সন্ধ্যায় আমার বন্ধু লিটল ম্যাগ থেকে তার পড়া একটা গল্প সংক্ষেপে শোনালো। শুনতে ভাল লেগেছে, পড়তে হয়ত আরো ভাল লাগবে। বাসায় ফিরে মনে পড়ল সেকেন্ড ইয়ারে পড়া “টেস অব দ্য ডার্বারভিল” এর কথা। অতীত ঝেড়ে নতুন জীবন শুরু করতে যাওয়া টেস তার অতীতের অনাকাঙ্খিত একটা ঘটনা নিয়ে খুব শঙ্কিত। নতুন করে যার সঙ্গে তার ভালবাসার সম্পর্ক হয় সে এই ব্যাপারটা জানলে কিভাবে নিবে এটা ভেবে টেস সবসময় মানসিক কষ্টে ভুগত। এবং বিয়ের রাতেই স্বামী এঞ্জেলকে সে জানিয়ে দেয় কেমন করে সে কুমারীত্ব হারায় আর পরবর্তীতে সেই সন্তানকেও হারায়। এর আগে এঞ্জেলও স্ত্রীর কাছে স্বীকার করে লন্ডনে থাকাকালে এক মহিলার সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা। এঞ্জেলের ব্যাপারটা টেস একবাক্যে হজম করে নেয়, হয়তবা নিজেরও কিছু বলার ছিল বলে। কিন্তু টেসের অতীত জানার পর এঞ্জেল কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। সেই মুহূর্তেই সে ত্যাগ করে টেসকে। টেসের জীবনের যন্ত্রণাদায়ক অধ্যায় আরম্ভ হয়। অনেকদিন পর এঞ্জেল তার ভুল বুঝতে পারে, টেসের কাছে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু সহায়সম্বলহীন টেস তখন আবার ফাঁদবন্দী মূষিক। ভুগতে ভুগতে শেষ পর্যন্ত টেসের মৃত্যু ঘটে একদিন। পটভূমি উনিশ শতকের ইংল্যান্ড। আর আমরা পড়েছি একবিংশ শতাব্দীতে। আমাদের প্রাথমিক মন্তব্য ছিল টেস একটা স্টুপিড, কারণ এঞ্জেল তাকে ছেড়ে যাবার পরও সে ভালবাসা নিয়ে এঞ্জেলের পথ চেয়ে বসে থেকেছে। আর এঞ্জেল একটা অসচ্চরিত্র লোক, কারণ যেই টেসকে পাবার জন্য সে পরিবারের বাধাও উপেক্ষা করেনি সেই টেস আসলে তার কাছে পুরোই শরীরসর্বস্ব। আমাদের আপত্তি ছিল মেনে যদি নিল তো দুইজনই মেনে নিল না কেন আর যদি কঠিন প্রতিক্রিয়া দেখাতে হল তো উভয়েই দেখাল না কেন।
আমরা এখনো এভাবে কথা বলি, রুমার হাজব্যান্ড উদারমনস্ক, রুমার পুরনো সম্পর্ক নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলে না। ঝুমার স্বামী খুব ভাল মানুষ, সে চায় ঝুমা ঘরে বসে না থেকে কিছু একটা করুক। কোন ছেলে যখন তার স্ত্রীকে শিল্পকাজে উৎসাহ দেয়, তার সুখদুঃখ সত্যিকারভাবে অনুভব করে, যখন সে তার স্ত্রীর প্রতি বন্ধুসুলভ হয়, আমরা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হই। বলি, অমুক আসলেই একজন চমৎকার লোক। একই কাজটা যখন মেয়েটা করে, একে কি আমরা উল্লেখযোগ্য কিছু মনে করি? কর্ত্রী কর্তার টাই ঘড়ি মোজার হদিস রাখবেন আর সারাদিন অফিস করেও কর্ত্রীকে এক হাতেই হেঁসেল ঠেলতে হবে। কেউ যদি বউয়ের সাথে কাজে হাত লাগায় আমরা মুগ্ধ হয়ে তার বাস্তববুদ্ধির তারিফ করি। ছেলেদের স্বভাব কি এতই মন্দ যে তাদের উচিত আচরণটাও কমপ্লিমেন্ট দেয়ার মত বিষয় হয়ে ওঠে? আমাদের দেখা পরিবারগুলোতে বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত কি আসলে দুইজনের মিলিত আলোচনার ফসল হয়? একথা সত্যি যে আমরা টেসের সময় থেকে অনেক এগিয়ে এসেছি। তবুও আপাত চোখে যত উন্নয়ন দেখা যায় সেটাকে প্রকৃত করার জন্য রক্তে গেঁড়ে বসা কমবেশি গোঁড়ামিকে অনেক জোরে ধাক্কা দেয়ার প্রয়োজনটা এখনো দূর হয়ে যায়নি।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
10 comments:
blog er new color ta to besh romantic...
blogger er mone romance jhoira portese..:D
gud news
প্রকৃতিগত ভাবে ছেলে আর মেয়েদের যেমন আলাদা করা হয়েছে,তেমনি তাদের কিছু দ্বায়িত্বও আলাদা আছে...
