ধরি মেয়েটার নাম বিন্দু। বয়স এখনো পঁচিশ পূর্ণ হয়ে যায়নি। অনেকদিন পর কথা হল ওর সাথে। স্কুলে পড়ার সময় কয়েক বছর আমরা প্রতিবেশী ছিলাম। ক্লাস নাইন থেকে একই স্যারের কাছে অংক করতাম দুইজন। ওর অংক দেখে আমি মাঝে মাঝে একটু ঘাবড়েও যেতাম কারণ পরের বছর আমাকেও ওইসব বিদঘুটে সংখ্যার চাপে পড়তে হবে। স্যারকে আমাদের পছন্দ ছিল বেশ। আমাদের বকবকানি শুনে নাকমুখ কুঁচকে ফেলার বেশি কিছু করতেন না। অংক মেলাতে না পারলে স্যার প্রায়ই আমার বা ওর মাথার তালুতে হাত দিয়ে মাথার অবস্থা চেক করতেন আর বেশিরভাগই আমাদের মাথা ভীষণ গরম পাওয়া যেত। আমরা ওই বাসা ছাড়ার পর চলার পথে কুশল বিনিময় ছাড়া ওদের সাথে তেমন কথা হয়নি। যদিও খুব কাছাকাছি বাসা ছিল।
ইন্টারমিডিয়েটের পর বিন্দু একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। সেখানে দেখা রাব্বির সাথে। প্রেমিকার সাথে সদ্য ছাড়াছাড়ি হওয়া রাব্বির জন্য বিন্দু একধরণের সান্ত্বনা যোগায়। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। গিটার বাজানো রাফ এন্ড টাফ ছেলে, যেমনটা অনেক মেয়েরই কল্পনায় থাকে। ওদের ঘনিষ্ঠতা প্রেমে রূপ নিলে বিন্দুর বাবা মা কিছুতেই মেনে নিতে চান না। যে কোন কারণে (আমার অজ্ঞাত) বিয়ের ব্যাপারটা সামনে চলে আসে। মেয়ের বাবা মা কিছুতেই রাজি না তাদের দৃষ্টিতে অযোগ্য একটা বেকার ছেলের সঙ্গে মেয়ের পরিণয় দেখতে। বিন্দুর নিজের মতে সে পাঁয়তারা পাকানো এবং ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে সিদ্ধহস্ত। ফলে একটা সময় তাঁরা নিমরাজি হন। ছোটখাটো অনুষ্ঠান করে বিন্দু আর রাব্বির গাঁটছড়া বাঁধানো হয়। দেয়া হয় বেশ কিছু গয়নাও। বিয়ের খুব সামান্য সময়ের মধ্যে বের হয়ে আসে যে রাব্বি ড্রাগ এডিক্ট। ছেলের বাবা মা খুশি মনে বিয়ে দিয়েছিলেন ছেলের। হতে পারে উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলের গতি হবে এই আশায় যেটা অতি প্রচলিত ধারণা, কিংবা প্রবাসী বাবা মায়ের আদরের মেয়ে আর তার সাথে আসা ধনরত্নের লোভে। বিন্দুর হাসিখুশি জীবন বিষিয়ে উঠতে থাকে। ড্রাগের পেছনে খরচ করার টাকা যোগাড় করতে রাব্বি তার বউয়ের অলংকার সরাতে থাকে। পরিবারের অমতে বিয়ে বলে বিন্দুর বাবা মাও অনাগ্রহী ছিলেন মেয়ের বিবাহ-পরবর্তী জীবনের প্রতি। তাছাড়া সেই সময় তারা দেশের বাইরে। