এবার মনে হচ্ছে ভাল শীত পড়বে। অবশ্য প্রতিবারই কিছু একটা দেখে আমি এই একই জিনিস আন্দাজ করে ফেলি। আর প্রতিবারই ভাবি আরে বুদ্ধি থাকলে এসব বুঝতে পারা কোন ব্যাপারই না। এখন হেমন্তকাল। নবান্নের ঋতু। নবান্নের কতটুকুই বা অবশিষ্ট আছে এখন! আজকাল তো ধান কাটার কাজ বছর জুড়েই চলতে থাকে। এ নিয়ে উৎসব করার সময় বা আগ্রহ থাকে না। এখন কেবল কার্তিক চলছে, তাতেই ভোরের দিকে একটু ঠান্ডা পড়ে। বৃষ্টি মৌসুম পেছনে ফেলে এসেছি বেশ কিছুদিনের জন্য। হেমন্তের বৃষ্টি ফসলের জন্য খারাপ সংকেত। এটা আমি জানি খনার বচন থেকে। “ যদি বৃষ্টি আগনে, রাজা যায় মাগনে “। আবার শীতের শেষে বৃষ্টি হওয়া ভাল লক্ষণ। “ যদি বৃষ্টি মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পূণ্যি দেশ “। খনার বচন বেশ ইন্টারেস্টিং। তার জন্ম সম্ভবত ময়মনসিংহে, সময়টা আমার জানা নেই। খনা সম্পর্কে আমি কেবল আর এতটুকুই শুনেছি যে তার জনপ্রিয়তায় তার শ্বশুরের ঈর্ষা হয়েছিল। তাই খনার জিভ কেটে ফেলে লোকটা। যেন এসব বচন টচন সে আর না দিতে পারে। এই কাহিনী সত্যি কিনা জানি না। তবে প্রকৃতির ব্যবস্থাটা কিন্তু দারুণ। শীতের শাকসবজি ভাল হবে যখন তার গায়ে কুয়াশা পড়বে। আবার বর্ষাকালের ফসলে বৃষ্টির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। গরমের ফলও নিশ্চয়ই ঠিকমত তাপ না পেলে ভাল হয়না। খনার আমলে এসব মেনে চলা প্রয়োজন ছিল। এই শতাব্দীতে খাবারদাবারের উৎস হাইব্রিড জাত। জৈষ্ঠ্য মাসে পাকা টমেটো মামুলি ব্যাপার। অন্যদিক দিয়ে দেখলে এখন গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর যুগ। বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হচ্ছে, ভূমিকম্প দোরগোড়ায় ইত্যাদি ইত্যাদি। এজন্যই হয়ত এখন বয়স্কদের মুখে ইলিশের স্বাদ কমে গেছে, আম লিচু পানসে লাগে, কোথায় সেই খালে বিলে মাছের দাপাদাপি...এসব আক্ষেপ শোনা যায়। তারপরও মানুষ পৃথিবীতে আছে, উৎপাদন চলবে, কৃষি চলবে। নারকেল কুল আপেল কুল এরকম নতুন সব প্রজাতি যুক্ত হবে ফসলের অভিধানে। শেষ করার আগে খনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার আরেকটা বচন জুড়ে দিচ্ছি।
“ কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত “।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
লেখিকা কি আবহাওয়াবিদ নাকি কৃষিবিদ? এটা কি
শস্য নাকি খনার বচন এর গল্প!
যেটাই হোক, একটা জিনিষ পড়ে খুব মজা লাগলও যে, খনার বচন ইর উৎপত্তি আমার দেশে।
Post a Comment