কতদিন হল এখানে কিছুই লেখা হয় না। এটা আমার নিজের পত্রিকা; সবগুলো কলাম আমার নিজেরই কলাম; মূলত আমি নিজেই পাঠক। তবে অসীম ধৈর্য্যশীল কিছুসংখ্যক ব্যক্তি নিজ গুণে আমার এসব আঁকিবুঁকি পড়ে ফেলতে সক্ষম হন এবং যাবতীয় দোষত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কি লেখা যায় বুঝে পাচ্ছি না বলে বিষয় হিসাবে “এতদিন কেন কিছুই লিখিনি তার কয়েকটা কারণ”কে ঠেলেঠুলে দাঁড় করিয়েছি। একটা হচ্ছে চিন্তাভাবনা থমকে গিয়েছিল। কিছুদিন আগে Daily Star থেকে একটা নতুন টার্ম শিখেছি, তা হল ‘writer’s block’। দেখা যায় কোন কারণ ছাড়াই লেখক কিছুই লিখতে পারছে না। ফলে আমি ধরে নিয়েছি যে আমার ক্ষেত্রেও এই ঘটনা ঘটেছে। সেক্ষেত্রে একটা সুবিধা হচ্ছে নিজেকে হোমরা চোমরা লেখক হিসাবে ভেবে নেয়া যায় যার কিনা মাথায় এত প্লট এত দর্শন যে একটার সাথে আরেকটার প্যাঁচ লেগে বিশাল জট তৈরি হয়ে যেতে পারে এবং সেই জট ভাবনার প্রবাহনালীতে ছিপি হয়ে আটকেও যেতে পারে। দ্বিতীয় সুবিধা হল অনেকদিন ধরে নতুন কিছু দেখা যাচ্ছে না কেন, এই মর্মে একটা প্রশ্ন তৈরি করা যায়, নিজেকে শোনানো যায় যে আমি ক্রমাগত যুগান্তকারী লেখনী সরবরাহকারী একজন ব্যাক্তি যার কয়েকদিনের অনুপস্থিতিতে চারিদিকে উদ্বেগের নহর বয়ে যায়। অন্য কারণটা হল “আসলে আমার সময় ছিল না”। কেন ছিল না সেই প্রশ্ন অবান্তর। কারণ সময়ের অভাবে বলতে গেলে কোন কাজই আমি করতে পারি না। আলমারির এলোমেলো কাপড়চোপড় গোছানো হয়ে উঠে না। শেলফের বইগুলো ঝেড়ে রাখা হয়না। ড্রয়ারে তল্লাশি চালিয়ে অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাতিল করা হয়না। পেপারে কয়েকটা জিনিস পড়ার জন্য আলাদা করে রাখলে আর কখনোই পড়ার সুযোগ পাই না ইত্যাদি। (আমাকে মনে হয় নোংরা টাইপের মানুষ মনে হচ্ছে, আমি মোটেও এতখানি নোংরা না।) আর আসলে ঠিক কি নিয়ে আমি এত ব্যস্ত তারও কোন সদুত্তর পাওয়া সম্ভব না।
ভাবছি কি লিখব। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে মাস তিনেক আগের ট্রেনভ্রমণটার কথা।
আমি যাচ্ছিলাম চট্টগ্রামে একটা বৌভাতে। সাড়ে দশটা কি এগারোটার ট্রেন ছিল। দীর্ঘ আট বছর পর রেলযাত্রা। উত্তেজনা চালু। তবে মৃদু দুঃখের বিষয় ছিল পেছনমুখী সিট। এতদিন পর কমলাপুর স্টেশান থেকে কোথাও যাচ্ছি অথচ ফিরে থাকতে হবে কিনা উল্টাদিকে। কেমন যেন গতি সময় প্রকৃতি সবাইকে তাচ্ছিল্য করে বিপরীতমুখে চলা। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে পাশের সারিতে সুদর্শন তরুণের আবির্ভাব, আমার পিতার পাশে তার আসনগ্রহণ এবং তাদের নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতা। জানালায় মুখ ফিরিয়ে নিজেকে বললাম, কন্যা, প্যাকেজ নাটকের প্লটে জায়গা পাওয়ার পক্ষে তোমার বয়সটা একটু বেশি হয়ে গেছে, কলেজপড়ুয়া ছোটবোনদের রাজত্ব সেটা। একটা সময় ট্রেন ছাড়ল। ক্রসিংয়ে সবাইকে দাঁড় করিয়ে যখন আমরা পার হই নিজেকে রাণী রাণী লাগে। দেখ তোমরা আমাকে কত সম্মান দিচ্ছ। শহর ছাড়িয়ে শহরতলী, শহরতলী ছাড়িয়ে গ্রামের মাঝ দিয়ে চলা শুরু করতে করতে মাঝরাতের সীমানা পেরিয়ে গেল। জানি না সবার কেমন লাগে, আমার কাছে গভীর রাতে এভাবে আঁধার চিরে ঝিকঝিক করে ছুটে যেতে নাম না জানা একরকম অনুভূতি হচ্ছিল। চোখের আওতায় থাকা অল্পসংখ্যক মানুষের প্রত্যেকে ঘুমিয়ে কাদা। ভেবে নিতে ভাল লাগছিল এই বগিতে, এমনকি এই পুরো ট্রেনে আমিই একমাত্র সজাগ যাত্রী। বাইরে মাইলের পর মাইল জনমানুষহীন প্রান্তর। হঠাৎ হঠাৎ দূরে টিমটিমে আলো দেখা যায়, যেই আলো কেবল এগোতেই থাকে, এগোতেই থাকে, নাগাল পাওয়া যায় না। আমি সেটাকে ভৌতিক আলেয়া ধরে নিলাম। ছাইরঙা রাতে জনমানবহীন পাথার চিরে ধেয়ে যাচ্ছে ট্রেন। যখন আমি জানালায় মুখ রাখি, চোখ যখন দূরে যায়, একটা ভয়ের শিহরণ খেলে যায় গায়ে। তার মাঝে মেঘের ঘনঘটায় কিছুক্ষণ পরপর সাপের জিভের মত বিদ্যুতের ঝলকানি। প্রতিবারই মনে হয় আজকে আমি একা এমন একটা কিছু প্রতক্ষ্য করব যা অলৌকিক, যা ব্যাখ্যাতীত। চরাচর আমাকে অশরীরী কোন দৃশ্য দেখানোর আয়োজন করছে। খুব ইচ্ছা হচ্ছিল কামরার লাইট কেউ অফ করে দিক, যেন “ওরা” আমাকে দেখতে না পায়। ভয় হচ্ছিল হঠাৎ হয়ত কোন পাশবিক শক্তি আমাকে এক টানে জানালা দিয়ে বের করে নিবে কিংবা নিশির ডাকে আমি নিজেই ঝাঁপ দিব, ঘুমন্ত সহযাত্রীরা জানতেও পারবে না কেউ। এত কিছুর পরও চোখ সরাতে সাহস পাচ্ছিলাম না। কারণ চোখ সরালেও আমি ভয়ংকর কোন শাস্তি পাব। এখন এই ইটসুরকির ছাদের নীচে বিষয়টা যতখানি হাস্যকর বলে মনে হচ্ছে ওই মুহূর্তে ততখানিই বাস্তব বলে বোধ হচ্ছিল। এই দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারি না। যখন চোখ মেললাম তখন আকাশ ফরসা হচ্ছে। একদিন পর যখন দিনের আলোয় একই পথে ফেরত আসছিলাম, দেখলাম সেইসব অপার্থিব অজাগতিক জায়গাগুলি আসলে নিরীহ প্রান্তর, ক্ষেতখামার আর মাঠ। উপযুক্ত পরিবেশ আর আকাশকুসুম ভাবার জন্য মুখিয়ে থাকা একটা মন পেলে অ কে অজগর বানিয়ে নেয়া খুব সহজ। তবে ভয়টা উপভোগ্য ছিল একথা অনস্বীকার্য।
যাই হোক। অনেক কথাই বলা হল। মানে লেখা হল। ধন্যবাদ অক্ষররাশিকে। তারা আছে বলেই এলোমেলো কথামালাকে ধীরেসুস্থে পরিশীলিত রূপ দেয়ার চেষ্টা করা যায়। যাঁরা সফল হন, তাঁদেরকে সাধুবাদ; আর যারা আমার মত ঘূর্ণিতে ঘুরতে ঘুরতে খেই হারিয়ে ফেলে তাদেরকেও শুভেচ্ছা।
(একটা কথা বলা বাকি রয়ে গেল। পাশের সারির তরুণ চট্টগ্রাম যাচ্ছিল তার বাবা মা'কে খুঁজতে। বাবা মা নাকি নিজেরদের মধ্যে ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। কোথায় যাবে জানিয়ে যায়নি। ছেলেটা এখন সম্ভ্যাব্য স্থানগুলোতে সন্ধান করে দেখবে। ছোট ভাইবোনদেরকে বাসায় রেখে বের হয়ে এসেছে। তার বাবা মা নাকি আগেও এমন করেছে। কোথায় কোথায় খুঁজবে সে কে জানে। কখন পাবে তাই বা কে জানে। ঘুমন্ত ছেলেটাকে দেখে মায়া লাগছিল। নেহায়েত ছোটমানুষ। আশা করি তাকে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়নি।)
Tuesday, September 16, 2008
Tuesday, June 10, 2008
ভাবনা যখন শিমুল ডালে লালচে আগুন জ্বালে
দীর্ঘ একটা ঘুম ভেঙে উঠার পর খানিকটা সময় একান্ত নিজস্ব। বিশেষ করে অসময়ের ঘুমের ক্ষেত্রে। মনের ইট কাঠ পাথরগুলো সেজে উঠে দালানের আকার নিতে নিতে কিছুটা অবসর পাওয়া যায়। তখন কেমন যেন ভিন্নরকম অনুভূতি কাজ করে। কোন দুঃখের ঘটনার রেশ চলতে থাকলে হতাশভাবে মনে পড়ে যায় আজকের দিনটা যত সুন্দরই হোক যত চমৎকার করেই বাতাস বয়ে চলুক সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় কথা হল সেই বেদনাবোধটা। কিংবা সম্প্রতি খুব আনন্দের কোন কিছু ঘটলে চোখেমুখে একটা ভাললাগা খেলে উঠে, ভ্যাপসা গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার হলেও সেই সুখের ব্যাপারটা অচিরেই রাশ দখল করে নেয় মনের। কখনো বা অসাধারণ কোন স্বপ্ন কেটে ঘুম ভাঙে, বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে, ওহ এ তাহলে শুধু অধরা স্বপ্নই ছিল। যখন বিশেষ কোন বিষয়ের রেশ থাকে না তখন কখনো বা প্রকৃতি নীরব প্রভাবক। চোখ মেলে ধূসর আকাশ দৃশ্যপটে ভেসে আসে। ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘ। বিষন্ন হবার মত কারণ খুঁজে নিতে ইচ্ছা হয়। না পেলে অকারণেও থমকে রাখা যায় মনকে। এই ধূসর আকাশ কি ঠিক এভাবে করেই আজীবন চোখ মেলে দেখা হবে? দিনের পর দিন কি এমনি করেই আড়মোড়া ভেঙে আয়েশি ভঙ্গীতে বিছানা ছাড়া হবে? হঠাৎ করেই হয়ত তখন দৃষ্টি পড়ে সঙ্গী সেলফোন বা আর কিছুর উপর। অবাক লাগে, ওকে প্রথম হাতে নেবার অতি স্পষ্ট স্মৃতিটা আসলে কিছুদিন আগের না, বছরের কাঁটা অনেকখানি ঘুরে গেছে এরই মাঝে। তখনি হুড়মুড় করে কত কথাই মাথায় ভীড় করতে থাকে যার জন্ম হৃদয় বলে দিনকয়েক আগে, কিন্তু দিনপঞ্জী বলে আসলে এর মাঝে অনেক বসন্ত পেরিয়ে গেছে। চোখের পাতায় তখনো তন্দ্রার শেষ বিন্দু জেগে আছে। গ্রামের এককোণে কোন এক বিকালে দেখা ভাঙা কোন কুঁড়েঘর বা দশ বছর আগে পরিচিত কোন শিশুকে ঠিক ওইভাবে দেখার ক্ষণস্থায়ী কিন্তু তীব্র সাধ হয়, যে এখন শত শত মাইল দূরে, অথবা যার অস্তিত্ব ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত। কখনো নিজের দিকে চোখ পড়ে। শরীরে আর মনে পরিপক্কতার অনেকখানি বাকি আছে কি? একদিন যখন সেটাও পূর্ণ হবে কি হবে তখন? এমন একটা দিনও কি একসময় আসবে যখন সামনে চেয়ে থাকার, অপেক্ষা করার কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না? মুহূর্তের জন্য অস্ত্বিত্বকে গ্রাস করে ফেলা এসব ভাবনার কতটা অর্থবহ আর কতটা অর্থহীন তার বিচার করার কোন তাগিদ অনুভব হয়না। সব মানুষের জীবনই নাকি একেকটা উপন্যাস, একেকটা নাটক, একেকটা গল্প বা ছবি। তাই হবে। শুধু কি প্রেম ভালবাসা দুঃখ বঞ্চনার সাতকাহনই জীবনকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অন্যের চোখে বিশেষায়িত করে? একজন কিশোরীর উবু হয়ে ঘাসফুলে গাল ছোঁয়ানোর মধ্যেও তো অনেক ভাবনা অনেক ভাললাগার ঘ্রাণ লুকানো থাকে। কেউ বইয়ের পাতায় লিখে রাখে না বলেই হয়ত একে নগণ্য বলে মনে হয়। প্রতিনিয়ত এমন কত কিছু ঘটে যায় চোখের সামনেই, যাকে সাদা চোখে আহামরি মনে না হলেও পরবর্তী কোন সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। হেলাফেলা করে করে ফেলা কোন খেয়ালি কাজ একটা সময়ে জীবনমৃত্যুর প্রশ্ন হয়ে পড়ে। অথবা হাজার লোকের ভিড়ে নিতান্ত অযাচিতভাবে হঠাৎ করে চোখ পড়ে যায় সাদামাটা কারো উপর, ঘটনাক্রমে যাকে ছাড়া একদিন সবকিছু বৃথা বলে মনে হয়। সিনেমায় যেমন করে বলে, “সে জানে না আজকের একটা মুহূর্তই তার জীবনকে পুরোপুরি পালটে দেবে”। মানুষের মনের আয়না বড়ই বিচিত্র। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পাশাপাশি অনেকগুলো নিখুঁত ছবি তৈরি করে ফেলতে পারে। প্রতিটা মুহূর্তই মাথায় কিছু না কিছু চলছে। ভুরি ভুরি পরিকল্পনা, রাশি রাশি স্বপ্ন, অতীতের পাঁচালী, ভবিষ্যতের নকশা; নিজের জন্য, অন্যের জন্য। তার মাঝে ঘুম ভাঙা আধমুঠো সময়টাকে নিজের করে পেতে মন্দ লাগে না। ভাবনার লাগাম হাতে থাকে না, রাশ টেনে ধরতেও মন চায় না...।
Tuesday, May 20, 2008
হয়ত চেনা গল্প
ধরি মেয়েটার নাম বিন্দু। বয়স এখনো পঁচিশ পূর্ণ হয়ে যায়নি। অনেকদিন পর কথা হল ওর সাথে। স্কুলে পড়ার সময় কয়েক বছর আমরা প্রতিবেশী ছিলাম। ক্লাস নাইন থেকে একই স্যারের কাছে অংক করতাম দুইজন। ওর অংক দেখে আমি মাঝে মাঝে একটু ঘাবড়েও যেতাম কারণ পরের বছর আমাকেও ওইসব বিদঘুটে সংখ্যার চাপে পড়তে হবে। স্যারকে আমাদের পছন্দ ছিল বেশ। আমাদের বকবকানি শুনে নাকমুখ কুঁচকে ফেলার বেশি কিছু করতেন না। অংক মেলাতে না পারলে স্যার প্রায়ই আমার বা ওর মাথার তালুতে হাত দিয়ে মাথার অবস্থা চেক করতেন আর বেশিরভাগই আমাদের মাথা ভীষণ গরম পাওয়া যেত। আমরা ওই বাসা ছাড়ার পর চলার পথে কুশল বিনিময় ছাড়া ওদের সাথে তেমন কথা হয়নি। যদিও খুব কাছাকাছি বাসা ছিল।
ইন্টারমিডিয়েটের পর বিন্দু একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। সেখানে দেখা রাব্বির সাথে। প্রেমিকার সাথে সদ্য ছাড়াছাড়ি হওয়া রাব্বির জন্য বিন্দু একধরণের সান্ত্বনা যোগায়। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। গিটার বাজানো রাফ এন্ড টাফ ছেলে, যেমনটা অনেক মেয়েরই কল্পনায় থাকে। ওদের ঘনিষ্ঠতা প্রেমে রূপ নিলে বিন্দুর বাবা মা কিছুতেই মেনে নিতে চান না। যে কোন কারণে (আমার অজ্ঞাত) বিয়ের ব্যাপারটা সামনে চলে আসে। মেয়ের বাবা মা কিছুতেই রাজি না তাদের দৃষ্টিতে অযোগ্য একটা বেকার ছেলের সঙ্গে মেয়ের পরিণয় দেখতে। বিন্দুর নিজের মতে সে পাঁয়তারা পাকানো এবং ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে সিদ্ধহস্ত। ফলে একটা সময় তাঁরা নিমরাজি হন। ছোটখাটো অনুষ্ঠান করে বিন্দু আর রাব্বির গাঁটছড়া বাঁধানো হয়। দেয়া হয় বেশ কিছু গয়নাও। বিয়ের খুব সামান্য সময়ের মধ্যে বের হয়ে আসে যে রাব্বি ড্রাগ এডিক্ট। ছেলের বাবা মা খুশি মনে বিয়ে দিয়েছিলেন ছেলের। হতে পারে উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলের গতি হবে এই আশায় যেটা অতি প্রচলিত ধারণা, কিংবা প্রবাসী বাবা মায়ের আদরের মেয়ে আর তার সাথে আসা ধনরত্নের লোভে। বিন্দুর হাসিখুশি জীবন বিষিয়ে উঠতে থাকে। ড্রাগের পেছনে খরচ করার টাকা যোগাড় করতে রাব্বি তার বউয়ের অলংকার সরাতে থাকে। পরিবারের অমতে বিয়ে বলে বিন্দুর বাবা মাও অনাগ্রহী ছিলেন মেয়ের বিবাহ-পরবর্তী জীবনের প্রতি। তাছাড়া সেই সময় তারা দেশের বাইরে। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলে। পড়াশোনা শিকেয় ওঠে বিন্দুর। একটা মাঝারি মানের চাকরি জুটাতে পারে সে। একদিন ভাইদের সাথে কলহের জের ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয় রাব্বি আর বিন্দুকে। এই ফ্যাসাদে যে তার স্বামীর দোষই বেশি তা বিন্দু নিজেও স্বীকার করে। মাদকাসক্তি আর দুর্ব্যবহারে রাব্বি ভালই পটু ছিল। ভাইয়েরা বললেন নিজের ঘাড়ে দায়িত্ব আসলে নাকি ছেলেটা সিধে হয়ে যাবে বাস্তবে যা কিছুই হয়নি। কিছুই করত না সে। পুরো ভার স্ত্রীর উপর। পাঁচ হাজারেরও কম টাকা বেতন পাওয়া বিন্দু বাসা ভাড়া করে নিজেদের জন্য। সেই বেতনের অর্ধেকের বেশি চলে যায় ভাড়ার পেছনে। অবস্থা এমনই ছিল যে প্রতিটা টাকা হিসাব করে করে খরচ করতে হত। টাকার একটা বরাদ্দ রোজ না দেয়া হলে নেমে আসত নির্যাতন। সস্তা বনরুটি আর কলা খেয়ে খেয়েও অনেক দিন কাটাতে হয়েছে। বাবা মাকে জানাতে পারেনি। তারা যখন ফোন করতেন বেয়াইবাড়িতে, কেবল জানানো হত বিন্দু বাসায় নেই। একটা সময় বাবা মা দেশে ফিরে আসেন। জানতে পারেন ঘটনার অনেকটা। নিজেদের কাছাকাছি একটা বাসা ভাড়া করে দেন। ভাড়ার জন্য রাখা অগ্রীম টাকা নিয়ে উধাও হয় রাব্বি। হাঁপিয়ে ওঠা বিন্দু এবার সিদ্ধান্ত নেয় ডিভোর্সের। হয়ে যায় ছাড়াছাড়ি। চাকরি বদল করে। সেই সাথে লেখাপড়া শুরু করে আবার। নতুন অফিসের এক কলিগের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে সম্প্রতি বিয়ে করে সে। প্রতিদিন দূর জায়গায় সকাল থেকে বিকাল অফিস। তার পর সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ক্লাস। বাসায় ফিরে পরিশ্রান্ত দেহে খাবারের ব্যবস্থা, এটা সেটা দেখভাল, ছুটির দিনটাতেও জমে ওঠা ঘরের কাজ। আরো ভাল কোন চাকরির জন্য চেষ্টা। এভাবে চলছে বিন্দুর প্রাত্যহিক জীবন। আমাকে জিজ্ঞেস করল, “ভাল আছ তাই না?” আমি বুঝতে পারলাম আমি ভাল আছি। এখন ও নিজেই বলে অনেক শান্তিতে আছে। নিজের সংসারে খেটেখুটে হলেও নির্বিবাদে থাকে, পুরানো কথা নিয়ে কেউ ঘাঁটায় না। আর মাঝে মাঝে ভাবে মধ্যখানের সময়টা এমন কষ্টের কাটল কেন। বিন্দুর সাথে আমার বা আমার বাবামা’র সাথে ওর বাবামা’র পথেঘাটে দেখা হয়েছে অনেকবার। ওর ডিভোর্সের ব্যাপারটা কানে আসলেও এত কিছু জানতাম না। অনেকদিন পর বসে কথা হল। আমাকে বলছিল, “আমাদের সেই সময়টা কি দারুণ ছিল, না? চিন্তা ভাবনা ছিল না কোন। স্যারের কাছে পড়ার সময় কত মজা করতাম। তোমাদের এই টেবিলটার উপরই তো পড়তাম আমরা। একবার স্কুল থেকে ফেরার সময় কি হয়েছিল মনে আছে?...” ইত্যাদি কথায় সময় পেরিয়ে গেল। ও চলে যাবার পরও ওর পেছন ফেলে আসা সময়ের কথা মনের মধ্যে কলরব করছিল। দশ বছররেও কম সময় পেরিয়েছে। সেই স্টাইলিশ বিন্দু। সচ্ছল পরিবারের মেয়ে। একটু বেশিই মুখরা আর চটপটে ছিল। এত বছর পর ও বেশ অন্যরকম। উচ্ছলতাটা চোখে পড়ে না। মুখের রেখায় অসুখীর ছাপ না থাকলেও কেমন একটা পোড় খেয়ে অভিজ্ঞ হওয়া মানুষের ভঙ্গী কথাবার্তায়। হবারই কথা। ভুলের কতটা খেসারত দিতে হল! সেই ভুলটা কার ভুল কিভাবে ভুল এই বিতর্ক নাই বা হল। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ও বলছিল, “মানুষ কত স্বপ্ন দেখায়। কত মিথ্যা স্বপ্ন দেখায়।“ যে অন্ধ সে তো অন্ধই। আর যে দেখতে পায় তারও চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
