Sunday, May 4, 2008

তাপকাহন

বেশ কয়েকদিন ধরে ঘরের বাইরে পা ফেলতে মোটেই ভাল লাগে না। যতটা না গরম লাগার কষ্টে তার চেয়ে বেশি পরনের পোশাকটার উপর মায়ার জন্য। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যাক। গরমকাল হল সুতি কাপড়ের মৌসুম। জীর্ণ অথবা অর্ধজীর্ণ একটা পোশাক প্রথমে পানিতে ভেজাও। তাতে সাবান মেখে খানিকক্ষণের জন্য ফেলে রাখ। তারপর ভালমত ধুয়ে ফেল এবং পানি নিংড়ে নাও। এবার মাড় রেডি কর। তাতে ধোয়া কাপড়খানা চুবিয়ে উঠাও। আরেক দফা নিংড়াও। এবার বেশ খানিকটা জায়গা দখল করে শুকাতে দাও। একসময় বারান্দা থেকে ঘরে ফিরিয়ে আনো। ইস্ত্রি গরম কর (সেটাও আবার ইলেকট্রিসিটি থাকার উপর এবং ইলেকট্রিসিটির পিক আওয়ারের উপর নির্ভরশীল। আজ না হলে কাল), এবার ধোয়া পোশাকখানায় পানির ছিটা দিয়ে দুমড়াও মোচড়াও। তারপর আয়রন কর অর্থাৎ সেঁকে চনমনে কর। সবশেষে এই তরতাজা কাপড়টা ভাঁজ করে তাকে গুছিয়ে রাখ। এই সবগুলো ধাপ সফলতার সাথে সম্পন্ন করার পর একদিন কোথাও যাবার দরকার হলে সেই মৃদু সুবাস ছড়ানো পাটভাঙা পোশাকটা পরলাম। ফিটফাট হয়ে বাইরে বের হলাম। খানিকটা পথ পাড়ি দিতে না দিতেই লোমকূপ থেকে দরদর করে ফোয়ারার মত ঘাম ছুটতে শুরু করল। সারা গা ভিজে একসা তো হলই, স্নেহের জামাও জেবড়ে গেল ঘামে। বাড়ি ফিরে মিয়ানো জিনিসটাকে দড়ির উপর লটকে দিতে দিতে হাপিত্যেস না করে উপায় আছে? নিত্যকার অফিসযাত্রীদের ভোগান্তির কথা ভাবলে কষ্ট হয়। প্রতিদিন সাত সকালে উঠে তাদেরকে সুদূরের পথ ধরতে হয়। সকাল আটটার পর লোকাল বাসের ছবিসুরতের খবর কে না জানে। সাধ্যসাধনার পর পা রাখার একটা জায়গা করে ছাতার বাঁটের মত ঝুলতে ঝুলতে সূর্যমামার উত্তাপে কোথায় হারায় ওডিকোলনের ভুরভুরে সুবাস, টাইয়ের জমিনে ইন করে পরা ফর্মাল শার্টের বাহার, রঙ মিলিয়ে তৈরি করা সাধের সালোয়ার কামিজের পরিপাট্য। আর সাড়ে তিনহাত শরীরে বারো হাত শাড়ি প্যাঁচানো মেয়েদের কথা নাহয় ছেড়েই দিলাম। স্কুলকলেজ নাহয় এক আধটু কামাই দেয়া যায়। অফিসে কি এত আয়েশ চলে? রোজকার হাজিরা রোজই টুকে রাখা চাই। সেই তুলনায় আমি তো রাজকন্যার হালে আছি। আর যাদের ঘরে ফ্যান এসি নেই, ইচ্ছে হলেই জিরিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা পানীয়ে চুমুক দিতে পারে না তাদের কথা উল্লেখ করার আদিখ্যেতা দেখানো সাজে না। আমি কেবল নিজের কথা বললাম। কাল রাতে একটা ঝড় বয়ে গেল। ওই মুহূর্তের জন্য ছিল অসাধারণ। কিন্তু আজকে সকাল হতেই সেই একই খেলা। কেবল একটু ছায়া ছায়া। তাতে কি। ফুটন্ত পানি ভরা হাঁড়ির মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেও যেমন ঠিকই ভলকে ভলকে ভাপ বের হতে থাকে আজকে মাটিরও সেই অবস্থা। শুনেছি মতিঝিলের আবহাওয়া নাকি কয়েক কাঠি বেশি উষ্ণ। আর মতিঝিলের নিঃশ্বাস এসে লাগে আমাদের গায়ে। একটা নিষ্পাপ কালবৈশাখির অপেক্ষায় আছি। গর্জন করবে কিন্তু আঘাত করবে না। কেবল জরা আর তাপ উড়িয়ে নিয়ে যাবে, কারো ঘরের চাল বা বয়সী বৃক্ষের শেকড় না।

1 comment:

সবুজ হক said...

তোমার লেখাটা দারুন সুন্দর হয়েছে ...... যদি তোমার কাপড়ের উধারনটা নিই আর আমার দৃষ্টি ভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করি ... তবে বলবো এই বিশহ ব্রম্নান্ডে সব সৃষ্টির শেষের কথা ধবংস। একটু ভেবে দেখ আমাদের সব সৃষ্টিই নশবর আর এই ভাঙ্গা গড়ার অন্তহীন চক্রই আমাদের সভ্যতার উন্নতি অগ্রগতির চালিকা শক্তি ... নশশরতাই আমাদের উদ্দিপ্ত করে সৃষ্টিশীল হতে ...ভাবায় আগামীকে জয় করতে জয় করতে নশশরতাকে ...
(যদিও তুমি হয়তো এ আঙ্গিকে লিখোনি কিন্তু আমার মনে হল I should write জবরদস্তির মত হাহাহা...হাহাহা ......)