কালকের পেপারে সাংবাদিকদের ছোট ছোট অভিজ্ঞতা নিয়ে কয়েকটা লেখা বের হয়েছে। পড়তে ভাল লাগল। কেউ ফটোগ্রাফার, কেউ রিপোর্টার। কাজ করতে গিয়ে কত সময় কত কিছুর সামনে পড়তে হয়, কত কিছু দেখা হয় জানা হয়। সাংবাদিকদের কাজ ভীষণ পরিশ্রমের। সংবাদ সংগ্রহ করে আনা, আবার সেটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে আমাদের তৃষ্ণা নিবারণের মত যথেষ্ট আকার প্রকার দেয়া। তার মধ্যে আবার কারো সম্বন্ধে একটু এদিক ওদিক কথা বলে ফেললেও ফাঁড়া। মোটেও সহজ না। আসলে যারা ফিল্ডে গিয়ে কাজ করেন সেটা যেই পেশাই হোক, তাদেরকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। নানারকম মানুষ, নানারকম তাদের ব্যবহার। ধৈর্য্য ধরে রাখা মুশকিল। নিজেদেরকেও লাঞ্ছনা গঞ্জনার কবলে পড়তে হয় কত। সাংবাদিকদের হাতে কোন ইস্যুতে মানুষের সমর্থন বা অসমর্থন তৈরি করার শক্তি থাকে। কেউ কেউ তার অপব্যবহারও করে। তবে কিছু বিষয় আমার একেবারেই পছন্দ না। কেউ একবার সেলিব্রেটি হয়ে গেলে তার জীবন গেল। দেশে বিদেশে কাকে কার সঙ্গে কোথায় দেখা গেছে, কার বিয়ে কেন ভাঙলো, কার সাথে কার গোপন প্রেম এসব ফলাও করে ছাপার কি আছে? আমারা যারা পাঠক তাদেরও উচিত না এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি মাতামাতি করা। নিজের যেই ব্যাপারটা আমরা নিজের কাছে রাখতে চাই, অন্যের বেলায় সেটা জানার জন্য ছটফটানি করাটা কী ঠিক? তাছাড়া আমি এই কথাটার সাথে একমত না যে যারা জনপ্রিয় বা যারা কবি লেখক অথবা শিল্পী, মানুষের প্রতি তাদের একটা “দায়বদ্ধতা” আছে। বিশেষ দায়বদ্ধতার প্রশ্ন যদি আসে, মানুষের উন্নয়ন দেখার জন্য যাদেরকে নির্বাচন করা হয়, তাদেরই সেটা বেশি থাকার কথা। তাছাড়া দায়বদ্ধতা আমাদের সবারই আছে। দেশের মানুষের কাছে পরিচিত বা আদৃত ব্যক্তির মানুষকে প্রভাবিত করার সুযগ বেশি, এটা সত্যি। তার মানে এই না যে আমরা আশা করব সারাক্ষণ সেদিকে নজর দিয়েই তাদেরকে যে কোন পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্যই নিজস্ব ইচ্ছা অনিচ্ছার মূল্য আছে।
আজকে একটা ভাল জিনিস পড়লাম। পরিসংখ্যান বলছে গত কয়েক বছরে মেয়েরা তুলনামূলকভাবে এগিয়ে গেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিভিন্ন পেশাতে মেয়েদের উপস্থিতির হার আগের থেকে বেশি। গ্রামে নিরক্ষর মহিলারা সংসারের হাল ধরছে এরকম উদাহরণ দিনে দিনে বাড়ছে। এসব জেনে খুব ভাল লাগল। এর অর্থ হল মানুষের মানসিকতা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। আর্থিকভাবে সমর্থ হলে পরিবারে মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে সমস্যা আগের চেয়ে কমছে। অভিভাবকরা মেয়েদের লেখাপড়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাদের যে চাকরি করা দরকার এই ব্যাপারটাও এখন অপেক্ষাকৃত উদারভাবে নিতে পারছে মানুষ। যদিও আমি জানিনা এর পেছনে স্বচ্ছলতার খোঁজটাই বড় কারণ কিনা। কারণ যেটাই হোক, দেশের কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াটাই সুখের বিষয়। তবে মেয়েদের শিক্ষা আর পেশাজীবনের সমর্থক বাড়লেও পারিবারিকভাবে তাদের ওজন একই অনুপাতে বাড়েনি। অনেক পরিবারেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, রোজকার কাজের ভাগাভাগি বা মতের মূল্যায়নে মেয়েরা এখনো তাদের কাউন্টারপার্টের কাছে শাসিতই বলা চলে। এটারও পরিবর্তন হবে নিশ্চয়ই। আমার আকাঙ্খা মেয়েরা স্বাধীন হবে, যোগ্যতা দিয়ে বড় হবার যোগ্য হবে, দৃষ্টিভঙ্গীর দিক থেকে উদার হবে, মানসিকভাবে কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না এবং একদিন হাতে যথাযথ ক্ষমতা পেলে সেটাকে পুরুষের বিরুদ্ধে কিছুতেই ব্যবহার করবে না। লিঙ্গবৈষম্য শব্দটার প্রয়োজনীয়তা বিলুপ্ত হোক।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment