Friday, January 15, 2010

চিরকুটটা তোমার জন্য...

জানো আজকে সূর্যগ্রহণ দেখলাম আমার জানালা থেকে। আগে কখনও এভাবে করে দেখা হয় নি। এক্সরে প্লেট দিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখি সূর্যটা চাঁদের মত হয়ে আছে। চাঁদ হলে একে ইংরেজিতে বলতে হত ক্রিসেন্ট। তখন কি ইচ্ছা হচ্ছিল জানো? ইচ্ছা হচ্ছিল তোমাকে ডেকে নিয়ে আসি। বলি, দু'জন মিলে চাঁদ দেখা তো কত জনই করে, চল দু'জন মিলে সূর্য দেখি। আমরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এমন চিকিপিকি সূর্য দেখছি, এমন যদি কখনও না হয় আর? কিন্তু তোমাকে ওই অল্প সময়ের মধ্যে কোত্থেকে যোগাড় করতাম? কিংবা যদি আমার ডাক শুনে এসে হাজির হয়েও যেতে, এতজনের সামনে তোমার হাত ধরে টেনে আমার জানালা পর্যন্ত নিয়ে যেতাম কি করে? একটা মেয়ের ঘরে তোমার মত বয়সের একটা পুরুষমানুষ দুম করে ঢুকতে পারে না যে! ভেবে রাগ হয়ে যাচ্ছে। এই যে তুমি আসলে না এটা তোমারই দোষ বুঝেছ? তোমার দোষ ব্যস।

আমার কি হয়েছে বলি। ইদানিং আমার চমকানোর খুব শখ হয়েছে। তুমি আমাকে চমকে দিতে পার না একটু? কিছু এনে হাজির করতে তো বলছি না। দামী উপহারও চাইছিনা। শুধু একটু চমকে দাও, খুশির কোন চমক, যেন মন ভাল হয়ে যায় খুব। কেমন করে করবে তা তুমি ভাবো। আমি বলতে পারবনা। সবকিছু আমিই বলে দিলে কেমন করে হবে? খুব জ্বালাও তুমি!

শোন, রাত হয়ে গেছে। তোমার খাওয়া হয়েছে? দেখ এটা কিন্তু চাইলেই জিজ্ঞেস করতে পারি, ফোন তো আছেই। কিন্তু করব না। কেন করব না? আমার ইচ্ছা। তোমার খাওয়া হলেই কি, না হলেই কি! ওহো শোন, বেশি ঠাণ্ডা লাগিও না। তোমার অসুখ করলে আমার মন খারাপ হবে।

আরেকটা কথা, আরেকটু বুঝদার হও তো। সবখানে ছেলেমানুষি খাটে না জানোই তো। আমি নাহয় পছন্দ করি কিন্তু সবাই তো করবে না। কেউ যদি কিছু বলে? তোমাকে আমার সামনে কেউ মন্দ বললে আমার শুনতে ভাল লাগে? কিছু বলতে হয় আমি বলব, চাই কি সারাক্ষণই বলব, অন্যেরা কেন বলবে? মনে থাকে যেন। আমার একটা কথাও তো মনে রাখো না।

অনেক লিখে ফেললাম। এখন যাই। খুশিই তো হচ্ছো। আমি যত ছোট করে কম করে লিখব তোমার জন্য পড়তে তত সুবিধা হবে। এটাই তো ভাবছ তাইনা? জানি তো। এমন কেন তুমি? কি হত আজকে সূর্য দেখতে এলে আমার সাথে? তোমার কেন কিছু যায় আসে না বল তো? আমাকে একটু একটু মিস করলে কি হয়? সবসময় পাও তো তাই বোঝ না। একদিন বুঝাবো দাঁড়াও।

শোন আমি এবার সত্যিই রাখছি। পরে কথা হবে। বেশি রাত জেগো না কিন্তু। আর শোন আরেকটা কথা...নাহ থাক। এখন না, একদিন চুপিচুপি বলব। কিংবা বলবই না হয়ত। সব কথা শুনতে হয় নাকি? শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন তোমার।

