Monday, August 17, 2009

জীবন একটা পুঁতির মালা

একটা বিজ্ঞাপন আছে, আপনার জীবনের গল্পগুলোই আমাদের প্রেরণা। কথাটায় একটু খাদ রয়ে গেছে। বলা উচিত ছিল আপনার জীবনের সুন্দর গল্পগুলোই আমাদের প্রেরণা। অন্যের অসুন্দর গল্পকে কেউ প্রেরণা হিসেবে নেয় না। যখনি এই বিলবোর্ডের দিকে চোখ পড়ে সাথে সাথেই রাস্তার বাকি মানুষগুলোর দিকে নজর চলে যায়। প্রত্যেকটা মানুষই না জানি কত গল্প পকেটে পুরে হেঁটে চলেছে। নিজের গল্প দিয়ে গাঁথা অদৃশ্য মালা থেকে একটা বা একেকটা পুঁতি খুলে দেখালেই হয়ত চমকে উঠব। কোন পুঁতি বর্ণহীন স্বচ্ছ, কোনটা ধুলো মাখানো নোংরা, কোনটা আবার নানা রঙে ঝলমলে। কোনটা একটু ছোট, কোনটা অনেক বড়। হতে পারে বাজারের মালার মত রঙের সাথে রঙের আকারের সাথে আকারের সামঞ্জস্য বজায় নেই অথচ এই অনিয়মিত বিন্যাসই এখানে বিন্যস্ততা। আমরা সময়ে অসময়ে মালাটা বের করে গোপনে হাতড়ে হাতড়ে দেখি। পুঁতিগুলোর উপর হাত বুলাই। নিজেদের কৃতিত্ব বা ভুল কিংবা বিধাতার লীলাখেলার নমুনা আমাদের ছোটখাট জীবনে কি কি ছাপ রেখে গেছে তা নিয়ে পুনর্বার মস্তিষ্ককে ব্যতিব্যস্ত করি। এই মুহূর্তে বারান্দার বাইরে রাস্তায় যেই পোড় খাওয়া চেহারার প্রৌঢ়া বসে আছেন সাহায্যের আশায় না জানি তার গল্পের ঝুলিতে কি কি আছে। পাশের বাসার তেজোদীপ্ত বাচ্চা মেয়েটারও নিশ্চয়ই এতদিনে দেখা আর বোঝা হয়ে গেছে পৃথিবীর অনেক কিছুই। এভাবে করেই দিনে দিনে মালায় পুঁতির সংখ্যা বাড়তে থাকে। অদ্ভুত ব্যাপার হল প্রত্যেকটা পুঁতিকেই আমরা একইভাবে যত্ন করে পেলে পুষে রাখি। চকচকেগুলোকেও যেমন, ম্যাড়ম্যাড়েগুলোকেও তেমনি। কারণ আমরা জানি কিছুমাত্র বৈষম্য করতে গেলেই সুতো ছিঁড়তে হয় নতুবা পুঁতি ভেঙে জায়গাগুলো ফোকলা করে নিতে হয়। কিন্তু তাহলে কি আর তাকে সত্যিকার মালা বলা চলে?

2 comments:

blue-spark said...

Shundor likhechen.

শুকতারা said...

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।