Thursday, January 31, 2008
অলস প্রহর
গতকাল থেকে আবার সেই জবুথবু শীত। পা দু’খানা মোজার মধ্যে চালান করে দিয়েছি। হাত যেন অসাড় হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের দিকে বৃদ্ধদের জন্য মালসার মত একটা জিনিসের ব্যবস্থা আছে। সেখানে কয়লার তাপে হাত গরম করে তারা। আমারও মনে হচ্ছে এরকম কিছু লাগবে। শরীরের প্রান্তসীমায় বলে হাত আর পায়ের পাতা জমে বিস্বাদ আইসক্রিম হয়ে থাকে। এরকম দিনে তুষার পড়া দেশে বেড়াতে যাবার রোমান্টিক কল্পনা কিছুটা ধাক্কা খায়। এখানেই আমার এই দশা, ওখানে গাদা গাদা গরম কাপড় পরে বিষন্ন আকাশের নীচে হাঁটব কেমন করে। বিচ্ছিরি শীতটা যে কবে যাবে! আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না এই ঘরেই আমি বছরের কিছু সময় ফ্যান অন করেও ঘামতে থাকি। আজকে ভার্সিটি গেলাম না, ভাবলাম ঘরে বসে সময়টা কাজে লাগানো যাবে। কিন্তু করছি ঘোড়ার ডিম। কফি খেতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু আছে কিনা খুঁজে দেখতেও আলসেমি লাগছে। আর আমি নিশ্চিত কফি থাকবে না। যদি থাকেও, যেহেতু আমার দরকার তাই কোন না কোন কারণে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তখনই হঠাৎ করে আমার মনে হতে থাকবে কফি না পেলে আমার প্রাণ বের হয়ে যাবে এবং যখন এটা নিয়ে হৈ চৈ করা শেষ করব, তখন দেখা যাবে জিনিসটা নাকের ডগায়ই ছিল। তারপর মুখ চুন করে রেখে ধৈর্য্যহীনতা এবং বদমেজাজ এর উপর বক্তব্য শুনতে হবে। সুতরাং এত ঝামেলার দরকার কি। বসে বসে ভেরেন্ডাই ভাজি আপাতত।
Friday, January 25, 2008
আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি
‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে জেলেপাড়ার অধিবাসীরা প্রবল শীত পড়লে বলত, “উফ কি জাড়!” আজকে আমিও এই কথা কয়েকবার বলেছি। কারণ আজকের দিনটায় আসলেই খুব ঠাণ্ডা পড়েছে। ঢাকায় তাপমাত্রা কততে নেমেছে তা জানিনা। তবে খুব শীত। আমার দিনের শুরুটা হয়েছে কঠিনভাবে। ঠাণ্ডার মধ্যে সাতসকালে কম্বলের লোভনীয় ওম ঠেলে উঠতে হল, সেটাও দেরিতে। ঝটপট নাস্তা শেষ করে দেখি হাতে একেবারেই যথেষ্ট সময় নেই। কোনরকমে রেডি হয়ে ছুট লাগালাম বাসের জন্য। সেখানে সবার যা হয়ে থাকে আমারও তাই হল। অর্থাৎ বাস অনুপস্থিত এবং স্টপেজে হাঁড়িমুখো মানুষের বিশাল জমায়েত। মেজাজ চড়ে গেল। রিকশা পেতে পেতে এবং পাওয়ার পর যেতে যেতে দেরি হয়ে যাবে। তাছাড়া চারগুণ ভাড়া দিতে যে হাতে বাধে এটাও তরতাজা সত্য। এখানে একই রুটের একাধিক বাস থাকায় আমরা সচরাচর বেশ জ্ঞানের পরিচয় দিই। সবাই কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে বকের মত লম্বাগলা করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি। দূর থেকে যেই বাসের নিশানা পাওয়া যায়, সবাই হুমড়ি খেয়ে সেই বাসের টিকেট করে ফেলি। তো সেটাই হল। পড়িমরি করে টিকেট করে দেখি অলরেডি লম্বা লাইন হয়ে গেছে। সেই বাস কিছুদূর যেতে না যেতেই পুরোপুরি বোঝাই। যাই হোক হাঁচড় পাঁচড় করা ছাড়াই শাহবাগে নেমে পড়তে পারলাম। লম্বা লম্বা পা ফেলে কলাভবন অভিমুখে ছুটলাম, যাকে বলে দ্রুতগামী ঋজু দৃপ্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। আমি নিশ্চিত যে আজকে টিচারের লেট করার প্রশ্নই উঠেনা। কিন্তু আরো দুর্ভাগ্য! ক্লাস হচ্ছেনা। সবাই করিডরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমি মোটেও ক্লাসপ্রেমী সুবোধ না। কিন্তু কথা হচ্ছে ক্লাস যদি হবেই না তো আমি ত্যাগ স্বীকার করে জীবন বাজি রেখে হাজির হলাম কি জন্যে? পরের ক্লাসটা অবশ্য হল। কি যে ক্লাস করলাম কেউ বলতে পারবেনা। আমি, আমার বই আর আমার মন তিনটা তিন দিকে। অনেক কথার পর স্যার বললেন, তোমাদের কারোরই কোন প্রশ্ন নেই? সব বুঝতে পেরেছ? ঠিক আছে তাহলে আমিই প্রশ্ন করি। সাথে সাথে তন্ন তন্ন করে প্রশ্ন খুঁজতে লেগে গেলাম। আমি সবসময় চিন্তায় পড়ে যাই ক্লাসে গোবেচারা মুখ করে রাখাটা বেশি নিরাপদ নাকি মনোযোগী মুখ।
কনকনে শীতের সাথে সাথে আজকে সারাদিন মেঘলা। দুপুরে কিনা রীতিমত বৃষ্টি নেমে গেল। সাড়ে বারোটা বেজে যাবার পর আমি এমন একটা ভাব করছিলাম যেন এই মুহূর্তে বাসায় রওনা না দিলে তুলকালাম কিছু একটা ঘটে যাবে। আমার হাতে এক কপি ফটোস্ট্যাট করারও সময় নেই। অথচ একটু পর ঠিকই সুড়সুড় করে বন্ধুদের পেছন পেছন ধানমন্ডি অভিমুখে চলতে শুরু করলাম। বিরিয়ানির ঢেকুর তুলে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে দেখি বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি। বেজায় ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে এবার শখ হল পেটে ডেজার্ট জাতীয় কোন কিছু ফেলি। খাওয়া হোক বা না হোক এখনই বাসায় ফেরা চলবেনা। এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকবে না তো মন। কেমন যেন নির্ভেজাল খুশি খুশি লাগল আজকে অনেক দিন পর। ভাগ্যিস বাসা থেকে তাড়াহুড়া করে বের হলেও তুলে রাখা ছাতাটা মনে করে সঙ্গে নিয়ে নিয়েছিলাম। নাহয় কেমন বেকায়দায় পড়ে যেতাম! বৃষ্টির তোড় বাড়তে লাগল। বৃষ্টি, সাথে হাঁড় কাঁপানো শীত। বিকালবেলা ধানমন্ডি লেকের পাশে জড় হওয়া বন্ধুবান্ধবের দল আর জুটিরা। একটু একটু গল্প কর, একটু একটু কফি খাও। মাথার উপরে ছাউনি তবু ধেয়ে আসা মাঘবৃষ্টির ছাঁট। লেকের পানির উপর আকাশফোঁড়া পানির কাঁথাসেলাই। চমৎকার একটা আবহ। কিন্তু উপভোগ্যকে উপভোগের উপযুক্ত রাখার জন্য অবশেষে ফিরতি পথ ধরতে হল। বাসভ্রমণটা এবার হল অনেক ভালো। ইচ্ছা হচ্ছিল পথ আরেকটু দীর্ঘ হোক। সন্ধ্যাটা একটু ঝিমিয়ে কাটিয়েছি। এখন ঠিক হয়ে গেছে। খানিক পর কম্বলকে সঙ্গী করে আবার ঘুমের দেশে যাত্রা করব। আরেকটা দিনের সমাপ্তি।
কনকনে শীতের সাথে সাথে আজকে সারাদিন মেঘলা। দুপুরে কিনা রীতিমত বৃষ্টি নেমে গেল। সাড়ে বারোটা বেজে যাবার পর আমি এমন একটা ভাব করছিলাম যেন এই মুহূর্তে বাসায় রওনা না দিলে তুলকালাম কিছু একটা ঘটে যাবে। আমার হাতে এক কপি ফটোস্ট্যাট করারও সময় নেই। অথচ একটু পর ঠিকই সুড়সুড় করে বন্ধুদের পেছন পেছন ধানমন্ডি অভিমুখে চলতে শুরু করলাম। বিরিয়ানির ঢেকুর তুলে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে দেখি বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি। বেজায় ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে এবার শখ হল পেটে ডেজার্ট জাতীয় কোন কিছু ফেলি। খাওয়া হোক বা না হোক এখনই বাসায় ফেরা চলবেনা। এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকবে না তো মন। কেমন যেন নির্ভেজাল খুশি খুশি লাগল আজকে অনেক দিন পর। ভাগ্যিস বাসা থেকে তাড়াহুড়া করে বের হলেও তুলে রাখা ছাতাটা মনে করে সঙ্গে নিয়ে নিয়েছিলাম। নাহয় কেমন বেকায়দায় পড়ে যেতাম! বৃষ্টির তোড় বাড়তে লাগল। বৃষ্টি, সাথে হাঁড় কাঁপানো শীত। বিকালবেলা ধানমন্ডি লেকের পাশে জড় হওয়া বন্ধুবান্ধবের দল আর জুটিরা। একটু একটু গল্প কর, একটু একটু কফি খাও। মাথার উপরে ছাউনি তবু ধেয়ে আসা মাঘবৃষ্টির ছাঁট। লেকের পানির উপর আকাশফোঁড়া পানির কাঁথাসেলাই। চমৎকার একটা আবহ। কিন্তু উপভোগ্যকে উপভোগের উপযুক্ত রাখার জন্য অবশেষে ফিরতি পথ ধরতে হল। বাসভ্রমণটা এবার হল অনেক ভালো। ইচ্ছা হচ্ছিল পথ আরেকটু দীর্ঘ হোক। সন্ধ্যাটা একটু ঝিমিয়ে কাটিয়েছি। এখন ঠিক হয়ে গেছে। খানিক পর কম্বলকে সঙ্গী করে আবার ঘুমের দেশে যাত্রা করব। আরেকটা দিনের সমাপ্তি।
Sunday, January 20, 2008
হিজিবিজি
হঠাৎ মনে হল অনেকদিন এই খাতাতে কিছু লেখা হয়নি। আসলে কিন্তু অনেকদিন না, দিনের কিছুটা সময় এখন বই খাতা নামের কিছু বস্তুর সামনে বসে হাই তোলার জন্য বরাদ্দ করার চেষ্টা করছি বলে বোধ হয় সব সুখের কাজকেই মনে হয় যেন বহুদিন করা হয়নি। আজকে যখন কম্পিউটারের সামনে বসলাম আর ভাবতে শুরু করলাম কি লিখি কি লিখি, তখন মনে পড়ে গেল আমি সেদিন মাত্র একটা টিউটোরিয়াল দিয়ে এলাম যেটার বিষয়ই ছিল - লেখা। মজার ব্যাপার হল কয়েক মাস আগেও আমি জানতাম না যে এই লেখা কাজটা নিয়েই গাদা গাদা বই লিখে ফেলা যায়, লেখা নিয়ে গুরুগম্ভীর পর্যালোচনা করা যায়, লেখা ব্যাপারটা নিয়ে ক্লাসে অনেককিছু পড়ানো যায় এবং লেখা রাতারাতি এমনই জটিল আর প্যাঁচানো একটা বিষয় হয়ে উঠতে পারে যে এটা নিয়ে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসলে তার উত্তর দিতে না পারা আসলেই সম্ভব।
