Friday, January 25, 2008

আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি

‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে জেলেপাড়ার অধিবাসীরা প্রবল শীত পড়লে বলত, “উফ কি জাড়!” আজকে আমিও এই কথা কয়েকবার বলেছি। কারণ আজকের দিনটায় আসলেই খুব ঠাণ্ডা পড়েছে। ঢাকায় তাপমাত্রা কততে নেমেছে তা জানিনা। তবে খুব শীত। আমার দিনের শুরুটা হয়েছে কঠিনভাবে। ঠাণ্ডার মধ্যে সাতসকালে কম্বলের লোভনীয় ওম ঠেলে উঠতে হল, সেটাও দেরিতে। ঝটপট নাস্তা শেষ করে দেখি হাতে একেবারেই যথেষ্ট সময় নেই। কোনরকমে রেডি হয়ে ছুট লাগালাম বাসের জন্য। সেখানে সবার যা হয়ে থাকে আমারও তাই হল। অর্থাৎ বাস অনুপস্থিত এবং স্টপেজে হাঁড়িমুখো মানুষের বিশাল জমায়েত। মেজাজ চড়ে গেল। রিকশা পেতে পেতে এবং পাওয়ার পর যেতে যেতে দেরি হয়ে যাবে। তাছাড়া চারগুণ ভাড়া দিতে যে হাতে বাধে এটাও তরতাজা সত্য। এখানে একই রুটের একাধিক বাস থাকায় আমরা সচরাচর বেশ জ্ঞানের পরিচয় দিই। সবাই কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে বকের মত লম্বাগলা করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি। দূর থেকে যেই বাসের নিশানা পাওয়া যায়, সবাই হুমড়ি খেয়ে সেই বাসের টিকেট করে ফেলি। তো সেটাই হল। পড়িমরি করে টিকেট করে দেখি অলরেডি লম্বা লাইন হয়ে গেছে। সেই বাস কিছুদূর যেতে না যেতেই পুরোপুরি বোঝাই। যাই হোক হাঁচড় পাঁচড় করা ছাড়াই শাহবাগে নেমে পড়তে পারলাম। লম্বা লম্বা পা ফেলে কলাভবন অভিমুখে ছুটলাম, যাকে বলে দ্রুতগামী ঋজু দৃপ্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। আমি নিশ্চিত যে আজকে টিচারের লেট করার প্রশ্নই উঠেনা। কিন্তু আরো দুর্ভাগ্য! ক্লাস হচ্ছেনা। সবাই করিডরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমি মোটেও ক্লাসপ্রেমী সুবোধ না। কিন্তু কথা হচ্ছে ক্লাস যদি হবেই না তো আমি ত্যাগ স্বীকার করে জীবন বাজি রেখে হাজির হলাম কি জন্যে? পরের ক্লাসটা অবশ্য হল। কি যে ক্লাস করলাম কেউ বলতে পারবেনা। আমি, আমার বই আর আমার মন তিনটা তিন দিকে। অনেক কথার পর স্যার বললেন, তোমাদের কারোরই কোন প্রশ্ন নেই? সব বুঝতে পেরেছ? ঠিক আছে তাহলে আমিই প্রশ্ন করি। সাথে সাথে তন্ন তন্ন করে প্রশ্ন খুঁজতে লেগে গেলাম। আমি সবসময় চিন্তায় পড়ে যাই ক্লাসে গোবেচারা মুখ করে রাখাটা বেশি নিরাপদ নাকি মনোযোগী মুখ।

কনকনে শীতের সাথে সাথে আজকে সারাদিন মেঘলা। দুপুরে কিনা রীতিমত বৃষ্টি নেমে গেল। সাড়ে বারোটা বেজে যাবার পর আমি এমন একটা ভাব করছিলাম যেন এই মুহূর্তে বাসায় রওনা না দিলে তুলকালাম কিছু একটা ঘটে যাবে। আমার হাতে এক কপি ফটোস্ট্যাট করারও সময় নেই। অথচ একটু পর ঠিকই সুড়সুড় করে বন্ধুদের পেছন পেছন ধানমন্ডি অভিমুখে চলতে শুরু করলাম। বিরিয়ানির ঢেকুর তুলে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে দেখি বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি। বেজায় ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে এবার শখ হল পেটে ডেজার্ট জাতীয় কোন কিছু ফেলি। খাওয়া হোক বা না হোক এখনই বাসায় ফেরা চলবেনা। এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকবে না তো মন। কেমন যেন নির্ভেজাল খুশি খুশি লাগল আজকে অনেক দিন পর। ভাগ্যিস বাসা থেকে তাড়াহুড়া করে বের হলেও তুলে রাখা ছাতাটা মনে করে সঙ্গে নিয়ে নিয়েছিলাম। নাহয় কেমন বেকায়দায় পড়ে যেতাম! বৃষ্টির তোড় বাড়তে লাগল। বৃষ্টি, সাথে হাঁড় কাঁপানো শীত। বিকালবেলা ধানমন্ডি লেকের পাশে জড় হওয়া বন্ধুবান্ধবের দল আর জুটিরা। একটু একটু গল্প কর, একটু একটু কফি খাও। মাথার উপরে ছাউনি তবু ধেয়ে আসা মাঘবৃষ্টির ছাঁট। লেকের পানির উপর আকাশফোঁড়া পানির কাঁথাসেলাই। চমৎকার একটা আবহ। কিন্তু উপভোগ্যকে উপভোগের উপযুক্ত রাখার জন্য অবশেষে ফিরতি পথ ধরতে হল। বাসভ্রমণটা এবার হল অনেক ভালো। ইচ্ছা হচ্ছিল পথ আরেকটু দীর্ঘ হোক। সন্ধ্যাটা একটু ঝিমিয়ে কাটিয়েছি। এখন ঠিক হয়ে গেছে। খানিক পর কম্বলকে সঙ্গী করে আবার ঘুমের দেশে যাত্রা করব। আরেকটা দিনের সমাপ্তি।

2 comments:

Shahidul Mahfuz said...

10/10.

blue-spark said...

kon kone shiter shokale khub ayesh kore coffee khete jmon valo lage, tmon valo legeche lekha ta.