বিন্দু এখন ভাল আছে। সৃষ্টিকর্তা ওকে সবসময় ভাল রাখুন। মানুষকে ভুল শুদ্ধ চেনার ক্ষমতা দিন। সবাই সুখে থাকুক।
ইন্টারমিডিয়েটের পর বিন্দু একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। সেখানে দেখা রাব্বির সাথে। প্রেমিকার সাথে সদ্য ছাড়াছাড়ি হওয়া রাব্বির জন্য বিন্দু একধরণের সান্ত্বনা যোগায়। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। গিটার বাজানো রাফ এন্ড টাফ ছেলে, যেমনটা অনেক মেয়েরই কল্পনায় থাকে। ওদের ঘনিষ্ঠতা প্রেমে রূপ নিলে বিন্দুর বাবা মা কিছুতেই মেনে নিতে চান না। যে কোন কারণে (আমার অজ্ঞাত) বিয়ের ব্যাপারটা সামনে চলে আসে। মেয়ের বাবা মা কিছুতেই রাজি না তাদের দৃষ্টিতে অযোগ্য একটা বেকার ছেলের সঙ্গে মেয়ের পরিণয় দেখতে। বিন্দুর নিজের মতে সে পাঁয়তারা পাকানো এবং ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে সিদ্ধহস্ত। ফলে একটা সময় তাঁরা নিমরাজি হন। ছোটখাটো অনুষ্ঠান করে বিন্দু আর রাব্বির গাঁটছড়া বাঁধানো হয়। দেয়া হয় বেশ কিছু গয়নাও। বিয়ের খুব সামান্য সময়ের মধ্যে বের হয়ে আসে যে রাব্বি ড্রাগ এডিক্ট। ছেলের বাবা মা খুশি মনে বিয়ে দিয়েছিলেন ছেলের। হতে পারে উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলের গতি হবে এই আশায় যেটা অতি প্রচলিত ধারণা, কিংবা প্রবাসী বাবা মায়ের আদরের মেয়ে আর তার সাথে আসা ধনরত্নের লোভে। বিন্দুর হাসিখুশি জীবন বিষিয়ে উঠতে থাকে। ড্রাগের পেছনে খরচ করার টাকা যোগাড় করতে রাব্বি তার বউয়ের অলংকার সরাতে থাকে। পরিবারের অমতে বিয়ে বলে বিন্দুর বাবা মাও অনাগ্রহী ছিলেন মেয়ের বিবাহ-পরবর্তী জীবনের প্রতি। তাছাড়া সেই সময় তারা দেশের বাইরে। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলে। পড়াশোনা শিকেয় ওঠে বিন্দুর। একটা মাঝারি মানের চাকরি জুটাতে পারে সে। একদিন ভাইদের সাথে কলহের জের ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয় রাব্বি আর বিন্দুকে। এই ফ্যাসাদে যে তার স্বামীর দোষই বেশি তা বিন্দু নিজেও স্বীকার করে। মাদকাসক্তি আর দুর্ব্যবহারে রাব্বি ভালই পটু ছিল। ভাইয়েরা বললেন নিজের ঘাড়ে দায়িত্ব আসলে নাকি ছেলেটা সিধে হয়ে যাবে বাস্তবে যা কিছুই হয়নি। কিছুই করত না সে। পুরো ভার স্ত্রীর উপর। পাঁচ হাজারেরও কম টাকা বেতন পাওয়া বিন্দু বাসা ভাড়া করে নিজেদের জন্য। সেই বেতনের অর্ধেকের বেশি চলে যায় ভাড়ার পেছনে। অবস্থা এমনই ছিল যে প্রতিটা টাকা হিসাব করে করে খরচ করতে হত। টাকার একটা বরাদ্দ রোজ না দেয়া হলে নেমে আসত নির্যাতন। সস্তা বনরুটি আর কলা খেয়ে খেয়েও অনেক দিন কাটাতে হয়েছে। বাবা মাকে জানাতে পারেনি। তারা যখন ফোন করতেন বেয়াইবাড়িতে, কেবল জানানো হত বিন্দু বাসায় নেই। একটা সময় বাবা মা দেশে ফিরে আসেন। জানতে পারেন ঘটনার অনেকটা। নিজেদের কাছাকাছি একটা বাসা ভাড়া করে দেন। ভাড়ার জন্য রাখা অগ্রীম টাকা নিয়ে উধাও হয় রাব্বি। হাঁপিয়ে ওঠা বিন্দু এবার সিদ্ধান্ত নেয় ডিভোর্সের। হয়ে যায় ছাড়াছাড়ি। চাকরি বদল করে। সেই সাথে লেখাপড়া শুরু করে আবার। নতুন অফিসের এক কলিগের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে সম্প্রতি বিয়ে করে সে। প্রতিদিন দূর জায়গায় সকাল থেকে বিকাল অফিস। তার পর সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ক্লাস। বাসায় ফিরে পরিশ্রান্ত দেহে খাবারের ব্যবস্থা, এটা সেটা দেখভাল, ছুটির দিনটাতেও জমে ওঠা ঘরের কাজ। আরো ভাল কোন চাকরির জন্য চেষ্টা। এভাবে চলছে বিন্দুর প্রাত্যহিক জীবন। আমাকে জিজ্ঞেস করল, “ভাল আছ তাই না?” আমি বুঝতে পারলাম আমি ভাল আছি। এখন ও নিজেই বলে অনেক শান্তিতে আছে। নিজের সংসারে খেটেখুটে হলেও নির্বিবাদে থাকে, পুরানো কথা নিয়ে কেউ ঘাঁটায় না। আর মাঝে মাঝে ভাবে মধ্যখানের সময়টা এমন কষ্টের কাটল কেন। বিন্দুর সাথে আমার বা আমার বাবামা’র সাথে ওর বাবামা’র পথেঘাটে দেখা হয়েছে অনেকবার। ওর ডিভোর্সের ব্যাপারটা কানে আসলেও এত কিছু জানতাম না। অনেকদিন পর বসে কথা হল। আমাকে বলছিল, “আমাদের সেই সময়টা কি দারুণ ছিল, না? চিন্তা ভাবনা ছিল না কোন। স্যারের কাছে পড়ার সময় কত মজা করতাম। তোমাদের এই টেবিলটার উপরই তো পড়তাম আমরা। একবার স্কুল থেকে ফেরার সময় কি হয়েছিল মনে আছে?...” ইত্যাদি কথায় সময় পেরিয়ে গেল। ও চলে যাবার পরও ওর পেছন ফেলে আসা সময়ের কথা মনের মধ্যে কলরব করছিল। দশ বছররেও কম সময় পেরিয়েছে। সেই স্টাইলিশ বিন্দু। সচ্ছল পরিবারের মেয়ে। একটু বেশিই মুখরা আর চটপটে ছিল। এত বছর পর ও বেশ অন্যরকম। উচ্ছলতাটা চোখে পড়ে না। মুখের রেখায় অসুখীর ছাপ না থাকলেও কেমন একটা পোড় খেয়ে অভিজ্ঞ হওয়া মানুষের ভঙ্গী কথাবার্তায়। হবারই কথা। ভুলের কতটা খেসারত দিতে হল! সেই ভুলটা কার ভুল কিভাবে ভুল এই বিতর্ক নাই বা হল। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ও বলছিল, “মানুষ কত স্বপ্ন দেখায়। কত মিথ্যা স্বপ্ন দেখায়।“ যে অন্ধ সে তো অন্ধই। আর যে দেখতে পায় তারও চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
বিন্দু এখন ভাল আছে। সৃষ্টিকর্তা ওকে সবসময় ভাল রাখুন। মানুষকে ভুল শুদ্ধ চেনার ক্ষমতা দিন। সবাই সুখে থাকুক।
Sunday, May 18, 2008
চাকা
ছোটখালার বাসায় থাকতে গিয়েছিলাম দুই রাতের জন্য। ষোলতলার উপর ছোট্ট বাসা। বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখতে একটু অন্যরকম লাগে। মনে হয় বৃষ্টির ফোঁটাগুলো আমার চোখের সমান্তরাল কোন জায়গা থেকে তৈরি হচ্ছে, আকাশ থেকে নামছে না। বৃষ্টিটা রোগা ধরণের ছিল। বেশি ঝড় হলে নাকি গাদা গাদা বালি ঢোকে আর পানিও চলে আসে। তা হবে। আকাশের কাছে বসবাসের সুবিধা অসুবিধা দুইই আছে। যখন বারান্দায় একা একা বসে ঘরের সদস্যদের হাঁটাচলা দেখতাম বারবার পুরানো কথা মনে আসত। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি খালার তখন বিয়ে হয়। আমার বাচ্চ বয়সের একটা বড় সময় তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। সৌখিন ছিলেন বেশ। খুব মন দিয়ে চুলের যত্ন নিতেন, নানা ধরণের জিনিসপত্র যোগাড় করে। মাঝে মাঝেই পত্রিকা দেখে নতুন নতুন খাবার রান্না করতেন। ধৈর্য্য ধরে চমৎকার সব সেলাই তুলতেন জামাকাপড়ে। গল্পের বই পড়তেন বেশ। তার কম্পিউটার ক্লাসের একটা খাতা ছিল, যেখানকার লেখাগুলোর মানে আমার শিশুমস্তিষ্কে কিছুই ঢুকত না। নিজের জন্য অনেকখানি সময় বরাদ্দ ছিল দিনের। এখন তার নিজের ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়ে। তাদের পেছনে অতিষ্ঠ হয়ে নাকি তার মাথার চুল পেকে যাচ্ছে। ছোটখালার ব্যস্ততা এখন একেবারেই অন্যরকম। ঘরদোর গোছাতে হয়। রান্না করতে হয়। দুই ছেলেমেয়ের জন্য সময় দিতে হয়। অবাক লাগে, কিছু বছর আগে এই ছোট দুইটা মানুষের অস্তিত্ব ছিল কোথায়? তাই বলে অস্বাভাবিকও তো লাগে না কিছুমাত্র। এখন ছোটখালার নিজেকে নিয়ে থাকার সময়টা কমে এসেছে অনেকটুকু। সারাক্ষণই করার জন্য কোন না কোন কাজকর্মআছে। আর যখন তেমন কোন কিছু থাকে না তখনও মেয়েটা নাহয় ছেলেটা কিছু নিয়ে হাজির হয় বা খালা নিজেই কিছু একটা খুঁজে নেন। এককালে তিনি নানুরবাড়িতে ছোটদের মুরুব্বি থাকলেও এখন ওখানে কেবল মেহমান হয়েই থাকা হয় অল্প কিছুদিনের জন্য। সুন্দর পিঠ ছাপানো চুল এখন মনোযোগ না পেয়ে ক্লিষ্ট বললেই চলে। হাতে তৈরী পোশাকের চেয়ে তার পছন্দ চট করে মার্কেটে গিয়ে রেডিমেড কিছু একটা কিনে নেয়া, তাতে সময় কম লাগে। এরপরও আবার দারুণ উৎসাহ নিয়ে আমের আচার বানাতে বসেন। অবসর পেলে খালুকে নিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে আসতে চান। অর্থাৎ তার দিনকাল সন্তান সংসার কেন্দ্রিকই হয়ে পড়েছে। নিজের মায়ের কথা মনে হল। আম্মুও বেশ কিছু বছর আগে ফাঁক পেলেই বিছানাচাদরে, নিজের শাড়িতে ফুল করতেন, আমার জামা সেলাই করতেন, স্পেশাল খাবার বানাতেন। এখন অত আগ্রহ নাকি লাগে না। অফিস থেকে ফিরে আগের মত উদ্যম থাকেনা। বিশ্রাম নিতে হয়। তারপরও ঘরের কাজ তো আছেই। কখন যেন বেলা কেটে যায় এই চাকার আবর্তে। কয়েকটা বছর পর ছোটখালার দশাও নিশ্চয়ই এমনই হবে। চালসে ভর করবে, এখন যা যা করতে ক্লান্তি লাগে না সেসবও তখন ঝামেলা মনে হবে। তার ছেলেটাও মেয়েটাও তখন বড় হবে। আমার মত নিজের ঘরে নিজের “ব্যস্ততা” নিয়ে থাকবে। মায়ের অনেক কথাই ব্যাকডেটেড মনে হবে হয়ত। এমনই কি হয়? সবারই একটা পরিবার হয়? ওই নিয়েই সব পরিকল্পনা গড়ে ওঠে? এই যে আমি ভাবি আমি এমন করব তেমন করব তার কিছু কি করা হবে না? চাকরি করে টাকা জমিয়ে কিনব বলে যেসব জিনিসের লিস্ট বানাই, সব তুচ্ছ হয়ে পড়বে ছেলেমেয়ের বায়না মেটা হাসিমুখের কাছে? এই যে ঘরটাতে সারাদিন পড়ে থাকি, এখানে কয়েকটা দিন কাটলেই “বাসায়” যাবার জন্য অধীর হব? মেয়েগুলো সব মা হয়ে ওঠে? ছেলেগুলো একদিন বড় হয়ে বাবা হয়ে বসে? আর এই আবর্তন নিয়ে কেউ অসুখীও থাকে না? এটা ধ্রুব সত্য। তারপরও উদাস মনে নাড়া দেয়...।
Sunday, May 4, 2008
তাপকাহন
বেশ কয়েকদিন ধরে ঘরের বাইরে পা ফেলতে মোটেই ভাল লাগে না। যতটা না গরম লাগার কষ্টে তার চেয়ে বেশি পরনের পোশাকটার উপর মায়ার জন্য। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যাক। গরমকাল হল সুতি কাপড়ের মৌসুম। জীর্ণ অথবা অর্ধজীর্ণ একটা পোশাক প্রথমে পানিতে ভেজাও। তাতে সাবান মেখে খানিকক্ষণের জন্য ফেলে রাখ। তারপর ভালমত ধুয়ে ফেল এবং পানি নিংড়ে নাও। এবার মাড় রেডি কর। তাতে ধোয়া কাপড়খানা চুবিয়ে উঠাও। আরেক দফা নিংড়াও। এবার বেশ খানিকটা জায়গা দখল করে শুকাতে দাও। একসময় বারান্দা থেকে ঘরে ফিরিয়ে আনো। ইস্ত্রি গরম কর (সেটাও আবার ইলেকট্রিসিটি থাকার উপর এবং ইলেকট্রিসিটির পিক আওয়ারের উপর নির্ভরশীল। আজ না হলে কাল), এবার ধোয়া পোশাকখানায় পানির ছিটা দিয়ে দুমড়াও মোচড়াও। তারপর আয়রন কর অর্থাৎ সেঁকে চনমনে কর। সবশেষে এই তরতাজা কাপড়টা ভাঁজ করে তাকে গুছিয়ে রাখ। এই সবগুলো ধাপ সফলতার সাথে সম্পন্ন করার পর একদিন কোথাও যাবার দরকার হলে সেই মৃদু সুবাস ছড়ানো পাটভাঙা পোশাকটা পরলাম। ফিটফাট হয়ে বাইরে বের হলাম। খানিকটা পথ পাড়ি দিতে না দিতেই লোমকূপ থেকে দরদর করে ফোয়ারার মত ঘাম ছুটতে শুরু করল। সারা গা ভিজে একসা তো হলই, স্নেহের জামাও জেবড়ে গেল ঘামে। বাড়ি ফিরে মিয়ানো জিনিসটাকে দড়ির উপর লটকে দিতে দিতে হাপিত্যেস না করে উপায় আছে? নিত্যকার অফিসযাত্রীদের ভোগান্তির কথা ভাবলে কষ্ট হয়। প্রতিদিন সাত সকালে উঠে তাদেরকে সুদূরের পথ ধরতে হয়। সকাল আটটার পর লোকাল বাসের ছবিসুরতের খবর কে না জানে। সাধ্যসাধনার পর পা রাখার একটা জায়গা করে ছাতার বাঁটের মত ঝুলতে ঝুলতে সূর্যমামার উত্তাপে কোথায় হারায় ওডিকোলনের ভুরভুরে সুবাস, টাইয়ের জমিনে ইন করে পরা ফর্মাল শার্টের বাহার, রঙ মিলিয়ে তৈরি করা সাধের সালোয়ার কামিজের পরিপাট্য। আর সাড়ে তিনহাত শরীরে বারো হাত শাড়ি প্যাঁচানো মেয়েদের কথা নাহয় ছেড়েই দিলাম। স্কুলকলেজ নাহয় এক আধটু কামাই দেয়া যায়। অফিসে কি এত আয়েশ চলে? রোজকার হাজিরা রোজই টুকে রাখা চাই। সেই তুলনায় আমি তো রাজকন্যার হালে আছি। আর যাদের ঘরে ফ্যান এসি নেই, ইচ্ছে হলেই জিরিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা পানীয়ে চুমুক দিতে পারে না তাদের কথা উল্লেখ করার আদিখ্যেতা দেখানো সাজে না। আমি কেবল নিজের কথা বললাম। কাল রাতে একটা ঝড় বয়ে গেল। ওই মুহূর্তের জন্য ছিল অসাধারণ। কিন্তু আজকে সকাল হতেই সেই একই খেলা। কেবল একটু ছায়া ছায়া। তাতে কি। ফুটন্ত পানি ভরা হাঁড়ির মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেও যেমন ঠিকই ভলকে ভলকে ভাপ বের হতে থাকে আজকে মাটিরও সেই অবস্থা। শুনেছি মতিঝিলের আবহাওয়া নাকি কয়েক কাঠি বেশি উষ্ণ। আর মতিঝিলের নিঃশ্বাস এসে লাগে আমাদের গায়ে। একটা নিষ্পাপ কালবৈশাখির অপেক্ষায় আছি। গর্জন করবে কিন্তু আঘাত করবে না। কেবল জরা আর তাপ উড়িয়ে নিয়ে যাবে, কারো ঘরের চাল বা বয়সী বৃক্ষের শেকড় না।
Friday, May 2, 2008
জীবন কেমন কাটে
অলস সময়ে হঠাৎ ভাবনা এল, আমাদের জীবন আসলে কেমন করে কাটে। জন্মের পর সবার আদর সোহাগে বেড়ে ওঠা, পড়াশোনায় সবসময় প্রথম সারিতে থাকার চেষ্টা করা, সঙ্গী সাথীদের নিয়ে কিছু নির্ভেজাল সুখদুঃখের সময় কাটানো। দেখতে দেখতে শৈশব চলে যায়। তারপর কি? আবারও বইপুস্তকের রাজ্যে হিমশিম খাওয়া, কারো কারো ক্ষেত্রে ফাঁকফোকরে সফল বা ব্যর্থ কোন এক বা একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, ভাল অথবা মন্দ অথবা মাঝারি গোছের একটা রেজাল্ট থলেতে গুঁজে দুয়ারে দুয়ারে চাকরির জন্য উঁকিঝুঁকি মারা। আর তারও পরে? দিনের পর দিন সেই বাসা টু অফিস অফিস টু বাসা কিংবা কারো কারো জন্য কেবলই চার দেয়ালের গন্ডির মধ্যে বসবাস। ছেলেপুলে মানুষ করা, তাদের পেছনে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা। একদিন চুলে পাক, চামড়ায় ভাঁজ আর দেখতে দেখতে ভবলীলার পাট চুকিয়ে অগস্ত যাত্রা। সাকুল্যে তাহলে এই কি জীবন? সময়ের চাকাকে ঘোরানোর জন্যই আমাদের এত আয়োজন? সাধারণ একজন মানুষের জীবন মানে কি? শৈশব থেকেই আমরা চেষ্টা করে যাই সফল হবার। কেমন এই সফলতা? রিপোর্ট কার্ডে A+ পাওয়া। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আচার আচরণে স্থিরতা এবং সততা চর্চা করা। আমরা জেনে নিয়েছি যে জ্ঞান অর্জন আর সুশীল আচরণ আয়ত্ত করা মানেই সুন্দর ভবিষ্যতের চাবিকাঠি হাতে পাওয়া। একদিন নিজের রুটি রুজির পন্থা আবিষ্কার করি। হাতে আসে বিত্তবৈভব। বস্তুগত চাহিদা পূরণ হয় অনেকটাই। আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে হেসেখেলে কাটিয়ে দিই বছরের পর বছর। পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও সঞ্চালিত করি জীবনগঠনের একই মূলমন্ত্র। এই পরিক্রমা চলে আসছে যুগের পর যুগ। এটাই কি জীবন? যদি তা না হত তাহলেই বা কেমন হতে পারত?
