Sunday, January 13, 2008

পাশের বাড়ি পলাশবাড়ী

আমাদের বাসা পল্লীকবি জসীমউদদীনের বাড়ির এক্কেবারে কাছে। মাঝখানের সরু রাস্তাটা বাদ দিলে দেয়ালঘেঁষাই বলা যেত। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভেতরের কিছুটা দেখতে পাওয়া যায়। এই পাড়ায় কবির বাড়িটা অনেকখানি জায়গা জুড়ে। চারদিকে প্রাচীর দেয়া। সীমানার ভেতরকার অংশটা গাছপালায় ভরপুর। খুব সাজানো গোছানো বলে মনে হয় না। এলোমেলোভাবে ছড়ানো ছিটানো বহু গাছ। আর সেই গাছপালায় নানা পাখির চলাচল। গোধূলিবেলাতে একথা খুব ভালভাবে টের পাওয়া যায়। পাখির কিচিরমিচিরে মুখর হয়ে থাকে জায়গাটা। দেয়ালের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে রীতিমত কান ঝালাপালা হবার যোগাড়। আর এই ব্যাপারটাই আমার খুব পছন্দ। ঢাকাতে একসঙ্গে এত গাছপালা, সেখানে পাখির এমন কলকাকলী খুব বেশি হবার কথা না। গ্রাম থেকে আসা আমাদের আত্মীয়রা বলেছে তাদের বাড়িতেও এত পাখির ডাক শোনা যায় না। আমি জানি না শীতকালে পাখি বেশি ডাকে কিনা, তবে তাদের মন্তব্য শুনে আমি খুশি হই। কারণ ঢাকা ইট কংক্রিটের শুষ্ক শহর, এখানে মানুষ যান্ত্রিক, তারা সবুজ ঘাস আর পাখির মিষ্টি গান থেকে বঞ্চিত বলে তাদের মায়ামমতাও কম এধরণের কিছু cliché ডায়লগ আছে। আমি তাই আমাদের পাড়ার সবুজের ভাগ নিয়ে একটু গর্বিত। কবির বাড়ির নামখানাও সুন্দর, “পলাশবাড়ী”। কেন এমন নাম রাখা হল তা আমার জানা নেই। ভেতরে কুকুর পোষা হয়। ছোটবেলায় রাতবিরাতে কুকুরের চেঁচামেচি শুনলে ভয় পেতাম খুব। কারণ একটা কথা আছে রাতে কুকুর কাঁদলে নাকি কেউ মারা যায়। আমার প্রতিরাতেই ধারণা হত সেই কেউটা হচ্ছি আমি। পলাশবাড়ীতে কবির সময়কার সাহিত্যিকদের আসাযাওয়া ছিল সেই সময়। তখন নিশ্চয়ই এখানে প্রাণের ছোঁয়া ছিল। তাঁর পরিবারের কেউ এখন থাকেনা। শুধু কেয়ারটেকার আছে দেখাশোনা করার জন্য। মাঝেমাঝে লোকজন আসে তদারক করতে। সাদা রঙের মূল দালানটা বিশেষ বড় না। মানুষের আনাগোনা নেই। এখন ভাবতে গিয়ে একটু অস্বস্তি হচ্ছে যে আমি প্রায় আঠারো বছর এই প্রাচীরের সীমানা অঞ্চলে থাকি কিন্তু কখনো পলাশবাড়ীর ভেতরে যাওয়া হয়নি আমার। যে সে তো না, স্বয়ং পল্লীকবি এর মালিক ছিলেন। গাছগুলোর বিন্যাস বাইরে থেকে যতটা আগোছালো মনে হয় ভেতরে সম্ভবত তা না। প্রাইমারিতে পড়ার সময় এমন কথা আমাদের মধ্যে চালু ছিল যে এই বাড়িতে কবি বেঁচে থাকতে শিশুদের অবাধ বিচরণ ছিল, গেটটা এভাবে করে তালাবদ্ধ করে রাখা হত না; বাচ্চারা ইচ্ছা করলেই গাছ থেকে ফল ছিঁড়ে নিয়ে খেতে পারত; কিন্তু কবির বউ ছিলেন নিষ্ঠুর প্রকৃতির মহিলা এবং তার আঘাতের ফলেই কবির মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়; আর তাঁর মৃত্যুর পর এই গেট শিশুদের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের আগের বাসার জানালা দিয়ে দেখতাম ছেলেরা ডাব চুরি করত। আর খেলাধুলা করতে গেলে অবশ্যই বল পড়বে দেয়ালের ওই পাশে। পেছনের দিক হলে সাবধানে দেয়াল টপকে বল উদ্ধার করে আনা নিয়ম, কিন্তু সামনের দিকে পড়লে খেলোয়াড়রা কি করে বলতে পারছিনা। আমি সবসময় প্রার্থনা করি এই জায়গাটা যেন কখনো কিছুতেই কোন রিয়েল এস্টেট কোম্প্যানির কাছে বিক্রি না হয়ে যায়। তাহলে এখানে লম্বাচওড়া বিল্ডিং উঠে যাবে; আমাদের বাসায় রোদ আসবে না; পাখির কাকলী শোনা যাবে না; বারান্দায় বসে গাছির খেজুর গাছ চাঁছা দেখা যাবে না; নিরিবিলি পলাশবাড়ী অদৃশ্য হয়ে যাবে।

1 comment:

mehrab said...

School e jokhon portam , okhantay majhe majhei jetam . Jaygatar proti bhalo laga theke jawa na , jetam fastfood er taane. Jani na fastfood er dokanta ekhono ache kina . Shesh giechilam 7 mash aage , amader ek attiyer notun bari utheche okhane . Valo legechilo onek , shotti onek niribili .

Valo laglo apnar lekha