ব্লগের ভেতর লেখার সুবিধা অনেক; একটা তৃপ্তি জন্মে যে আমার লেখাটা কেবল আমার খাতাপত্রের ফাঁকফোকরে গুমরে মরছে না বরং টাটকা থাকতে থাকতেই দেখ কেমন ‘ছাপা’ হয়ে গেল, সে বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন। সেই ছাপার জন্য কারো কাছে ধরনাও দিতে হয়না, নিজেই লেখক নিজেই প্রকাশক। শুধু কি দেশের সীমার মধ্যে? এক মুহূর্তে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিলাম। কেউ না পড়লেও বা কি। আমি কি জানতে পারছি নাকি। নিউজপেপারের প্রত্যেকটা লেখাই কি কেউ না কেউ পড়ে? কিন্তু কথা হল আমি এখানে এই যে সব লিখছি এবং লিখেছি এগুলো আসলে কি। পৃষ্ঠা উল্টেপাল্টে দেখলাম মোটামুটি সবই আমার নিজেকে নিয়ে। আমি কি খাই কি পরি কি করি কি করতাম এই টাইপ। তবে কি নিজেকে নিয়ে লেখাই সবচেয়ে সহজ? সহজ হোক বা না হোক, নিরাপদ যে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। আমি বিগত মাসের তিন তারিখে নিজের মধ্যমস্তকে একখানা নির্জীব অর্ধপক্ককেশ আবিষ্কার করিয়াছি, এমনটা লিখলে কেউ মানহানি মামলা করার জন্য তেড়েফুঁড়ে আসবে না।
লিখতে বসে পরীক্ষার কথা মনে পড়ল। একবার কলেজের বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অল্প সময়ের মধ্যে অনেক লেখা বাকী কিন্তু কিছুতেই advantage আর environment এই দুইটা শব্দের বাংলা মনে পড়ছিল না। অথচ আমি কিনা এসবের বাংলাই জানি। দুই দিনের যোগীর মত অবস্থা। বেঞ্চের সামনে টিচার দাঁড়ানো, কাউকে জিজ্ঞেস করারও উপায় নেই। এও মনে হচ্ছিল যে কারো কাছে environment এর বাংলা জানতে চাইলে মনে মনে নাক সিঁটকে ভাববে, “ঢং দেখে বাঁচি না, ভাবখানা এমন যেন বিলাতফেরত, ভাংলা ভলতে পাড়ি না”। আবার ইংলিশ পরীক্ষার সময় হত উল্টো। দেখা গেল পর্যালোচনার বদলে যে discussion লিখতে হয় সেটা বের করতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যাচ্ছে। আমার মতে এটা সবারই হয়। প্রায়ই দেখা যায় যখন যেটা দরকার সেটা তো আসেই না, বরং অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা এসে মাথার চারপাশে ঘুরপাক খায়।
লেখা লেখা করে এতক্ষণ বসে কিসব লিখলাম? একে তো লেখার সংজ্ঞার মধ্যেও ফেলা যাচ্ছে না। লেখা আর হল না, হিজিবিজি আঁকিবুঁকি কাটা হল কেবল।
ব্লগের ভেতর লেখার সুবিধা অনেক; একটা তৃপ্তি জন্মে যে আমার লেখাটা কেবল আমার খাতাপত্রের ফাঁকফোকরে গুমরে মরছে না বরং টাটকা থাকতে থাকতেই দেখ কেমন ‘ছাপা’ হয়ে গেল, সে বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন। সেই ছাপার জন্য কারো কাছে ধরনাও দিতে হয়না, নিজেই লেখক নিজেই প্রকাশক। শুধু কি দেশের সীমার মধ্যে? এক মুহূর্তে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিলাম। কেউ না পড়লেও বা কি। আমি কি জানতে পারছি নাকি। নিউজপেপারের প্রত্যেকটা লেখাই কি কেউ না কেউ পড়ে? কিন্তু কথা হল আমি এখানে এই যে সব লিখছি এবং লিখেছি এগুলো আসলে কি। পৃষ্ঠা উল্টেপাল্টে দেখলাম মোটামুটি সবই আমার নিজেকে নিয়ে। আমি কি খাই কি পরি কি করি কি করতাম এই টাইপ। তবে কি নিজেকে নিয়ে লেখাই সবচেয়ে সহজ? সহজ হোক বা না হোক, নিরাপদ যে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। আমি বিগত মাসের তিন তারিখে নিজের মধ্যমস্তকে একখানা নির্জীব অর্ধপক্ককেশ আবিষ্কার করিয়াছি, এমনটা লিখলে কেউ মানহানি মামলা করার জন্য তেড়েফুঁড়ে আসবে না।
লিখতে বসে পরীক্ষার কথা মনে পড়ল। একবার কলেজের বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অল্প সময়ের মধ্যে অনেক লেখা বাকী কিন্তু কিছুতেই advantage আর environment এই দুইটা শব্দের বাংলা মনে পড়ছিল না। অথচ আমি কিনা এসবের বাংলাই জানি। দুই দিনের যোগীর মত অবস্থা। বেঞ্চের সামনে টিচার দাঁড়ানো, কাউকে জিজ্ঞেস করারও উপায় নেই। এও মনে হচ্ছিল যে কারো কাছে environment এর বাংলা জানতে চাইলে মনে মনে নাক সিঁটকে ভাববে, “ঢং দেখে বাঁচি না, ভাবখানা এমন যেন বিলাতফেরত, ভাংলা ভলতে পাড়ি না”। আবার ইংলিশ পরীক্ষার সময় হত উল্টো। দেখা গেল পর্যালোচনার বদলে যে discussion লিখতে হয় সেটা বের করতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যাচ্ছে। আমার মতে এটা সবারই হয়। প্রায়ই দেখা যায় যখন যেটা দরকার সেটা তো আসেই না, বরং অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা এসে মাথার চারপাশে ঘুরপাক খায়।