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলে। পড়াশোনা শিকেয় ওঠে বিন্দুর। একটা মাঝারি মানের চাকরি জুটাতে পারে সে। একদিন ভাইদের সাথে কলহের জের ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয় রাব্বি আর বিন্দুকে। এই ফ্যাসাদে যে তার স্বামীর দোষই বেশি তা বিন্দু নিজেও স্বীকার করে। মাদকাসক্তি আর দুর্ব্যবহারে রাব্বি ভালই পটু ছিল। ভাইয়েরা বললেন নিজের ঘাড়ে দায়িত্ব আসলে নাকি ছেলেটা সিধে হয়ে যাবে বাস্তবে যা কিছুই হয়নি। কিছুই করত না সে। পুরো ভার স্ত্রীর উপর। পাঁচ হাজারেরও কম টাকা বেতন পাওয়া বিন্দু বাসা ভাড়া করে নিজেদের জন্য। সেই বেতনের অর্ধেকের বেশি চলে যায় ভাড়ার পেছনে। অবস্থা এমনই ছিল যে প্রতিটা টাকা হিসাব করে করে খরচ করতে হত। টাকার একটা বরাদ্দ রোজ না দেয়া হলে নেমে আসত নির্যাতন। সস্তা বনরুটি আর কলা খেয়ে খেয়েও অনেক দিন কাটাতে হয়েছে। বাবা মাকে জানাতে পারেনি। তারা যখন ফোন করতেন বেয়াইবাড়িতে, কেবল জানানো হত বিন্দু বাসায় নেই। একটা সময় বাবা মা দেশে ফিরে আসেন। জানতে পারেন ঘটনার অনেকটা। নিজেদের কাছাকাছি একটা বাসা ভাড়া করে দেন। ভাড়ার জন্য রাখা অগ্রীম টাকা নিয়ে উধাও হয় রাব্বি। হাঁপিয়ে ওঠা বিন্দু এবার সিদ্ধান্ত নেয় ডিভোর্সের। হয়ে যায় ছাড়াছাড়ি। চাকরি বদল করে। সেই সাথে লেখাপড়া শুরু করে আবার। নতুন অফিসের এক কলিগের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে সম্প্রতি বিয়ে করে সে। প্রতিদিন দূর জায়গায় সকাল থেকে বিকাল অফিস। তার পর সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ক্লাস। বাসায় ফিরে পরিশ্রান্ত দেহে খাবারের ব্যবস্থা, এটা সেটা দেখভাল, ছুটির দিনটাতেও জমে ওঠা ঘরের কাজ। আরো ভাল কোন চাকরির জন্য চেষ্টা। এভাবে চলছে বিন্দুর প্রাত্যহিক জীবন। আমাকে জিজ্ঞেস করল, “ভাল আছ তাই না?” আমি বুঝতে পারলাম আমি ভাল আছি। এখন ও নিজেই বলে অনেক শান্তিতে আছে। নিজের সংসারে খেটেখুটে হলেও নির্বিবাদে থাকে, পুরানো কথা নিয়ে কেউ ঘাঁটায় না। আর মাঝে মাঝে ভাবে মধ্যখানের সময়টা এমন কষ্টের কাটল কেন। বিন্দুর সাথে আমার বা আমার বাবামা’র সাথে ওর বাবামা’র পথেঘাটে দেখা হয়েছে অনেকবার। ওর ডিভোর্সের ব্যাপারটা কানে আসলেও এত কিছু জানতাম না। অনেকদিন পর বসে কথা হল। আমাকে বলছিল, “আমাদের সেই সময়টা কি দারুণ ছিল, না? চিন্তা ভাবনা ছিল না কোন। স্যারের কাছে পড়ার সময় কত মজা করতাম। তোমাদের এই টেবিলটার উপরই তো পড়তাম আমরা। একবার স্কুল থেকে ফেরার সময় কি হয়েছিল মনে আছে?...” ইত্যাদি কথায় সময় পেরিয়ে গেল। ও চলে যাবার পরও ওর পেছন ফেলে আসা সময়ের কথা মনের মধ্যে কলরব করছিল। দশ বছররেও কম সময় পেরিয়েছে। সেই স্টাইলিশ বিন্দু। সচ্ছল পরিবারের মেয়ে। একটু বেশিই মুখরা আর চটপটে ছিল। এত বছর পর ও বেশ অন্যরকম। উচ্ছলতাটা চোখে পড়ে না। মুখের রেখায় অসুখীর ছাপ না থাকলেও কেমন একটা পোড় খেয়ে অভিজ্ঞ হওয়া মানুষের ভঙ্গী কথাবার্তায়। হবারই কথা। ভুলের কতটা খেসারত দিতে হল! সেই ভুলটা কার ভুল কিভাবে ভুল এই বিতর্ক নাই বা হল। