রোজ খানিকটা করে দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে চলেছে। যেভাবে এগোচ্ছে, আমার তো মনে হচ্ছে জুনের মাঝখান আসতে আসতেই সূর্যাস্ত আটটায় গিয়ে ঠেকবে। কিন্তু কিভাবে কিভাবে যেন ম্যানেজ করে নেয় প্রকৃতি। জুনও আসে কিন্তু আবার আটটাও বাজে না। আমাদের একটা ব্যাপার কিন্তু বেশ। আমরা মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় দিন আর রাতের সীমারেখাটা আজান দিয়ে ভাগ করে দেয়া যায়। মাগরিবের আগে দিন আর মাগরিবের পরে রাত। দারুণ একটা নিয়ম। আজান দিল খেলা শেষ বাসায় ফেরো। আজান দিল হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বস। আজান হচ্ছে, ঘরের বাতি জ্বালাও। একটা ফোল্ডার আজকের মত বন্ধ কর এবং আরেকটা ফোল্ডার খোল। খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ দেশে এই নিয়মটা পাওয়া যাবে না। আমি যদি এখন হঠাৎ নিউইয়র্ক বা ভিয়েনায় চলে যাই প্রথম বেশ অনেকদিন আমার বিকাল আর সাঁঝের মাঝে দাগ দিতে বেশ অসুবিধা হবে। বলা যায় দিন ভাগ করার কি বা প্রয়োজন? আসলে অভ্যাস। রাত থেকে দিনকে আলাদা করতেও আজান। আমি এটা টের পাই না, তাই অভ্যাসও হয়নি। সূর্যোদয় দেখতে সূর্যাস্তের চেয়ে অনেক সুন্দর। অন্তত বেশিরভাগ মানুষ তাই বলবে। কারণ হতে পারে এই যে আমরা আলোর প্রতি দুর্বল। আলো ফুটতে থাকা মানেই শুভসূচনা। আমাদের পাঁচটা বেলা আর সবকয়টার শুরু বা শেষ আজান দিয়ে। ধর্ম মানুষকে যেসব শেখায় তার মধ্যে শৃংখলা আর নিয়মানুবর্তিতা অন্যতম। অধার্মিকের নিয়মনিষ্ঠা নেই তা বলব না। আমি নিজে যেমনই হই না কেন, আশপাশের ধর্মাচারের প্রভাব আমার উপর আছেই। এটা না দেখলেই বরং একটু অস্বাভাবিক লাগবে।
বলছিলাম আসলে গোধূলির কথা। আমাদের আগের বাসাটা ছিল ছয়তলায়। বেশ আলো পাওয়া যেত। মাঝে মাঝে উজ্জ্বল দিনে গোধূলি মিলিয়ে যেতে একটু বেশি সময় নেয়। তখন সেই সময়টা ছিল ভয়ের। কারণ আমি কোন একভাবে জেনেছিলাম কিয়ামত হবে সূর্যাস্তের সময় এবং তখন সূর্য ডুবে গিয়ে পশ্চিম দিক থেকে আবার উঠবে। কেমন একটা আতংক হত। তার ওপর আমার বারান্দা ছিল পশ্চিমমুখী। আমি দেখতে পেতাম পশ্চিমের আকাশ আবার যেন আলো হয়ে উঠছে। এখন ভাবলে হাসি পায়। বাসায় থাকলে বিকাল থেকে সন্ধ্যা হবার সময়টা আমার মোটেও পছন্দ না। কোন কাজ করতে ভাল লাগে না আবার অলস বসে থাকতেও ভাল লাগে না। মেজাজ একটু তিরিক্ষি হয়ে পড়ে। ওই ছয়তলার বাসায় রোজার দিনে অর্ধেক ইফতারের পর আমি তাড়াহুড়া করে বারান্দায় চলে আসতাম। রাস্তা দেখার জন্য। কারণ ওই সময় সুনসান হয়ে থাকে অলিগলি, রোজা না থাকলে এমনটা পাওয়া যায় না। হঠাৎ হঠাৎ কোন একজনকে হয়ত চলতে দেখা যেত। ভর সন্ধ্যায় সোডিয়াম বাতির নিচে একাকী পথিক। আমাদের গ্রামে গোধূলির সময়কে বলা হয় “পাঁচ ওক্তের এক ওক্ত”। মজার ব্যাপার হল এই phrase শুধু এই সময়ের জন্য প্রযোজ্য, বাকি চারটা “ওক্ত”এর জন্য না। “পাঁচ ওক্তের এক ওক্ত” তে চুল বেঁধে না রাখলে আমার দাদী বিরক্ত হন। আঁচড়ে ফিটফাট করে রাখলেও চলবে না, বাঁধা হতে হবে। খোলা চুলে কত কি ঢুকে পড়তে পারে!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment