Tuesday, August 18, 2009

আমার "স্মার্টনেস"

আচ্ছা আমার মত অনেকের কি এমন হয়? মানে এই যে কোন সুন্দর জায়গায় গিয়ে হোঁচট খাওয়া। ধরা যাক কোন ঝলমলে শপিং মল। এখানে চেহারা পলিশ করা হালফ্যাশনের পোশাক পরা তরুণী কিংবা চুলে স্পাইক জাগানো ছেলেপুলে দেখলে নিজেকে কেমন গাধা গাধা মনে হয় কেন? অতি স্মার্ট কিশোরীদের সামনে পড়লে হঠাৎ করে নিজের জামার দৈর্ঘ্যকে বেমানান চুলকে তেল চিপচিপে আর কাঁধের ব্যাগটাকে জীর্ণশীর্ণ মনে হতে থাকে। দামী দোকানে ঢুকলে বৃথাই কোনটাই ঠিক পছন্দ না হবার ভান করি। আমার প্যাতপ্যাতে চাহনি দেখে সবাই এমনিতেই বুঝতে পারে আমি এসেছি উইন্ডো শপিং করতে, এসব কেনার মুরোদ আমার নেই। কোন কিছু আয়ত্বে কুলিয়ে যাবে ভেবে যদি জিজ্ঞেস করেই বসি, দাম শুনে ঢোঁক গিলতে গিলতে প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়। সেই সাথে সতর্ক থাকা লাগে কেউ যেন ঢোঁকের শব্দ শুনতে না পায়।

শুধু কি তাই? নানা সময়ে মুখের কথারও কতরকমই না ছিরিছাঁদ। ধরা যাক বাসায় কোন ফোন আসল এবং আমার হাতেই পড়ল। প্রথমেই খুব মিষ্টি করে বলি, “হ্যালো আসসালামু আলাইকুম"”। এরপর স্রোত কোন দিকে যাবে তা নির্ভর করে ওই পাশের ব্যক্তিটি কে তার উপর। সেটা কি শুধু ফোন? সামনাসামনিও তো তাই। বন্ধুজাতীয় কেউ হলে মুখ খুলে বলে ফেলা যায়, “ওই দোস্ত আর জিগাইস না এগুলার কিসুই আমি জাইন্না"”। বাচ্চা টাইপ পাবলিকের সাথে মুখ বাঁকা করে ন্যাকাও, “ওমা তাই নাকি? আমাকে তোমার একতা পুতুল দাও না”! আবার সেকেন্ড পারসনটা যদি হয় কোন বিশিষ্ট আন্টি বা আংকেল তখন কণ্ঠের ফুলঝুরি দেখে কে? “জ্বী আংকেল/আন্টি আমরা ভাল আছি। আপনার শরীর কেমন?...জ্বী দোয়া করবেন।” সেই সাথে নম্রতা ও ভদ্রতার পরকাষ্ঠা প্রদর্শনের জন্য উপচে পড়া খুশি খুশি একটা ভাব। এই জাতীয় আরোপিত মিষ্টতা নানান সময়ে কাজে দেয়। দেখা গেল টেবিল ভরা পোলাও কোরমা রেজালা। অনেকখানি খাবার পরও যখন চোখের জুলজুলানি থামে না তখন দেবদূতের মত কেউ একজন হয়ত পাতে আরেকটু কিছু তুলে দেয়ার উদারতা দেখাল। এই উদারতাকে পেটুকের মত খালি হাতে নিয়ে নিতে হয়না। নাসিক্যধ্বনির প্রাবল্য এবং উভয়কূল রক্ষা হয় এমন নমনীয় জোরের সঙ্গে “আল্লাহ এত খাব কি করে? আর না।” বলতে হয় এবং অবশ্যই তা চামচটা বাটি থেকে প্লেট পর্যন্ত দূরত্বের অর্ধেকের বেশি পেরিয়ে আসার পর। আরেকটা যেটা আমি প্রায়ই করি সেটা হল আমার মনে খুশির দোলা দিয়ে হোস্টের হাতের চামচ যখন এগিয়ে আসছে তখন হঠাৎ করে কি কারণে যেন ঘুরে অন্যদিকে তাকাই, বেশিরভাগ সময় পায়ে কি যেন সমস্যা হয়। তারপর যখন ঠিক হয়ে বসি লক্ষ্য করি এই ফাঁকে প্লেট রিচার্জ হয়ে গেছে। আর তখন তো “উফ এত খাওয়া যায়?” সুলভ ভঙ্গী করাটা অনেকখানি জলভাত। এগুলো কোনটাই তেমন মুশকিল না। ঝামেলার কাজটা হল চকচকে কোন অফিসের স্মার্ট রিসেপশনিস্টকে ফেস করা। পারতেসি বলতেসি করতেসি বলা মুখে পারছি করছি বা বলছি বলা যে কেন নাভিশ্বাস তোলার মত এতটা প্রাণঘাতী হয়ে পড়ে ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। সুতরাং বুঝতেসি না-কে বোঝা যাচ্ছে না-তে এবং করতেসি-কে হচ্ছে- তে কনভার্ট কর, এটা অনেকটা আরামদায়ক। একই অবস্থা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের চাল্লু ওয়েটার আর সেলসম্যানদের সামনেও। হাই তুলে “মামা কত হইসে” বললে মানইজ্জতের হালুয়া। বরং মুখ টানটান রেখে “বিল” আর “প্রাইস” জানতে চাইতে হয় “এক্সকিউজ মি” সংযোজনপূর্বক। তখন মনে হয় সবাই আমার দিকে চেয়ে বেকুব ভেবে মনে মনে হাসছে। কেমন আচরণ করলে আমরা “পশ” হব তা আমাদের ইংরেজি আদবকেতা দিয়ে মাপজোখ করা কর্তব্য। কাঁটাচামচ ধরা হাতটা পর্যাপ্ত কোণ করে ঘুরলো কিনা, কোকের গ্লাসে চুমুক দিতে শব্দ হয়ে গেল কিনা, সরি থ্যাংকস আর ইট’স ওকে জায়গামত বলা হল কিনা এসব নিয়ে তটস্থ থাকা লাগে আমার মত ভেতো বাঙালিদের। ইংরেজি প্রশ্নের সামনে পড়লে বুকের মধ্যে দ্রিম দ্রিম শব্দ হয় আর টেন্স এন্ড গ্রামার মিলিয়ে ঠিকঠাক জবাব দিয়ে বসতে পারলে যে কি একটা হনু হনু ভাব হয় কি বলব।