লেখা লেখা করে এতক্ষণ বসে কিসব লিখলাম? একে তো লেখার সংজ্ঞার মধ্যেও ফেলা যাচ্ছে না। লেখা আর হল না, হিজিবিজি আঁকিবুঁকি কাটা হল কেবল।
Sunday, January 13, 2008
পাশের বাড়ি পলাশবাড়ী
আমাদের বাসা পল্লীকবি জসীমউদদীনের বাড়ির এক্কেবারে কাছে। মাঝখানের সরু রাস্তাটা বাদ দিলে দেয়ালঘেঁষাই বলা যেত। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভেতরের কিছুটা দেখতে পাওয়া যায়। এই পাড়ায় কবির বাড়িটা অনেকখানি জায়গা জুড়ে। চারদিকে প্রাচীর দেয়া। সীমানার ভেতরকার অংশটা গাছপালায় ভরপুর। খুব সাজানো গোছানো বলে মনে হয় না। এলোমেলোভাবে ছড়ানো ছিটানো বহু গাছ। আর সেই গাছপালায় নানা পাখির চলাচল। গোধূলিবেলাতে একথা খুব ভালভাবে টের পাওয়া যায়। পাখির কিচিরমিচিরে মুখর হয়ে থাকে জায়গাটা। দেয়ালের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে রীতিমত কান ঝালাপালা হবার যোগাড়। আর এই ব্যাপারটাই আমার খুব পছন্দ। ঢাকাতে একসঙ্গে এত গাছপালা, সেখানে পাখির এমন কলকাকলী খুব বেশি হবার কথা না। গ্রাম থেকে আসা আমাদের আত্মীয়রা বলেছে তাদের বাড়িতেও এত পাখির ডাক শোনা যায় না। আমি জানি না শীতকালে পাখি বেশি ডাকে কিনা, তবে তাদের মন্তব্য শুনে আমি খুশি হই। কারণ ঢাকা ইট কংক্রিটের শুষ্ক শহর, এখানে মানুষ যান্ত্রিক, তারা সবুজ ঘাস আর পাখির মিষ্টি গান থেকে বঞ্চিত বলে তাদের মায়ামমতাও কম এধরণের কিছু cliché ডায়লগ আছে। আমি তাই আমাদের পাড়ার সবুজের ভাগ নিয়ে একটু গর্বিত। কবির বাড়ির নামখানাও সুন্দর, “পলাশবাড়ী”। কেন এমন নাম রাখা হল তা আমার জানা নেই। ভেতরে কুকুর পোষা হয়। ছোটবেলায় রাতবিরাতে কুকুরের চেঁচামেচি শুনলে ভয় পেতাম খুব। কারণ একটা কথা আছে রাতে কুকুর কাঁদলে নাকি কেউ মারা যায়। আমার প্রতিরাতেই ধারণা হত সেই কেউটা হচ্ছি আমি। পলাশবাড়ীতে কবির সময়কার সাহিত্যিকদের আসাযাওয়া ছিল সেই সময়। তখন নিশ্চয়ই এখানে প্রাণের ছোঁয়া ছিল। তাঁর পরিবারের কেউ এখন থাকেনা। শুধু কেয়ারটেকার আছে দেখাশোনা করার জন্য। মাঝেমাঝে লোকজন আসে তদারক করতে। সাদা রঙের মূল দালানটা বিশেষ বড় না। মানুষের আনাগোনা নেই। এখন ভাবতে গিয়ে একটু অস্বস্তি হচ্ছে যে আমি প্রায় আঠারো বছর এই প্রাচীরের সীমানা অঞ্চলে থাকি কিন্তু কখনো পলাশবাড়ীর ভেতরে যাওয়া হয়নি আমার। যে সে তো না, স্বয়ং পল্লীকবি এর মালিক ছিলেন। গাছগুলোর বিন্যাস বাইরে থেকে যতটা আগোছালো মনে হয় ভেতরে সম্ভবত তা না। প্রাইমারিতে পড়ার সময় এমন কথা আমাদের মধ্যে চালু ছিল যে এই বাড়িতে কবি বেঁচে থাকতে শিশুদের অবাধ বিচরণ ছিল, গেটটা এভাবে করে তালাবদ্ধ করে রাখা হত না; বাচ্চারা ইচ্ছা করলেই গাছ থেকে ফল ছিঁড়ে নিয়ে খেতে পারত; কিন্তু কবির বউ ছিলেন নিষ্ঠুর প্রকৃতির মহিলা এবং তার আঘাতের ফলেই কবির মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়; আর তাঁর মৃত্যুর পর এই গেট শিশুদের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের আগের বাসার জানালা দিয়ে দেখতাম ছেলেরা ডাব চুরি করত। আর খেলাধুলা করতে গেলে অবশ্যই বল পড়বে দেয়ালের ওই পাশে। পেছনের দিক হলে সাবধানে দেয়াল টপকে বল উদ্ধার করে আনা নিয়ম, কিন্তু সামনের দিকে পড়লে খেলোয়াড়রা কি করে বলতে পারছিনা। আমি সবসময় প্রার্থনা করি এই জায়গাটা যেন কখনো কিছুতেই কোন রিয়েল এস্টেট কোম্প্যানির কাছে বিক্রি না হয়ে যায়। তাহলে এখানে লম্বাচওড়া বিল্ডিং উঠে যাবে; আমাদের বাসায় রোদ আসবে না; পাখির কাকলী শোনা যাবে না; বারান্দায় বসে গাছির খেজুর গাছ চাঁছা দেখা যাবে না; নিরিবিলি পলাশবাড়ী অদৃশ্য হয়ে যাবে।
Thursday, January 10, 2008
চুপটিবেলা
“এক মুঠো রোদ, আকাশ ভরা তারা, ভিজে মাটিতে জলের নকশা করা...” ভাবছি দৃশ্যটা কেমন হবে। আকাশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য তারা, সেই তারাদের ভীড়ে মুঠো ভরা রোদ ছিটিয়ে দেয়া হল। তারারা চনমনে হয়ে নতুন উদ্যমে ঝিকমিক করতে থাকবে। আর পানির একটা শীতল ঢেউ যখন তীরের মাটিকে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে, তার কিছুটা জমে থাকবে ঘাসের খাঁজে, কিছুটা পিঁপড়ার কুচি কুচি গর্তের ভেতর, সবমিলিয়ে তৈরি হবে চকচকে একটা নকশা। বেশ ভাল লাগছে কাল্পনিক দৃশ্যটা... ... ...
আসলে আমি চেষ্টা করছি উৎফুল্ল হবার। কেমন যেন ন্যাতানো অনুভূতি হচ্ছে। নিজেকে মনে হচ্ছে মিয়ানো চানাচুরের মত। দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়ে গিয়েও নতুন বছরটা এখনো কেমন স্যাঁতস্যাঁতে। ২০০৮ যে কেমন যাবে কেজানে। মনের অন্য অর্ধেকটা আবার বলছে সবসময় উঠন্তি মুলোকে পত্তনে চেনার চেষ্টা করতে হয় না। ব্রায়ান লারা জানুয়ারিতে ফর্মে না থাকলে কি সারা বছর তার সিন্দুকে কোন রান জমেনি? নিউ ইয়ার ইভে হাঁপানির টান ওঠা নির্জীব কোন বৃদ্ধ কি আগস্ট মাসে টগবগে হয়ে হাঁটেনি? এসব হল নিষ্কর্মা মস্তিষ্কের ভেতরকার স্টেডিয়ামটাতে শয়তানকে ডাংগুলি খেলতে দেয়ার ফল। মানে নিজের দোষ ঢাকতে বছরের দোষ খোঁজার অপচেষ্টা। কিন্তু আমিও তো নেহায়েত ভালমানুষ, আমার কি বা এমন দোষ আছে? আলসেমীটাই শুধু যা একটু ঝামেলা করে। তার মধ্যে আবার ভার্সিটিও খুলে গেল। কানের সামনে এখন পরীক্ষার দামামা আরো জোরেসোরে বাজতে থাকবে। আর আমি যথারীতি কেন্নোর মত মাটি খুঁড়ে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করব। পাশের বাসার নির্দয় বন্ধুটা ওদের ডিপার্টমেন্ট থেকে স্টাডি ট্যুরে চলে গেল। কেন বাবা, আমার পাসপোর্ট ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়ে টিচারের হাতে পায়ে ধরে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে গেলে পারতে না? আমি কি তোমাকে মাঝে মধ্যে এক কাপ রং চা খাওয়ার জন্য সাধাসাধি করি না? মামাতো বোনটা বেড়াতে এসেছিল বেশ কিছুদিন হয়েছে, কাল সেও চলে যাবে। আপাতদৃষ্টিতে মাত্র ক্লাস সেভেন পাশ করা পুঁচকে মেয়ে হলেও কথা বলার ভাল সঙ্গী। চলে গেলে আবার কবে দেখা হবে ওর সাথে! মন খারাপ লাগছে। ক্লাসমেটদের কেউ কেউ ফুলটাইম বা পার্টটাইম কাজে ঢুকে গেছে। আর আমি কি করছি? ঘোড়ার ঘাস কাটছি। পাশ করার পর কোন পদের চাকরি বাকরি যে জুটবে বা আদৌ জোটাতে পারব কিনা জানি না। ডিপার্টমেন্ট কিশমিশের মত শুকনো, ক্লাস সাসপেন্ড হয়ে গেছে বেশ কিছু। তীব্র বাতাসে সেই যে ঠাণ্ডা লেগেছিল গ্রাম থেকে ফেরার আগের দিন, গলাটা এখনো তার জের টানা ছেড়ে দেয়নি। এমনকি আজকে রাতের খাবারটা ছিলও একেবারেই দায়সারা। একটু পর শেলফ থেকে একটা তরতাজা কমলা নিয়ে আয়েশ করে বসে দেখি, খোসার নিচে ঠনঠনে মাকালফল। কি যে হল বুঝতে পারছি না। পুরানো নতুন নানান কথা মনে করে আজকে বিষন্ন লাগছে। আনন্দের কথাগুলো সব একসঙ্গে মনে পড়ে কিনা জানিনা, মন খারাপের কথাগুলো আপনা থেকেই ট্রেনের বগির মত একটার পেছন একটা জুড়ে যায়। কোন স্টেশনে গিয়ে থামবে সে?
আসলে আমি চেষ্টা করছি উৎফুল্ল হবার। কেমন যেন ন্যাতানো অনুভূতি হচ্ছে। নিজেকে মনে হচ্ছে মিয়ানো চানাচুরের মত। দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়ে গিয়েও নতুন বছরটা এখনো কেমন স্যাঁতস্যাঁতে। ২০০৮ যে কেমন যাবে কেজানে। মনের অন্য অর্ধেকটা আবার বলছে সবসময় উঠন্তি মুলোকে পত্তনে চেনার চেষ্টা করতে হয় না। ব্রায়ান লারা জানুয়ারিতে ফর্মে না থাকলে কি সারা বছর তার সিন্দুকে কোন রান জমেনি? নিউ ইয়ার ইভে হাঁপানির টান ওঠা নির্জীব কোন বৃদ্ধ কি আগস্ট মাসে টগবগে হয়ে হাঁটেনি? এসব হল নিষ্কর্মা মস্তিষ্কের ভেতরকার স্টেডিয়ামটাতে শয়তানকে ডাংগুলি খেলতে দেয়ার ফল। মানে নিজের দোষ ঢাকতে বছরের দোষ খোঁজার অপচেষ্টা। কিন্তু আমিও তো নেহায়েত ভালমানুষ, আমার কি বা এমন দোষ আছে? আলসেমীটাই শুধু যা একটু ঝামেলা করে। তার মধ্যে আবার ভার্সিটিও খুলে গেল। কানের সামনে এখন পরীক্ষার দামামা আরো জোরেসোরে বাজতে থাকবে। আর আমি যথারীতি কেন্নোর মত মাটি খুঁড়ে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করব। পাশের বাসার নির্দয় বন্ধুটা ওদের ডিপার্টমেন্ট থেকে স্টাডি ট্যুরে চলে গেল। কেন বাবা, আমার পাসপোর্ট ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়ে টিচারের হাতে পায়ে ধরে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে গেলে পারতে না? আমি কি তোমাকে মাঝে মধ্যে এক কাপ রং চা খাওয়ার জন্য সাধাসাধি করি না? মামাতো বোনটা বেড়াতে এসেছিল বেশ কিছুদিন হয়েছে, কাল সেও চলে যাবে। আপাতদৃষ্টিতে মাত্র ক্লাস সেভেন পাশ করা পুঁচকে মেয়ে হলেও কথা বলার ভাল সঙ্গী। চলে গেলে আবার কবে দেখা হবে ওর সাথে! মন খারাপ লাগছে। ক্লাসমেটদের কেউ কেউ ফুলটাইম বা পার্টটাইম কাজে ঢুকে গেছে। আর আমি কি করছি? ঘোড়ার ঘাস কাটছি। পাশ করার পর কোন পদের চাকরি বাকরি যে জুটবে বা আদৌ জোটাতে পারব কিনা জানি না। ডিপার্টমেন্ট কিশমিশের মত শুকনো, ক্লাস সাসপেন্ড হয়ে গেছে বেশ কিছু। তীব্র বাতাসে সেই যে ঠাণ্ডা লেগেছিল গ্রাম থেকে ফেরার আগের দিন, গলাটা এখনো তার জের টানা ছেড়ে দেয়নি। এমনকি আজকে রাতের খাবারটা ছিলও একেবারেই দায়সারা। একটু পর শেলফ থেকে একটা তরতাজা কমলা নিয়ে আয়েশ করে বসে দেখি, খোসার নিচে ঠনঠনে মাকালফল। কি যে হল বুঝতে পারছি না। পুরানো নতুন নানান কথা মনে করে আজকে বিষন্ন লাগছে। আনন্দের কথাগুলো সব একসঙ্গে মনে পড়ে কিনা জানিনা, মন খারাপের কথাগুলো আপনা থেকেই ট্রেনের বগির মত একটার পেছন একটা জুড়ে যায়। কোন স্টেশনে গিয়ে থামবে সে?
Tuesday, January 8, 2008
নস্ট্যালজিক আমি
কবি কবি চেহারা, কাঁধেতে ঝোলানো ব্যাগ,
মুছে যাবে অমলের নামটা;
একটা কবিতা তার হল না কোথাও ছাপা,
পেল না সে প্রতিভার দামটা... ... ...
নস্ট্যালজিয়া নিয়ে যত বাংলা গান হয়েছে তার মধ্যে ‘কফি হাউস’ একেবারে প্রথম দিকের একটা। গানটা আমি প্রথম শুনি পপির মুখে। আমরা তখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম। পপির গানের গলা ছিল খুবই সুন্দর। টিচার না আসলে বা ক্লাসে বেশি চেঁচামেচি হলে ও ডায়াসে উঠে গান গেয়ে শোনাত। এই গানটা বেশ কয়েকবার গেয়েছিল ও, কারণ এটা ছিল শ্রোতাদের বিশেষ পছন্দ । আমরা গানের কথার মর্ম উপলব্ধি করে দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম। (এখন ক্লাস সেভেন পড়ুয়াদেরকে বাচ্চা মনে হয়, কিন্তু আসলে এটা মোটেও বাচ্চাদের ক্লাস না) এও বুঝতাম যে লাখপতি স্বামী আছে বলেই সুজাতাকে সুখী বলে ফেলা ঠিক হচ্ছে না। এখন গানটা নিজে বাজিয়ে শুনি। কখনো রেডিওতে শোনা হয়। সাত বন্ধুর মধ্যে আমার দুঃখ এখনও পর্যন্ত অমলের জন্যই বেশি। বলা হয়েছে জীবন তাকে ক্ষমা করেনি। তাহলে অমল কোন অপরাধ করেছিল নিশ্চয়ই, আর সেটা সম্ভবত নিজের জীবন নিয়েই। কি ভুল করেছিল অমল? ডি সুজা কিভাবে মরল? অসুখ না আর কিছু? আর যে সবাইকে নিয়ে গান গায়, তার নামটা পাওয়া যায় না। সে কোথায় কি অবস্থায় আছে তাও জানা হয় না। টিভিতে কফি হাউস অবলম্বনে একটা নাটক হয়েছিল, কিছুটা চেঞ্জ করে, দেখার ইচ্ছা হয়নি। সেখানে নাম না জানা ব্যক্তিটার নাম ছিল খুব সম্ভবত আদিত্য।
আমরা নিজেরাও তো এমনই। মাঝে মাঝে স্কুলজীবনের হারিয়ে যাওয়া সহপাঠীদের কথা ভাবলে মনে হয় যেন সবাই কত যোজন দূরে। হতে পারে একই শহরে বাস করি সেই কোকিলকণ্ঠী পপির কাছাকাছি কোথাও । কিন্তু কে আছে কোথায় কে জানে। মিতুল ছিল শান্ত স্বভাবের কিন্তু খুব হাসত। লুনা নামের সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে ছিল। মিতু ছিল গোলগাল হাসিখুশি একজন। পাশার ভবিষ্যত পরিকল্পনা ছিল বড় হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবে। কে যে কোন স্রোতের টানে কোন মোহনার দিকে ভেসে গেছে আমি বলতে পারব না। কেউ কেউ বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়েছে। অনেকে বসার তোড়জোড় করছে। এরা তো কেবল সহপাঠী। কাছের বন্ধুদেরকেই এখন সবাইকে একসঙ্গে করা যায় না। ব্যাট বল মেলে না। শুধু ফোনেই যা কথা হয়। মাঝে মাঝে একথা ভাবতে খুব ক্লান্তি এসে যায়, কত দিকে ডালপালা মেলেছে আমাদের জীবন। কোন কমন বিষয় কি এখন আদৌ আছে আলোচনার জন্য? কখনো একসঙ্গে হলে ক্যারিয়ার পরিবার সম্পর্ক এসব নিয়ে গিজগিজ করা মাথাগুলো কি তুচ্ছাতিতুচ্ছ কথায় হেসে গড়িয়ে পড়ার মত হালকা হবে? অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ক্রিকেটারটা আসলে কাকে পেয়ে ধন্য হবে জন্য এটা নিয়ে কোন দুইজনের মধ্যে বাগযুদ্ধও হবে না আর কখনো। প্যারোডি কবিতা বানানোর মত মুড নেই আমাদের, অবসর নেই কারো কথার বলার স্টাইল নকল করে আনন্দ পাওয়ারও।
আমি মনে হয় একটু বেশিই retrospective. এতটা হওয়া উচিত না, অন্তত এই বয়সে তো না-ই। গড় আয়ুর অর্ধেক হতেও যখন ঢের বাকি, তখন এসব হাপিত্যেস একেবারেই মানায় না। ধরলাম আমি একজন বিখ্যাত লেখক বা কবি গোছের কিছু একটা হয়ে গেলাম। তখন তো আমাকে নিয়ে অনেক পড়তে হবে ছাত্রছাত্রীদের ( মানে যেমন আমরা John Donne বা Robert Browning কে সিলেবাসে পাই )। তো আমার মূলভাবটা ধরে ফেলা খুব সহজ হবে ওদের জন্য...লেখকের মধ্যে অতীত হাতড়ে নিঃশ্বাস ফেলার প্রবণতা প্রবল... কিন্তু এত সহজে তো ধরা দেয়া চলবে না। ঠিক আছে মহান লেখক বা বিরাট কবি টাইপের কিছু হওয়ার চিন্তা বাদই দিলাম। কিন্তু একথা সত্যি যে আমি ছোটবেলাটা পার করে ফেলে একটু দুঃখিতই। কিশোরদের জন্য লেখা একটা বইয়ে পড়েছিলাম, লেখক ভূমিকায় বলছেন, তার সবচেয়ে বড় দুঃখ হল তার শৈশব শেষ হয়ে গেছে। কথাটা মনে হয় ভুল না। অদ্ভুত চিন্তাধারা আমাদের! ছোটবেলায় ছোট থাকলাম কেন, বড় হয়ে বড় হলাম কেন আর বার্ধক্যের কথা তো বাদই দিলাম। মানুষ কোনমতেই নিজেকে নিয়ে সুখী থাকতে পারে না। মাটির দেহের খাঁচায় বায়বীয় অসন্তুষ্টি। যতদিন এই মাটি, ততদিন সেই বায়ু।
মুছে যাবে অমলের নামটা;
একটা কবিতা তার হল না কোথাও ছাপা,
পেল না সে প্রতিভার দামটা... ... ...
