ইংরেজরা নাকি আলাপ শুরু করে আবহাওয়ার প্রসঙ্গ দিয়ে। আমার অবস্থাও হচ্ছে তাই। কোন কথা না পেলে ঠাণ্ডার কথা বলে কিছু একটা শুরু করি, তারপর দেখি মেগাসিরিয়ালের কাহিনী টানতে টানতে রচনা নদী থেকে গরু, গরু থেকে লাঙল, লাঙল থেকে ধানে চলে যায়। অথচ যেখানে প্রয়োজন সেখানে এমনটা ঘটে না। যেমন ধরা যাক অতিথিদের সঙ্গে। দেখা গেল খুব বেশি ঘনিষ্ঠ না এমন মেহমান এসেছে বাসায় কিন্তু বাবা মা এই মুহূর্তে বাইরে। আমার তখন বড়ই আমতা আমতা অবস্থা। বাক্যবিনিময় করতে হবে কিন্তু কুশলাদি জিজ্ঞেসের পর তেমন কোন কথা খুঁজে পাই না আমি। কারো পাঁচটা ছেলেমেয়ে থাকলে প্রত্যেকের নাম ধরে ধরে কেমন আছে তা তো আর জিজ্ঞেস করা যায় না। সৌভাগ্যক্রমে জৈষ্ঠ্যের খররৌদ্র অথবা মাঘের শৈত্যপ্রবাহ বজায় থাকলে তাঁরা নিজেরাই প্রসঙ্গ টেনে আনেন। এটা নিয়ে মোটামুটি কিছুক্ষণ কাটিয়ে দিতে পারি। তারপর আমি এখন কোন ইয়ারে, ফাইনাল কবে এটা নিয়েও কিছুটা কথাবার্তা বলা যায়। সেক্ষেত্রে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিয়ে প্রায়ই কিছু অম্লবাক্য হজম করা লাগে। কোন কোন অতিথি দেশিবাসী আর কেউ কেউ বাবামায়ের অফিসসূত্রে পরিচিত। মায়াকাড়া ছোটবাচ্চা নিয়ে আসেন কেউ। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় এক দুপুরে একজন অমায়িক ধরণের আর্মির লোক এসেছিলেন আমার ফুপাতো ভাইয়ের সঙ্গে। বাসায় তখন মানুষ বলতে একমাত্র আমি। তাকে কোন দিন না দেখলেও তার সঙ্গে কথা বলতে বেশ ভাল লেগেছিল। এছাড়াও অনেক সময়ই হঠাৎ চলে আসা দূরসম্পর্কীয় অতিথিদের বেশ ভাল লেগে যায়। আমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ি শুনলে কারো চোখ কপালে উঠে যায় কারণ আমার সঙ্গে তার দেখা হবার পর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। সময় যে খুব দ্রুত চলে যায় একথা তার আবার নতুন করে মনে পড়ে যায়। তখন আমার একটু খারাপই লাগে। আসলেই তো সময় কেমন চোখের পলকে হারিয়ে যায়।
এমন কেউ কেউ আছেন যারা দুইটা কথা একটু একটু পরপর মনে করিয়ে দেন; একটা হল ছেলেমেয়ের পড়াশোনার চাপে তার নাওয়া খাওয়া বন্ধ, দম আটকে যাচ্ছে আর আরেকটা কথা হল আমার মা বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন কারণ তার মেয়ে ভার্সিটিতে পড়ে, তাই তাকে কোন যন্ত্রণা পোহাতে হয় না। সেসময় আমার আফসোসই হয় কেন যে তাদের ছেলেমেয়েরা আমার মত কাউকে কোনরকম কষ্ট না দিয়ে জন্মের পরপরই এক লাফে অনার্সে ভর্তি হয়ে গেল না। সবচেয়ে মারাত্মক হল তিন চার বছরের ত্যাঁদড় টাইপ বাচ্চাকাচ্চা। এরা এটা সেটা ফেলে ছড়িয়ে তুলকালাম করে। আমি যেহেতু ‘বড়’ তাই ধরে আছাড় দেয়া যায় না, বরং “না না কি হয়েছে, ছোটমানুষ খেলুক” এরকম একটা মুখ করে রাখতে হয়। ভাঙার জন্য তাদের হাতে সবসময় আমার দরকারি জিনিসটাই পড়ে নাকি তারা ভেঙে ফেলার পর সেই জিনিসটা আমার খুব দরকার হয়ে পড়ে তা বলতে পারব না। এই রকমের শিশুপ্রতিভা আমাদের বাসায় কালেভদ্রে আসে এটাই যা সুখের কথা। সামনে কোন পরীক্ষা না থাকলে অবশ্য সন্ধ্যার দিকে ইন্টারেস্টিং কোন মেহমান আসাটা ভাল। তাহলে এই সেই করতে করতে পড়ার সময়টা কাটিয়ে দেয়া যায়। আমাদের এই সামাজিক আচারটা মন্দ না, হাতে করে এটা সেটা নিয়ে যাওয়া। অনেকে মিষ্টি নিয়ে আসেন, খাওয়ার মানুষ পাওয়া যায় না। তবে সমঝদার কেউ বুদ্ধি খাটিয়ে আইসক্রিম নিয়ে আসলে তার বুদ্ধির মর্যাদা আমি দিয়ে থাকি। এখানে আমার একটা দুঃখ আছে, আগের মত এখন আর কেউ আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসে না। আর আরেকটা দুঃখের কথা হল যারা হাতে কিছু নিয়ে বেড়াতে আসেন আমাদের বাসায় তারা আমার এই লেখাটা পড়বেন না।
কত কিছুই বললাম। আমি নিজেও তো মাঝে মাঝে অতিথি হয়ে যাই। আমি কেমন কে জানে। কোথাও যাওয়াটা আমার কাছে ঝক্কি মনে হলেও নিজের বাসায় কেউ আসলে ভালই লাগে। অনেকদিন হল দুই একদিন থেকে যাবার মত করে কেউ আসে না। রাতে খাবার টেবিলে পারিবারিক বা গ্রামের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা শোনাটা বেশ মজার। আমি বুড়ো হতে হতে হয়ত কেউ আর কারো বাড়ি বেড়াতেও যাবে না। যোগাযোগ যত সহজ হয় চলাফেরা বোধহয় ততই কঠিন হয়ে পড়ে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
4 comments:
mehman ashle valo lage...eita to khub valo kotha..
amito jete-i chassi...chocklet-o nie ashbo....LOL
ami abar SAFARI posondo kori..cholbeto...:)
hahaha..interesting one... moja laglo besh...you can also add one thing..next time when people come to your house with sweets, you can tell them your choices....as they wont read this blog....:o)
@shamim, only SAFARI??!! shame shame...
kal mehoman echesilo...and shatey bador (picchi bacchara) gulow silo...3 ta jinish vengey diey gelo..tar moddhey ekta silo ta kineysilam 2 ghonta agey....polapain emon tedor hoi keno...
SAFARI ছাড়া আর কি নেয়া যায় বুঝতেছিনা...গুরু যদি পথ দেখায়,কারো ত আপত্তি থাকতে পারেনা...
লেখিকা ত কমেন্টের কোনো Reply দিচ্ছেনা...
Does writer only write?...lol
Post a Comment