Friday, April 25, 2008
চিঠি
রবীন্দ্রনাথের “ছিন্নপত্র” পড়তে বেশ লাগে। চিঠির ভেতর সুখ দুঃখ হাসি ঠাট্টা কেমন চমৎকার বিনুনি করে লেখা। মাঝে মাঝে পত্রিকায় বা টিভিতে বয়স্কজনরা আক্ষেপ করে বলে থাকেন চিঠি কি তবে আমাদের জীবন থেকে হারিয়েই গেল? তাই হবে। এখনো না হারিয়ে গিয়ে থাকলে অচিরেই যে যাবে সন্দেহ নেই। যে এখন কাগজকলম নিয়ে চিঠি লিখতে বসে, সে যে শখ করেই কাজটা করছে কে না বুঝবে। সৌখিনতার বস্তু একসময় নিত্যপ্রয়োজনের বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। আবার নিত্যকার দরকারি কিছুও যে কালে কালে নিছক সৌখিনতা হয়ে উঠতে পারে এটাও দেখি ভুল না।
অবস্থার বদল না হলে কেমন হত? হয়ত ভোরবেলা ঘুম ভেঙে উঠলাম। নাশতার টেবিলে বসতেই দরজায় টুংটাং বেল। দরজা খুলতেই দেখি ডাকপিওনের মুখ। “আপুমণি আপনার চিঠি আছে।“ তারপর সে আমার হাতে তুলে দিল একটা সাদা অথবা গোলাপি অথবা হোক সাধারণ হলদে রঙেরই একটা খাম। আমার চোখ আনন্দ আর উত্তেজনায় জ্বলজ্বল করতে থাকল। খামের মুখ ছিঁড়তেই প্রতীক্ষিত আকাঙ্খিত একটা ভাঁজফেলা কাগজ। আমি হাসিমুখে পড়ছি, ধীরে ধীরে, যেন না ফুরায়...। কল্পনাটা মনে হয় প্রেমের গল্পের কোন একটা অংশের মত হয়ে যাচ্ছে। তা আমার উদ্দেশ্য না। চিঠি লেনদেনের পরিণতি যে কেবল ভালবাসাবাসির দুয়ারে গিয়েই মিলবে তা তো নয়। তা নির্দোষ বন্ধুত্ব, নির্মোহ ভাললাগা তো হতেই পারে। কত কত দিন হয়ে গেল চিঠি পাওয়া হয় না, চিঠি লেখা হয় না। তার চেয়েও বেশি দিন ধরে পরীক্ষার খাতায় কিংবা ক্লাসনোটে বাংলা হরফের চিহ্ন চোখে পড়ে না।
একবার বাসায় একটা মজার চিঠি এসেছিল। ‘প্রথম আলো’ অথবা ‘ভোরের কাগজ’ এর সঙ্গে সাপ্তাহিক একটা ম্যাগাজিন ছিল ‘গ্যালারি’ নামের। ক্লাস নাইনে সেখানে একবার কুইজে আমি প্রাইজবন্ড জিতি। তো আমার নাম ছাপা হয় ঠিকানাসহ। কিছুদিন পর বাসায় একটা চিঠি হাজির। ময়মনসিংহের এক লোক আমাকে বন্ধু ভেবে ফেলেছে। এবং আপনি আপনি করে লিখতে লিখতে হঠাৎ “মনের অজান্তে কখন যেন” তুমি করে লেখা শুরু করেছে। চিঠিটা আবার গোলাপ আঁকা বেগুনি রঙের কাগজে লেখা। একটা লাইন আমার পুরোপুরি মনে আছে- “আমার চোখের কোণে বিরাজ করে এক অজানা হারানোর ব্যথা সুন্দরকে হারানোর ভয় আর ব্যথিত হবার যাতনা”। আমি তার নিপীড়িত অক্ষিযুগলের কি উপকারে আসতাম কে জানে। বিব্রতকর ব্যাপার হল চিঠিটা আবার বাসায় অন্যরাও খুলে খুলে পড়েছে। ওই ছাপানো নামঠিকানার বদৌলতে পত্রমিতালিতে উৎসুক আরো কয়েকজন মানুষের বার্তা আসে বাসায়। পরে এভাবে ঠিকানা না ছাপানোর অনুরোধ করে আমি একটা চিঠি পাঠাই ওই পত্রিকায়।
কিছু প্রাপকহীন পত্রও তো থাকে। নিজের কথাকে কারো সঙ্গে বলার মত করে লেখা। এটা ডায়রি লেখারই নামান্তর। প্রিয় অমুক বলে কাউকে ডেকে ডেকে কথা বলাটা হয়ত একটু সহজ হয়। Anne Frank এর বিখ্যাত ডায়রির মত করে। কোথায় চলে যাচ্ছে সব! আমি মানুষটা তত নতুন না বলে চিঠিপত্রের মর্ম বোঝার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। ভবিষ্যতের প্রজন্ম অনেক নতুন কিছু জানবে। কিন্তু চিঠিকে জানা হবে না। যেমন আমরা অনেককিছু জানলেও কতকিছুই জানি না। অস্বীকার করার উপায় নেই যে তবুও ইমেইল আনন্দ দেয়। ইংরেজির ছাঁচে ফেলা বাংলা পড়া খুব বেশি সুখকর না হতে পারে, তাই বলে নিতান্ত দুঃখেরও না। নাহয় ইনবক্সে কিছু একটা আছে জানলে চোখ চকচক করে কেন? পড়তে পড়তে শেষদিকে নেমে এলে মনমরা লাগে কেন? তবে যে যাই বলুক কাগজের উপর কালির বিন্যাসের আবেদনটা আসলেই অন্যরকম। একেকটা হাতের লেখা একেক ধরণের হবার সুযোগ থাকে, ফন্ট নামের সাম্যবাদী উড়ে এসে সবাইকে এক কাতারে নামিয়ে ফেলতে পারে না। হাতে লেখা চিঠি ভাঁজ করে জমিয়ে রাখা যায়। হঠাৎ কেউ দেখে ফেলার দুশ্চিন্তায় বুক ধুকপুক করানো যায়। বহুদিনের ব্যবধানে নকশাকাটা কাগজের টুকরোটা একদিন পাণ্ডুর হয়ে যাবার ভয়ও থাকে। আর হাতে লেখা চিঠি একদিন পথের বাঁকে ভুল করে হারিয়েও যেতে পারে। ইমেইলের মত অমরত্ব বটিকার কোন বালাই নেই তার। কোন পাসওয়ার্ডের ধার ধারে না। হয়ত মরণশীল আর আর জরাক্রান্ত হবার ঝুঁকি আছে বলেই চিঠি এত প্রিয় হয়ে ওঠে। কে না জানে যে অক্ষয়ের চেয়ে ক্ষয়শীলকেই বেশি আদুরে মনে হয়!
কাগজের চিঠির চল যদি এখনো আগের মত থাকত? আমরা কাউকে কাউকে নিয়মিত লিখতাম নিশ্চয়ই। “কেবল আমারই সংবাদ জানতে উৎসুক হয়েছ। কিন্তু বিভুঁইয়ে বাস কর বলে কাঁচা গ্রীষ্মের দাবদাহে ঢাকাবাসী সকলের ওষ্ঠাগত প্রাণবায়ু যে বাস্তবিকই দেহের খাঁচাখানা ছেড়ে উড়াল দেবার জো করেছে তা কি সত্যই তোমার জ্ঞানসীমানায় নাই?” নাহ! ‘ছিন্নপত্র’ মাথাকে গুবলেট করে দিয়েছে। আজকাল কি আর এমন পেঁচিয়ে লেখা হয়? বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রচনার শিল্পগুণ’ যেই ‘প্রাঞ্জলতা’র সন্ধান করত, তার রূপ এখন অনেক ভিন্ন।
হঠাৎ একদিন রাজ্যের কথায় ঠাসা একটা নামহীন চিঠি এসে পড়ে না কেন আমার বাড়িতে? হাত পা ছড়িয়ে ভাবতে বসতে পারতাম।
অবস্থার বদল না হলে কেমন হত? হয়ত ভোরবেলা ঘুম ভেঙে উঠলাম। নাশতার টেবিলে বসতেই দরজায় টুংটাং বেল। দরজা খুলতেই দেখি ডাকপিওনের মুখ। “আপুমণি আপনার চিঠি আছে।“ তারপর সে আমার হাতে তুলে দিল একটা সাদা অথবা গোলাপি অথবা হোক সাধারণ হলদে রঙেরই একটা খাম। আমার চোখ আনন্দ আর উত্তেজনায় জ্বলজ্বল করতে থাকল। খামের মুখ ছিঁড়তেই প্রতীক্ষিত আকাঙ্খিত একটা ভাঁজফেলা কাগজ। আমি হাসিমুখে পড়ছি, ধীরে ধীরে, যেন না ফুরায়...। কল্পনাটা মনে হয় প্রেমের গল্পের কোন একটা অংশের মত হয়ে যাচ্ছে। তা আমার উদ্দেশ্য না। চিঠি লেনদেনের পরিণতি যে কেবল ভালবাসাবাসির দুয়ারে গিয়েই মিলবে তা তো নয়। তা নির্দোষ বন্ধুত্ব, নির্মোহ ভাললাগা তো হতেই পারে। কত কত দিন হয়ে গেল চিঠি পাওয়া হয় না, চিঠি লেখা হয় না। তার চেয়েও বেশি দিন ধরে পরীক্ষার খাতায় কিংবা ক্লাসনোটে বাংলা হরফের চিহ্ন চোখে পড়ে না।
একবার বাসায় একটা মজার চিঠি এসেছিল। ‘প্রথম আলো’ অথবা ‘ভোরের কাগজ’ এর সঙ্গে সাপ্তাহিক একটা ম্যাগাজিন ছিল ‘গ্যালারি’ নামের। ক্লাস নাইনে সেখানে একবার কুইজে আমি প্রাইজবন্ড জিতি। তো আমার নাম ছাপা হয় ঠিকানাসহ। কিছুদিন পর বাসায় একটা চিঠি হাজির। ময়মনসিংহের এক লোক আমাকে বন্ধু ভেবে ফেলেছে। এবং আপনি আপনি করে লিখতে লিখতে হঠাৎ “মনের অজান্তে কখন যেন” তুমি করে লেখা শুরু করেছে। চিঠিটা আবার গোলাপ আঁকা বেগুনি রঙের কাগজে লেখা। একটা লাইন আমার পুরোপুরি মনে আছে- “আমার চোখের কোণে বিরাজ করে এক অজানা হারানোর ব্যথা সুন্দরকে হারানোর ভয় আর ব্যথিত হবার যাতনা”। আমি তার নিপীড়িত অক্ষিযুগলের কি উপকারে আসতাম কে জানে। বিব্রতকর ব্যাপার হল চিঠিটা আবার বাসায় অন্যরাও খুলে খুলে পড়েছে। ওই ছাপানো নামঠিকানার বদৌলতে পত্রমিতালিতে উৎসুক আরো কয়েকজন মানুষের বার্তা আসে বাসায়। পরে এভাবে ঠিকানা না ছাপানোর অনুরোধ করে আমি একটা চিঠি পাঠাই ওই পত্রিকায়।
কিছু প্রাপকহীন পত্রও তো থাকে। নিজের কথাকে কারো সঙ্গে বলার মত করে লেখা। এটা ডায়রি লেখারই নামান্তর। প্রিয় অমুক বলে কাউকে ডেকে ডেকে কথা বলাটা হয়ত একটু সহজ হয়। Anne Frank এর বিখ্যাত ডায়রির মত করে। কোথায় চলে যাচ্ছে সব! আমি মানুষটা তত নতুন না বলে চিঠিপত্রের মর্ম বোঝার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। ভবিষ্যতের প্রজন্ম অনেক নতুন কিছু জানবে। কিন্তু চিঠিকে জানা হবে না। যেমন আমরা অনেককিছু জানলেও কতকিছুই জানি না। অস্বীকার করার উপায় নেই যে তবুও ইমেইল আনন্দ দেয়। ইংরেজির ছাঁচে ফেলা বাংলা পড়া খুব বেশি সুখকর না হতে পারে, তাই বলে নিতান্ত দুঃখেরও না। নাহয় ইনবক্সে কিছু একটা আছে জানলে চোখ চকচক করে কেন? পড়তে পড়তে শেষদিকে নেমে এলে মনমরা লাগে কেন? তবে যে যাই বলুক কাগজের উপর কালির বিন্যাসের আবেদনটা আসলেই অন্যরকম। একেকটা হাতের লেখা একেক ধরণের হবার সুযোগ থাকে, ফন্ট নামের সাম্যবাদী উড়ে এসে সবাইকে এক কাতারে নামিয়ে ফেলতে পারে না। হাতে লেখা চিঠি ভাঁজ করে জমিয়ে রাখা যায়। হঠাৎ কেউ দেখে ফেলার দুশ্চিন্তায় বুক ধুকপুক করানো যায়। বহুদিনের ব্যবধানে নকশাকাটা কাগজের টুকরোটা একদিন পাণ্ডুর হয়ে যাবার ভয়ও থাকে। আর হাতে লেখা চিঠি একদিন পথের বাঁকে ভুল করে হারিয়েও যেতে পারে। ইমেইলের মত অমরত্ব বটিকার কোন বালাই নেই তার। কোন পাসওয়ার্ডের ধার ধারে না। হয়ত মরণশীল আর আর জরাক্রান্ত হবার ঝুঁকি আছে বলেই চিঠি এত প্রিয় হয়ে ওঠে। কে না জানে যে অক্ষয়ের চেয়ে ক্ষয়শীলকেই বেশি আদুরে মনে হয়!
কাগজের চিঠির চল যদি এখনো আগের মত থাকত? আমরা কাউকে কাউকে নিয়মিত লিখতাম নিশ্চয়ই। “কেবল আমারই সংবাদ জানতে উৎসুক হয়েছ। কিন্তু বিভুঁইয়ে বাস কর বলে কাঁচা গ্রীষ্মের দাবদাহে ঢাকাবাসী সকলের ওষ্ঠাগত প্রাণবায়ু যে বাস্তবিকই দেহের খাঁচাখানা ছেড়ে উড়াল দেবার জো করেছে তা কি সত্যই তোমার জ্ঞানসীমানায় নাই?” নাহ! ‘ছিন্নপত্র’ মাথাকে গুবলেট করে দিয়েছে। আজকাল কি আর এমন পেঁচিয়ে লেখা হয়? বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রচনার শিল্পগুণ’ যেই ‘প্রাঞ্জলতা’র সন্ধান করত, তার রূপ এখন অনেক ভিন্ন।
হঠাৎ একদিন রাজ্যের কথায় ঠাসা একটা নামহীন চিঠি এসে পড়ে না কেন আমার বাড়িতে? হাত পা ছড়িয়ে ভাবতে বসতে পারতাম।
Monday, April 21, 2008
ভাইভা...
অনার্সজীবনের শেষ ভাইভাটা বাকি ছিল। আজকে সেটাও দিয়ে আসলাম। ভাইভা, বড়ই আতংকের একটা বিষয়। গত কয়েক বছরের মার্কামারা ভেন্যু বাদ দিয়ে এবার অন্য একটা রুমে বসতে হয়েছে। একবার মনে হয় এটা শেষ ভাইভা তাই খুব কঠিন হবে। তারপরে মনে হয় ভেন্যু বদলে গেছে, কঠিন হবে। টিচাররা মাঝে খাবারের ব্রেক নিলেন, তাদের নতুন উদ্যম এসেছে, কঠিন হবে। আজকে খুব গরম তাই প্রশ্ন খুবই কঠিন হবে। ইত্যাদি নানা শঙ্কা। রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে একেকজন ভেতর থেকে বের হয়ে আসে, সঙ্গে সঙ্গে বাকিরা বাঘের মত, অথবা বলা যায় মাইক্রোফোনওয়ালা সাংবাদিকের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে তার অভিজ্ঞতার ফিরিস্তি নেয়ার জন্য। সেই প্রশ্নের ধরণ শুনে দিশেহারা লাগতে থাকে। তারপর যখন আমার সিরিয়াল বেশ কাছিয়ে এল, শুরু হল গলার নিচ থেকে তলপেট পর্যন্ত তোলপাড়। শেষ পর্যন্ত একসময় আমার ডাক আসল। আর আমি দেখলাম কি আমি বেশিরভাগ প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারলাম। স্যার বেশ গম্ভীর মুখ করে কঠিন কঠিন প্রশ্ন করেন বলে তাকেই আমাদের বেশি ভয়। আর কি যে সব প্রশ্ন! আর ম্যা’ম দু’জনের চোখেমুখে সবসময়েই “হুঁমম একদম ঠিক বলছ” ধরণের দ্যুতি খেলতে থাকে। আমরা যাই বলি না কেন তাদের দিকে দেখলে ভরসা হয়। স্যারের প্রলয়ঙ্কারী জিজ্ঞাসার কোপানলে পড়তে হয়নি বলে আমি বেশ নিরাপদে সেশন শেষ করতে পেরেছি।
লিখিত পরীক্ষা শুরু করার আগে একটা কমন ডায়লগ হল “আমি কিচ্ছু পারিনা।“ কিংবা বড় জোর অমুক আর তমুক ছাড়া কিচ্ছু পারিনা। তবে এই কথাটা আক্ষরিক অর্থে বলা হয়না। এর মানে হল “আমার অবস্থা সুবিধার না”। মজার ব্যাপার হল কেউ কেউ ভাব ধরার জন্য এটা মিথ্যা করে বলে। কেউ কেউ সত্যি করে বলে। আর যারা জানে না যে তাদের প্রিপারেশানটাই যথেষ্ট তারাও বলে। আমি হয়ত মোটামুটি শিখে টিখে গেলাম। কিন্তু যারা ভাল মার্কস পায় আর আসলেই ঠিকঠাকমত পড়াশোনা করে তারাই যখন কিছু বিজাতীয় টার্ম ব্যবহার করে বলে যে কি লিখবে তা নিয়ে তারা খুব টেনশনে আছে আমার তখন মনে হতে থাকে তাহলে আমি যেটাকে পারা মনে করছি তা আসলে “পারা” না? এই ভেবে ঢোঁক গিলতে থাকি। তবে পরীক্ষার মাসখানেক আগেও যারা honestly মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে হায়রে আমি এক লাইনের বেশি লিখতে পারব না, তারা full answer করে আসে, কেউ কেউ খাতা ভরে ফেলে এক্সট্রা কাগজ নেয়, ঝড়ের গতিতে লিখে আঙ্গুল ব্যথা করে ফেলে মোট কথা তারা কমপক্ষে মাঝারি ধরনের রেজাল্ট উৎপাদন করে ফেলে; আর সত্যি কথা হচ্ছে ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই জাতের মানুষের সংখ্যাই বেশি।
অনার্সে উঠার পর একটা বিষয় থেকে মুক্তি পেয়েছি। তা হল, রোল নাম্বার কত এই প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া। আজকে কি দিয়ে ভাত খেয়েছ, কে বেশি আদর করে আব্বু না আম্মু এই লেভেল পার করে একটু বড় হলেই বাচ্চারা যেসব প্রশ্ন শোনে তা হল রোল নাম্বার সংক্রান্ত। এক থেকে তিনের মধ্যে থাকলে তো খুবই ভাল। আর একুশ বাইশ হলে সুখের ব্যাপার না। তবে পেছনের সারির রোল নাম্বার যদি ভর্তির কারণে ঘটে থাকে তাহলে উত্তরের সঙ্গে সেই তথ্য জুড়ে দেয়াটাই ভাল। আগে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে বা রেজাল্টের রেশ থাকতে থাকতে গ্রামে যেতাম। বড়রা বিশেষ করে মামারা জানতে চাইতেন রেজাল্ট কি। বড়ই বিব্রতকর অবস্থা ছিল তখন। কারণ আমি সবসময় মাঝ বরাবর জায়গায় ঝুলে থেকেছি, সুতরাং মুখ কালো করে বলা যেত না যে এক নাম্বারের জন্য আমি ফার্স্ট হতে পারিনি। কলেজ ছাড়ার পর থেকে আর কেউ কোন কথা জিজ্ঞেস করে না। পরীক্ষার থাকে না ঠিকঠিকানা, রেজাল্ট দেয়ার থাকে না সময় অসময়। তবে এবার বিরাটভাবে ফেঁসে যেতে পারি। কারণ ফাইনালের খবর সবাই জেনে গেছে। সবাই বলতে সত্যিই সবাই। আত্মীয়জগত, প্রতিবেশীজগত, বাবা মায়ের পরিচিতজনের জগত থেকে শুরু করে সাইবারজগতের বন্ধুবান্ধবরাও। রেজাল্ট বের হলে গা ঢাকা দিতে হবে।
পরীক্ষাটা তাহলে শেষই হয়ে গেল!
লিখিত পরীক্ষা শুরু করার আগে একটা কমন ডায়লগ হল “আমি কিচ্ছু পারিনা।“ কিংবা বড় জোর অমুক আর তমুক ছাড়া কিচ্ছু পারিনা। তবে এই কথাটা আক্ষরিক অর্থে বলা হয়না। এর মানে হল “আমার অবস্থা সুবিধার না”। মজার ব্যাপার হল কেউ কেউ ভাব ধরার জন্য এটা মিথ্যা করে বলে। কেউ কেউ সত্যি করে বলে। আর যারা জানে না যে তাদের প্রিপারেশানটাই যথেষ্ট তারাও বলে। আমি হয়ত মোটামুটি শিখে টিখে গেলাম। কিন্তু যারা ভাল মার্কস পায় আর আসলেই ঠিকঠাকমত পড়াশোনা করে তারাই যখন কিছু বিজাতীয় টার্ম ব্যবহার করে বলে যে কি লিখবে তা নিয়ে তারা খুব টেনশনে আছে আমার তখন মনে হতে থাকে তাহলে আমি যেটাকে পারা মনে করছি তা আসলে “পারা” না? এই ভেবে ঢোঁক গিলতে থাকি। তবে পরীক্ষার মাসখানেক আগেও যারা honestly মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে হায়রে আমি এক লাইনের বেশি লিখতে পারব না, তারা full answer করে আসে, কেউ কেউ খাতা ভরে ফেলে এক্সট্রা কাগজ নেয়, ঝড়ের গতিতে লিখে আঙ্গুল ব্যথা করে ফেলে মোট কথা তারা কমপক্ষে মাঝারি ধরনের রেজাল্ট উৎপাদন করে ফেলে; আর সত্যি কথা হচ্ছে ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই জাতের মানুষের সংখ্যাই বেশি।
অনার্সে উঠার পর একটা বিষয় থেকে মুক্তি পেয়েছি। তা হল, রোল নাম্বার কত এই প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া। আজকে কি দিয়ে ভাত খেয়েছ, কে বেশি আদর করে আব্বু না আম্মু এই লেভেল পার করে একটু বড় হলেই বাচ্চারা যেসব প্রশ্ন শোনে তা হল রোল নাম্বার সংক্রান্ত। এক থেকে তিনের মধ্যে থাকলে তো খুবই ভাল। আর একুশ বাইশ হলে সুখের ব্যাপার না। তবে পেছনের সারির রোল নাম্বার যদি ভর্তির কারণে ঘটে থাকে তাহলে উত্তরের সঙ্গে সেই তথ্য জুড়ে দেয়াটাই ভাল। আগে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে বা রেজাল্টের রেশ থাকতে থাকতে গ্রামে যেতাম। বড়রা বিশেষ করে মামারা জানতে চাইতেন রেজাল্ট কি। বড়ই বিব্রতকর অবস্থা ছিল তখন। কারণ আমি সবসময় মাঝ বরাবর জায়গায় ঝুলে থেকেছি, সুতরাং মুখ কালো করে বলা যেত না যে এক নাম্বারের জন্য আমি ফার্স্ট হতে পারিনি। কলেজ ছাড়ার পর থেকে আর কেউ কোন কথা জিজ্ঞেস করে না। পরীক্ষার থাকে না ঠিকঠিকানা, রেজাল্ট দেয়ার থাকে না সময় অসময়। তবে এবার বিরাটভাবে ফেঁসে যেতে পারি। কারণ ফাইনালের খবর সবাই জেনে গেছে। সবাই বলতে সত্যিই সবাই। আত্মীয়জগত, প্রতিবেশীজগত, বাবা মায়ের পরিচিতজনের জগত থেকে শুরু করে সাইবারজগতের বন্ধুবান্ধবরাও। রেজাল্ট বের হলে গা ঢাকা দিতে হবে।
পরীক্ষাটা তাহলে শেষই হয়ে গেল!