নস্ট্যালজিয়া নিয়ে যত বাংলা গান হয়েছে তার মধ্যে ‘কফি হাউস’ একেবারে প্রথম দিকের একটা। গানটা আমি প্রথম শুনি পপির মুখে। আমরা তখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম। পপির গানের গলা ছিল খুবই সুন্দর। টিচার না আসলে বা ক্লাসে বেশি চেঁচামেচি হলে ও ডায়াসে উঠে গান গেয়ে শোনাত। এই গানটা বেশ কয়েকবার গেয়েছিল ও, কারণ এটা ছিল শ্রোতাদের বিশেষ পছন্দ । আমরা গানের কথার মর্ম উপলব্ধি করে দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম। (এখন ক্লাস সেভেন পড়ুয়াদেরকে বাচ্চা মনে হয়, কিন্তু আসলে এটা মোটেও বাচ্চাদের ক্লাস না) এও বুঝতাম যে লাখপতি স্বামী আছে বলেই সুজাতাকে সুখী বলে ফেলা ঠিক হচ্ছে না। এখন গানটা নিজে বাজিয়ে শুনি। কখনো রেডিওতে শোনা হয়। সাত বন্ধুর মধ্যে আমার দুঃখ এখনও পর্যন্ত অমলের জন্যই বেশি। বলা হয়েছে জীবন তাকে ক্ষমা করেনি। তাহলে অমল কোন অপরাধ করেছিল নিশ্চয়ই, আর সেটা সম্ভবত নিজের জীবন নিয়েই। কি ভুল করেছিল অমল? ডি সুজা কিভাবে মরল? অসুখ না আর কিছু? আর যে সবাইকে নিয়ে গান গায়, তার নামটা পাওয়া যায় না। সে কোথায় কি অবস্থায় আছে তাও জানা হয় না। টিভিতে কফি হাউস অবলম্বনে একটা নাটক হয়েছিল, কিছুটা চেঞ্জ করে, দেখার ইচ্ছা হয়নি। সেখানে নাম না জানা ব্যক্তিটার নাম ছিল খুব সম্ভবত আদিত্য।
আমরা নিজেরাও তো এমনই। মাঝে মাঝে স্কুলজীবনের হারিয়ে যাওয়া সহপাঠীদের কথা ভাবলে মনে হয় যেন সবাই কত যোজন দূরে। হতে পারে একই শহরে বাস করি সেই কোকিলকণ্ঠী পপির কাছাকাছি কোথাও । কিন্তু কে আছে কোথায় কে জানে। মিতুল ছিল শান্ত স্বভাবের কিন্তু খুব হাসত। লুনা নামের সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে ছিল। মিতু ছিল গোলগাল হাসিখুশি একজন। পাশার ভবিষ্যত পরিকল্পনা ছিল বড় হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবে। কে যে কোন স্রোতের টানে কোন মোহনার দিকে ভেসে গেছে আমি বলতে পারব না। কেউ কেউ বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়েছে। অনেকে বসার তোড়জোড় করছে। এরা তো কেবল সহপাঠী। কাছের বন্ধুদেরকেই এখন সবাইকে একসঙ্গে করা যায় না। ব্যাট বল মেলে না। শুধু ফোনেই যা কথা হয়। মাঝে মাঝে একথা ভাবতে খুব ক্লান্তি এসে যায়, কত দিকে ডালপালা মেলেছে আমাদের জীবন। কোন কমন বিষয় কি এখন আদৌ আছে আলোচনার জন্য? কখনো একসঙ্গে হলে ক্যারিয়ার পরিবার সম্পর্ক এসব নিয়ে গিজগিজ করা মাথাগুলো কি তুচ্ছাতিতুচ্ছ কথায় হেসে গড়িয়ে পড়ার মত হালকা হবে? অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ক্রিকেটারটা আসলে কাকে পেয়ে ধন্য হবে জন্য এটা নিয়ে কোন দুইজনের মধ্যে বাগযুদ্ধও হবে না আর কখনো। প্যারোডি কবিতা বানানোর মত মুড নেই আমাদের, অবসর নেই কারো কথার বলার স্টাইল নকল করে আনন্দ পাওয়ারও।
আমি মনে হয় একটু বেশিই retrospective. এতটা হওয়া উচিত না, অন্তত এই বয়সে তো না-ই। গড় আয়ুর অর্ধেক হতেও যখন ঢের বাকি, তখন এসব হাপিত্যেস একেবারেই মানায় না। ধরলাম আমি একজন বিখ্যাত লেখক বা কবি গোছের কিছু একটা হয়ে গেলাম। তখন তো আমাকে নিয়ে অনেক পড়তে হবে ছাত্রছাত্রীদের ( মানে যেমন আমরা John Donne বা Robert Browning কে সিলেবাসে পাই )। তো আমার মূলভাবটা ধরে ফেলা খুব সহজ হবে ওদের জন্য...লেখকের মধ্যে অতীত হাতড়ে নিঃশ্বাস ফেলার প্রবণতা প্রবল... কিন্তু এত সহজে তো ধরা দেয়া চলবে না। ঠিক আছে মহান লেখক বা বিরাট কবি টাইপের কিছু হওয়ার চিন্তা বাদই দিলাম। কিন্তু একথা সত্যি যে আমি ছোটবেলাটা পার করে ফেলে একটু দুঃখিতই। কিশোরদের জন্য লেখা একটা বইয়ে পড়েছিলাম, লেখক ভূমিকায় বলছেন, তার সবচেয়ে বড় দুঃখ হল তার শৈশব শেষ হয়ে গেছে। কথাটা মনে হয় ভুল না। অদ্ভুত চিন্তাধারা আমাদের! ছোটবেলায় ছোট থাকলাম কেন, বড় হয়ে বড় হলাম কেন আর বার্ধক্যের কথা তো বাদই দিলাম। মানুষ কোনমতেই নিজেকে নিয়ে সুখী থাকতে পারে না। মাটির দেহের খাঁচায় বায়বীয় অসন্তুষ্টি। যতদিন এই মাটি, ততদিন সেই বায়ু।