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ও বলছিল, “মানুষ কত স্বপ্ন দেখায়। কত মিথ্যা স্বপ্ন দেখায়।“ যে অন্ধ সে তো অন্ধই। আর যে দেখতে পায় তারও চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
বিন্দু এখন ভাল আছে। সৃষ্টিকর্তা ওকে সবসময় ভাল রাখুন। মানুষকে ভুল শুদ্ধ চেনার ক্ষমতা দিন। সবাই সুখে থাকুক।
Tuesday, May 20, 2008
Sunday, May 18, 2008
চাকা
ছোটখালার বাসায় থাকতে গিয়েছিলাম দুই রাতের জন্য। ষোলতলার উপর ছোট্ট বাসা। বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখতে একটু অন্যরকম লাগে। মনে হয় বৃষ্টির ফোঁটাগুলো আমার চোখের সমান্তরাল কোন জায়গা থেকে তৈরি হচ্ছে, আকাশ থেকে নামছে না। বৃষ্টিটা রোগা ধরণের ছিল। বেশি ঝড় হলে নাকি গাদা গাদা বালি ঢোকে আর পানিও চলে আসে। তা হবে। আকাশের কাছে বসবাসের সুবিধা অসুবিধা দুইই আছে। যখন বারান্দায় একা একা বসে ঘরের সদস্যদের হাঁটাচলা দেখতাম বারবার পুরানো কথা মনে আসত। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি খালার তখন বিয়ে হয়। আমার বাচ্চ বয়সের একটা বড় সময় তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। সৌখিন ছিলেন বেশ। খুব মন দিয়ে চুলের যত্ন নিতেন, নানা ধরণের জিনিসপত্র যোগাড় করে। মাঝে মাঝেই পত্রিকা দেখে নতুন নতুন খাবার রান্না করতেন। ধৈর্য্য ধরে চমৎকার সব সেলাই তুলতেন জামাকাপড়ে। গল্পের বই পড়তেন বেশ। তার কম্পিউটার ক্লাসের একটা খাতা ছিল, যেখানকার লেখাগুলোর মানে আমার শিশুমস্তিষ্কে কিছুই ঢুকত না। নিজের জন্য অনেকখানি সময় বরাদ্দ ছিল দিনের। এখন তার নিজের ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়ে। তাদের পেছনে অতিষ্ঠ হয়ে নাকি তার মাথার চুল পেকে যাচ্ছে। ছোটখালার ব্যস্ততা এখন একেবারেই অন্যরকম। ঘরদোর গোছাতে হয়। রান্না করতে হয়। দুই ছেলেমেয়ের জন্য সময় দিতে হয়। অবাক লাগে, কিছু বছর আগে এই ছোট দুইটা মানুষের অস্তিত্ব ছিল কোথায়? তাই বলে অস্বাভাবিকও তো লাগে না কিছুমাত্র। এখন ছোটখালার নিজেকে নিয়ে থাকার সময়টা কমে এসেছে অনেকটুকু। সারাক্ষণই করার জন্য কোন না কোন কাজকর্মআছে। আর যখন তেমন কোন কিছু থাকে না তখনও মেয়েটা নাহয় ছেলেটা কিছু নিয়ে হাজির হয় বা খালা নিজেই কিছু একটা খুঁজে নেন। এককালে তিনি নানুরবাড়িতে ছোটদের মুরুব্বি থাকলেও এখন ওখানে কেবল মেহমান হয়েই থাকা হয় অল্প কিছুদিনের জন্য। সুন্দর