Monday, April 14, 2008
চৈতালি হাওয়া বৈশাখি ঝড়
আজকের সূর্যাস্তটা ছিল এই বছরের শেষ সূর্যাস্ত। বাংলা বর্ষের যেই বিষয়টা আমার সবচেয়ে ভাল লাগে তা হল এখানে একটা নতুন দিন আরম্ভ হয় সূর্যোদয়ের সাথে। রাত বারোটায় অথবা সন্ধ্যায় চাঁদ উঠার সময় দিন শুরু করার চেয়ে ঊষার আলোয় শুরু করাটা অনেক বেশি যৌক্তিক বলে মনে হয়। এমনিতে কতজন বাংলা দিন তারিখের হিসাব রাখে জানি না। আমার নিজের তো রাখা হয় না। শুধু পয়লা ফাল্গুন আর পয়লা বৈশাখের কথাই মনে থাকে। সেটাও উৎসব হয় দেখে। এবার আমি পুরোপুরি গুহাবাসী। মানুষের হৈ হুল্লোড় টিভিতে দেখতে খুবই ভাল লাগে। অংশ নিতেও ইচ্ছা হয়। কিন্তু বাইরে বের হলে মারাত্মক গরম আর প্রচন্ড ভীড়ের চাপে দিশেহারা লাগে। যে কয়েকবারই বেড়াতে বেরিয়েছিলাম, সকাল বেলা খুব খুশি থাকতাম কিন্তু বিকাল হতেই অতিষ্ঠ হয়ে ঠিক করতাম যে ভবিষ্যতে আর না। আবার পরের বছরও একই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। এই বছর তাই ঘরেই গ্যাঁট হয়ে থাকব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। বরং পরের দুই একদিন চেষ্টা করা যেতে পারে। আমার খুব ইচ্ছা করছে বছরের প্রথম দিনটা ঝড় হোক। তুমুল ঝড় বজ্রপাত সাথে মাঝারি বা ভারী বৃষ্টি। শুধু কালকে দিনটার জন্য। রাতের দিকে বেশ হাওয়া দিয়ে হালকা বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় সাধটা আরো পাকাপোক্ত হয়েছে। কিন্তু তাহলে চারুকলার লক্ষ্মীপ্যাঁচা, রমনার মঞ্চ এসবের কি হবে? যাদের দিনব্যাপী ঘোরাঘুরির প্ল্যান তাদেরই বা কি হবে? যার যাই হোক ঝড় হলে আমি নিজে দারুণ খুশি হব।
বৈশাখ মানে বৃষ্টির দিন চলেই এল। আমরা যারা ইট কাঠের ছাউনিতে মাথা বাঁচানোর সুযোগ নিয়ে জন্মেছি তাদের কারো কারো রোমান্টিক ভাবনার দরজায় কড়া নাড়া শুরু হয়ে গেছে। বৈশাখের বৃষ্টি আর শ্রাবণের বৃষ্টিতে বেশ তফাত। বর্ষাকালের বৃষ্টি অনেকটা নমনীয়। হট্টগোল ততটা করে না। গ্রীষ্মেরটাই বরং ভাল। আচমকা তুমুল বাতাস শুরু হবে মাঝরাস্তায়। পথচারীরা খানিকটা বেকায়দায় পড়ে যাবে। সাথে বেশ একটা আনন্দ আনন্দ অনুভূতিও হবে। ঘরে থাকলেও মন্দ না। হঠাৎ করেই কাছাকাছি বাসাগুলিতে দুমদাম দরজা জানালার কপাটের শব্দ শোনা যাবে। সেই সাথে শুরু হবে অভিভাবকদের চেঁচামেচি, এখনো জানালা খোলা? এখনি বন্ধ কর, ধূলা আসে বালি আসে এই সেই। আরে জানালা বন্ধ করলে ঝড়ঝঞ্ঝা খাব কেমন করে? ঠিক আছে প্রাণ ভরে খাও, তবে দয়া করে রুমটাও ঝাড়ু দিয়ে নিও। ঝাড়ু দেয়ার কথা শুনলে গলার জোর কমে আসে। সেক্ষেত্রে দুই একখানা জানালা খুলে রেখে এমনভাবে হাত পা ছড়িয়ে দাঁড়াতে হয় যেন আমাকে ডিঙিয়ে কোন আলাই বালাই ঘরকে ছুঁতে না পারে। অদ্ভুত কথা, আমার জন্য ঘর নাকি ঘরের জন্য আমি?
বৈশাখ মানে বৃষ্টির দিন চলেই এল। আমরা যারা ইট কাঠের ছাউনিতে মাথা বাঁচানোর সুযোগ নিয়ে জন্মেছি তাদের কারো কারো রোমান্টিক ভাবনার দরজায় কড়া নাড়া শুরু হয়ে গেছে। বৈশাখের বৃষ্টি আর শ্রাবণের বৃষ্টিতে বেশ তফাত। বর্ষাকালের বৃষ্টি অনেকটা নমনীয়। হট্টগোল ততটা করে না। গ্রীষ্মেরটাই বরং ভাল। আচমকা তুমুল বাতাস শুরু হবে মাঝরাস্তায়। পথচারীরা খানিকটা বেকায়দায় পড়ে যাবে। সাথে বেশ একটা আনন্দ আনন্দ অনুভূতিও হবে। ঘরে থাকলেও মন্দ না। হঠাৎ করেই কাছাকাছি বাসাগুলিতে দুমদাম দরজা জানালার কপাটের শব্দ শোনা যাবে। সেই সাথে শুরু হবে অভিভাবকদের চেঁচামেচি, এখনো জানালা খোলা? এখনি বন্ধ কর, ধূলা আসে বালি আসে এই সেই। আরে জানালা বন্ধ করলে ঝড়ঝঞ্ঝা খাব কেমন করে? ঠিক আছে প্রাণ ভরে খাও, তবে দয়া করে রুমটাও ঝাড়ু দিয়ে নিও। ঝাড়ু দেয়ার কথা শুনলে গলার জোর কমে আসে। সেক্ষেত্রে দুই একখানা জানালা খুলে রেখে এমনভাবে হাত পা ছড়িয়ে দাঁড়াতে হয় যেন আমাকে ডিঙিয়ে কোন আলাই বালাই ঘরকে ছুঁতে না পারে। অদ্ভুত কথা, আমার জন্য ঘর নাকি ঘরের জন্য আমি?
Sunday, April 13, 2008
গল্প লেখা
যারা লেখক তারা কেমন করে মনের কথাটা লিখে ফেলেন তা খুব অবাক লাগে। পড়তে পড়তে দেখা যায় আরে আমি তো ভেবেছিলাম এই কথাটা শুধু আমিই ভাবি। অর্থাৎ কোন একটা ব্যাপার তাঁরা কিভাবে যেন পাঠকের মন মত করেই প্রকাশ করে ফেলেন। হতে পারে আমি একটা জিনিস যেভাবে ভাবি সেই জিনিসটাকে অনেকেই সেভাবেই ভাবে। কিন্তু প্রকাশটা সবাই করতে পারে না, পারেন আমার হাতে যেই বই তার লেখক। Aristotle এর ধারণা fiction লেখার আগে পুরো প্লট সাজিয়ে নিয়ে বসতে হয়। আসলেই কি তাই? আমি ঠিক জানি না। কেউ কেউ তো হঠাৎ করেই খুব চমৎকার একটা উপন্যাস বা গল্প বা কবিতাকে রূপ দিয়ে ফেলতে পারেন। তেমন চিন্তাভাবনা ছাড়াই। সারাজীবনে আমি কতবার চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই পারি না। কেউ কেউ বলে সবাইকে দিয়ে সব কাজ হয় না। আবার কেউ কেউ বলে চেষ্টা করলে সবই হয়। কিছুদিন আগে খুব উৎসাহ নিয়ে একটা গল্প লিখতে শুরু করেছিলাম...বছর চল্লিশেক বয়সের এক নারী স্বামীর সঙ্গে দেশের বাইরে থাকে। দু’জন সন্তান আছে তার। তার জীবনের একমাত্র প্রেমটা ব্যর্থ হয়। একদিন সে খালি বাসায় বসে দেশে ফেলে আসা পুরনো দিনের নানা কথা ভাবছে। বিশেষ করে এই পর্যন্ত যতজন পুরুষকে সে কাছ থেকে দেখেছে তাদের কথা। কারো জন্যই সে কোন টান অনুভব করে না এখন। জীবনে কি কি না পাওয়া আছে তাও ভাবছে। হঠাৎ করেই প্রাইমারিতে পড়ার সময়কার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কথা মনে পড়ে যায়। শান্তশিষ্ট ধরণের একটা ছেলে যে খুব কম বয়সে মারা যায়। ছেলেটা মেয়েটার জন্য অনেক সময় নিয়ে একটা উপহার তৈরি করছিল। বলেছিল তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুকে সে একটা বিশাল সারপ্রাইজ দিবে। মেয়েটারও অধীর অপেক্ষা। এর মাঝেই ছেলেটা অসুখে পড়ে, কিছুদিন পর মারা যায়। বড় হতে হতে মৃত বন্ধুর কথা দিনে দিনে সে ভুলেই যায় অনেকটা। আজকে হঠাৎ করেই তার মনে হয় এত দামী ঘরবাড়ি গোছানো সংসার সব কিছু বৃথা। কখনোই জানা হবে না সেই সারপ্রাইজটা কি ছিল। সে প্রচন্ড অস্থির অনুভব করতে থাকে সেই উপহারটা হাতে পাওয়ার জন্য...এইরকম ছিল আমার গল্পটা যেটাকে কিছুতেই চেহারা দিতে পারিনি। দুই পৃষ্ঠা এগিয়েই শেষ।
এলেবেলে টাইপের কয়েকটা কবিতার কথা বাদ দিলে সারাজীবনে পেপারের দোর পর্যন্ত একটা গল্পই নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। দুঃখ ছিল যে সেখানে নিজের নামের আগে “সংগ্রহ” শব্দটা জুড়ে দিতে হয়েছে কারণ সেটা গ্রামে গিয়ে শোনা কাহিনীর লৈখিক রূপ, মৌলিক কিছু না। সেই বাচ্চাকালে কবি লেখক জাতীয় কিছু হবার বাসনা ছিল। এখন হারিয়ে গেছে।
এলেবেলে টাইপের কয়েকটা কবিতার কথা বাদ দিলে সারাজীবনে পেপারের দোর পর্যন্ত একটা গল্পই নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। দুঃখ ছিল যে সেখানে নিজের নামের আগে “সংগ্রহ” শব্দটা জুড়ে দিতে হয়েছে কারণ সেটা গ্রামে গিয়ে শোনা কাহিনীর লৈখিক রূপ, মৌলিক কিছু না। সেই বাচ্চাকালে কবি লেখক জাতীয় কিছু হবার বাসনা ছিল। এখন হারিয়ে গেছে।
Wednesday, April 2, 2008
পরীক্ষার পর
অনার্সের শেষ পরীক্ষাটা দিয়ে যখন কলাভবন থেকে বের হলাম, অনুভূতিটা ঠিক কেমন ছিল এখন বুঝতে পারছি না। ওই মুহূর্তেও বুঝতে পারছিলাম না। একটুকু বলা যায় যে মুক্তির আনন্দ যতখানি ছিল এবং আছে তার চেয়ে বেশি হল অপ্রকাশিত দীর্ঘশ্বাস। সবাইকে এভাবে করে একসঙ্গে দেখা আর কখনোই হবে না। সান্ত্বনা খোঁজার জন্য ভেবে নিই, পরীক্ষা শেষ হল কোথায় ভাইভা তো রয়ে গেছে। অথবা রেজাল্টের তো এখনও ঢের সময় বাকি। কিংবা রেজাল্টের পর মাস্টার্সের ক্লাস তো করতে হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সত্যিকার অর্থে আমি বা আমরা এখন নো ম্যান’স ল্যান্ডে। মাস্টার্স বা এম বি এ যে যাই পড়ুক সেটা ভিন্ন একটা ব্যাপার। তাকে Mainstream পড়াশোনার মধ্যে ফেলা যায় না। কিছুদিন পর থেকে মনে হতে থাকবে আমি আসলে কি করি। কেউ জিজ্ঞেস করলে গাল ভরে বলার মত কিছুই পাব না। জীবনের অন্য সব ফাইনালের পর যেই দিগ্বিজয়ী ভাব হত সেটাকে হাতড়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, যাবে না। এই বোধটা যতটা বিদায়ের সাথে জড়িত তার চেয়ে কোন অংশে কম জড়িত না নতুন ধাপে পা রাখার তাড়নার সাথে। অনেক হল এবার কোন একটা কাজ খোঁজার চেষ্টা কর। সেশনজট বা চাকরির দুরূহ বাজার বলে কোথাও যদি কিছু না থাকত তাহলে এতদিনে তো আমার ফুলটাইম কাজ করার কথা। চেহারা আর বয়সের সার্টিফিকেটও একই কথা বলে। আর মুখের কথায় যেভাবে রাজা উজির মেরে সাফ করি তাতে বাস্তববুদ্ধি পুরোপুরি ফাঁকা বলেও মনে হবার কথা না। শুধু একটা ব্যাপারই ধ্রুব সত্য তা হল কেউ এক হাতে সহজ কাজ আর আরেক হাতে টাকার ব্যাগ নিয়ে আমার জন্য অধীর হয়ে বসে নেই। নিজের জায়গা খুঁজে নেয়া আর করে নেয়ার দায়িত্ব প্রত্যেকের নিজেরই। এভাবে চিন্তা করলে একটা শিহরণ লাগে। “এখনো তো বড় হইনি” বলার সব অজুহাত সত্যিই কি একসময় শেষ হয়?
এসব অলংকার পরানো কথা শুনলে আমার মত অবস্থার মানুষেরা ছাড়া অন্য যে কারো মনে হতে পারে তিনটা দিন পার হতে না হতেই আদিখ্যেতা, সত্যিকার মাঠে নামো তারপর দেখি কি কর। মা বাবার হোটেলে খেয়ে, গুছিয়ে দেয়া ঘরে ঘুমিয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কাজটা চাইলেই সবাই করতে পারে। অনেকটা নন্দদুলালের মত বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবা, কিছু একটা করতেই হবে। কতটুকু Practical যোগ্যতা যে আমার আছে জানি না। আমার করা কোন কিছু কারো পছন্দ হবে কিনা কে বলবে। আবার এও বিশ্বাস করি যে আমি মোটেও ফেলনা না। সবাই একসময় আমার মত ছিল । তারা যখন অনেককিছু পারে আমিও অবশ্যই পারি এবং পারব। চেষ্টা করলে কি না হয়। সাথে সাথে মনে হয়, ও চেষ্টা করতে হবে? চেষ্টা কেমন করে করে? আমাকেই করতে হবে? আব্বুকে বললে করে দিবে না? মনটা ভাসছে একটা limbo তে।
অনেকগুলো বই জমে আছে পড়ার বাকি। তা নাহয় এক এক করে পড়লাম। নতুন মুভিও নাহয় দেখলাম। কাজে লাগবে এমন কোন পড়াশোনা বা অন্য কিছুও নাহয় করলাম। তবু কেমন যেন লাগে। দুলকি চালে চলা বোধ হয় থামাতেই হবে।
এসব অলংকার পরানো কথা শুনলে আমার মত অবস্থার মানুষেরা ছাড়া অন্য যে কারো মনে হতে পারে তিনটা দিন পার হতে না হতেই আদিখ্যেতা, সত্যিকার মাঠে নামো তারপর দেখি কি কর। মা বাবার হোটেলে খেয়ে, গুছিয়ে দেয়া ঘরে ঘুমিয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কাজটা চাইলেই সবাই করতে পারে। অনেকটা নন্দদুলালের মত বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবা, কিছু একটা করতেই হবে। কতটুকু Practical যোগ্যতা যে আমার আছে জানি না। আমার করা কোন কিছু কারো পছন্দ হবে কিনা কে বলবে। আবার এও বিশ্বাস করি যে আমি মোটেও ফেলনা না। সবাই একসময় আমার মত ছিল । তারা যখন অনেককিছু পারে আমিও অবশ্যই পারি এবং পারব। চেষ্টা করলে কি না হয়। সাথে সাথে মনে হয়, ও চেষ্টা করতে হবে? চেষ্টা কেমন করে করে? আমাকেই করতে হবে? আব্বুকে বললে করে দিবে না? মনটা ভাসছে একটা limbo তে।
অনেকগুলো বই জমে আছে পড়ার বাকি। তা নাহয় এক এক করে পড়লাম। নতুন মুভিও নাহয় দেখলাম। কাজে লাগবে এমন কোন পড়াশোনা বা অন্য কিছুও নাহয় করলাম। তবু কেমন যেন লাগে। দুলকি চালে চলা বোধ হয় থামাতেই হবে।
Tuesday, March 4, 2008
ব্যাংক কলোনি
কিছুদিন আগে একটা নাটক দেখলাম যার সেটিং ছিল মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি। আমার অতি পিচ্চিকালের এলাকা। My pre-childhood. তখনকার চেয়ে এখন দেখতে ভাল। বেশকিছু renovation করা হয়েছে। আর টিভিতে আরো ভাল লাগছিল। দীপু নাম্বার টু বইয়ের দীপু একেক বছর কাটায় একেক স্কুলে। সরকারী চাকরি করার কারণে তার বাবার পোস্টিং হয় ঘুরেঘুরে দেশের নানান জায়গায়, বাবার সঙ্গে দীপুও আজ এখানে কাল ওখানে। দীপু একা না, এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। দুই তিন বছর পরপর নতুন বাড়ি, নতুন স্কুল, নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ। আর আমার ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। জন্ম থেকে আজ অবধি আমার বাস এখানে। এটা আমাদের অষ্টম বাসা কিন্তু এই আটটা বাসাই আধ বর্গকিলোমিটারেরও কম পরিধির মধ্যে। আমার প্রথম কয়েক বছর কেটেছে মতিঝিলের ব্যাংক কলোনিতে। কুচি কুচি অনেক কিছু কথা মনে আছে। সবচেয়ে ভাল মনে আছে প্রায় বিকালে আব্বুর সাথে আমি নটরডেম কলেজের ভেতরে বেড়াতে যেতাম। অনেকরকম গাছ কলেজ ক্যাম্পাসে। সেখানে এক কোণায় একটা ছোটখাটো কমিউনিটি সেন্টার ছিল। সাদা কাপড় বিছানো টেবিলের উপর প্লেট আর গ্লাস উপুড় করে রাখা হত। এই কলোনির কয়েকটা বছরে আমরা মোট মিলিয়ে তিনটা বাসায় ছিলাম, অর্থাৎ এক কামরার সাবলেট হয়ে। তিনটা বাসাতেই সঙ্গী পরিবারের ভাইবোনের সংখ্যা ছিল বেশ ভালরকম। তিনটা রুমের মধ্যে একটা আমাদেরকে ছেড়ে দিয়ে এত মানুষ কোথায় থাকত কে জানে। এখানে রোজার দিনে ইফতারের আগে কাঠের গুঁড়োতে ঢাকা বরফ কিনতে পাওয়া যেত। সারা কলোনি জুড়ে অনেক বড় বড় ছেলেমেয়ে ছিল (ক্লাস টু থ্রি) আর এখানে এক ধরণের হলুদ রঙের আইসক্রিম বিক্রি হত। আমার ঠাণ্ডা লাগলে ভোরবেলায় আমি আর আব্বু বিল্ডিংয়ের সামনে থেকে তুলসী পাতা ছিঁড়ে নিতাম, তুলসী পাতার রসকে আদার রস আর মধুর সঙ্গে মিলিয়ে খেতে খুবই মজার। তেলা নামে একজন পাগলাটে ধরণের লোক ছিল এখানে, ছোটদের জন্য ভয়ের উৎস। কলোনি ছাড়ার কয়েক মাস পরই আমি স্কুলে ভর্তি হই আর আমার স্মৃতি আস্তে আস্তে জোরালো হতে থাকে।
স্কুলের কারণে ব্যাংক কলোনিতে কয়েক বছর রোজ আসাযাওয়া হত। এই স্কুলে আমার সময়টা মজায় কেটেছে। এখন ভাবলে অদ্ভুত লাগে একসময় আমার স্কুলবেতন ছিল ছয় টাকা। এখানে বেশিরভাল ক্লাসেই মারাত্মক রকমের হাসাহাসি হত। ছুটির পর সবচেয়ে মজার খেলার নাম ‘পাক্কাপাক্কি’ যদিও খেলাটার নিয়মকানুন একেবারেই মনে নেই এখন। টিফিন টাইমে গেটের বাইরে এসে আচার হাওয়াই মিঠাই বা পাইপ আইসক্রিম খাওয়ার অফুরন্ত সুযোগ। ক্লাস ওয়ানে ওঠার পরীক্ষার রেজাল্টের পর আমাকে পুরস্কার দেয়া হয় একটা বিচিত্র ট্রাভেল ব্যাগ। আমার ধারণা ছিল ছবিওয়ালা বই দেয়া হয়, সুতরাং বড়ই আশাহত হই আমি। তার উপর পরে আবার দেখা গেল ব্যাগের গায়ে সাঁটা কাগজে আমার নামে ভুল। তবে মোটের উপর এখানে স্কুললাইফটা অসাধারণ কেটেছে। রাস্তায় মাঝে মাঝে ব্যাংক স্কুলের ক্লাসমেটদের কাউকে কাউকে দেখি। আমার মনে হয় ওরা আমাকে চিনতে পারে না। অথবা আমার মতই না চেনার ভান করে।
