Monday, April 21, 2008

ভাইভা...

অনার্সজীবনের শেষ ভাইভাটা বাকি ছিল। আজকে সেটাও দিয়ে আসলাম। ভাইভা, বড়ই আতংকের একটা বিষয়। গত কয়েক বছরের মার্কামারা ভেন্যু বাদ দিয়ে এবার অন্য একটা রুমে বসতে হয়েছে। একবার মনে হয় এটা শেষ ভাইভা তাই খুব কঠিন হবে। তারপরে মনে হয় ভেন্যু বদলে গেছে, কঠিন হবে। টিচাররা মাঝে খাবারের ব্রেক নিলেন, তাদের নতুন উদ্যম এসেছে, কঠিন হবে। আজকে খুব গরম তাই প্রশ্ন খুবই কঠিন হবে। ইত্যাদি নানা শঙ্কা। রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে একেকজন ভেতর থেকে বের হয়ে আসে, সঙ্গে সঙ্গে বাকিরা বাঘের মত, অথবা বলা যায় মাইক্রোফোনওয়ালা সাংবাদিকের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে তার অভিজ্ঞতার ফিরিস্তি নেয়ার জন্য। সেই প্রশ্নের ধরণ শুনে দিশেহারা লাগতে থাকে। তারপর যখন আমার সিরিয়াল বেশ কাছিয়ে এল, শুরু হল গলার নিচ থেকে তলপেট পর্যন্ত তোলপাড়। শেষ পর্যন্ত একসময় আমার ডাক আসল। আর আমি দেখলাম কি আমি বেশিরভাগ প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারলাম। স্যার বেশ গম্ভীর মুখ করে কঠিন কঠিন প্রশ্ন করেন বলে তাকেই আমাদের বেশি ভয়। আর কি যে সব প্রশ্ন! আর ম্যা’ম দু’জনের চোখেমুখে সবসময়েই “হুঁমম একদম ঠিক বলছ” ধরণের দ্যুতি খেলতে থাকে। আমরা যাই বলি না কেন তাদের দিকে দেখলে ভরসা হয়। স্যারের প্রলয়ঙ্কারী জিজ্ঞাসার কোপানলে পড়তে হয়নি বলে আমি বেশ নিরাপদে সেশন শেষ করতে পেরেছি।

লিখিত পরীক্ষা শুরু করার আগে একটা কমন ডায়লগ হল “আমি কিচ্ছু পারিনা।“ কিংবা বড় জোর অমুক আর তমুক ছাড়া কিচ্ছু পারিনা। তবে এই কথাটা আক্ষরিক অর্থে বলা হয়না। এর মানে হল “আমার অবস্থা সুবিধার না”। মজার ব্যাপার হল কেউ কেউ ভাব ধরার জন্য এটা মিথ্যা করে বলে। কেউ কেউ সত্যি করে বলে। আর যারা জানে না যে তাদের প্রিপারেশানটাই যথেষ্ট তারাও বলে। আমি হয়ত মোটামুটি শিখে টিখে গেলাম। কিন্তু যারা ভাল মার্কস পায় আর আসলেই ঠিকঠাকমত পড়াশোনা করে তারাই যখন কিছু বিজাতীয় টার্ম ব্যবহার করে বলে যে কি লিখবে তা নিয়ে তারা খুব টেনশনে আছে আমার তখন মনে হতে থাকে তাহলে আমি যেটাকে পারা মনে করছি তা আসলে “পারা” না? এই ভেবে ঢোঁক গিলতে থাকি। তবে পরীক্ষার মাসখানেক আগেও যারা honestly মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে হায়রে আমি এক লাইনের বেশি লিখতে পারব না, তারা full answer করে আসে, কেউ কেউ খাতা ভরে ফেলে এক্সট্রা কাগজ নেয়, ঝড়ের গতিতে লিখে আঙ্গুল ব্যথা করে ফেলে মোট কথা তারা কমপক্ষে মাঝারি ধরনের রেজাল্ট উৎপাদন করে ফেলে; আর সত্যি কথা হচ্ছে ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই জাতের মানুষের সংখ্যাই বেশি।


