অনার্সের শেষ পরীক্ষাটা দিয়ে যখন কলাভবন থেকে বের হলাম, অনুভূতিটা ঠিক কেমন ছিল এখন বুঝতে পারছি না। ওই মুহূর্তেও বুঝতে পারছিলাম না। একটুকু বলা যায় যে মুক্তির আনন্দ যতখানি ছিল এবং আছে তার চেয়ে বেশি হল অপ্রকাশিত দীর্ঘশ্বাস। সবাইকে এভাবে করে একসঙ্গে দেখা আর কখনোই হবে না। সান্ত্বনা খোঁজার জন্য ভেবে নিই, পরীক্ষা শেষ হল কোথায় ভাইভা তো রয়ে গেছে। অথবা রেজাল্টের তো এখনও ঢের সময় বাকি। কিংবা রেজাল্টের পর মাস্টার্সের ক্লাস তো করতে হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সত্যিকার অর্থে আমি বা আমরা এখন নো ম্যান’স ল্যান্ডে। মাস্টার্স বা এম বি এ যে যাই পড়ুক সেটা ভিন্ন একটা ব্যাপার। তাকে Mainstream পড়াশোনার মধ্যে ফেলা যায় না। কিছুদিন পর থেকে মনে হতে থাকবে আমি আসলে কি করি। কেউ জিজ্ঞেস করলে গাল ভরে বলার মত কিছুই পাব না। জীবনের অন্য সব ফাইনালের পর যেই দিগ্বিজয়ী ভাব হত সেটাকে হাতড়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, যাবে না। এই বোধটা যতটা বিদায়ের সাথে জড়িত তার চেয়ে কোন অংশে কম জড়িত না নতুন ধাপে পা রাখার তাড়নার সাথে। অনেক হল এবার কোন একটা কাজ খোঁজার চেষ্টা কর। সেশনজট বা চাকরির দুরূহ বাজার বলে কোথাও যদি কিছু না থাকত তাহলে এতদিনে তো আমার ফুলটাইম কাজ করার কথা। চেহারা আর বয়সের সার্টিফিকেটও একই কথা বলে। আর মুখের কথায় যেভাবে রাজা উজির মেরে সাফ করি তাতে বাস্তববুদ্ধি পুরোপুরি ফাঁকা বলেও মনে হবার কথা না। শুধু একটা ব্যাপারই ধ্রুব সত্য তা হল কেউ এক হাতে সহজ কাজ আর আরেক হাতে টাকার ব্যাগ নিয়ে আমার জন্য অধীর হয়ে বসে নেই। নিজের জায়গা খুঁজে নেয়া আর করে নেয়ার দায়িত্ব প্রত্যেকের নিজেরই। এভাবে চিন্তা করলে একটা শিহরণ লাগে। “এখনো তো বড় হইনি” বলার সব অজুহাত সত্যিই কি একসময় শেষ হয়?
এসব অলংকার পরানো কথা শুনলে আমার মত অবস্থার মানুষেরা ছাড়া অন্য যে কারো মনে হতে পারে তিনটা দিন পার হতে না হতেই আদিখ্যেতা, সত্যিকার মাঠে নামো তারপর দেখি কি কর। মা বাবার হোটেলে খেয়ে, গুছিয়ে দেয়া ঘরে ঘুমিয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কাজটা চাইলেই সবাই করতে পারে। অনেকটা নন্দদুলালের মত বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবা, কিছু একটা করতেই হবে। কতটুকু Practical যোগ্যতা যে আমার আছে জানি না। আমার করা কোন কিছু কারো পছন্দ হবে কিনা কে বলবে। আবার এও বিশ্বাস করি যে আমি মোটেও ফেলনা না। সবাই একসময় আমার মত ছিল । তারা যখন অনেককিছু পারে আমিও অবশ্যই পারি এবং পারব। চেষ্টা করলে কি না হয়। সাথে সাথে মনে হয়, ও চেষ্টা করতে হবে? চেষ্টা কেমন করে করে? আমাকেই করতে হবে? আব্বুকে বললে করে দিবে না? মনটা ভাসছে একটা limbo তে।
অনেকগুলো বই জমে আছে পড়ার বাকি। তা নাহয় এক এক করে পড়লাম। নতুন মুভিও নাহয় দেখলাম। কাজে লাগবে এমন কোন পড়াশোনা বা অন্য কিছুও নাহয় করলাম। তবু কেমন যেন লাগে। দুলকি চালে চলা বোধ হয় থামাতেই হবে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
4 comments:
"কেউ জিজ্ঞেস করলে গাল ভরে বলার মত কিছুই পাব না। জীবনের অন্য সব ফাইনালের পর যেই দিগ্বিজয়ী ভাব হত সেটাকে হাতড়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, যাবে না।....." besh bhalo boleso.
Masters level er degree ta Professional degree howa uchit. and ami money kori, eta howa uchit market er demand upor. :)
কর্মজীবনে সুস্বাগতম ... (অনার্স শেষ মানেই..)
অনার্স শেষ করার পর প্রথম প্রথম এই রকম অনুভুতি কাজ করে...তবে আমার মনে হয় আত্ববিশ্বাস থাকাটা জরুরী....
সবক্ষেত্রে সাফল্য কামনা করছি...
thanks to both of you.
masters কে আমিও professional level মনে করি। কিন্তু কেন যেন ডিপার্টমেন্টের 5th year কে নিজেদের কেউ বলে মনে হয়না। যখন 1st year এ পড়তাম তখন মনে হত 5th year মানুষরা একটু আলাদা। যত এর কাছে এগিয়েছি ততই নমনীয় হতে লাগল মন। নিজের সামনে আসছে বলেই হয়ত।
নিজের সময়টাও সামনে চলে আসছে, তাই চিন্তিত।।
Post a Comment