Thursday, January 3, 2008
যাঁতাকল
আমার মাথার ভেতর ইদানিং কিছু গুরুগম্ভীর বিষয় হররোজ আকুলি বিকুলি করে। নিজের সিলেবাসকে খুব ভারিক্কি দেখানোর জন্য বিষয়গুলোর নামও উল্লেখ করতে পারি, maturation theory, acculturation model, process writing, deviation and foregrounding ইত্যাদি। একথা মনে করার কোন কারণ নেই যে এসব নিতান্ত বেরসিক কথাবার্তার প্রতি আমার রাতারাতি দূর্মূল্য ভালবাসা গজিয়ে গেছে। এগুলো মনে পড়ে যায় কারণ ফাইনাল পরীক্ষা আমাকে লক্ষ্য করে সিডরের গতিতে ধেয়ে আসছে। আমি ভাবি আর নাড়ির অন্তঃস্থল থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলি, “হায়, আমার কি হবে!” তবে শ্বাস ফেলাই সার। বইগুলো যেন বিজাতীয় ভাষায় লেখা কোন প্রাচীন পুস্তক যাদের কেবল শেলফেই মানায়, টেবিলে রেখে পড়ার চেষ্টা করা একেবারেই নিষ্ফল। হৃদয়ের নিভৃত মণিকোঠা থেকে স্কুলের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে এসে যেন তুর্কিনাচন দিয়ে যায়। “আহা, কোথায় সেই মজার মজার বইগুলো!” সেই চাঁছাছোলা ‘সালফার উৎপাদনের প্রকোষ্ঠ প্রণালী’কে এসব তেতো প্রশ্নের তুলনায় রীতিমত মণ্ডামিঠাই মনে হয়। হাতের তালু চুলকাতে থাকে একটু অংক করার জন্য। ছোটবেলায় আমরা কত দরকারি পড়াশোনাই না করেছি। সেখানে বাংলা ইংরেজি যেমন ছিল, জীববিজ্ঞান ইতিহাস এসবও ছিল। বর্তমান যুগে সব বিষয়েই সম্যক ধারণা থাকা যে অতীব জরুরী এটা কি কেউ বোঝে না? তবে কেন অনার্সে উঠে একটা বিশেষ সাবজেক্টকেই ঢেঁকিতে ছাঁটতে হয়? চোখের সামনে বই খুলে সিলিংয়ের দিকে চেয়ে জাতির বিবেকের কাছে এসব প্রশ্ন করে বেড়াই। আর ছাপার অক্ষরের Trudgill Labov রা উঠে এসে আমার এক তোলা পরিমাণ মগজকে রগড়াতে থাকে। এভাবেই চলছে।
Tuesday, January 1, 2008
প্রথম সকাল
আজকে নতুন বছরের প্রথম দিন। অনেকেই পার্টি বা গেট টুগেদার করবে। আমি কিছু করছি না। বরং দিনটা যেন একটু বোরিংই লাগছে এখন পর্যন্ত। ঘুম ভেঙেই দেখি আমার মোবাইলের হ্যান্ডস ফ্রি এর অবস্থা মোটামুটি দফারফা। ছোটবেলায় বলতাম বছরের প্রথম দিনে যা হয় সারাবছর ধরে তাই হয়। আমার এই সকাল পর্যন্ত এমন কিছুই ঘটেনি যেটা সারাবছর ধরে ঘটতে পারে। সারাবছর জুড়ে তো আর হ্যান্ডস ফ্রি এর তার ছিঁড়বে না। আজকে আবাহাওয়া কিছুটা বিষণ্ন। আমার আবার আকাশে ঝলমলে রোদ না থাকলে মেজাজ খারাপ লাগে। ভাবছি দিনটা কেমন যাবে। বছরের প্রথম দিনটা খারাপ যাওয়া নিয়ে আমি চিন্তিত না। তবে একটা দিন ভাল যাচ্ছে না একারণে কিছুটা দুঃখিত। কি করব ভেবে পাচ্ছি না।
আজকে থেকে তারিখ লেখার ধরণ পাল্টে যাবে। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাবে। সময়ের হিসাব রাখার জন্য আমরা ঘণ্টা, দিন, মাস, বছর কত কিছু মেনে চলি। পাতা পাতা দিনপঞ্জী ছাপা হয়। এমনই যেই রবিনসন ক্রুসো একা একা নির্জন দ্বীপে আটকা পড়ে ছিল সেও দাগ কেটে কেটে সময়ের হিসাব রাখত। যাকে ধরে রাখা যায়ই না সে যেন অন্তত ছুটে যাবার সময় খুব বেশি বেয়াড়াপনা না করতে পারে সেজন্যই এত কিছু। আশা করি নতুন বছরটা আমাদের সবার জন্য ভাল অনুভূতি আর ভাল বার্তা বয়ে আনবে।
আজকে থেকে তারিখ লেখার ধরণ পাল্টে যাবে। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাবে। সময়ের হিসাব রাখার জন্য আমরা ঘণ্টা, দিন, মাস, বছর কত কিছু মেনে চলি। পাতা পাতা দিনপঞ্জী ছাপা হয়। এমনই যেই রবিনসন ক্রুসো একা একা নির্জন দ্বীপে আটকা পড়ে ছিল সেও দাগ কেটে কেটে সময়ের হিসাব রাখত। যাকে ধরে রাখা যায়ই না সে যেন অন্তত ছুটে যাবার সময় খুব বেশি বেয়াড়াপনা না করতে পারে সেজন্যই এত কিছু। আশা করি নতুন বছরটা আমাদের সবার জন্য ভাল অনুভূতি আর ভাল বার্তা বয়ে আনবে।
Subscribe to:
Posts (Atom)