কলোনিতে থাকা শেষ বাসাটারও নিজেদের রুমের সাজসজ্জা আমার মনে পড়ে না। স্মৃতির গাঁথুনি শক্ত হবার জন্য বয়সটা কম। সত্যি কথা বলতে কি যেসব ব্যাপার আমার মনে আছে বলে আমি মনে করি (হলুদ আইসক্রিমের কথা ছাড়া) তার বেশিরভাগই পরবর্তীতে তৈরি হয়েছে বলে আমার ধারণা। কারণ এখান থেকে চলে গেলেও আরো অনেকদিন পর্যন্ত এখানে বিকালবেলা ঘোরাঘুরি করা হত। কারণ তার পরিচিত মানুষজন আর আমার দৌঁড়াদৌড়ি করার ভাল জায়গা থাকার কারণে আমাকে সঙ্গে নিয়ে আব্বুর বিকাল এখানেই কাটত। স্মৃতি নিজের হাতে তৈরি হবার আরেকটা কারণ হল আমি বেশ বড় হওয়া পর্যন্ত আব্বুর কাছে পিচ্চিকালের কয়েকটা গল্প বারবার শুনতে চাইতাম। সেই গল্পগুলিতে কিছু সাধারণ সত্যি ঘটনার বর্ণনা নাটকীয়ভাবে মোড় নিত। তাই এখন মনে হয় যে যেসবকে সত্যি ভাবি তার অনেককিছুই গল্প শুনে আমার মনের মধ্যে বসে যাওয়া ছবি।
কলোনিটা এখনও হাতের কাছেই আছে। দেখতে ভাল হয়েছে। বারান্দাগুলোতে গ্রিল বসেছে। সন্ধ্যায় আশপাশের অনেক স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ হাঁটতে আসে। তবে বাল্ব জ্বালিয়ে ছেলেদের ব্যাডমিন্টন খেলাটা চালু আছে কিনা জানি না। টিনএজার ছেলেমেয়েদের মধ্যে সবসময়ই একটা ড্যামকেয়ার ভাব থাকে। যখন এখানে থাকতাম ছোট ছিলাম বলে তারা কেউ পাত্তাই দিত না। আর এখন যখন আবার কিছুটা যাওয়া আসা করার স্কোপ পেয়েছি বড় হয়ে গেছি দেখে কেউ পাত্তাই দেয় না।
স্কুলের কারণে ব্যাংক কলোনিতে কয়েক বছর রোজ আসাযাওয়া হত। এই স্কুলে আমার সময়টা মজায় কেটেছে। এখন ভাবলে অদ্ভুত লাগে একসময় আমার স্কুলবেতন ছিল ছয় টাকা। এখানে বেশিরভাল ক্লাসেই মারাত্মক রকমের হাসাহাসি হত। ছুটির পর সবচেয়ে মজার খেলার নাম ‘পাক্কাপাক্কি’ যদিও খেলাটার নিয়মকানুন একেবারেই মনে নেই এখন। টিফিন টাইমে গেটের বাইরে এসে আচার হাওয়াই মিঠাই বা পাইপ আইসক্রিম খাওয়ার অফুরন্ত সুযোগ। ক্লাস ওয়ানে ওঠার পরীক্ষার রেজাল্টের পর আমাকে পুরস্কার দেয়া হয় একটা বিচিত্র ট্রাভেল ব্যাগ। আমার ধারণা ছিল ছবিওয়ালা বই দেয়া হয়, সুতরাং বড়ই আশাহত হই আমি। তার উপর পরে আবার দেখা গেল ব্যাগের গায়ে সাঁটা কাগজে আমার নামে ভুল। তবে মোটের উপর এখানে স্কুললাইফটা অসাধারণ কেটেছে। রাস্তায় মাঝে মাঝে ব্যাংক স্কুলের ক্লাসমেটদের কাউকে কাউকে দেখি। আমার মনে হয় ওরা আমাকে চিনতে পারে না। অথবা আমার মতই না চেনার ভান করে।
কলোনিতে থাকা শেষ বাসাটারও নিজেদের রুমের সাজসজ্জা আমার মনে পড়ে না। স্মৃতির গাঁথুনি শক্ত হবার জন্য বয়সটা কম। সত্যি কথা বলতে কি যেসব ব্যাপার আমার মনে আছে বলে আমি মনে করি (হলুদ আইসক্রিমের কথা ছাড়া) তার বেশিরভাগই পরবর্তীতে তৈরি হয়েছে বলে আমার ধারণা। কারণ এখান থেকে চলে গেলেও আরো অনেকদিন পর্যন্ত এখানে বিকালবেলা ঘোরাঘুরি করা হত। কারণ তার পরিচিত মানুষজন আর আমার দৌঁড়াদৌড়ি করার ভাল জায়গা থাকার কারণে আমাকে সঙ্গে নিয়ে আব্বুর বিকাল এখানেই কাটত। স্মৃতি নিজের হাতে তৈরি হবার আরেকটা কারণ হল আমি বেশ বড় হওয়া পর্যন্ত আব্বুর কাছে পিচ্চিকালের কয়েকটা গল্প বারবার শুনতে চাইতাম। সেই গল্পগুলিতে কিছু সাধারণ সত্যি ঘটনার বর্ণনা নাটকীয়ভাবে মোড় নিত। তাই এখন মনে হয় যে যেসবকে সত্যি ভাবি তার অনেককিছুই গল্প শুনে আমার মনের মধ্যে বসে যাওয়া ছবি।
কলোনিটা এখনও হাতের কাছেই আছে। দেখতে ভাল হয়েছে। বারান্দাগুলোতে গ্রিল বসেছে। সন্ধ্যায় আশপাশের অনেক স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ হাঁটতে আসে। তবে বাল্ব জ্বালিয়ে ছেলেদের ব্যাডমিন্টন খেলাটা চালু আছে কিনা জানি না। টিনএজার ছেলেমেয়েদের মধ্যে সবসময়ই একটা ড্যামকেয়ার ভাব থাকে। যখন এখানে থাকতাম ছোট ছিলাম বলে তারা কেউ পাত্তাই দিত না। আর এখন যখন আবার কিছুটা যাওয়া আসা করার স্কোপ পেয়েছি বড় হয়ে গেছি দেখে কেউ পাত্তাই দেয় না।
Wednesday, February 27, 2008
টেস
সন্ধ্যায় আমার বন্ধু লিটল ম্যাগ থেকে তার পড়া একটা গল্প সংক্ষেপে শোনালো। শুনতে ভাল লেগেছে, পড়তে হয়ত আরো ভাল লাগবে। বাসায় ফিরে মনে পড়ল সেকেন্ড ইয়ারে পড়া “টেস অব দ্য ডার্বারভিল” এর কথা। অতীত ঝেড়ে নতুন জীবন শুরু করতে যাওয়া টেস তার অতীতের অনাকাঙ্খিত একটা ঘটনা নিয়ে খুব শঙ্কিত। নতুন করে যার সঙ্গে তার ভালবাসার সম্পর্ক হয় সে এই ব্যাপারটা জানলে কিভাবে নিবে এটা ভেবে টেস সবসময় মানসিক কষ্টে ভুগত। এবং বিয়ের রাতেই স্বামী এঞ্জেলকে সে জানিয়ে দেয় কেমন করে সে কুমারীত্ব হারায় আর পরবর্তীতে সেই সন্তানকেও হারায়। এর আগে এঞ্জেলও স্ত্রীর কাছে স্বীকার করে লন্ডনে থাকাকালে এক মহিলার সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা। এঞ্জেলের ব্যাপারটা টেস একবাক্যে হজম করে নেয়, হয়তবা নিজেরও কিছু বলার ছিল বলে। কিন্তু টেসের অতীত জানার পর এঞ্জেল কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। সেই মুহূর্তেই সে ত্যাগ করে টেসকে। টেসের জীবনের যন্ত্রণাদায়ক অধ্যায় আরম্ভ হয়। অনেকদিন পর এঞ্জেল তার ভুল বুঝতে পারে, টেসের কাছে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু সহায়সম্বলহীন টেস তখন আবার ফাঁদবন্দী মূষিক। ভুগতে ভুগতে শেষ পর্যন্ত টেসের মৃত্যু ঘটে একদিন। পটভূমি উনিশ শতকের ইংল্যান্ড। আর আমরা পড়েছি একবিংশ শতাব্দীতে। আমাদের প্রাথমিক মন্তব্য ছিল টেস একটা স্টুপিড, কারণ এঞ্জেল তাকে ছেড়ে যাবার পরও সে ভালবাসা নিয়ে এঞ্জেলের পথ চেয়ে বসে থেকেছে। আর এঞ্জেল একটা অসচ্চরিত্র লোক, কারণ যেই টেসকে পাবার জন্য সে পরিবারের বাধাও উপেক্ষা করেনি সেই টেস আসলে তার কাছে পুরোই শরীরসর্বস্ব। আমাদের আপত্তি ছিল মেনে যদি নিল তো দুইজনই মেনে নিল না কেন আর যদি কঠিন প্রতিক্রিয়া দেখাতে হল তো উভয়েই দেখাল না কেন।
আমরা এখনো এভাবে কথা বলি, রুমার হাজব্যান্ড উদারমনস্ক, রুমার পুরনো সম্পর্ক নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলে না। ঝুমার স্বামী খুব ভাল মানুষ, সে চায় ঝুমা ঘরে বসে না থেকে কিছু একটা করুক। কোন ছেলে যখন তার স্ত্রীকে শিল্পকাজে উৎসাহ দেয়, তার সুখদুঃখ সত্যিকারভাবে অনুভব করে, যখন সে তার স্ত্রীর প্রতি বন্ধুসুলভ হয়, আমরা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হই। বলি, অমুক আসলেই একজন চমৎকার লোক। একই কাজটা যখন মেয়েটা করে, একে কি আমরা উল্লেখযোগ্য কিছু মনে করি? কর্ত্রী কর্তার টাই ঘড়ি মোজার হদিস রাখবেন আর সারাদিন অফিস করেও কর্ত্রীকে এক হাতেই হেঁসেল ঠেলতে হবে। কেউ যদি বউয়ের সাথে কাজে হাত লাগায় আমরা মুগ্ধ হয়ে তার বাস্তববুদ্ধির তারিফ করি। ছেলেদের স্বভাব কি এতই মন্দ যে তাদের উচিত আচরণটাও কমপ্লিমেন্ট দেয়ার মত বিষয় হয়ে ওঠে? আমাদের দেখা পরিবারগুলোতে বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত কি আসলে দুইজনের মিলিত আলোচনার ফসল হয়? একথা সত্যি যে আমরা টেসের সময় থেকে অনেক এগিয়ে এসেছি। তবুও আপাত চোখে যত উন্নয়ন দেখা যায় সেটাকে প্রকৃত করার জন্য রক্তে গেঁড়ে বসা কমবেশি গোঁড়ামিকে অনেক জোরে ধাক্কা দেয়ার প্রয়োজনটা এখনো দূর হয়ে যায়নি।
আমরা এখনো এভাবে কথা বলি, রুমার হাজব্যান্ড উদারমনস্ক, রুমার পুরনো সম্পর্ক নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলে না। ঝুমার স্বামী খুব ভাল মানুষ, সে চায় ঝুমা ঘরে বসে না থেকে কিছু একটা করুক। কোন ছেলে যখন তার স্ত্রীকে শিল্পকাজে উৎসাহ দেয়, তার সুখদুঃখ সত্যিকারভাবে অনুভব করে, যখন সে তার স্ত্রীর প্রতি বন্ধুসুলভ হয়, আমরা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হই। বলি, অমুক আসলেই একজন চমৎকার লোক। একই কাজটা যখন মেয়েটা করে, একে কি আমরা উল্লেখযোগ্য কিছু মনে করি? কর্ত্রী কর্তার টাই ঘড়ি মোজার হদিস রাখবেন আর সারাদিন অফিস করেও কর্ত্রীকে এক হাতেই হেঁসেল ঠেলতে হবে। কেউ যদি বউয়ের সাথে কাজে হাত লাগায় আমরা মুগ্ধ হয়ে তার বাস্তববুদ্ধির তারিফ করি। ছেলেদের স্বভাব কি এতই মন্দ যে তাদের উচিত আচরণটাও কমপ্লিমেন্ট দেয়ার মত বিষয় হয়ে ওঠে? আমাদের দেখা পরিবারগুলোতে বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত কি আসলে দুইজনের মিলিত আলোচনার ফসল হয়? একথা সত্যি যে আমরা টেসের সময় থেকে অনেক এগিয়ে এসেছি। তবুও আপাত চোখে যত উন্নয়ন দেখা যায় সেটাকে প্রকৃত করার জন্য রক্তে গেঁড়ে বসা কমবেশি গোঁড়ামিকে অনেক জোরে ধাক্কা দেয়ার প্রয়োজনটা এখনো দূর হয়ে যায়নি।
Tuesday, February 19, 2008
হঠাৎ বৃষ্টি
“মেঘ গুড়গুড় মেঘলা দিনে ময়ূর ডাকে কেকা
সবাই লুকায় ঘরের কোণে ময়ূর নাচে একা”
‘আমার বই’ প্রথম ভাগের কবিতা। আজকে বিকালে হঠাৎ করে কেমন মেঘলা হয়ে গেল প্রকৃতি! আমি পরম সুখে দিবানিদ্রা দিচ্ছিলাম। চোখ খুলে গেল আপনাআপনি। দেখি আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। একটু আধটু গুড়ূম গুড়ুম ধ্বনিও। তখনই মনে পড়ল কবিতাটা। আমি ময়ূর হলে পেখম ছড়িয়ে নৃত্য জুড়ে দিতাম। তবে সেটা বড়ই সময়সাপেক্ষ। প্রথমে মানুষের বেশভূষা ছাড়তে হবে, তারপর পাখিসাম্রাজ্যে কড়া নাড়তে হবে, অতঃপর ক্যাটালগ দেখে ময়ূরজাতি বেছে নিতে হবে এবং সবশেষে পুরুষ হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এতসব করে যখন রেডি হয়ে বেরিয়ে আসব ততক্ষণে মেঘ হয়ে যাবে উধাও। তাই সেই চিন্তা বাদ দিয়ে আমি ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করার জন্য জানালায় উঁকিঝুঁকি মারলাম। মজার ব্যাপার হল আজকের মেঘের রংটা একটু বিচিত্র। ধূসর নীল না হয়ে বরং নীলচে ধূসর। দু’টো বিল্ডিংএর মাঝ দিয়ে যেই একটুখানি আকাশ দেখা যায় সেটা যেন চোখে পড়ল না। ছাইভস্মমাখা এমনই অদ্ভূত রং যে আমার মাইয়োপিক চক্ষু ধোঁকা খেয়ে গেছে। কয়েকটা ফোঁটা পড়েছে। এখনো বিকাল মিলিয়ে যায়নি। ভাবছি আবার শৈত্যপ্রবাহ নেমে আসবে কিনা। ওঝার বাণের তোড়ে অতিষ্ঠ হয়ে শরীর ছেড়ে পালানোর সময় শাঁকচুন্নি যেমন আমগাছের ডালটা ভেঙ্গে দিয়ে যায় তেমন যাবার কালে শীতবাবাও কিছু দেখিয়ে যাবে ভাবছে নাকি? এটা কেমন কথা হল! নেচে গেয়ে বসন্তবরণ হল, পৌষমাঘের পাট চুকিয়ে দিলাম, ঠাণ্ডার বাক্সপেটরা গুছিয়ে এনেছি প্রায়, এখন এসব মোটেও ভাল লাগছে না কিন্তু।
সবাই লুকায় ঘরের কোণে ময়ূর নাচে একা”
‘আমার বই’ প্রথম ভাগের কবিতা। আজকে বিকালে হঠাৎ করে কেমন মেঘলা হয়ে গেল প্রকৃতি! আমি পরম সুখে দিবানিদ্রা দিচ্ছিলাম। চোখ খুলে গেল আপনাআপনি। দেখি আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। একটু আধটু গুড়ূম গুড়ুম ধ্বনিও। তখনই মনে পড়ল কবিতাটা। আমি ময়ূর হলে পেখম ছড়িয়ে নৃত্য জুড়ে দিতাম। তবে সেটা বড়ই সময়সাপেক্ষ। প্রথমে মানুষের বেশভূষা ছাড়তে হবে, তারপর পাখিসাম্রাজ্যে কড়া নাড়তে হবে, অতঃপর ক্যাটালগ দেখে ময়ূরজাতি বেছে নিতে হবে এবং সবশেষে পুরুষ হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এতসব করে যখন রেডি হয়ে বেরিয়ে আসব ততক্ষণে মেঘ হয়ে যাবে উধাও। তাই সেই চিন্তা বাদ দিয়ে আমি ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করার জন্য জানালায় উঁকিঝুঁকি মারলাম। মজার ব্যাপার হল আজকের মেঘের রংটা একটু বিচিত্র। ধূসর নীল না হয়ে বরং নীলচে ধূসর। দু’টো বিল্ডিংএর মাঝ দিয়ে যেই একটুখানি আকাশ দেখা যায় সেটা যেন চোখে পড়ল না। ছাইভস্মমাখা এমনই অদ্ভূত রং যে আমার মাইয়োপিক চক্ষু ধোঁকা খেয়ে গেছে। কয়েকটা ফোঁটা পড়েছে। এখনো বিকাল মিলিয়ে যায়নি। ভাবছি আবার শৈত্যপ্রবাহ নেমে আসবে কিনা। ওঝার বাণের তোড়ে অতিষ্ঠ হয়ে শরীর ছেড়ে পালানোর সময় শাঁকচুন্নি যেমন আমগাছের ডালটা ভেঙ্গে দিয়ে যায় তেমন যাবার কালে শীতবাবাও কিছু দেখিয়ে যাবে ভাবছে নাকি? এটা কেমন কথা হল! নেচে গেয়ে বসন্তবরণ হল, পৌষমাঘের পাট চুকিয়ে দিলাম, ঠাণ্ডার বাক্সপেটরা গুছিয়ে এনেছি প্রায়, এখন এসব মোটেও ভাল লাগছে না কিন্তু।
Tuesday, February 12, 2008
সন্ধ্যাবেলা
রোজ খানিকটা করে দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে চলেছে। যেভাবে এগোচ্ছে, আমার তো মনে হচ্ছে জুনের মাঝখান আসতে আসতেই সূর্যাস্ত আটটায় গিয়ে ঠেকবে। কিন্তু কিভাবে কিভাবে যেন ম্যানেজ করে নেয় প্রকৃতি। জুনও আসে কিন্তু আবার আটটাও বাজে না। আমাদের একটা ব্যাপার কিন্তু বেশ। আমরা মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় দিন আর রাতের সীমারেখাটা আজান দিয়ে ভাগ করে দেয়া যায়। মাগরিবের আগে দিন আর মাগরিবের পরে রাত। দারুণ একটা নিয়ম। আজান দিল খেলা শেষ বাসায় ফেরো। আজান দিল হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বস। আজান হচ্ছে, ঘরের বাতি জ্বালাও। একটা ফোল্ডার আজকের মত বন্ধ কর এবং আরেকটা ফোল্ডার খোল। খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ দেশে এই নিয়মটা পাওয়া যাবে না। আমি যদি এখন হঠাৎ নিউইয়র্ক বা ভিয়েনায় চলে যাই প্রথম বেশ অনেকদিন আমার বিকাল আর সাঁঝের মাঝে দাগ দিতে বেশ অসুবিধা হবে। বলা যায় দিন ভাগ করার কি বা প্রয়োজন? আসলে অভ্যাস। রাত থেকে দিনকে আলাদা করতেও আজান। আমি এটা টের পাই না, তাই অভ্যাসও হয়নি। সূর্যোদয় দেখতে সূর্যাস্তের চেয়ে অনেক সুন্দর। অন্তত বেশিরভাগ মানুষ তাই বলবে। কারণ হতে পারে এই যে আমরা আলোর প্রতি দুর্বল। আলো ফুটতে থাকা মানেই শুভসূচনা। আমাদের পাঁচটা বেলা আর সবকয়টার শুরু বা শেষ আজান দিয়ে। ধর্ম মানুষকে যেসব শেখায় তার মধ্যে শৃংখলা আর নিয়মানুবর্তিতা অন্যতম। অধার্মিকের নিয়মনিষ্ঠা নেই তা বলব না। আমি নিজে যেমনই হই না কেন, আশপাশের ধর্মাচারের প্রভাব আমার উপর আছেই। এটা না দেখলেই বরং একটু অস্বাভাবিক লাগবে।
বলছিলাম আসলে গোধূলির কথা। আমাদের আগের বাসাটা ছিল ছয়তলায়। বেশ আলো পাওয়া যেত। মাঝে মাঝে উজ্জ্বল দিনে গোধূলি মিলিয়ে যেতে একটু বেশি সময় নেয়। তখন সেই সময়টা ছিল ভয়ের। কারণ আমি কোন একভাবে জেনেছিলাম কিয়ামত হবে সূর্যাস্তের সময় এবং তখন সূর্য ডুবে গিয়ে পশ্চিম দিক থেকে আবার উঠবে। কেমন একটা আতংক হত। তার ওপর আমার বারান্দা ছিল পশ্চিমমুখী। আমি দেখতে পেতাম পশ্চিমের আকাশ আবার যেন আলো হয়ে উঠছে। এখন ভাবলে হাসি পায়। বাসায় থাকলে বিকাল থেকে সন্ধ্যা হবার সময়টা আমার মোটেও পছন্দ না। কোন কাজ করতে ভাল লাগে না আবার অলস বসে থাকতেও ভাল লাগে না। মেজাজ একটু তিরিক্ষি হয়ে পড়ে। ওই ছয়তলার বাসায় রোজার দিনে অর্ধেক ইফতারের পর আমি তাড়াহুড়া করে বারান্দায় চলে আসতাম। রাস্তা দেখার জন্য। কারণ ওই সময় সুনসান হয়ে থাকে অলিগলি, রোজা না থাকলে এমনটা পাওয়া যায় না। হঠাৎ হঠাৎ কোন একজনকে হয়ত চলতে দেখা যেত। ভর সন্ধ্যায় সোডিয়াম বাতির নিচে একাকী পথিক। আমাদের গ্রামে গোধূলির সময়কে বলা হয় “পাঁচ ওক্তের এক ওক্ত”। মজার ব্যাপার হল এই phrase শুধু এই সময়ের জন্য প্রযোজ্য, বাকি চারটা “ওক্ত”এর জন্য না। “পাঁচ ওক্তের এক ওক্ত” তে চুল বেঁধে না রাখলে আমার দাদী বিরক্ত হন। আঁচড়ে ফিটফাট করে রাখলেও চলবে না, বাঁধা হতে হবে। খোলা চুলে কত কি ঢুকে পড়তে পারে!
