Saturday, February 20, 2010

দিন যায় দিন চলে যায়

আমাদের বাসাটাকে ছোট বলা যাবে না। কিন্তু এখানে মানুষ খুব কম। দুইটা ঘুমের ঘর, একটা মোটামুটি গোছের মেহমানের ঘর, বসার জন্য একটা ঘর আর বড়সড় একটা খাবার ঘর আছে আমাদের। এখানে বাস করি আমরা মাত্র দুইজন, আমি আর আব্বু। আম্মু দেড় বছর ধরে অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে, আরও কয়েক মাস সেখানে থাকতে হবে তাঁকে। একটা বাসাতে বাবা মা ভাই বোন সবাই থাকবে, গল্পসল্প হৈ চৈ খুনসুটি ঝগড়াঝাটি হবে, তবেই না বাসা বাসা লাগে। আমাদের তেমন না। আমাদের বাসা হল চুপটি বাসা। কোন কাজের লোকও থাকে না এখানে। আমরা দুইজন নিজের নিজের মত থাকি। তিন মানুষের একটা পরিবার সেটাও সবাই একসাথে থাকা হচ্ছে না। তার জন্য অবশ্য খুব খারাপ লাগে তা বলা যায় না। প্রথম যেদিন আম্মু আমাদেরকে রেখে গেলেন আমার এত খারাপ লেগেছিল! ভাবতাম দুই দুইটা বছর কি করে থাকব! কিছুতেই পারব না! এখন দেখি ঠিকই বেশিরভাগ সময়টা থাকতে পেরে ফেলেছি। মানুষের অভ্যাস কিসে না হয়! বাসায় আমরা একটু করে ভাত তরকারি রান্না করি শুধু আমাদের জন্য, সহজ রান্নাগুলো। হঠাৎ কেউ এসে পড়লে তার জন্য কিছুই থাকে না অনেক সময়। তারপর হাঁড়ি বাসন মাজা কিংবা ঘর সাফসুতরা করা সবই আমাদের নিজেদের করা লাগে। আমি মেয়ে বলে সব কাজ আমাকে করতে হয় এমন না। আব্বুও সবই করেন। সত্যি কথা বলতে কি আব্বুর রান্নাই বেশি ভাল। 'বিদেশ' এর মত বাসার সবার কাছে মানে দুইজনের কাছে দুইটা চাবি থাকে দরজার। একজন বাইরে থাকলে পরে সে নিজেই ঢুকতে পারে, কলিং বেল দিয়ে অন্যজনকে ডাকা লাগে না। দুই সপ্তাহ পরপর আম্মু বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা আসলে সেদিন আমাদের আনন্দ। আমি তাড়াতাড়ি করে কিছু কাজ শেষ করে ফেলি যেটা দুই সপ্তাহ আগেই করার কথা ছিল। আব্বু চিন্তায় পড়ে যান, দুপুরের খাবারটা নাহয় কোনমতে হয়েই গেল, রাতে তো ভাল কিছু করা দরকার। যদিও রাতে আলুভর্তা ডাল টাইপ কিছু হবে, পরিকল্পনা থেকে ঘুরে ফিরে এমনটাই বের হয়ে আসে। শুক্রবার দুপুরে আমাদের খাওয়াটা জমে ভাল। হয়ত পুঁই শাক আর ট্যাংরা মাছ, কিন্তু খেতে মজা অনেক বেশি। জানি না আম্মুর রান্না আমাদের চেয়ে ভাল বলে নাকি সবাই একসাথে খেতে বসা হয়েছে বলে। শনিবার এলে আর ভাল লাগে না। কারণ শনিবার রাতের ট্রেনে আম্মু আবার ফেরত। এভাবেই আমাদের দিন বেশ চলে যাচ্ছে।

Sunday, February 7, 2010

যা খুশি তাই ইচ্ছেমতন!

বলা কথাগুলো নাকি ইথার নামের একটা জিনিসের মধ্যে ভেসে থাকে। আমরা যখন যা বলেছি তা এখন উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইথারের মধ্যে, শুঁড়ের মত কিলবিল করে করে নাড়াচাড়া করছে এদিক থেকে সেদিকে। আমি আমার না বলা কথগুলো হাতড়ে বেড়াচ্ছি। কতকিছু বলতে বলতে চেয়েও বলা হয়নি জীবনে। খুব বড় কোন কথা কিংবা খুব সাধারণ কিছু। মা বাবা ভাই বোন বন্ধু কিংবা অন্য ব্যক্তিকে। কখনও সেই মানুষ হারিয়ে গেছে জীবন থেকে, কখনও জীবনই হারিয়ে গেছে মানুষটার কাছ থেকে। তাই সেই বাক্সবন্দী কথাগুলো ভাঁজ করে মনের পকেটেই রেখে দেয়া আছে। দুম করে আগপাছ না ভেবে বলতে গিয়ে কত কিছু হারিয়ে গেল। আবার বুঝে শুনে মুখকে সংযত করতে গিয়েও হয়তবা বঞ্চিত করে ফেলেছি নিজেকে বা অন্য কাউকে। কথা আর ভাবনা সব নিজ থেকেই চেপে চেপে তলানির মত জমে যায়। অবাক লাগে যখন ঘুমের মাঝে অবচেতন চিন্তাগুলো সগর্বে দাপিয়ে বেড়াতে আসে। লুকিয়ে লুকিয়ে ভালবাসা কিংবা গোপনে গোপনে ঘৃণা করা অথবা ফুঁলে ফেঁপে থাকা অভিমান লাগামছাড়া হয়ে স্বপ্নের মধ্যে নেচে উঠে। ঘুম ভেঙে উঠে নিজের কাছে ধরা পড়ে যেতে হয়। "ইস আমি বুঝি এমন করে ভাবি? কি লজ্জার কথা! কি ভয়ংকর ব্যাপার!" আবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচাও যায়, যাক আর কেউ তো জানলো না। আচ্ছা সবাই কি জানে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের থেকে আড়াল করে কিছু কিছু ভাবনা ভাবতে খুব ভাল লাগে? সত্যিকার জীবনের ফাঁকফোকর গলে কল্পনায় আরেকটা পৃথিবীতে বাস করা যেখানে খুব কাছের মানুষগুলোই অন্যভাবে আছে।