Wednesday, February 6, 2008

আমার কলেজজীবন

আমি বলে থাকি আমার কাছে সবচেয়ে কম পছন্দের হল কলেজ লাইফ, অবশ্য যদি স্কুল বা ভার্সিটির সঙ্গে তুলনা করতে যাই। এটা মূলত পড়াশোনার কষ্টের জন্য। অল্প সময়ের মধ্যে কঠিন অনেক কিছু আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা করতে হয়েছিল এবং আমি তার বেশিরভাগই মাথায় রাখতে পারতাম না। তাছাড়া কলেজে যাওয়া আসাটা মোটামুটি বছর দুয়েকের মত হওয়ায় চটপট করে শেষও হয়ে গেছে। কাছের বন্ধুদের মধ্যে আমার সঙ্গে একই সেকশানে পড়েছিল মাত্র একজন। মনে আছে প্রথম যেদিন ক্লাস ভাগাভাগি করা হল আর আমি দেখলাম আমি আর বীথি একই সেকশানে, বিশাল একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম। মনে হচ্ছিল এযাত্রা যেন জীবন ফিরে পেলাম। স্কুললাগোয়া কলেজ হওয়ায় ওই স্কুলের মেয়েরাই ছিল সংখ্যায় বেশি, তাছাড়া অন্যেরা একেকজন একেকখান থেকে আসা। আরও বড় কথা হল আমি বন্ধুত্ব করতে একেবারেই পটু না। কিছু কিছু মেয়েকে দেখে তখন মনে মনে বলতাম, তোমরা এখানে স্কুলে পড়েছিলে বলে এত ভাব ধরার কি আছে, আমরা বাইরে থেকে এসেছি আরো বেশি মার্কস পেয়ে, তোমাদের মত কোটা পদ্ধতিতে না। ধীরে ধীরে আমার আর বীথির বেশ কয়েকজন দারুণ বন্ধু হয়ে যায়। সবাইই অন্যান্য স্কুলের। আমরা খুব মজা করতাম। হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যেত। ক্লাসে আমাদেরকে বসতে হত ‘রোটেশান’ করে। অর্থাৎ আজকে যেই বেঞ্চে বসব পরের দিন তার পেছনের বেঞ্চে। এভাবে করে যেদিন ফার্স্ট বেঞ্চ চলে আসত সেদিন একটু টেনশান কাজ করত। টিফিন পিরিয়ড ছিল মজার। কলেজ কম্পাউন্ডে একটা ক্যান্টিন ছিল যদিও তার খাবার আমার তেমন পছন্দের ছিল না। তবে রোববারের তেহারি টাইপ জিনিসটা খেতে ভাল লাগত। ক্যান্টিনে সবচেয়ে বেশি চলত আচার আর দুই টাকার আলুর চিপস। এখানেই প্রথম ক্লাস ফাঁকি দেয়ার অভিজ্ঞতা হয় আমার। মাঠে গিয়ে বসে থাকলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা খুব কম ছিল। বৃহস্পতিবারের Assembly টাও মন্দ না। আমাদের কলেজ মোটামুটি উৎসবমুখর থাকত প্রায় সময়েই। অডিটোরিয়াম খোলা, কমনরুমে হৈ চৈ, করিডরে হাঁটাহাটি, মাঠে বসে গল্প এসব চলত সারাক্ষণই। একবার পয়লা বৈশাখের পরপর অডিটোরিয়ামে এক বাউলের গান হল। বাউলের নাম ছিল আলম সরকার। আমরা সবাই খুব লাফালাফি করে গান শুনলাম। আরো কয়েকবার কি কি যেন হল আমরা হেভি সাজগোজ করে গিয়েছিলাম। একবার যখন ম্যাগাজিন বের করার কথা, আমি দিলাম একটা কবিতা আর একটা গল্প। সেই কবিতার আসল মাজেজা ছিল শেষ দুই লাইনে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমার সাধের কবিতাকে এডিট করে আসল জায়গাটাই ছেঁটে ফেলা হল। আর করুণরসে সিক্ত গল্পটা ছিল একজন মৃত্যুপথযাত্রী প্রবাসীকে নিয়ে যে তার বন্ধুর কাছে চিঠি লিখছে। চিঠিটাই ছিল গল্পটা। এটা তো আলোর মুখ দেখল না। সবচেয়ে আনন্দের হল rag day. একই সঙ্গে কষ্টেরও। অনেক নাচগান হল, কেক কাটা হল, খাওয়াদাওয়া হল। সবাই একটা করে শার্ট পেলাম। নিয়ম হল বন্ধুরা শার্টের গায়ে কিছু একটা লিখে দিবে। এই ব্যাপারটাই আমার সবচেয়ে পছন্দ হয়েছিল। আমরা প্রবল উৎসাহে একে অন্যের শার্টে লিখলাম এটা সেটা। সেদিন দাপাদাপি করে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল। অনেক মন খারাপ লেগেছিল শেষ সময়ে। এখানে আর ক্লাস করা হবে না, একসঙ্গে গল্প করা হবে না। আমি কলেজজীবনকে সবসময় তালিকার পেছন দিকে ফেলে রাখি। কখনো ভাল করে ভেবে দেখাও হয় না। আজকে একটা ফোন পেয়ে সাঁই করে মনটা সেই সময়ে ফিরে গেল। আমি মানতে বাধ্য হলাম, এমন অল্প সময়ের মধ্যে এমন করে বন্ধু হয়ে গিয়ে এত আনন্দ করাটা কেবল কলেজেই সম্ভব হয়েছিল। অথচ সেই বন্ধুদের সাথেই আমার সরাসরি যোগাযোগ কম। আমার কলেজের ইউনিফর্ম আলমারিতে এখনো আছে। আমাদের ব্যাজটা ছিল সুঁই সুতায় তোলা। আমার ড্রয়ারে সেটাও আছে। আর শার্টটা আছে প্যাকেটে মোড়ানো। যত্নে তোলা স্মৃতি।

2 comments:

Shahidul Mahfuz said...

its like you had a traditional college life....

মুক্তপাখি said...

আমি একেবারেই লিখতে পারিনা...না হয় আমার কলেজ জীবনের ২ বছরের আনন্দময় সময়গুলোকে নিয়ে রীতিমতো বিশাল বিশাল গ্রন্থ লিখে ফেলা যেত....lol

I really miss those dayz...(sigh)