বলছিলাম আসলে গোধূলির কথা। আমাদের আগের বাসাটা ছিল ছয়তলায়। বেশ আলো পাওয়া যেত। মাঝে মাঝে উজ্জ্বল দিনে গোধূলি মিলিয়ে যেতে একটু বেশি সময় নেয়। তখন সেই সময়টা ছিল ভয়ের। কারণ আমি কোন একভাবে জেনেছিলাম কিয়ামত হবে সূর্যাস্তের সময় এবং তখন সূর্য ডুবে গিয়ে পশ্চিম দিক থেকে আবার উঠবে। কেমন একটা আতংক হত। তার ওপর আমার বারান্দা ছিল পশ্চিমমুখী। আমি দেখতে পেতাম পশ্চিমের আকাশ আবার যেন আলো হয়ে উঠছে। এখন ভাবলে হাসি পায়। বাসায় থাকলে বিকাল থেকে সন্ধ্যা হবার সময়টা আমার মোটেও পছন্দ না। কোন কাজ করতে ভাল লাগে না আবার অলস বসে থাকতেও ভাল লাগে না। মেজাজ একটু তিরিক্ষি হয়ে পড়ে। ওই ছয়তলার বাসায় রোজার দিনে অর্ধেক ইফতারের পর আমি তাড়াহুড়া করে বারান্দায় চলে আসতাম। রাস্তা দেখার জন্য। কারণ ওই সময় সুনসান হয়ে থাকে অলিগলি, রোজা না থাকলে এমনটা পাওয়া যায় না। হঠাৎ হঠাৎ কোন একজনকে হয়ত চলতে দেখা যেত। ভর সন্ধ্যায় সোডিয়াম বাতির নিচে একাকী পথিক। আমাদের গ্রামে গোধূলির সময়কে বলা হয় “পাঁচ ওক্তের এক ওক্ত”। মজার ব্যাপার হল এই phrase শুধু এই সময়ের জন্য প্রযোজ্য, বাকি চারটা “ওক্ত”এর জন্য না। “পাঁচ ওক্তের এক ওক্ত” তে চুল বেঁধে না রাখলে আমার দাদী বিরক্ত হন। আঁচড়ে ফিটফাট করে রাখলেও চলবে না, বাঁধা হতে হবে। খোলা চুলে কত কি ঢুকে পড়তে পারে!
Wednesday, February 6, 2008
আমার কলেজজীবন
আমি বলে থাকি আমার কাছে সবচেয়ে কম পছন্দের হল কলেজ লাইফ, অবশ্য যদি স্কুল বা ভার্সিটির সঙ্গে তুলনা করতে যাই। এটা মূলত পড়াশোনার কষ্টের জন্য। অল্প সময়ের মধ্যে কঠিন অনেক কিছু আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা করতে হয়েছিল এবং আমি তার বেশিরভাগই মাথায় রাখতে পারতাম না। তাছাড়া কলেজে যাওয়া আসাটা মোটামুটি বছর দুয়েকের মত হওয়ায় চটপট করে শেষও হয়ে গেছে। কাছের বন্ধুদের মধ্যে আমার সঙ্গে একই সেকশানে পড়েছিল মাত্র একজন। মনে আছে প্রথম যেদিন ক্লাস ভাগাভাগি করা হল আর আমি দেখলাম আমি আর বীথি একই সেকশানে, বিশাল একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম। মনে হচ্ছিল এযাত্রা যেন জীবন ফিরে পেলাম। স্কুললাগোয়া কলেজ হওয়ায় ওই স্কুলের মেয়েরাই ছিল সংখ্যায় বেশি, তাছাড়া অন্যেরা একেকজন একেকখান থেকে আসা। আরও বড় কথা হল আমি বন্ধুত্ব করতে একেবারেই পটু না। কিছু কিছু মেয়েকে দেখে তখন মনে মনে বলতাম, তোমরা এখানে স্কুলে পড়েছিলে বলে এত ভাব ধরার কি আছে, আমরা বাইরে থেকে এসেছি আরো বেশি মার্কস পেয়ে, তোমাদের মত কোটা পদ্ধতিতে না। ধীরে ধীরে আমার আর বীথির বেশ কয়েকজন দারুণ বন্ধু হয়ে যায়। সবাইই অন্যান্য স্কুলের। আমরা খুব মজা করতাম। হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যেত। ক্লাসে আমাদেরকে বসতে হত ‘রোটেশান’ করে। অর্থাৎ আজকে যেই বেঞ্চে বসব পরের দিন তার পেছনের বেঞ্চে। এভাবে করে যেদিন ফার্স্ট বেঞ্চ চলে আসত সেদিন একটু টেনশান কাজ করত। টিফিন পিরিয়ড ছিল মজার। কলেজ কম্পাউন্ডে একটা ক্যান্টিন ছিল যদিও তার খাবার আমার তেমন পছন্দের ছিল না। তবে রোববারের তেহারি টাইপ জিনিসটা খেতে ভাল লাগত। ক্যান্টিনে সবচেয়ে বেশি চলত আচার আর দুই টাকার আলুর চিপস। এখানেই প্রথম ক্লাস ফাঁকি দেয়ার অভিজ্ঞতা হয় আমার। মাঠে গিয়ে বসে থাকলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা খুব কম ছিল। বৃহস্পতিবারের Assembly টাও মন্দ না। আমাদের কলেজ মোটামুটি উৎসবমুখর থাকত প্রায় সময়েই। অডিটোরিয়াম খোলা, কমনরুমে হৈ চৈ, করিডরে হাঁটাহাটি, মাঠে বসে গল্প এসব চলত সারাক্ষণই। একবার পয়লা বৈশাখের পরপর অডিটোরিয়ামে এক বাউলের গান হল। বাউলের নাম ছিল আলম সরকার। আমরা সবাই খুব লাফালাফি করে গান শুনলাম। আরো কয়েকবার কি কি যেন হল আমরা হেভি সাজগোজ করে গিয়েছিলাম। একবার যখন ম্যাগাজিন বের করার কথা, আমি দিলাম একটা কবিতা আর একটা গল্প। সেই কবিতার আসল মাজেজা ছিল শেষ দুই লাইনে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমার সাধের কবিতাকে এডিট করে আসল জায়গাটাই ছেঁটে ফেলা হল। আর করুণরসে সিক্ত গল্পটা ছিল একজন মৃত্যুপথযাত্রী প্রবাসীকে নিয়ে যে তার বন্ধুর কাছে চিঠি লিখছে। চিঠিটাই ছিল গল্পটা। এটা তো আলোর মুখ দেখল না। সবচেয়ে আনন্দের হল rag day. একই সঙ্গে কষ্টেরও। অনেক নাচগান হল, কেক কাটা হল, খাওয়াদাওয়া হল। সবাই একটা করে শার্ট পেলাম। নিয়ম হল বন্ধুরা শার্টের গায়ে কিছু একটা লিখে দিবে। এই ব্যাপারটাই আমার সবচেয়ে পছন্দ হয়েছিল। আমরা প্রবল উৎসাহে একে অন্যের শার্টে লিখলাম এটা সেটা। সেদিন দাপাদাপি করে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল। অনেক মন খারাপ লেগেছিল শেষ সময়ে। এখানে আর ক্লাস করা হবে না, একসঙ্গে গল্প করা হবে না। আমি কলেজজীবনকে সবসময় তালিকার পেছন দিকে ফেলে রাখি। কখনো ভাল করে ভেবে দেখাও হয় না। আজকে একটা ফোন পেয়ে সাঁই করে মনটা সেই সময়ে ফিরে গেল। আমি মানতে বাধ্য হলাম, এমন অল্প সময়ের মধ্যে এমন করে বন্ধু হয়ে গিয়ে এত আনন্দ করাটা কেবল কলেজেই সম্ভব হয়েছিল। অথচ সেই বন্ধুদের সাথেই আমার সরাসরি যোগাযোগ কম। আমার কলেজের ইউনিফর্ম আলমারিতে এখনো আছে। আমাদের ব্যাজটা ছিল সুঁই সুতায় তোলা। আমার ড্রয়ারে সেটাও আছে। আর শার্টটা আছে প্যাকেটে মোড়ানো। যত্নে তোলা স্মৃতি।
Monday, February 4, 2008
অতিথিরা
ইংরেজরা নাকি আলাপ শুরু করে আবহাওয়ার প্রসঙ্গ দিয়ে। আমার অবস্থাও হচ্ছে তাই। কোন কথা না পেলে ঠাণ্ডার কথা বলে কিছু একটা শুরু করি, তারপর দেখি মেগাসিরিয়ালের কাহিনী টানতে টানতে রচনা নদী থেকে গরু, গরু থেকে লাঙল, লাঙল থেকে ধানে চলে যায়। অথচ যেখানে প্রয়োজন সেখানে এমনটা ঘটে না। যেমন ধরা যাক অতিথিদের সঙ্গে। দেখা গেল খুব বেশি ঘনিষ্ঠ না এমন মেহমান এসেছে বাসায় কিন্তু বাবা মা এই মুহূর্তে বাইরে। আমার তখন বড়ই আমতা আমতা অবস্থা। বাক্যবিনিময় করতে হবে কিন্তু কুশলাদি জিজ্ঞেসের পর তেমন কোন কথা খুঁজে পাই না আমি। কারো পাঁচটা ছেলেমেয়ে থাকলে প্রত্যেকের নাম ধরে ধরে কেমন আছে তা তো আর জিজ্ঞেস করা যায় না। সৌভাগ্যক্রমে জৈষ্ঠ্যের খররৌদ্র অথবা মাঘের শৈত্যপ্রবাহ বজায় থাকলে তাঁরা নিজেরাই প্রসঙ্গ টেনে আনেন। এটা নিয়ে মোটামুটি কিছুক্ষণ কাটিয়ে দিতে পারি। তারপর আমি এখন কোন ইয়ারে, ফাইনাল কবে এটা নিয়েও কিছুটা কথাবার্তা বলা যায়। সেক্ষেত্রে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিয়ে প্রায়ই কিছু অম্লবাক্য হজম করা লাগে। কোন কোন অতিথি দেশিবাসী আর কেউ কেউ বাবামায়ের অফিসসূত্রে পরিচিত। মায়াকাড়া ছোটবাচ্চা নিয়ে আসেন কেউ। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় এক দুপুরে একজন অমায়িক ধরণের আর্মির লোক এসেছিলেন আমার ফুপাতো ভাইয়ের সঙ্গে। বাসায় তখন মানুষ বলতে একমাত্র আমি। তাকে কোন দিন না দেখলেও তার সঙ্গে কথা বলতে বেশ ভাল লেগেছিল। এছাড়াও অনেক সময়ই হঠাৎ চলে আসা দূরসম্পর্কীয় অতিথিদের বেশ ভাল লেগে যায়। আমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ি শুনলে কারো চোখ কপালে উঠে যায় কারণ আমার সঙ্গে তার দেখা হবার পর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। সময় যে খুব দ্রুত চলে যায় একথা তার আবার নতুন করে মনে পড়ে যায়। তখন আমার একটু খারাপই লাগে। আসলেই তো সময় কেমন চোখের পলকে হারিয়ে যায়।
এমন কেউ কেউ আছেন যারা দুইটা কথা একটু একটু পরপর মনে করিয়ে দেন; একটা হল ছেলেমেয়ের পড়াশোনার চাপে তার নাওয়া খাওয়া বন্ধ, দম আটকে যাচ্ছে আর আরেকটা কথা হল আমার মা বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন কারণ তার মেয়ে ভার্সিটিতে পড়ে, তাই তাকে কোন যন্ত্রণা পোহাতে হয় না। সেসময় আমার আফসোসই হয় কেন যে তাদের ছেলেমেয়েরা আমার মত কাউকে কোনরকম কষ্ট না দিয়ে জন্মের পরপরই এক লাফে অনার্সে ভর্তি হয়ে গেল না। সবচেয়ে মারাত্মক হল তিন চার বছরের ত্যাঁদড় টাইপ বাচ্চাকাচ্চা। এরা এটা সেটা ফেলে ছড়িয়ে তুলকালাম করে। আমি যেহেতু ‘বড়’ তাই ধরে আছাড় দেয়া যায় না, বরং “না না কি হয়েছে, ছোটমানুষ খেলুক” এরকম একটা মুখ করে রাখতে হয়। ভাঙার জন্য তাদের হাতে সবসময় আমার দরকারি জিনিসটাই পড়ে নাকি তারা ভেঙে ফেলার পর সেই জিনিসটা আমার খুব দরকার হয়ে পড়ে তা বলতে পারব না। এই রকমের শিশুপ্রতিভা আমাদের বাসায় কালেভদ্রে আসে এটাই যা সুখের কথা। সামনে কোন পরীক্ষা না থাকলে অবশ্য সন্ধ্যার দিকে ইন্টারেস্টিং কোন মেহমান আসাটা ভাল। তাহলে এই সেই করতে করতে পড়ার সময়টা কাটিয়ে দেয়া যায়। আমাদের এই সামাজিক আচারটা মন্দ না, হাতে করে এটা সেটা নিয়ে যাওয়া। অনেকে মিষ্টি নিয়ে আসেন, খাওয়ার মানুষ পাওয়া যায় না। তবে সমঝদার কেউ বুদ্ধি খাটিয়ে আইসক্রিম নিয়ে আসলে তার বুদ্ধির মর্যাদা আমি দিয়ে থাকি। এখানে আমার একটা দুঃখ আছে, আগের মত এখন আর কেউ আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসে না। আর আরেকটা দুঃখের কথা হল যারা হাতে কিছু নিয়ে বেড়াতে আসেন আমাদের বাসায় তারা আমার এই লেখাটা পড়বেন না।
কত কিছুই বললাম। আমি নিজেও তো মাঝে মাঝে অতিথি হয়ে যাই। আমি কেমন কে জানে। কোথাও যাওয়াটা আমার কাছে ঝক্কি মনে হলেও নিজের বাসায় কেউ আসলে ভালই লাগে। অনেকদিন হল দুই একদিন থেকে যাবার মত করে কেউ আসে না। রাতে খাবার টেবিলে পারিবারিক বা গ্রামের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা শোনাটা বেশ মজার। আমি বুড়ো হতে হতে হয়ত কেউ আর কারো বাড়ি বেড়াতেও যাবে না। যোগাযোগ যত সহজ হয় চলাফেরা বোধহয় ততই কঠিন হয়ে পড়ে।
এমন কেউ কেউ আছেন যারা দুইটা কথা একটু একটু পরপর মনে করিয়ে দেন; একটা হল ছেলেমেয়ের পড়াশোনার চাপে তার নাওয়া খাওয়া বন্ধ, দম আটকে যাচ্ছে আর আরেকটা কথা হল আমার মা বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন কারণ তার মেয়ে ভার্সিটিতে পড়ে, তাই তাকে কোন যন্ত্রণা পোহাতে হয় না। সেসময় আমার আফসোসই হয় কেন যে তাদের ছেলেমেয়েরা আমার মত কাউকে কোনরকম কষ্ট না দিয়ে জন্মের পরপরই এক লাফে অনার্সে ভর্তি হয়ে গেল না। সবচেয়ে মারাত্মক হল তিন চার বছরের ত্যাঁদড় টাইপ বাচ্চাকাচ্চা। এরা এটা সেটা ফেলে ছড়িয়ে তুলকালাম করে। আমি যেহেতু ‘বড়’ তাই ধরে আছাড় দেয়া যায় না, বরং “না না কি হয়েছে, ছোটমানুষ খেলুক” এরকম একটা মুখ করে রাখতে হয়। ভাঙার জন্য তাদের হাতে সবসময় আমার দরকারি জিনিসটাই পড়ে নাকি তারা ভেঙে ফেলার পর সেই জিনিসটা আমার খুব দরকার হয়ে পড়ে তা বলতে পারব না। এই রকমের শিশুপ্রতিভা আমাদের বাসায় কালেভদ্রে আসে এটাই যা সুখের কথা। সামনে কোন পরীক্ষা না থাকলে অবশ্য সন্ধ্যার দিকে ইন্টারেস্টিং কোন মেহমান আসাটা ভাল। তাহলে এই সেই করতে করতে পড়ার সময়টা কাটিয়ে দেয়া যায়। আমাদের এই সামাজিক আচারটা মন্দ না, হাতে করে এটা সেটা নিয়ে যাওয়া। অনেকে মিষ্টি নিয়ে আসেন, খাওয়ার মানুষ পাওয়া যায় না। তবে সমঝদার কেউ বুদ্ধি খাটিয়ে আইসক্রিম নিয়ে আসলে তার বুদ্ধির মর্যাদা আমি দিয়ে থাকি। এখানে আমার একটা দুঃখ আছে, আগের মত এখন আর কেউ আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসে না। আর আরেকটা দুঃখের কথা হল যারা হাতে কিছু নিয়ে বেড়াতে আসেন আমাদের বাসায় তারা আমার এই লেখাটা পড়বেন না।
কত কিছুই বললাম। আমি নিজেও তো মাঝে মাঝে অতিথি হয়ে যাই। আমি কেমন কে জানে। কোথাও যাওয়াটা আমার কাছে ঝক্কি মনে হলেও নিজের বাসায় কেউ আসলে ভালই লাগে। অনেকদিন হল দুই একদিন থেকে যাবার মত করে কেউ আসে না। রাতে খাবার টেবিলে পারিবারিক বা গ্রামের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা শোনাটা বেশ মজার। আমি বুড়ো হতে হতে হয়ত কেউ আর কারো বাড়ি বেড়াতেও যাবে না। যোগাযোগ যত সহজ হয় চলাফেরা বোধহয় ততই কঠিন হয়ে পড়ে।
Thursday, January 31, 2008
অলস প্রহর
গতকাল থেকে আবার সেই জবুথবু শীত। পা দু’খানা মোজার মধ্যে চালান করে দিয়েছি। হাত যেন অসাড় হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের দিকে বৃদ্ধদের জন্য মালসার মত একটা জিনিসের ব্যবস্থা আছে। সেখানে কয়লার তাপে হাত গরম করে তারা। আমারও মনে হচ্ছে এরকম কিছু লাগবে। শরীরের প্রান্তসীমায় বলে হাত আর পায়ের পাতা জমে বিস্বাদ আইসক্রিম হয়ে থাকে। এরকম দিনে তুষার পড়া দেশে বেড়াতে যাবার রোমান্টিক কল্পনা কিছুটা ধাক্কা খায়। এখানেই আমার এই দশা, ওখানে গাদা গাদা গরম কাপড় পরে বিষন্ন আকাশের নীচে হাঁটব কেমন করে। বিচ্ছিরি শীতটা যে কবে যাবে! আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না এই ঘরেই আমি বছরের কিছু সময় ফ্যান অন করেও ঘামতে থাকি। আজকে ভার্সিটি গেলাম না, ভাবলাম ঘরে বসে সময়টা কাজে লাগানো যাবে। কিন্তু করছি ঘোড়ার ডিম। কফি খেতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু আছে কিনা খুঁজে দেখতেও আলসেমি লাগছে। আর আমি নিশ্চিত কফি থাকবে না। যদি থাকেও, যেহেতু আমার দরকার তাই কোন না কোন কারণে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তখনই হঠাৎ করে আমার মনে হতে থাকবে কফি না পেলে আমার প্রাণ বের হয়ে যাবে এবং যখন এটা নিয়ে হৈ চৈ করা শেষ করব, তখন দেখা যাবে জিনিসটা নাকের ডগায়ই ছিল। তারপর মুখ চুন করে রেখে ধৈর্য্যহীনতা এবং বদমেজাজ এর উপর বক্তব্য শুনতে হবে। সুতরাং এত ঝামেলার দরকার কি। বসে বসে ভেরেন্ডাই ভাজি আপাতত।
Friday, January 25, 2008
আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি
‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে জেলেপাড়ার অধিবাসীরা প্রবল শীত পড়লে বলত, “উফ কি জাড়!” আজকে আমিও এই কথা কয়েকবার বলেছি। কারণ আজকের দিনটায় আসলেই খুব ঠাণ্ডা পড়েছে। ঢাকায় তাপমাত্রা কততে নেমেছে তা জানিনা। তবে খুব শীত। আমার দিনের শুরুটা হয়েছে কঠিনভাবে। ঠাণ্ডার মধ্যে সাতসকালে কম্বলের লোভনীয় ওম ঠেলে উঠতে হল, সেটাও দেরিতে। ঝটপট নাস্তা শেষ করে দেখি হাতে একেবারেই যথেষ্ট সময় নেই। কোনরকমে রেডি হয়ে ছুট লাগালাম বাসের জন্য। সেখানে সবার যা হয়ে থাকে আমারও তাই হল। অর্থাৎ বাস অনুপস্থিত এবং স্টপেজে হাঁড়িমুখো মানুষের বিশাল জমায়েত। মেজাজ চড়ে গেল। রিকশা পেতে পেতে এবং পাওয়ার পর যেতে যেতে দেরি হয়ে যাবে। তাছাড়া চারগুণ ভাড়া দিতে যে হাতে বাধে এটাও তরতাজা সত্য। এখানে একই রুটের একাধিক বাস থাকায় আমরা সচরাচর বেশ জ্ঞানের পরিচয় দিই। সবাই কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে বকের মত লম্বাগলা করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি। দূর থেকে যেই বাসের নিশানা পাওয়া যায়, সবাই হুমড়ি খেয়ে সেই বাসের টিকেট করে ফেলি। তো সেটাই হল। পড়িমরি করে টিকেট করে দেখি অলরেডি লম্বা লাইন হয়ে গেছে। সেই বাস কিছুদূর যেতে না যেতেই পুরোপুরি বোঝাই। যাই হোক হাঁচড় পাঁচড় করা ছাড়াই শাহবাগে নেমে পড়তে পারলাম। লম্বা লম্বা পা ফেলে কলাভবন অভিমুখে ছুটলাম, যাকে বলে দ্রুতগামী ঋজু দৃপ্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। আমি নিশ্চিত যে আজকে টিচারের লেট করার প্রশ্নই উঠেনা। কিন্তু আরো দুর্ভাগ্য! ক্লাস হচ্ছেনা। সবাই করিডরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমি মোটেও ক্লাসপ্রেমী সুবোধ না। কিন্তু কথা হচ্ছে ক্লাস যদি হবেই না তো আমি ত্যাগ স্বীকার করে জীবন বাজি রেখে হাজির হলাম কি জন্যে? পরের ক্লাসটা অবশ্য হল। কি যে ক্লাস করলাম কেউ বলতে পারবেনা। আমি, আমার বই আর আমার মন তিনটা তিন দিকে। অনেক কথার পর স্যার বললেন, তোমাদের কারোরই কোন প্রশ্ন নেই? সব বুঝতে পেরেছ? ঠিক আছে তাহলে আমিই প্রশ্ন করি। সাথে সাথে তন্ন তন্ন করে প্রশ্ন খুঁজতে লেগে গেলাম। আমি সবসময় চিন্তায় পড়ে যাই ক্লাসে গোবেচারা মুখ করে রাখাটা বেশি নিরাপদ নাকি মনোযোগী মুখ।
