Thursday, January 10, 2008

চুপটিবেলা

“এক মুঠো রোদ, আকাশ ভরা তারা, ভিজে মাটিতে জলের নকশা করা...” ভাবছি দৃশ্যটা কেমন হবে। আকাশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য তারা, সেই তারাদের ভীড়ে মুঠো ভরা রোদ ছিটিয়ে দেয়া হল। তারারা চনমনে হয়ে নতুন উদ্যমে ঝিকমিক করতে থাকবে। আর পানির একটা শীতল ঢেউ যখন তীরের মাটিকে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে, তার কিছুটা জমে থাকবে ঘাসের খাঁজে, কিছুটা পিঁপড়ার কুচি কুচি গর্তের ভেতর, সবমিলিয়ে তৈরি হবে চকচকে একটা নকশা। বেশ ভাল লাগছে কাল্পনিক দৃশ্যটা... ... ...

আসলে আমি চেষ্টা করছি উৎফুল্ল হবার। কেমন যেন ন্যাতানো অনুভূতি হচ্ছে। নিজেকে মনে হচ্ছে মিয়ানো চানাচুরের মত। দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়ে গিয়েও নতুন বছরটা এখনো কেমন স্যাঁতস্যাঁতে। ২০০৮ যে কেমন যাবে কেজানে। মনের অন্য অর্ধেকটা আবার বলছে সবসময় উঠন্তি মুলোকে পত্তনে চেনার চেষ্টা করতে হয় না। ব্রায়ান লারা জানুয়ারিতে ফর্মে না থাকলে কি সারা বছর তার সিন্দুকে কোন রান জমেনি? নিউ ইয়ার ইভে হাঁপানির টান ওঠা নির্জীব কোন বৃদ্ধ কি আগস্ট মাসে টগবগে হয়ে হাঁটেনি? এসব হল নিষ্কর্মা মস্তিষ্কের ভেতরকার স্টেডিয়ামটাতে শয়তানকে ডাংগুলি খেলতে দেয়ার ফল। মানে নিজের দোষ ঢাকতে বছরের দোষ খোঁজার অপচেষ্টা। কিন্তু আমিও তো নেহায়েত ভালমানুষ, আমার কি বা এমন দোষ আছে? আলসেমীটাই শুধু যা একটু ঝামেলা করে। তার মধ্যে আবার ভার্সিটিও খুলে গেল। কানের সামনে এখন পরীক্ষার দামামা আরো জোরেসোরে বাজতে থাকবে। আর আমি যথারীতি কেন্নোর মত মাটি খুঁড়ে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করব। পাশের বাসার নির্দয় বন্ধুটা ওদের ডিপার্টমেন্ট থেকে স্টাডি ট্যুরে চলে গেল। কেন বাবা, আমার পাসপোর্ট ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়ে টিচারের হাতে পায়ে ধরে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে গেলে পারতে না? আমি কি তোমাকে মাঝে মধ্যে এক কাপ রং চা খাওয়ার জন্য সাধাসাধি করি না? মামাতো বোনটা বেড়াতে এসেছিল বেশ কিছুদিন হয়েছে, কাল সেও চলে যাবে। আপাতদৃষ্টিতে মাত্র ক্লাস সেভেন পাশ করা পুঁচকে মেয়ে হলেও কথা বলার ভাল সঙ্গী। চলে গেলে আবার কবে দেখা হবে ওর সাথে! মন খারাপ লাগছে। ক্লাসমেটদের কেউ কেউ ফুলটাইম বা পার্টটাইম কাজে ঢুকে গেছে। আর আমি কি করছি? ঘোড়ার ঘাস কাটছি। পাশ করার পর কোন পদের চাকরি বাকরি যে জুটবে বা আদৌ জোটাতে পারব কিনা জানি না। ডিপার্টমেন্ট কিশমিশের মত শুকনো, ক্লাস সাসপেন্ড হয়ে গেছে বেশ কিছু। তীব্র বাতাসে সেই যে ঠাণ্ডা লেগেছিল গ্রাম থেকে ফেরার আগের দিন, গলাটা এখনো তার জের টানা ছেড়ে দেয়নি। এমনকি আজকে রাতের খাবারটা ছিলও একেবারেই দায়সারা। একটু পর শেলফ থেকে একটা তরতাজা কমলা নিয়ে আয়েশ করে বসে দেখি, খোসার নিচে ঠনঠনে মাকালফল। কি যে হল বুঝতে পারছি না। পুরানো নতুন নানান কথা মনে করে আজকে বিষন্ন লাগছে। আনন্দের কথাগুলো সব একসঙ্গে মনে পড়ে কিনা জানিনা, মন খারাপের কথাগুলো আপনা থেকেই ট্রেনের বগির মত একটার পেছন একটা জুড়ে যায়। কোন স্টেশনে গিয়ে থামবে সে?

No comments: