সিভি জমা দেয়া হয়। পার্টটাইম কিছু করা যায় কিনা সেদিকে চোখকান খোলা রাখতে হয়। তাছাড়া মেয়েদের মধ্যে বিয়ের হাওয়া লাগতে শুরু করে। আড্ডা দিতে বসলে দেখা যায় পেশাগত আর সাংসারিক বিষয় আশয় অহরহ কথায় উঠে আসে। মনোমালিন্যও হয় প্রেম ভালবাসা, ভুল বোঝাবুঝি, ব্যাক্তিত্বের সংঘাত সংক্রান্ত ভারী ভারী কারণে। সবাই বড়দের মত কথা বলে, কাজ করে। আমি নিজেও এসবকিছুর বাইরের কেউ না। এককথায় বলতে গেলে এখন মনে হয় বড় হওয়ার মধ্যে এত আনন্দের তেমন কিছু নেই। বড় হতে থাকলেই মানুষের খুব উদাস উদাস হয়ে পেছনের দিনে ফেরত যেতে ইচ্ছা করে। ততটুকু পেছনে যখন আনন্দ বুঝতে পারার মত বয়স ঠিকই হয় কিন্তু সেই সাথে জীবনের কঠিন কঠিন ব্যাপারগুলো মাথায় ঢোকানোর মত প্রাপ্তবয়স্কতাও আসে না।
বাস্তবতা শব্দটার একটা নেগেটিভ চেহারা আছে। মধুর বাস্তবতা কথারটার চেয়ে কঠিন বাস্তবতা কথাটাই আমাদের বেশি পরিচিত। সেই বাস্তবতা এমনই কঠিন যে তা থেকে পালাতে ইচ্ছা করে। আর তাকে পাশ কাটিয়ে পালানোর মনোবৃত্তি আছে এমন মানুষের সংখ্যাও এতই বেশি যে তাদের জন্য escapist বলে একটা শব্দ চালু করতে হয়েছে। কিটস শেলি ঘরানার কবিরা আবার বাস্তবকে দূরে ঠেলে কিছুক্ষণ কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করার চেষ্টা করেন। কবিরা বিখ্যাত মানুষ বলে আলাদা গুরুত্ব। কিন্তু সব মানুষেরই কি বাস্তবকে নিয়ে কমবেশি অসন্তুষ্টি নেই? বাস্তব...বাস্তবতা...জীবনঘনিষ্ঠতা...জীবন। তাহলে জীবনটাই তো দেখা যাচ্ছে একটা খারাপ জিনিস। অথচ এত কষ্ট হলেও জীবনের গায়ে এতটুকু আঁচ লাগার ভয়ে আমরা সিঁটিয়ে থাকি। জীবনের ঘানি তো অনেক টানিয়াছ, এইবার কলুর ইচ্ছা তোমার ছুটি হউক... যমের মুখে এমন কথা শুনলে কেউ কি হাসিমুখে মেনে নিতে পারে? মানুষের মধ্যে একই সঙ্গে কতসব বিচিত্র বৈপরিত্য!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
বাস্তব...বাস্তবতা...জীবনঘনিষ্ঠতা..এই গুলোর কোনটাই উপভোগ করার মতো কোনও বিষয় নয়। এই জিনিষ গুলোকে আমি নিজেও ভয় পাই। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে যায়ও যাই না, আবার এগুলো মোকাবিলা করা কঠিন এক বেপার।
লেখিকার ভূমিকা তা সুন্দর হয়েছে কিন্তু শেষ টা ভালো হলো না। যাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক বড়ও তারই কেবল এটা ভালতাবৎলতেয় পারতো.
আর হ্যা, মানুষের মধ্যে একই সঙ্গে কতসব বিচিত্র বৈপরিত্য!
আসলেই বড় হওয়াটা বড়ই বিরক্তিকর। পেছনের দুরন্ত শৈশব আর কৈশোরকে অনেক(...) বেশী মিস করি।
মাঝেমাঝেই হারিয়ে যাই অতীতের সেই অসাধারন দিনগুলিতে...
Post a Comment