অনার্সে উঠার পর একটা বিষয় থেকে মুক্তি পেয়েছি। তা হল, রোল নাম্বার কত এই প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া। আজকে কি দিয়ে ভাত খেয়েছ, কে বেশি আদর করে আব্বু না আম্মু এই লেভেল পার করে একটু বড় হলেই বাচ্চারা যেসব প্রশ্ন শোনে তা হল রোল নাম্বার সংক্রান্ত। এক থেকে তিনের মধ্যে থাকলে তো খুবই ভাল। আর একুশ বাইশ হলে সুখের ব্যাপার না। তবে পেছনের সারির রোল নাম্বার যদি ভর্তির কারণে ঘটে থাকে তাহলে উত্তরের সঙ্গে সেই তথ্য জুড়ে দেয়াটাই ভাল। আগে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে বা রেজাল্টের রেশ থাকতে থাকতে গ্রামে যেতাম। বড়রা বিশেষ করে মামারা জানতে চাইতেন রেজাল্ট কি। বড়ই বিব্রতকর অবস্থা ছিল তখন। কারণ আমি সবসময় মাঝ বরাবর জায়গায় ঝুলে থেকেছি, সুতরাং মুখ কালো করে বলা যেত না যে এক নাম্বারের জন্য আমি ফার্স্ট হতে পারিনি। কলেজ ছাড়ার পর থেকে আর কেউ কোন কথা জিজ্ঞেস করে না। পরীক্ষার থাকে না ঠিকঠিকানা, রেজাল্ট দেয়ার থাকে না সময় অসময়। তবে এবার বিরাটভাবে ফেঁসে যেতে পারি। কারণ ফাইনালের খবর সবাই জেনে গেছে। সবাই বলতে সত্যিই সবাই। আত্মীয়জগত, প্রতিবেশীজগত, বাবা মায়ের পরিচিতজনের জগত থেকে শুরু করে সাইবারজগতের বন্ধুবান্ধবরাও। রেজাল্ট বের হলে গা ঢাকা দিতে হবে।

পরীক্ষাটা তাহলে শেষই হয়ে গেল!

3 comments:

মুকিত said...

where u will hide. just let me know that.

Shahidul Mahfuz said...

ঝড়ের গতিতে লিখে আঙ্গুল ব্যথা করে ফেলে মোট কথা তারা কমপক্ষে মাঝারি ধরনের রেজাল্ট উৎপাদন করে ফেলে; .... আসলে তাই। কিন্তু ঝরের গতিতে লিখার জন্যে কেউ পুরস্কার দিলও না কোনদিন

ভাইভা নিয়ে লিখা। শেষ কিন্তু অন্য কিছু দিয়ে হলো। শেষের পেরা দিয়ে আলাদা একটা গদ্য লিখলে আরও ভালো হতো।

ভাইভা আসলেই এরকম। গলা থেকে পেট পর্যন্ত তোলপাড় করে দেয়। হোক সেটা পড়াশুনার পরীক্ষা অথবা বাস্তব জীবনের পরীক্ষা। ফলাফল- সঠিক সময়ে সঠিক জিনিষ করা হয়ে উঠে না।

Unknown said...

ভাইভা দিয়ে শুরু করে আবার অন্য জায়গায় শেষ। ও,আচ্ছা, এই জন্যই বনে গিয়ে লুকিয়েছ? চঁাদের আলোতে তো তোমার হদিস বার করা যাবে। আমার স্কুল-কলেজে সর্বদা রোল নাম্বার ছিল ৫৭৩৫। তাই তোমাদের মত রোল নাম্বারের ঝামেলায় পড়তে হয়নি। এখন ভাল আছি।