কনকনে শীতের সাথে সাথে আজকে সারাদিন মেঘলা। দুপুরে কিনা রীতিমত বৃষ্টি নেমে গেল। সাড়ে বারোটা বেজে যাবার পর আমি এমন একটা ভাব করছিলাম যেন এই মুহূর্তে বাসায় রওনা না দিলে তুলকালাম কিছু একটা ঘটে যাবে। আমার হাতে এক কপি ফটোস্ট্যাট করারও সময় নেই। অথচ একটু পর ঠিকই সুড়সুড় করে বন্ধুদের পেছন পেছন ধানমন্ডি অভিমুখে চলতে শুরু করলাম। বিরিয়ানির ঢেকুর তুলে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে দেখি বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি। বেজায় ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে এবার শখ হল পেটে ডেজার্ট জাতীয় কোন কিছু ফেলি। খাওয়া হোক বা না হোক এখনই বাসায় ফেরা চলবেনা। এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকবে না তো মন। কেমন যেন নির্ভেজাল খুশি খুশি লাগল আজকে অনেক দিন পর। ভাগ্যিস বাসা থেকে তাড়াহুড়া করে বের হলেও তুলে রাখা ছাতাটা মনে করে সঙ্গে নিয়ে নিয়েছিলাম। নাহয় কেমন বেকায়দায় পড়ে যেতাম! বৃষ্টির তোড় বাড়তে লাগল। বৃষ্টি, সাথে হাঁড় কাঁপানো শীত। বিকালবেলা ধানমন্ডি লেকের পাশে জড় হওয়া বন্ধুবান্ধবের দল আর জুটিরা। একটু একটু গল্প কর, একটু একটু কফি খাও। মাথার উপরে ছাউনি তবু ধেয়ে আসা মাঘবৃষ্টির ছাঁট। লেকের পানির উপর আকাশফোঁড়া পানির কাঁথাসেলাই। চমৎকার একটা আবহ। কিন্তু উপভোগ্যকে উপভোগের উপযুক্ত রাখার জন্য অবশেষে ফিরতি পথ ধরতে হল। বাসভ্রমণটা এবার হল অনেক ভালো। ইচ্ছা হচ্ছিল পথ আরেকটু দীর্ঘ হোক। সন্ধ্যাটা একটু ঝিমিয়ে কাটিয়েছি। এখন ঠিক হয়ে গেছে। খানিক পর কম্বলকে সঙ্গী করে আবার ঘুমের দেশে যাত্রা করব। আরেকটা দিনের সমাপ্তি।
কনকনে শীতের সাথে সাথে আজকে সারাদিন মেঘলা। দুপুরে কিনা রীতিমত বৃষ্টি নেমে গেল। সাড়ে বারোটা বেজে যাবার পর আমি এমন একটা ভাব করছিলাম যেন এই মুহূর্তে বাসায় রওনা না দিলে তুলকালাম কিছু একটা ঘটে যাবে। আমার হাতে এক কপি ফটোস্ট্যাট করারও সময় নেই। অথচ একটু পর ঠিকই সুড়সুড় করে বন্ধুদের পেছন পেছন ধানমন্ডি অভিমুখে চলতে শুরু করলাম। বিরিয়ানির ঢেকুর তুলে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে দেখি বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি। বেজায় ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে এবার শখ হল পেটে ডেজার্ট জাতীয় কোন কিছু ফেলি। খাওয়া হোক বা না হোক এখনই বাসায় ফেরা চলবেনা। এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকবে না তো মন। কেমন যেন নির্ভেজাল খুশি খুশি লাগল আজকে অনেক দিন পর। ভাগ্যিস বাসা থেকে তাড়াহুড়া করে বের হলেও তুলে রাখা ছাতাটা মনে করে সঙ্গে নিয়ে নিয়েছিলাম। নাহয় কেমন বেকায়দায় পড়ে যেতাম! বৃষ্টির তোড় বাড়তে লাগল। বৃষ্টি, সাথে হাঁড় কাঁপানো শীত। বিকালবেলা ধানমন্ডি লেকের পাশে জড় হওয়া বন্ধুবান্ধবের দল আর জুটিরা। একটু একটু গল্প কর, একটু একটু কফি খাও। মাথার উপরে ছাউনি তবু ধেয়ে আসা মাঘবৃষ্টির ছাঁট। লেকের পানির উপর আকাশফোঁড়া পানির কাঁথাসেলাই। চমৎকার একটা আবহ। কিন্তু উপভোগ্যকে উপভোগের উপযুক্ত রাখার জন্য অবশেষে ফিরতি পথ ধরতে হল। বাসভ্রমণটা এবার হল অনেক ভালো। ইচ্ছা হচ্ছিল পথ আরেকটু দীর্ঘ হোক। সন্ধ্যাটা একটু ঝিমিয়ে কাটিয়েছি। এখন ঠিক হয়ে গেছে। খানিক পর কম্বলকে সঙ্গী করে আবার ঘুমের দেশে যাত্রা করব। আরেকটা দিনের সমাপ্তি।
Sunday, January 20, 2008
হিজিবিজি
হঠাৎ মনে হল অনেকদিন এই খাতাতে কিছু লেখা হয়নি। আসলে কিন্তু অনেকদিন না, দিনের কিছুটা সময় এখন বই খাতা নামের কিছু বস্তুর সামনে বসে হাই তোলার জন্য বরাদ্দ করার চেষ্টা করছি বলে বোধ হয় সব সুখের কাজকেই মনে হয় যেন বহুদিন করা হয়নি। আজকে যখন কম্পিউটারের সামনে বসলাম আর ভাবতে শুরু করলাম কি লিখি কি লিখি, তখন মনে পড়ে গেল আমি সেদিন মাত্র একটা টিউটোরিয়াল দিয়ে এলাম যেটার বিষয়ই ছিল - লেখা। মজার ব্যাপার হল কয়েক মাস আগেও আমি জানতাম না যে এই লেখা কাজটা নিয়েই গাদা গাদা বই লিখে ফেলা যায়, লেখা নিয়ে গুরুগম্ভীর পর্যালোচনা করা যায়, লেখা ব্যাপারটা নিয়ে ক্লাসে অনেককিছু পড়ানো যায় এবং লেখা রাতারাতি এমনই জটিল আর প্যাঁচানো একটা বিষয় হয়ে উঠতে পারে যে এটা নিয়ে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসলে তার উত্তর দিতে না পারা আসলেই সম্ভব।
ব্লগের ভেতর লেখার সুবিধা অনেক; একটা তৃপ্তি জন্মে যে আমার লেখাটা কেবল আমার খাতাপত্রের ফাঁকফোকরে গুমরে মরছে না বরং টাটকা থাকতে থাকতেই দেখ কেমন ‘ছাপা’ হয়ে গেল, সে বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন। সেই ছাপার জন্য কারো কাছে ধরনাও দিতে হয়না, নিজেই লেখক নিজেই প্রকাশক। শুধু কি দেশের সীমার মধ্যে? এক মুহূর্তে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিলাম। কেউ না পড়লেও বা কি। আমি কি জানতে পারছি নাকি। নিউজপেপারের প্রত্যেকটা লেখাই কি কেউ না কেউ পড়ে? কিন্তু কথা হল আমি এখানে এই যে সব লিখছি এবং লিখেছি এগুলো আসলে কি। পৃষ্ঠা উল্টেপাল্টে দেখলাম মোটামুটি সবই আমার নিজেকে নিয়ে। আমি কি খাই কি পরি কি করি কি করতাম এই টাইপ। তবে কি নিজেকে নিয়ে লেখাই সবচেয়ে সহজ? সহজ হোক বা না হোক, নিরাপদ যে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। আমি বিগত মাসের তিন তারিখে নিজের মধ্যমস্তকে একখানা নির্জীব অর্ধপক্ককেশ আবিষ্কার করিয়াছি, এমনটা লিখলে কেউ মানহানি মামলা করার জন্য তেড়েফুঁড়ে আসবে না।
লিখতে বসে পরীক্ষার কথা মনে পড়ল। একবার কলেজের বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অল্প সময়ের মধ্যে অনেক লেখা বাকী কিন্তু কিছুতেই advantage আর environment এই দুইটা শব্দের বাংলা মনে পড়ছিল না। অথচ আমি কিনা এসবের বাংলাই জানি। দুই দিনের যোগীর মত অবস্থা। বেঞ্চের সামনে টিচার দাঁড়ানো, কাউকে জিজ্ঞেস করারও উপায় নেই। এও মনে হচ্ছিল যে কারো কাছে environment এর বাংলা জানতে চাইলে মনে মনে নাক সিঁটকে ভাববে, “ঢং দেখে বাঁচি না, ভাবখানা এমন যেন বিলাতফেরত, ভাংলা ভলতে পাড়ি না”। আবার ইংলিশ পরীক্ষার সময় হত উল্টো। দেখা গেল পর্যালোচনার বদলে যে discussion লিখতে হয় সেটা বের করতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যাচ্ছে। আমার মতে এটা সবারই হয়। প্রায়ই দেখা যায় যখন যেটা দরকার সেটা তো আসেই না, বরং অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা এসে মাথার চারপাশে ঘুরপাক খায়।
লেখা লেখা করে এতক্ষণ বসে কিসব লিখলাম? একে তো লেখার সংজ্ঞার মধ্যেও ফেলা যাচ্ছে না। লেখা আর হল না, হিজিবিজি আঁকিবুঁকি কাটা হল কেবল।
ব্লগের ভেতর লেখার সুবিধা অনেক; একটা তৃপ্তি জন্মে যে আমার লেখাটা কেবল আমার খাতাপত্রের ফাঁকফোকরে গুমরে মরছে না বরং টাটকা থাকতে থাকতেই দেখ কেমন ‘ছাপা’ হয়ে গেল, সে বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন। সেই ছাপার জন্য কারো কাছে ধরনাও দিতে হয়না, নিজেই লেখক নিজেই প্রকাশক। শুধু কি দেশের সীমার মধ্যে? এক মুহূর্তে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিলাম। কেউ না পড়লেও বা কি। আমি কি জানতে পারছি নাকি। নিউজপেপারের প্রত্যেকটা লেখাই কি কেউ না কেউ পড়ে? কিন্তু কথা হল আমি এখানে এই যে সব লিখছি এবং লিখেছি এগুলো আসলে কি। পৃষ্ঠা উল্টেপাল্টে দেখলাম মোটামুটি সবই আমার নিজেকে নিয়ে। আমি কি খাই কি পরি কি করি কি করতাম এই টাইপ। তবে কি নিজেকে নিয়ে লেখাই সবচেয়ে সহজ? সহজ হোক বা না হোক, নিরাপদ যে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। আমি বিগত মাসের তিন তারিখে নিজের মধ্যমস্তকে একখানা নির্জীব অর্ধপক্ককেশ আবিষ্কার করিয়াছি, এমনটা লিখলে কেউ মানহানি মামলা করার জন্য তেড়েফুঁড়ে আসবে না।
লিখতে বসে পরীক্ষার কথা মনে পড়ল। একবার কলেজের বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অল্প সময়ের মধ্যে অনেক লেখা বাকী কিন্তু কিছুতেই advantage আর environment এই দুইটা শব্দের বাংলা মনে পড়ছিল না। অথচ আমি কিনা এসবের বাংলাই জানি। দুই দিনের যোগীর মত অবস্থা। বেঞ্চের সামনে টিচার দাঁড়ানো, কাউকে জিজ্ঞেস করারও উপায় নেই। এও মনে হচ্ছিল যে কারো কাছে environment এর বাংলা জানতে চাইলে মনে মনে নাক সিঁটকে ভাববে, “ঢং দেখে বাঁচি না, ভাবখানা এমন যেন বিলাতফেরত, ভাংলা ভলতে পাড়ি না”। আবার ইংলিশ পরীক্ষার সময় হত উল্টো। দেখা গেল পর্যালোচনার বদলে যে discussion লিখতে হয় সেটা বের করতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যাচ্ছে। আমার মতে এটা সবারই হয়। প্রায়ই দেখা যায় যখন যেটা দরকার সেটা তো আসেই না, বরং অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা এসে মাথার চারপাশে ঘুরপাক খায়।
লেখা লেখা করে এতক্ষণ বসে কিসব লিখলাম? একে তো লেখার সংজ্ঞার মধ্যেও ফেলা যাচ্ছে না। লেখা আর হল না, হিজিবিজি আঁকিবুঁকি কাটা হল কেবল।
Sunday, January 13, 2008
পাশের বাড়ি পলাশবাড়ী
আমাদের বাসা পল্লীকবি জসীমউদদীনের বাড়ির এক্কেবারে কাছে। মাঝখানের সরু রাস্তাটা বাদ দিলে দেয়ালঘেঁষাই বলা যেত। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভেতরের কিছুটা দেখতে পাওয়া যায়। এই পাড়ায় কবির বাড়িটা অনেকখানি জায়গা জুড়ে। চারদিকে প্রাচীর দেয়া। সীমানার ভেতরকার অংশটা গাছপালায় ভরপুর। খুব সাজানো গোছানো বলে মনে হয় না। এলোমেলোভাবে ছড়ানো ছিটানো বহু গাছ। আর সেই গাছপালায় নানা পাখির চলাচল। গোধূলিবেলাতে একথা খুব ভালভাবে টের পাওয়া যায়। পাখির কিচিরমিচিরে মুখর হয়ে থাকে জায়গাটা। দেয়ালের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে রীতিমত কান ঝালাপালা হবার যোগাড়। আর এই ব্যাপারটাই আমার খুব পছন্দ। ঢাকাতে একসঙ্গে এত গাছপালা, সেখানে পাখির এমন কলকাকলী খুব বেশি হবার কথা না। গ্রাম থেকে আসা আমাদের আত্মীয়রা বলেছে তাদের বাড়িতেও এত পাখির ডাক শোনা যায় না। আমি জানি না শীতকালে পাখি বেশি ডাকে কিনা, তবে তাদের মন্তব্য শুনে আমি খুশি হই। কারণ ঢাকা ইট কংক্রিটের শুষ্ক শহর, এখানে মানুষ যান্ত্রিক, তারা সবুজ ঘাস আর পাখির মিষ্টি গান থেকে বঞ্চিত বলে তাদের মায়ামমতাও কম এধরণের কিছু cliché ডায়লগ আছে। আমি তাই আমাদের পাড়ার সবুজের ভাগ নিয়ে একটু গর্বিত। কবির বাড়ির নামখানাও সুন্দর, “পলাশবাড়ী”। কেন এমন নাম রাখা হল তা আমার জানা নেই। ভেতরে কুকুর পোষা হয়। ছোটবেলায় রাতবিরাতে কুকুরের চেঁচামেচি শুনলে ভয় পেতাম খুব। কারণ একটা কথা আছে রাতে কুকুর কাঁদলে নাকি কেউ মারা যায়। আমার প্রতিরাতেই ধারণা হত সেই কেউটা হচ্ছি আমি। পলাশবাড়ীতে কবির সময়কার সাহিত্যিকদের আসাযাওয়া ছিল সেই সময়। তখন নিশ্চয়ই এখানে প্রাণের ছোঁয়া ছিল। তাঁর পরিবারের কেউ এখন থাকেনা। শুধু কেয়ারটেকার আছে দেখাশোনা করার জন্য। মাঝেমাঝে লোকজন আসে তদারক করতে। সাদা রঙের মূল দালানটা বিশেষ বড় না। মানুষের আনাগোনা নেই। এখন ভাবতে গিয়ে একটু অস্বস্তি হচ্ছে যে আমি প্রায় আঠারো বছর এই প্রাচীরের সীমানা অঞ্চলে থাকি কিন্তু কখনো পলাশবাড়ীর ভেতরে যাওয়া হয়নি আমার। যে সে তো না, স্বয়ং পল্লীকবি এর মালিক ছিলেন। গাছগুলোর বিন্যাস বাইরে থেকে যতটা আগোছালো মনে হয় ভেতরে সম্ভবত তা না। প্রাইমারিতে পড়ার সময় এমন কথা আমাদের মধ্যে চালু ছিল যে এই বাড়িতে কবি বেঁচে থাকতে শিশুদের অবাধ বিচরণ ছিল, গেটটা এভাবে করে তালাবদ্ধ করে রাখা হত না; বাচ্চারা ইচ্ছা করলেই গাছ থেকে ফল ছিঁড়ে নিয়ে খেতে পারত; কিন্তু কবির বউ ছিলেন নিষ্ঠুর প্রকৃতির মহিলা এবং তার আঘাতের ফলেই কবির মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়; আর তাঁর মৃত্যুর পর এই গেট শিশুদের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের আগের বাসার জানালা দিয়ে দেখতাম ছেলেরা ডাব চুরি করত। আর খেলাধুলা করতে গেলে অবশ্যই বল পড়বে দেয়ালের ওই পাশে। পেছনের দিক হলে সাবধানে দেয়াল টপকে বল উদ্ধার করে আনা নিয়ম, কিন্তু সামনের দিকে পড়লে খেলোয়াড়রা কি করে বলতে পারছিনা। আমি সবসময় প্রার্থনা করি এই জায়গাটা যেন কখনো কিছুতেই কোন রিয়েল এস্টেট কোম্প্যানির কাছে বিক্রি না হয়ে যায়। তাহলে এখানে লম্বাচওড়া বিল্ডিং উঠে যাবে; আমাদের বাসায় রোদ আসবে না; পাখির কাকলী শোনা যাবে না; বারান্দায় বসে গাছির খেজুর গাছ চাঁছা দেখা যাবে না; নিরিবিলি পলাশবাড়ী অদৃশ্য হয়ে যাবে।
Thursday, January 10, 2008
চুপটিবেলা
“এক মুঠো রোদ, আকাশ ভরা তারা, ভিজে মাটিতে জলের নকশা করা...” ভাবছি দৃশ্যটা কেমন হবে। আকাশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য তারা, সেই তারাদের ভীড়ে মুঠো ভরা রোদ ছিটিয়ে দেয়া হল। তারারা চনমনে হয়ে নতুন উদ্যমে ঝিকমিক করতে থাকবে। আর পানির একটা শীতল ঢেউ যখন তীরের মাটিকে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে, তার কিছুটা জমে থাকবে ঘাসের খাঁজে, কিছুটা পিঁপড়ার কুচি কুচি গর্তের ভেতর, সবমিলিয়ে তৈরি হবে চকচকে একটা নকশা। বেশ ভাল লাগছে কাল্পনিক দৃশ্যটা... ... ...
আসলে আমি চেষ্টা করছি উৎফুল্ল হবার। কেমন যেন ন্যাতানো অনুভূতি হচ্ছে। নিজেকে মনে হচ্ছে মিয়ানো চানাচুরের মত। দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়ে গিয়েও নতুন বছরটা এখনো কেমন স্যাঁতস্যাঁতে। ২০০৮ যে কেমন যাবে কেজানে। মনের অন্য অর্ধেকটা আবার বলছে সবসময় উঠন্তি মুলোকে পত্তনে চেনার চেষ্টা করতে হয় না। ব্রায়ান লারা জানুয়ারিতে ফর্মে না থাকলে কি সারা বছর তার সিন্দুকে কোন রান জমেনি? নিউ ইয়ার ইভে হাঁপানির টান ওঠা নির্জীব কোন বৃদ্ধ কি আগস্ট মাসে টগবগে হয়ে হাঁটেনি? এসব হল নিষ্কর্মা মস্তিষ্কের ভেতরকার স্টেডিয়ামটাতে শয়তানকে ডাংগুলি খেলতে দেয়ার ফল। মানে নিজের দোষ ঢাকতে বছরের দোষ খোঁজার অপচেষ্টা। কিন্তু আমিও তো নেহায়েত ভালমানুষ, আমার কি বা এমন দোষ আছে? আলসেমীটাই শুধু যা একটু ঝামেলা করে। তার মধ্যে আবার ভার্সিটিও খুলে গেল। কানের সামনে এখন পরীক্ষার দামামা আরো জোরেসোরে বাজতে থাকবে। আর আমি যথারীতি কেন্নোর মত মাটি খুঁড়ে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করব। পাশের বাসার নির্দয় বন্ধুটা ওদের ডিপার্টমেন্ট থেকে স্টাডি ট্যুরে চলে গেল। কেন বাবা, আমার পাসপোর্ট ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়ে টিচারের হাতে পায়ে ধরে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে গেলে পারতে না? আমি কি তোমাকে মাঝে মধ্যে এক কাপ রং চা খাওয়ার জন্য সাধাসাধি করি না? মামাতো বোনটা বেড়াতে এসেছিল বেশ কিছুদিন হয়েছে, কাল সেও চলে যাবে। আপাতদৃষ্টিতে মাত্র ক্লাস সেভেন পাশ করা পুঁচকে মেয়ে হলেও কথা বলার ভাল সঙ্গী। চলে গেলে আবার কবে দেখা হবে ওর সাথে! মন খারাপ লাগছে। ক্লাসমেটদের কেউ কেউ ফুলটাইম বা পার্টটাইম কাজে ঢুকে গেছে। আর আমি কি করছি? ঘোড়ার ঘাস কাটছি। পাশ করার পর কোন পদের চাকরি বাকরি যে জুটবে বা আদৌ জোটাতে পারব কিনা জানি না। ডিপার্টমেন্ট কিশমিশের মত শুকনো, ক্লাস সাসপেন্ড হয়ে গেছে বেশ কিছু। তীব্র বাতাসে সেই যে ঠাণ্ডা লেগেছিল গ্রাম থেকে ফেরার আগের দিন, গলাটা এখনো তার জের টানা ছেড়ে দেয়নি। এমনকি আজকে রাতের খাবারটা ছিলও একেবারেই দায়সারা। একটু পর শেলফ থেকে একটা তরতাজা কমলা নিয়ে আয়েশ করে বসে দেখি, খোসার নিচে ঠনঠনে মাকালফল। কি যে হল বুঝতে পারছি না। পুরানো নতুন নানান কথা মনে করে আজকে বিষন্ন লাগছে। আনন্দের কথাগুলো সব একসঙ্গে মনে পড়ে কিনা জানিনা, মন খারাপের কথাগুলো আপনা থেকেই ট্রেনের বগির মত একটার পেছন একটা জুড়ে যায়। কোন স্টেশনে গিয়ে থামবে সে?
