Thursday, October 25, 2007

শীতচিন্তা

আজকাল আমার জানালা গলে রোদ আসে। এর অর্থ শীত আসছে। জানালায় রোদ আসার মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন আনন্দ আছে। আমি জানি এটার উৎস কি। উৎস হল স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, বিশাল অবসর আর গল্পের বই পড়া, সেই সাথে কিছুদিনের মধ্যে নতুন ক্লাসে ওঠা, নতুন নতুন বইখাতাতে নাম লেখা অর্থাৎ সবমিলিয়ে একটু বড় হওয়া। সেই সঙ্গে বাঁধাকপি ফুলকপি শিম আর টমেটোকে ভুলে গেলে চলবে না। কেবল গাজরটাকে একটু সহ্য করে নিলেই হল। এতদিন পর কোনকিছুই আর আগের মত নেই। শুধু শীত আসার খুশিটাই ঝুলে ঝুলে টিকে আছে কিছুটা। আমি অবশ্য শীতের পিঠা খাওয়া বা খেজুরের রসের খুব ভক্ত এমনটা বলা যাবে না। তবুও শীতের সঙ্গে এসব ঐতিহ্যের নাম না জুড়ে দিলে চলে না। এই জুড়ে দেয়াটাও একটা ঐতিহ্য। সাহিত্যের জগতে শীত তেমন একটা স্নেহের পাত্র বলা যায় না। শীতকে বরং বিবর্ণতা, শুষ্কতা বা নিষ্প্রাণতার প্রতীক হিসাবেই দেখা হয়। গাছগুলো হুড়মুড় করে পাতা ঝরানোর জন্য পাগল না হয়ে গেলে হয়ত এই ঋতুটার রূপক অর্থ আরেকটু অন্যরকমই হত। আমাদের দেশে তো তুষার পড়ে না। ব্যাপারটা কেমন আমি জানি না। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকব আর উপর থেকে কিনা কুচি কুচি বরফ পড়তে থাকবে। ভাবতে বেশ রোম্যান্টিক। কিছুক্ষণ দাপাদাপি করলাম, আইসবল ছুঁড়লাম, তারপর আমার লগহাউসে ঢুকে ফায়ারপ্লেসের আগুনটা উস্কে দিলাম। এই সময়ের মধ্যে নিশ্চয়ই কফিও রেডি হয়ে যাবে। কফি অর্ধেক হতে না হতেই দেখি বাইরে তুমুল তুষারঝড়। না আজকে আর আপেল পাড়া হল না। ভেবেছিলাম খানিকটা সাইডার বানিয়ে রাখব। (সাইডার মানে আপেলের জুস। এই পর্যায়ে কল্পনার গাড়ি মোড় নিয়ে লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের গল্পের দিকে চলে যেতে থাকল...)

কয়েক দিন পরই রোদটা কোমল হতে শুরু করবে। আলো ঠিকই থাকবে কিন্তু তেজ থাকবে না। শীতকালের রোদের একটা হালকা গন্ধ আছে। সেটা শুধুমাত্র পড়ন্ত দুপুরে পাওয়া যায়। তবে ঝামেলা হল এসময় সন্ধ্যাটা বড় তাড়াতাড়ি নেমে আসে। আসে তো আসেই। গড়িয়ে গড়িয়ে রাত পর্যন্ত যেতে তার যেন অনন্তকাল লেগে যায়। সূর্য মশায়ের ঘুম ভাঙতেও তেমনই দেরি। লম্বা লম্বা রাত, ছোট্ট ছোট্ট দিন। এর মাঝেই একদিন পড়বে উত্তর গোলার্ধের ক্ষুদ্রতম দিন ২৩শে ডিসেম্বর। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন যথারীতি ক্ষুদ্রতম রাত। যত মেরুর দিকে যাব, দিনরাতের বৈষম্য বাড়তে থাকবে। মেরুর আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। পুরো পৃথিবীটাই নাকি একটা চুম্বকের মত। আমাদের চুম্বক উত্তর দিক দেখানোর জন্য যেদিকে মুখ বাড়িয়ে রাখে সেটা নাকি ভৌগলিক দক্ষিণ আর চুম্বকের দক্ষিণ নাকি বিশ্বচুম্বকের উত্তর। সবই অনেক আগের পড়া, ঠিকঠাক বললাম কিনা কে জানে। পড়াশোনার ব্যাপার কি মনে থাকে নাকি? না মনে থাকার কথা? এতদিন ধরে পড়েও আমি ঠিক জানিনা শেলির বা ব্রাউনিং এর বা কোলেরিজের লেখার স্টাইল কিরকম হয় যেটা কিনা পরীক্ষার ভারী ভারী লেখার জন্য দরকারি। অথচ ড্যান ব্রাউনেরটা ঠিকই বলতে পারব। আর টিভিতে নতুন বিজ্ঞাপন আসলে সেটার জিঙ্গেল হাবিবের কম্পোজিশন কিনা তা বোঝা তো এক মুহূর্তের ব্যাপার।

1 comment:

Shahidul Mahfuz said...

বাপরে বাপ। মানুষ তও দেখি কল্পনা দিয়ে পুরো দস্তুর আবহাওয়া বদলেয় দিলও। এমনিতে গরম এ বাঁচি না, তার উপর আবার fireplace e আগুন জ্বালানো!

ভালো হয়েছে।

একটা কথা। শীত কাল আসছে এটা আর একটা জিনিষ দিয়েয় বুঝা যায়। অন্তত আমি বুঝি। নিশ্বাস নিলে টের পাওয়া যায় যে শীত আসছে।