আর এসিসূচক সমস্যা তো আছেই। এটার রিমোট কন্ট্রোল কি করে কাজ করে আমি কোনদিনই তা বুঝে উঠতে পারি না। এসি বাড়ানো বা কমানো বলে কিছু আছে কিনা এবং থাকলে তাপের কোন পরিবর্তনটাকে বাড়ানো আর কোনটাকে কমানো বলে তাও জানিনা। ফলে কেউ যদি ঠাণ্ডা লাগছে বা গরম লাগছে বলে টেম্পারেচার বদল করার হুকুম দেয় তখন আমি যতই সহমত হই না কেন বলে ফেলি, নাহ এভাবেই থাকুক। কারো গাড়িতে উঠতে হলে দেখা যায় দরজা হেঁচড়াহেঁচড়ি করছি খুলতে পারছি না। সুতরাং একটু দেরিতে সামনে আসাই ভাল যখন অলরেডি কেউ দরজা খুলে ফেলেছে। এটা আবার বন্ধ করাটাও আরেক যন্ত্রণা। ধুড়ুম শব্দ করে লাগাতে হয় নাহয় ফাঁক রয়ে যায়। উঁচু হিল পরে হাঁটতে পারি না, পেঁচিয়ে পড়ে যাবার যোগাড় হয়। ঘেমে নেয়ে গেলে ব্যাগ ঘেঁটে টিস্যু টাইপের কিছু খুঁজে পাই না। হুট করে ছাতা খুলতে হলে কোথায় যেন আটকে যায়। বোতলের মুখে পানি খেতে গেলে সামনে কেউ থাকলে প্রায়ই ছলকে পড়ে। সিঁড়িতে বা রাস্তায় দুই পায়ের মধ্যে কমপক্ষে একবার ঠোকাঠুকি আমার লাগবেই।

ছেলেদের সামনে তো বটেই, মেয়েদের সামনেও কতই না অপদস্ত লাগে। কবে যে এসব "ক্ষ্যাত" উপসর্গগুলো দূর করতে পারব!

4 comments:

blue-spark said...

Apni to purai khet :D

Prothom step ta nie felchen; kon kon jaigia khet eita bujhe felchen. So, apanr smart hote deri nai. Just try koren, keu khet bolleo dome jaben na. abar try diben. Inshallah hobe :)

শুকতারা said...

হাহাহা। কার সাহস আছে ক্ষ্যাত বলার? তলে তলে বেশিরভাগই তো এই টাইপ। ট্যালেন্ট হান্ট শো গুলোতে ট্রাই দিয়ে দেখতে পারি। 'গ্রুমিং' এর মাধ্যমে একদম সাইজ করে দিবে। ;-)

thanks for reading.

shawon said...

lolz....ei lekha ta pore onek moja pailam......sobari hoyto ei obostha....lokdekhano eisob smartness holo ke koto sokto van korte pare.... :D

শুকতারা said...

হাহাহা ঠিকই বলেছ।