আসলে আমি চেষ্টা করছি উৎফুল্ল হবার। কেমন যেন ন্যাতানো অনুভূতি হচ্ছে। নিজেকে মনে হচ্ছে মিয়ানো চানাচুরের মত। দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়ে গিয়েও নতুন বছরটা এখনো কেমন স্যাঁতস্যাঁতে। ২০০৮ যে কেমন যাবে কেজানে। মনের অন্য অর্ধেকটা আবার বলছে সবসময় উঠন্তি মুলোকে পত্তনে চেনার চেষ্টা করতে হয় না। ব্রায়ান লারা জানুয়ারিতে ফর্মে না থাকলে কি সারা বছর তার সিন্দুকে কোন রান জমেনি? নিউ ইয়ার ইভে হাঁপানির টান ওঠা নির্জীব কোন বৃদ্ধ কি আগস্ট মাসে টগবগে হয়ে হাঁটেনি? এসব হল নিষ্কর্মা মস্তিষ্কের ভেতরকার স্টেডিয়ামটাতে শয়তানকে ডাংগুলি খেলতে দেয়ার ফল। মানে নিজের দোষ ঢাকতে বছরের দোষ খোঁজার অপচেষ্টা। কিন্তু আমিও তো নেহায়েত ভালমানুষ, আমার কি বা এমন দোষ আছে? আলসেমীটাই শুধু যা একটু ঝামেলা করে। তার মধ্যে আবার ভার্সিটিও খুলে গেল। কানের সামনে এখন পরীক্ষার দামামা আরো জোরেসোরে বাজতে থাকবে। আর আমি যথারীতি কেন্নোর মত মাটি খুঁড়ে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করব। পাশের বাসার নির্দয় বন্ধুটা ওদের ডিপার্টমেন্ট থেকে স্টাডি ট্যুরে চলে গেল। কেন বাবা, আমার পাসপোর্ট ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়ে টিচারের হাতে পায়ে ধরে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে গেলে পারতে না? আমি কি তোমাকে মাঝে মধ্যে এক কাপ রং চা খাওয়ার জন্য সাধাসাধি করি না? মামাতো বোনটা বেড়াতে এসেছিল বেশ কিছুদিন হয়েছে, কাল সেও চলে যাবে। আপাতদৃষ্টিতে মাত্র ক্লাস সেভেন পাশ করা পুঁচকে মেয়ে হলেও কথা বলার ভাল সঙ্গী। চলে গেলে আবার কবে দেখা হবে ওর সাথে! মন খারাপ লাগছে। ক্লাসমেটদের কেউ কেউ ফুলটাইম বা পার্টটাইম কাজে ঢুকে গেছে। আর আমি কি করছি? ঘোড়ার ঘাস কাটছি। পাশ করার পর কোন পদের চাকরি বাকরি যে জুটবে বা আদৌ জোটাতে পারব কিনা জানি না। ডিপার্টমেন্ট কিশমিশের মত শুকনো, ক্লাস সাসপেন্ড হয়ে গেছে বেশ কিছু। তীব্র বাতাসে সেই যে ঠাণ্ডা লেগেছিল গ্রাম থেকে ফেরার আগের দিন, গলাটা এখনো তার জের টানা ছেড়ে দেয়নি। এমনকি আজকে রাতের খাবারটা ছিলও একেবারেই দায়সারা। একটু পর শেলফ থেকে একটা তরতাজা কমলা নিয়ে আয়েশ করে বসে দেখি, খোসার নিচে ঠনঠনে মাকালফল। কি যে হল বুঝতে পারছি না। পুরানো নতুন নানান কথা মনে করে আজকে বিষন্ন লাগছে। আনন্দের কথাগুলো সব একসঙ্গে মনে পড়ে কিনা জানিনা, মন খারাপের কথাগুলো আপনা থেকেই ট্রেনের বগির মত একটার পেছন একটা জুড়ে যায়। কোন স্টেশনে গিয়ে থামবে সে?
Tuesday, January 8, 2008
নস্ট্যালজিক আমি
কবি কবি চেহারা, কাঁধেতে ঝোলানো ব্যাগ,
মুছে যাবে অমলের নামটা;
একটা কবিতা তার হল না কোথাও ছাপা,
পেল না সে প্রতিভার দামটা... ... ...
নস্ট্যালজিয়া নিয়ে যত বাংলা গান হয়েছে তার মধ্যে ‘কফি হাউস’ একেবারে প্রথম দিকের একটা। গানটা আমি প্রথম শুনি পপির মুখে। আমরা তখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম। পপির গানের গলা ছিল খুবই সুন্দর। টিচার না আসলে বা ক্লাসে বেশি চেঁচামেচি হলে ও ডায়াসে উঠে গান গেয়ে শোনাত। এই গানটা বেশ কয়েকবার গেয়েছিল ও, কারণ এটা ছিল শ্রোতাদের বিশেষ পছন্দ । আমরা গানের কথার মর্ম উপলব্ধি করে দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম। (এখন ক্লাস সেভেন পড়ুয়াদেরকে বাচ্চা মনে হয়, কিন্তু আসলে এটা মোটেও বাচ্চাদের ক্লাস না) এও বুঝতাম যে লাখপতি স্বামী আছে বলেই সুজাতাকে সুখী বলে ফেলা ঠিক হচ্ছে না। এখন গানটা নিজে বাজিয়ে শুনি। কখনো রেডিওতে শোনা হয়। সাত বন্ধুর মধ্যে আমার দুঃখ এখনও পর্যন্ত অমলের জন্যই বেশি। বলা হয়েছে জীবন তাকে ক্ষমা করেনি। তাহলে অমল কোন অপরাধ করেছিল নিশ্চয়ই, আর সেটা সম্ভবত নিজের জীবন নিয়েই। কি ভুল করেছিল অমল? ডি সুজা কিভাবে মরল? অসুখ না আর কিছু? আর যে সবাইকে নিয়ে গান গায়, তার নামটা পাওয়া যায় না। সে কোথায় কি অবস্থায় আছে তাও জানা হয় না। টিভিতে কফি হাউস অবলম্বনে একটা নাটক হয়েছিল, কিছুটা চেঞ্জ করে, দেখার ইচ্ছা হয়নি। সেখানে নাম না জানা ব্যক্তিটার নাম ছিল খুব সম্ভবত আদিত্য।
আমরা নিজেরাও তো এমনই। মাঝে মাঝে স্কুলজীবনের হারিয়ে যাওয়া সহপাঠীদের কথা ভাবলে মনে হয় যেন সবাই কত যোজন দূরে। হতে পারে একই শহরে বাস করি সেই কোকিলকণ্ঠী পপির কাছাকাছি কোথাও । কিন্তু কে আছে কোথায় কে জানে। মিতুল ছিল শান্ত স্বভাবের কিন্তু খুব হাসত। লুনা নামের সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে ছিল। মিতু ছিল গোলগাল হাসিখুশি একজন। পাশার ভবিষ্যত পরিকল্পনা ছিল বড় হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবে। কে যে কোন স্রোতের টানে কোন মোহনার দিকে ভেসে গেছে আমি বলতে পারব না। কেউ কেউ বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়েছে। অনেকে বসার তোড়জোড় করছে। এরা তো কেবল সহপাঠী। কাছের বন্ধুদেরকেই এখন সবাইকে একসঙ্গে করা যায় না। ব্যাট বল মেলে না। শুধু ফোনেই যা কথা হয়। মাঝে মাঝে একথা ভাবতে খুব ক্লান্তি এসে যায়, কত দিকে ডালপালা মেলেছে আমাদের জীবন। কোন কমন বিষয় কি এখন আদৌ আছে আলোচনার জন্য? কখনো একসঙ্গে হলে ক্যারিয়ার পরিবার সম্পর্ক এসব নিয়ে গিজগিজ করা মাথাগুলো কি তুচ্ছাতিতুচ্ছ কথায় হেসে গড়িয়ে পড়ার মত হালকা হবে? অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ক্রিকেটারটা আসলে কাকে পেয়ে ধন্য হবে জন্য এটা নিয়ে কোন দুইজনের মধ্যে বাগযুদ্ধও হবে না আর কখনো। প্যারোডি কবিতা বানানোর মত মুড নেই আমাদের, অবসর নেই কারো কথার বলার স্টাইল নকল করে আনন্দ পাওয়ারও।
আমি মনে হয় একটু বেশিই retrospective. এতটা হওয়া উচিত না, অন্তত এই বয়সে তো না-ই। গড় আয়ুর অর্ধেক হতেও যখন ঢের বাকি, তখন এসব হাপিত্যেস একেবারেই মানায় না। ধরলাম আমি একজন বিখ্যাত লেখক বা কবি গোছের কিছু একটা হয়ে গেলাম। তখন তো আমাকে নিয়ে অনেক পড়তে হবে ছাত্রছাত্রীদের ( মানে যেমন আমরা John Donne বা Robert Browning কে সিলেবাসে পাই )। তো আমার মূলভাবটা ধরে ফেলা খুব সহজ হবে ওদের জন্য...লেখকের মধ্যে অতীত হাতড়ে নিঃশ্বাস ফেলার প্রবণতা প্রবল... কিন্তু এত সহজে তো ধরা দেয়া চলবে না। ঠিক আছে মহান লেখক বা বিরাট কবি টাইপের কিছু হওয়ার চিন্তা বাদই দিলাম। কিন্তু একথা সত্যি যে আমি ছোটবেলাটা পার করে ফেলে একটু দুঃখিতই। কিশোরদের জন্য লেখা একটা বইয়ে পড়েছিলাম, লেখক ভূমিকায় বলছেন, তার সবচেয়ে বড় দুঃখ হল তার শৈশব শেষ হয়ে গেছে। কথাটা মনে হয় ভুল না। অদ্ভুত চিন্তাধারা আমাদের! ছোটবেলায় ছোট থাকলাম কেন, বড় হয়ে বড় হলাম কেন আর বার্ধক্যের কথা তো বাদই দিলাম। মানুষ কোনমতেই নিজেকে নিয়ে সুখী থাকতে পারে না। মাটির দেহের খাঁচায় বায়বীয় অসন্তুষ্টি। যতদিন এই মাটি, ততদিন সেই বায়ু।
মুছে যাবে অমলের নামটা;
একটা কবিতা তার হল না কোথাও ছাপা,
পেল না সে প্রতিভার দামটা... ... ...
নস্ট্যালজিয়া নিয়ে যত বাংলা গান হয়েছে তার মধ্যে ‘কফি হাউস’ একেবারে প্রথম দিকের একটা। গানটা আমি প্রথম শুনি পপির মুখে। আমরা তখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম। পপির গানের গলা ছিল খুবই সুন্দর। টিচার না আসলে বা ক্লাসে বেশি চেঁচামেচি হলে ও ডায়াসে উঠে গান গেয়ে শোনাত। এই গানটা বেশ কয়েকবার গেয়েছিল ও, কারণ এটা ছিল শ্রোতাদের বিশেষ পছন্দ । আমরা গানের কথার মর্ম উপলব্ধি করে দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম। (এখন ক্লাস সেভেন পড়ুয়াদেরকে বাচ্চা মনে হয়, কিন্তু আসলে এটা মোটেও বাচ্চাদের ক্লাস না) এও বুঝতাম যে লাখপতি স্বামী আছে বলেই সুজাতাকে সুখী বলে ফেলা ঠিক হচ্ছে না। এখন গানটা নিজে বাজিয়ে শুনি। কখনো রেডিওতে শোনা হয়। সাত বন্ধুর মধ্যে আমার দুঃখ এখনও পর্যন্ত অমলের জন্যই বেশি। বলা হয়েছে জীবন তাকে ক্ষমা করেনি। তাহলে অমল কোন অপরাধ করেছিল নিশ্চয়ই, আর সেটা সম্ভবত নিজের জীবন নিয়েই। কি ভুল করেছিল অমল? ডি সুজা কিভাবে মরল? অসুখ না আর কিছু? আর যে সবাইকে নিয়ে গান গায়, তার নামটা পাওয়া যায় না। সে কোথায় কি অবস্থায় আছে তাও জানা হয় না। টিভিতে কফি হাউস অবলম্বনে একটা নাটক হয়েছিল, কিছুটা চেঞ্জ করে, দেখার ইচ্ছা হয়নি। সেখানে নাম না জানা ব্যক্তিটার নাম ছিল খুব সম্ভবত আদিত্য।
আমরা নিজেরাও তো এমনই। মাঝে মাঝে স্কুলজীবনের হারিয়ে যাওয়া সহপাঠীদের কথা ভাবলে মনে হয় যেন সবাই কত যোজন দূরে। হতে পারে একই শহরে বাস করি সেই কোকিলকণ্ঠী পপির কাছাকাছি কোথাও । কিন্তু কে আছে কোথায় কে জানে। মিতুল ছিল শান্ত স্বভাবের কিন্তু খুব হাসত। লুনা নামের সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে ছিল। মিতু ছিল গোলগাল হাসিখুশি একজন। পাশার ভবিষ্যত পরিকল্পনা ছিল বড় হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবে। কে যে কোন স্রোতের টানে কোন মোহনার দিকে ভেসে গেছে আমি বলতে পারব না। কেউ কেউ বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়েছে। অনেকে বসার তোড়জোড় করছে। এরা তো কেবল সহপাঠী। কাছের বন্ধুদেরকেই এখন সবাইকে একসঙ্গে করা যায় না। ব্যাট বল মেলে না। শুধু ফোনেই যা কথা হয়। মাঝে মাঝে একথা ভাবতে খুব ক্লান্তি এসে যায়, কত দিকে ডালপালা মেলেছে আমাদের জীবন। কোন কমন বিষয় কি এখন আদৌ আছে আলোচনার জন্য? কখনো একসঙ্গে হলে ক্যারিয়ার পরিবার সম্পর্ক এসব নিয়ে গিজগিজ করা মাথাগুলো কি তুচ্ছাতিতুচ্ছ কথায় হেসে গড়িয়ে পড়ার মত হালকা হবে? অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ক্রিকেটারটা আসলে কাকে পেয়ে ধন্য হবে জন্য এটা নিয়ে কোন দুইজনের মধ্যে বাগযুদ্ধও হবে না আর কখনো। প্যারোডি কবিতা বানানোর মত মুড নেই আমাদের, অবসর নেই কারো কথার বলার স্টাইল নকল করে আনন্দ পাওয়ারও।
আমি মনে হয় একটু বেশিই retrospective. এতটা হওয়া উচিত না, অন্তত এই বয়সে তো না-ই। গড় আয়ুর অর্ধেক হতেও যখন ঢের বাকি, তখন এসব হাপিত্যেস একেবারেই মানায় না। ধরলাম আমি একজন বিখ্যাত লেখক বা কবি গোছের কিছু একটা হয়ে গেলাম। তখন তো আমাকে নিয়ে অনেক পড়তে হবে ছাত্রছাত্রীদের ( মানে যেমন আমরা John Donne বা Robert Browning কে সিলেবাসে পাই )। তো আমার মূলভাবটা ধরে ফেলা খুব সহজ হবে ওদের জন্য...লেখকের মধ্যে অতীত হাতড়ে নিঃশ্বাস ফেলার প্রবণতা প্রবল... কিন্তু এত সহজে তো ধরা দেয়া চলবে না। ঠিক আছে মহান লেখক বা বিরাট কবি টাইপের কিছু হওয়ার চিন্তা বাদই দিলাম। কিন্তু একথা সত্যি যে আমি ছোটবেলাটা পার করে ফেলে একটু দুঃখিতই। কিশোরদের জন্য লেখা একটা বইয়ে পড়েছিলাম, লেখক ভূমিকায় বলছেন, তার সবচেয়ে বড় দুঃখ হল তার শৈশব শেষ হয়ে গেছে। কথাটা মনে হয় ভুল না। অদ্ভুত চিন্তাধারা আমাদের! ছোটবেলায় ছোট থাকলাম কেন, বড় হয়ে বড় হলাম কেন আর বার্ধক্যের কথা তো বাদই দিলাম। মানুষ কোনমতেই নিজেকে নিয়ে সুখী থাকতে পারে না। মাটির দেহের খাঁচায় বায়বীয় অসন্তুষ্টি। যতদিন এই মাটি, ততদিন সেই বায়ু।
Thursday, January 3, 2008
যাঁতাকল
আমার মাথার ভেতর ইদানিং কিছু গুরুগম্ভীর বিষয় হররোজ আকুলি বিকুলি করে। নিজের সিলেবাসকে খুব ভারিক্কি দেখানোর জন্য বিষয়গুলোর নামও উল্লেখ করতে পারি, maturation theory, acculturation model, process writing, deviation and foregrounding ইত্যাদি। একথা মনে করার কোন কারণ নেই যে এসব নিতান্ত বেরসিক কথাবার্তার প্রতি আমার রাতারাতি দূর্মূল্য ভালবাসা গজিয়ে গেছে। এগুলো মনে পড়ে যায় কারণ ফাইনাল পরীক্ষা আমাকে লক্ষ্য করে সিডরের গতিতে ধেয়ে আসছে। আমি ভাবি আর নাড়ির অন্তঃস্থল থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলি, “হায়, আমার কি হবে!” তবে শ্বাস ফেলাই সার। বইগুলো যেন বিজাতীয় ভাষায় লেখা কোন প্রাচীন পুস্তক যাদের কেবল শেলফেই মানায়, টেবিলে রেখে পড়ার চেষ্টা করা একেবারেই নিষ্ফল। হৃদয়ের নিভৃত মণিকোঠা থেকে স্কুলের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে এসে যেন তুর্কিনাচন দিয়ে যায়। “আহা, কোথায় সেই মজার মজার বইগুলো!” সেই চাঁছাছোলা ‘সালফার উৎপাদনের প্রকোষ্ঠ প্রণালী’কে এসব তেতো প্রশ্নের তুলনায় রীতিমত মণ্ডামিঠাই মনে হয়। হাতের তালু চুলকাতে থাকে একটু অংক করার জন্য। ছোটবেলায় আমরা কত দরকারি পড়াশোনাই না করেছি। সেখানে বাংলা ইংরেজি যেমন ছিল, জীববিজ্ঞান ইতিহাস এসবও ছিল। বর্তমান যুগে সব বিষয়েই সম্যক ধারণা থাকা যে অতীব জরুরী এটা কি কেউ বোঝে না? তবে কেন অনার্সে উঠে একটা বিশেষ সাবজেক্টকেই ঢেঁকিতে ছাঁটতে হয়? চোখের সামনে বই খুলে সিলিংয়ের দিকে চেয়ে জাতির বিবেকের কাছে এসব প্রশ্ন করে বেড়াই। আর ছাপার অক্ষরের Trudgill Labov রা উঠে এসে আমার এক তোলা পরিমাণ মগজকে রগড়াতে থাকে। এভাবেই চলছে।
Tuesday, January 1, 2008
প্রথম সকাল
আজকে নতুন বছরের প্রথম দিন। অনেকেই পার্টি বা গেট টুগেদার করবে। আমি কিছু করছি না। বরং দিনটা যেন একটু বোরিংই লাগছে এখন পর্যন্ত। ঘুম ভেঙেই দেখি আমার মোবাইলের হ্যান্ডস ফ্রি এর অবস্থা মোটামুটি দফারফা। ছোটবেলায় বলতাম বছরের প্রথম দিনে যা হয় সারাবছর ধরে তাই হয়। আমার এই সকাল পর্যন্ত এমন কিছুই ঘটেনি যেটা সারাবছর ধরে ঘটতে পারে। সারাবছর জুড়ে তো আর হ্যান্ডস ফ্রি এর তার ছিঁড়বে না। আজকে আবাহাওয়া কিছুটা বিষণ্ন। আমার আবার আকাশে ঝলমলে রোদ না থাকলে মেজাজ খারাপ লাগে। ভাবছি দিনটা কেমন যাবে। বছরের প্রথম দিনটা খারাপ যাওয়া নিয়ে আমি চিন্তিত না। তবে একটা দিন ভাল যাচ্ছে না একারণে কিছুটা দুঃখিত। কি করব ভেবে পাচ্ছি না।
আজকে থেকে তারিখ লেখার ধরণ পাল্টে যাবে। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাবে। সময়ের হিসাব রাখার জন্য আমরা ঘণ্টা, দিন, মাস, বছর কত কিছু মেনে চলি। পাতা পাতা দিনপঞ্জী ছাপা হয়। এমনই যেই রবিনসন ক্রুসো একা একা নির্জন দ্বীপে আটকা পড়ে ছিল সেও দাগ কেটে কেটে সময়ের হিসাব রাখত। যাকে ধরে রাখা যায়ই না সে যেন অন্তত ছুটে যাবার সময় খুব বেশি বেয়াড়াপনা না করতে পারে সেজন্যই এত কিছু। আশা করি নতুন বছরটা আমাদের সবার জন্য ভাল অনুভূতি আর ভাল বার্তা বয়ে আনবে।
আজকে থেকে তারিখ লেখার ধরণ পাল্টে যাবে। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাবে। সময়ের হিসাব রাখার জন্য আমরা ঘণ্টা, দিন, মাস, বছর কত কিছু মেনে চলি। পাতা পাতা দিনপঞ্জী ছাপা হয়। এমনই যেই রবিনসন ক্রুসো একা একা নির্জন দ্বীপে আটকা পড়ে ছিল সেও দাগ কেটে কেটে সময়ের হিসাব রাখত। যাকে ধরে রাখা যায়ই না সে যেন অন্তত ছুটে যাবার সময় খুব বেশি বেয়াড়াপনা না করতে পারে সেজন্যই এত কিছু। আশা করি নতুন বছরটা আমাদের সবার জন্য ভাল অনুভূতি আর ভাল বার্তা বয়ে আনবে।
Subscribe to:
Posts (Atom)