Tuesday, June 10, 2008
ভাবনা যখন শিমুল ডালে লালচে আগুন জ্বালে
দীর্ঘ একটা ঘুম ভেঙে উঠার পর খানিকটা সময় একান্ত নিজস্ব। বিশেষ করে অসময়ের ঘুমের ক্ষেত্রে। মনের ইট কাঠ পাথরগুলো সেজে উঠে দালানের আকার নিতে নিতে কিছুটা অবসর পাওয়া যায়। তখন কেমন যেন ভিন্নরকম অনুভূতি কাজ করে। কোন দুঃখের ঘটনার রেশ চলতে থাকলে হতাশভাবে মনে পড়ে যায় আজকের দিনটা যত সুন্দরই হোক যত চমৎকার করেই বাতাস বয়ে চলুক সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় কথা হল সেই বেদনাবোধটা। কিংবা সম্প্রতি খুব আনন্দের কোন কিছু ঘটলে চোখেমুখে একটা ভাললাগা খেলে উঠে, ভ্যাপসা গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার হলেও সেই সুখের ব্যাপারটা অচিরেই রাশ দখল করে নেয় মনের। কখনো বা অসাধারণ কোন স্বপ্ন কেটে ঘুম ভাঙে, বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে, ওহ এ তাহলে শুধু অধরা স্বপ্নই ছিল। যখন বিশেষ কোন বিষয়ের রেশ থাকে না তখন কখনো বা প্রকৃতি নীরব প্রভাবক। চোখ মেলে ধূসর আকাশ দৃশ্যপটে ভেসে আসে। ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘ। বিষন্ন হবার মত কারণ খুঁজে নিতে ইচ্ছা হয়। না পেলে অকারণেও থমকে রাখা যায় মনকে। এই ধূসর আকাশ কি ঠিক এভাবে করেই আজীবন চোখ মেলে দেখা হবে? দিনের পর দিন কি এমনি করেই আড়মোড়া ভেঙে আয়েশি ভঙ্গীতে বিছানা ছাড়া হবে? হঠাৎ করেই হয়ত তখন দৃষ্টি পড়ে সঙ্গী সেলফোন বা আর কিছুর উপর। অবাক লাগে, ওকে প্রথম হাতে নেবার অতি স্পষ্ট স্মৃতিটা আসলে কিছুদিন আগের না, বছরের কাঁটা অনেকখানি ঘুরে গেছে এরই মাঝে। তখনি হুড়মুড় করে কত কথাই মাথায় ভীড় করতে থাকে যার জন্ম হৃদয় বলে দিনকয়েক আগে, কিন্তু দিনপঞ্জী বলে আসলে এর মাঝে অনেক বসন্ত পেরিয়ে গেছে। চোখের পাতায় তখনো তন্দ্রার শেষ বিন্দু জেগে আছে। গ্রামের এককোণে কোন এক বিকালে দেখা ভাঙা কোন কুঁড়েঘর বা দশ বছর আগে পরিচিত কোন শিশুকে ঠিক ওইভাবে দেখার ক্ষণস্থায়ী কিন্তু তীব্র সাধ হয়, যে এখন শত শত মাইল দূরে, অথবা যার অস্তিত্ব ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত। কখনো নিজের দিকে চোখ পড়ে। শরীরে আর মনে পরিপক্কতার অনেকখানি বাকি আছে কি? একদিন যখন সেটাও পূর্ণ হবে কি হবে তখন? এমন একটা দিনও কি একসময় আসবে যখন সামনে চেয়ে থাকার, অপেক্ষা করার কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না? মুহূর্তের জন্য অস্ত্বিত্বকে গ্রাস করে ফেলা এসব ভাবনার কতটা অর্থবহ আর কতটা অর্থহীন তার বিচার করার কোন তাগিদ অনুভব হয়না। সব মানুষের জীবনই নাকি একেকটা উপন্যাস, একেকটা নাটক, একেকটা গল্প বা ছবি। তাই হবে। শুধু কি প্রেম ভালবাসা দুঃখ বঞ্চনার সাতকাহনই জীবনকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অন্যের চোখে বিশেষায়িত করে? একজন কিশোরীর উবু হয়ে ঘাসফুলে গাল ছোঁয়ানোর মধ্যেও তো অনেক ভাবনা অনেক ভাললাগার ঘ্রাণ লুকানো থাকে। কেউ বইয়ের পাতায় লিখে রাখে না বলেই হয়ত একে নগণ্য বলে মনে হয়। প্রতিনিয়ত এমন কত কিছু ঘটে যায় চোখের সামনেই, যাকে সাদা চোখে আহামরি মনে না হলেও পরবর্তী কোন সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। হেলাফেলা করে করে ফেলা কোন খেয়ালি কাজ একটা সময়ে জীবনমৃত্যুর প্রশ্ন হয়ে পড়ে। অথবা হাজার লোকের ভিড়ে নিতান্ত অযাচিতভাবে হঠাৎ করে চোখ পড়ে যায় সাদামাটা কারো উপর, ঘটনাক্রমে যাকে ছাড়া একদিন সবকিছু বৃথা বলে মনে হয়। সিনেমায় যেমন করে বলে, “সে জানে না আজকের একটা মুহূর্তই তার জীবনকে পুরোপুরি পালটে দেবে”। মানুষের মনের আয়না বড়ই বিচিত্র। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পাশাপাশি অনেকগুলো নিখুঁত ছবি তৈরি করে ফেলতে পারে। প্রতিটা মুহূর্তই মাথায় কিছু না কিছু চলছে। ভুরি ভুরি পরিকল্পনা, রাশি রাশি স্বপ্ন, অতীতের পাঁচালী, ভবিষ্যতের নকশা; নিজের জন্য, অন্যের জন্য। তার মাঝে ঘুম ভাঙা আধমুঠো সময়টাকে নিজের করে পেতে মন্দ লাগে না। ভাবনার লাগাম হাতে থাকে না, রাশ টেনে ধরতেও মন চায় না...।
Subscribe to:
Posts (Atom)