Tuesday, October 23, 2007
ছোট্ট জীবন
মাঝে মাঝে একটা কথা ভাবলে খুবই দুঃখ লাগে। সেটা হল আমি কত কত কিছু জানিনা। পৃথিবীতে জ্ঞানের কোন সীমা নেই আর আমি কিনা এখনো কিছুই জানলাম না। ইতিহাস বলি, বিজ্ঞান বলি, শিল্প বলি বা দর্শন বলি কত কি আছে জানার আর শেখার অথচ আমরা বাঁচি অল্প কয়টা বছর। তার মধ্যে বইপুস্তক ধরে দেখার সুবিধাটাই বা পায় কয়জন আর ধরে দেখে তাকে ধারণ করার চেষ্টাই বা করে কয়জন। গ্রন্থগত বিদ্যার কথা বাদই দিলাম, জীবনকে চোখ মেলে দেখার মত সময়টা সুযোগটাও হয় কয়টা মানুষের। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে অন্যের যাপিত জীবন বা নিজের অযাপিত জীবন নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা মাথাতেও কি আসে? হঠাৎ জন্ম হঠাৎ মৃত্যু, তার মাঝে কিছুদিন কেবল একটু শ্বাস-প্রশ্বাস। পৃথিবীতে এসে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতেই আবার বিদায় নিতে হয়। মানুষ আরো অনেক বছর বাঁচতো যদি! আসলে কি আদৌ কোন লাভ হত? পৌরাণিক চরিত্র টিথোনাস অমরত্ব চেয়ে নিয়েছিল। কিন্তু অসীম যৌবন চাওয়ার কথা তার মনে আসেনি। তার ফল হল এই যে সে বেঁচে থাকছে তো থাকছেই, মৃত্যু আর আসে না, কিন্তু সে বেঁচে আছে একটা জরাগ্রস্ত লৌলচর্ম বৃদ্ধ হয়ে। আসলে আয়ুর দোষ দিয়েও বা কি হবে। জ্ঞান পুরোপুরি আয়ুর সাথে সম্পর্কিত না। সারাটা জীবন আমরা একটা ছককাটা ঘরের মধ্যেই কাটিয়ে দিই। এই ঘর থেকে ওই ঘর আবার ওই ঘর থেকে এই ঘর। উপনিষদে মানবজীবনকে চারটা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। শেষভাগটা হল সন্ন্যাস। সাংসারিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে অরণ্যাচারী হয়ে দিন কাটানোর মত বলা যায়। কিন্তু মানুষ তো সমাজজীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। আশা ভালবাসার সঙ্গীর মত উপহারও সমাজ থেকে আসে, আবার সারাটা রাত গাছের নীচে জোনাকীর নাচ দেখার ইচ্ছাটাকেও ধামাচাপা দেয় সমাজ। লোকচক্ষুর বোঝা থেকেও মুক্তি নেই, জনজীবন থেকে সরে গিয়ে বাঁচতেও বাধা।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
মানুষ সমাজজীবনের সঙ্গে নয়, মানুষ মায়ার বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা।
Post a Comment