যেমন সন্তান গর্ভে ধারন আর মার্তৃত্বের ছায়ায় তাকে বড় করা...এই দ্বায়িত্বটা যদি এখন ছেলেকে দেয়া হয়,সে কি তা নিতে পারবে?
চাকরিতে maternal leave আছে..
কেউ কি শুনছে paternal leave এর কথা?
নারী আর পুরুষ সহযোগী..প্রতিদ্বন্দী নয়..তুমি এইটা করলে আমিও এইটা করবো..এইটা কি কোনো যুক্তি হয়?
নারী আর পুরুষ-দুজনকে দিয়েই সংসারের সুচনা...
উভয়েরই কিছু distinct দ্বায়িত্ব আছে..
আর কিছু আছে shared...
যেটা যেমন সেটা সেই অনুযায়ী করলেই হয়ত সংসারটা সুখের হয়..
জানিনা কোনটা কতটুকু সঠিক..যা বুঝি তাই বল্লাম..
সংসার এমন হওয়া উচিত যেখানে একজনের দায়িত্বগুলোর প্রতি অন্যজনেরও সহযোগী দৃষ্টি থাকবে। সন্তানধারণ কে করবে তা নির্ধারণ করা আমাদের আয়ত্বের বাইরে। কিন্তু চাপ অনুভব হলেও ঘরে "মেয়েদের" কাজ মেয়েদেরকেই করতে হবে এটা সমাজের দীর্ঘকালীন আচারের ফলে শিকড় গজিয়ে বসা tradition. আমি বলতে চাইনি তুমি এটা করলে আমিও এটা করব-এমনটা ভাবা উচিত, পরিবার প্রতিযোগিতার মাঠ না। বরং আমি তোমার পাশে আছি এই বোধটাই দরকারী। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
"পরিবার প্রতিযোগিতার মাঠ না। বরং আমি তোমার পাশে আছি এই বোধটাই দরকারী।" -এই অংশটুকু আমার খুব ভাল লেগেছে।আমি নিজেও তাই বিশ্বাস করি।
নারীদের কাজ-এই শব্দটা আসলে কি বোঝায়? যুগ যুগ ধরে আসলে যা হয়ে আসছে..সংসারটা নারী আগলে রেখেছে..আর বাইরটুকু পুরুষ সামলেছে। একে আমি এইভাবে বলতে চাই-যে যে কাজটা ভালভাবে করতে পেরেছে..সে সেটাই করেছে।সৃষ্টিকর্তা নারীকে কোমল আর মায়াবতি করে বানিয়েছে..আর পুরুষকে শক্ত ও কঠোর(তুলনামুলক এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে)। তাই হয়ত তারা দ্বায়িত্বগুলো এইভাবে পালন করে এসেছে...তরে এর মানে এই নয়..ওইটা নারীর কাজ..সেই করবে আর ওইটা পুরুষের..সেটা সেই করবে..
আমি আসলে তথাকথিত নারীবাদি হতে রাজি নই।
আরেকটা কথা বলে নেই...আমি আসলে মনে করি..ভুল আর শুদ্ধের সংজ্ঞা আপেক্ষিক।এক যুগে যেটা ভুল সেটা হয়ত আরেক যুগে শুদ্ধ।কিছু জিনিস হয়ত সবযুগের জন্যই সঠিক।..
ব্লগারকে সুন্দর বিষয়টা অবতরনার জন্য ধন্যবাদ...আমি খুব বাজে উপস্থাপক...যা বলতে চাই তা ঠিকভাবে কখনোই উপস্থাপন করতে পারিনা।
বলতে চাই সংসার যখন দুইজনের, তাহলে তা একজন আগলে রাখতে পারেনা, এটা একটা মিলিত প্রয়াস। আর আমি ব্যাক্তিগতভাবে নারীবাদ শব্দটা সমর্থন করিনা। হতে পারে আমি মূল বক্তব্যটা সফলভাবে বলতে পারিনি। তা হল, একজনের অনুভূতিকে অন্যজনের সম্মান জানানো এবং একে অন্যের ভার লাঘবের চেষ্টা করাটা স্বাভাবিক phenomenon হওয়া উচিত। এটা আলাদাভাবে চোখে পড়ার পর্যায়ে আর কতকাল থাকবে!
thnx..sesh montobbe ami ekmot...
ar ami ashole songsar bojhate chaini...bolte cheyesi..
grihostali-r kajgulo meyera agle rekhese...
songsar to dujoner..so eita dujonkei aglate hobe..:D
(N.B.: ekhono bia shadi kori nai...bohut nitikotha martasi..LOL)
ei je bhodro lok , bodro mohila ra...dui jonei to khub pok pok kortesen...biey na korei eo pok pok..biyer por ei 'pok pok' gulo meney cholen dekhboni....ei shob pok pok diey shongshar hobey na....shongshar jotil ekta jinish...
@blogger....this conversation can be continued till the end of life...you just cannot finish it with short paragraph....
in short, what i believe, is to try your level best to 'understand' each other in husband-wife relationship and 'respect' each other. Other things will automatically sorted out as time passes by.
one thing to add....its better not to use the 'should' word and also its always better to the keep the expectation level in upper-minimum limit in shongshar life.
অনেক কিছু শিখলাম। deleted comment টা পড়তে ইচ্ছে করছে। carry on guys.
Post a Comment