রাখলাম। ভাল থেকো। থেকো কিন্তু।

Saturday, January 9, 2010

'ছেলে' নিয়ে সেকালে ভাবা ভাবনা

“ছেলেরা পেছনে লাগলে ভালই লাগে, না রে?” এটা ছিল আমার স্কুলজীবনে শোনা অন্যতম সেরা একটা স্বীকারোক্তি। কথাটা বলেছিল আমার এক বান্ধবী। তখন ক্লাস টেনে পড়ি আমরা। ‘ছেলেরা পেছনে লাগা’ বিষয়টার সাথে অল্পবিস্তর পরিচয় সবারই হয়ে গেছে ততদিনে। আমি ওর কথাটা বিবেচনা করে বুঝতে পারলাম পুরোপুরি ভুল বলে নি সে। দুইজন মিলে ভেবে দেখলাম আসলেই ছেলেদের মনোযোগ পেতে বেশ একটা খুশি খুশি লাগে। তবে সেই ছেলে হতে হবে “নর্মাল ছেলে” অর্থাৎ কিছুতেই কোন গুণ্ডামাস্তার গোছের কেউ না, সে ভদ্র টাইপ হবে, লাজুক হবে এবং পছন্দের কথাটা মুখে বলতে আসবে না, আচার আচরণে প্রকাশ হয়ে পড়বে।

আহা কি মজার দিনই না ছিল! কিশোরকাল। বাসার আশেপাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়েও ক্রিকেট খেলতে থাকা ‘ছেলেরা’ নজর এড়াতো না। সারা পথ চিল্লাচিল্লি করতে করতে এলেও ক্রিকেট খেলোয়াড়দের মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় একটু ভাব নিতে হত। সেই সাথে তাদেরকে যেকোন রকম গুজগুজ করতে দেখলেই একটা কপট বিরক্তি-‘এদের সমস্যা কি? মেয়েরা হেঁটে গেলেই আলোচনা শুরু করে। যত্তসব!’ সুন্দর করে সাজগোজ করে কোথাও যাবার সময় কেউ একটুও না দেখলে কি সাজটা ষোলআনা হত কখনও? বন্ধুরা কাউকে নিয়ে খোঁচা দিয়ে কথা বলতে গেলে যতই মেজাজ খারাপের ভান করা হোক না কেন, তলে তলে তো ঠিকই দারুণ লাগত সেই ‘ক্ষ্যাপানো’।

ভার্সিটিতে ধীরে ধীরে ‘ছেলেরা’ স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে। কিন্তু কারো ভাল লাগা পাওয়ার ইচ্ছা তখনও মরে যায় না। মনে মনে আফসোস ঠিকই চলতে থাকে-আমাকে কেউ চোখে দেখে না কেন? কেউ পছন্দ করে ফেলে না কেন? তখন সেই না দেখার পেছনে একটা দোষও বের হয়ে যায়, সেটা হল ‘ছেলেদের’ কাছে সুন্দর চেহারাই সব। কিছুদিনের মধ্যেই মোবাইল ফোন হয়। আবার বান্ধবীদের সাথে আলাপ, ‘আচ্ছা তোরা সবাই দেখি মোবাইল নিয়ে এত ঝামেলায় পড়িস, আমাকে কেউ ডিসটার্ব করে না কেন রে?’ এখানেও আবার একমত হওয়া, একটা ‘ভাল’ ছেলে যদি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ফোন নাম্বারটা যোগাড় করত! সেই ছেলের আবার আমাকে খুব ভাল করে জানতে চিনতে হবে। ফোন করে অবাক করে দেয়ার মত কথা বলবে যেগুলো কারো খেয়াল করার কথা না, জন্মদিনের দিন হ্যাপি বার্থডে উইশ পাওয়া যাবে, কিন্তু কিছুতেই বের করা যাবে না সে কে।

তবে সবসময়ই সব কথার বড় কথা ছিল, ছেলেকে অবশ্যই ভালমানুষ হতে হবে, কারো কোন ক্ষতি করবে না, শুধু দূর থেকে ‘অ্যাডমায়ার’ করে যাবে।

এখন অনেক বড় হয়ে গেছি। এমন কত কি ভাবতাম মনে করে হাসি পেয়ে যায়।

(শেষের একটা লাইন আমি তুলে নিলাম। আমার এক বড় ভাইয়ের একটা মন্তব্য পেয়ে, যেটা এখানে করা হয়নি, আলাদাভাবে পেয়েছি, মনে হয়েছে হয়তবা শেষ লাইনটা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে যেটা কিনা আমার ভাবনার সাথে মিলবে না। ভাইয়াকে ধন্যবাদ। এবং তাকে জানিয়ে রাখছি আমি আসলেই একজনের মনোযোগ নিয়েই খুশি থাকতে পারি। আমি চাই যেন একজন গুণী মানুষ হই আর সবাইকে যেন গুণ দিয়ে জয় করতে পারি, সবার সম্মান পেতে পারি। এর বেশি কিছু না।)