Sunday, October 21, 2007

আমার ডায়রি লেখা

আমি জানতাম “পিকুর ডায়েরী” সত্যজিৎ রায়ের কোন উপন্যাস। আজকে দেখলাম এটা একটা ছোটগল্প। বইটা ছোটগল্পের, তাই উপন্যাসের কোন অংশকে সংক্ষিপ্ত করে তুলে দেয়াও হতে পারে। পিকু সাত আট বছরের বাচ্চা একটা ছেলে। ডায়রি লেখে খুব আগ্রহ করে। অজস্র বানান আর যতির ভুল, তবু মূল বিষয়টা ধরতে পারা যায়। আমার মনে হয় এটা খুব কঠিন, বড়দের পক্ষে ছোটদের সাইকোলজি বোঝা। ছোটদের মনের গলি-ঘুপচি চিনে চিনে ঘুরতে পারাটা চাট্টিখানি কথা না। মানুষের বয়স বাড়লে তারা শৈশব মনে রাখে ঠিকই কিন্তু সূক্ষ্ম বিষয়গুলো হারিয়ে যায়। হঠাৎ করে বই পড়তে পড়তে কখনো মনে পড়ে যায়, আরে তাই তো, আমিও তো এমন সময়ে এমন কোন ঘটনার পর এমন করেই ভাবতাম। বই পুস্তকে অনেকবার পড়েছিলাম যে ডায়রি লেখা একটা খুব ভাল অভ্যাস। রোজনামচা লিখে রাখলাম, তারপর সেটা থেকে অনেক সময়ে আমরা দেখে অনেক কিছু শিখব। এসব জেনেছিলাম। তাই কয়েকবার খুব আঁটঘাট বেঁধে মোটাসোটা ডায়রি যোগাড় করে লেখা শুরু করেছিলাম। প্রায় প্রতিবারই কাজটা মাঝপথে থেমে গেছে। সারাদিনের ঘটনাপঞ্জী লিখতে হলে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আর রাতেরবেলা পায় ঘুম। কিসের ডায়রি লেখালেখি। পরে কলেজ পাশ করার পর স্কুলজীবনের অর্ধসমাপ্ত একেকটা ডায়রির পাতা উল্টে দেখতে খারাপ লাগত না। অতি তুচ্ছ সব ঘটনা। জামার রঙ নকশা বা স্কুলের ঘন্টার শব্দ কেমন অথবা নারকেল গাছের অপমৃত্যু সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। লিখতে লিখতে ভাবতাম, বড় হলে হয়ত এই ডায়রি ঘেঁটে দেখতে গেলে শিক্ষণীয় বিষয়গুলি চোখেই পড়বে না বরং হাসাহাসি করব। বড়রা দরকারি ব্যাপার নিয়ে হাসাহাসি করতে পছন্দ করে। সত্যি সত্যি যখন পড়তে গেলাম, হাসি পায়নি। তবে তুচ্ছ মনে হয়েছে বেশিরভাগ লেখার সাবজেক্টই। সবচেয়ে মজার যেটা লক্ষ্য করেছি তা হ্ল, সব লেখাতেই একটা এমন ছাপ আছে যে আমার বয়স কম হলেও আমি অনেক কিছুই বুঝি, অনেক কিছুই জানি যেটা মানুষ আমাকে দেখে ধারণাই করতে পারবে না। ডায়রিগুলো আমি রাখিনি। মনে হয়েছে আমি ঠিক কোন মুহূর্তে কি ভেবেছিলাম তার খুঁটিনাটি বর্ণনা আমার প্রয়োজন নেই। কখনো যদি কেউ দেখে ফেলে? আমার নিজের ব্যাপার শুধু আমার নিজের জন্য। সেসবকে যেই পরিস্থিতিতে যেভাবে বিবেচনা করব সেটাই যথেষ্ট। তাছাড়া প্রত্যেকেরই কিছু কিছু ভাবনা থাকে যার কোন লিখিত ডকুমেন্ট থাকা উচিত না। কেবল হৃদয় আর মস্তিষ্ক মিলে যতটুকু ধরে রাখবে ততটুকুই থাকবে।

1 comment:

Shahidul Mahfuz said...

ডায়রি লেখা একটা খুব ভাল অভ্যাস। রোজনামচা লিখে রাখলাম, তারপর সেটা থেকে অনেক সময়ে আমরা দেখে অনেক কিছু শিখব।.... আসলেই তও তাই। এখনও লিখছি। এখনও শিখছি। লিখে রাখার অভ্যাস মানুষ কে পেছনে টেনে রাখে না, বরং ভুল গুলো তুলে ধরিয়ে দেয়। অভিজ্ঞতা গুলো কে লিপিবদ্ধ করা। এটা জরুরি।

যতো ভালো sharp memory হোক না কেন, বয়সের সাথে এটা লোপ পায়। আমি যখন কাজে থাকি আমার প্রতিদিন এর কাজ লিপিবদ্ধ করি। লাভটা হলো, আমার কাজ করতেয় কতো সময় লাগে তা আমি একটা idea নিতে পারি।

আমি চোট বেলা থেকে ডায়েরী লিখি। চোট বেলার কাহিনী গুলো পড়লে আমার আজও হাসি পায়। অনেক কিছু ছিল যেগুলো কারো সাথে share করতে পারতাম না। প্রথম স্কুল পালনো, college er প্রথম class, অজানা জায়গা গুলোতে ঘুরে বেড়ানো, প্রথম ভালো লাগা এবং প্রথম ভালো লাগা হারিয়ে যাওয়া. আরও কতো কি। ডায়েরী আজও আমাকে এসব মনে করিই দেয়। লাভ? কোন লাভ নেই, শুধু একটু খানি relief এই যান্ত্রিক জীবন থেকে।