পিঠ ছাপানো চুল এখন মনোযোগ না পেয়ে ক্লিষ্ট বললেই চলে। হাতে তৈরী পোশাকের চেয়ে তার পছন্দ চট করে মার্কেটে গিয়ে রেডিমেড কিছু একটা কিনে নেয়া, তাতে সময় কম লাগে। এরপরও আবার দারুণ উৎসাহ নিয়ে আমের আচার বানাতে বসেন। অবসর পেলে খালুকে নিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে আসতে চান। অর্থাৎ তার দিনকাল সন্তান সংসার কেন্দ্রিকই হয়ে পড়েছে। নিজের মায়ের কথা মনে হল। আম্মুও বেশ কিছু বছর আগে ফাঁক পেলেই বিছানাচাদরে, নিজের শাড়িতে ফুল করতেন, আমার জামা সেলাই করতেন, স্পেশাল খাবার বানাতেন। এখন অত আগ্রহ নাকি লাগে না। অফিস থেকে ফিরে আগের মত উদ্যম থাকেনা। বিশ্রাম নিতে হয়। তারপরও ঘরের কাজ তো আছেই। কখন যেন বেলা কেটে যায় এই চাকার আবর্তে। কয়েকটা বছর পর ছোটখালার দশাও নিশ্চয়ই এমনই হবে। চালসে ভর করবে, এখন যা যা করতে ক্লান্তি লাগে না সেসবও তখন ঝামেলা মনে হবে। তার ছেলেটাও মেয়েটাও তখন বড় হবে। আমার মত নিজের ঘরে নিজের “ব্যস্ততা” নিয়ে থাকবে। মায়ের অনেক কথাই ব্যাকডেটেড মনে হবে হয়ত। এমনই কি হয়? সবারই একটা পরিবার হয়? ওই নিয়েই সব পরিকল্পনা গড়ে ওঠে? এই যে আমি ভাবি আমি এমন করব তেমন করব তার কিছু কি করা হবে না? চাকরি করে টাকা জমিয়ে কিনব বলে যেসব জিনিসের লিস্ট বানাই, সব তুচ্ছ হয়ে পড়বে ছেলেমেয়ের বায়না মেটা হাসিমুখের কাছে? এই যে ঘরটাতে সারাদিন পড়ে থাকি, এখানে কয়েকটা দিন কাটলেই “বাসায়” যাবার জন্য অধীর হব? মেয়েগুলো সব মা হয়ে ওঠে? ছেলেগুলো একদিন বড় হয়ে বাবা হয়ে বসে? আর এই আবর্তন নিয়ে কেউ অসুখীও থাকে না? এটা ধ্রুব সত্য। তারপরও উদাস মনে নাড়া দেয়...।
Sunday, May 4, 2008
তাপকাহন
বেশ কয়েকদিন ধরে ঘরের বাইরে পা ফেলতে মোটেই ভাল লাগে না। যতটা না গরম লাগার কষ্টে তার চেয়ে বেশি পরনের পোশাকটার উপর মায়ার জন্য। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যাক। গরমকাল হল সুতি কাপড়ের মৌসুম। জীর্ণ অথবা অর্ধজীর্ণ একটা পোশাক প্রথমে পানিতে ভেজাও। তাতে সাবান মেখে খানিকক্ষণের জন্য ফেলে রাখ। তারপর ভালমত ধুয়ে ফেল এবং পানি নিংড়ে নাও। এবার মাড় রেডি কর। তাতে ধোয়া কাপড়খানা চুবিয়ে উঠাও। আরেক দফা নিংড়াও। এবার বেশ খানিকটা জায়গা দখল করে শুকাতে দাও। একসময় বারান্দা থেকে ঘরে ফিরিয়ে আনো। ইস্ত্রি গরম কর (সেটাও আবার ইলেকট্রিসিটি থাকার উপর এবং ইলেকট্রিসিটির পিক আওয়ারের উপর নির্ভরশীল। আজ না হলে কাল), এবার ধোয়া পোশাকখানায় পানির ছিটা দিয়ে দুমড়াও মোচড়াও। তারপর আয়রন কর অর্থাৎ সেঁকে চনমনে কর। সবশেষে এই তরতাজা কাপড়টা ভাঁজ করে তাকে গুছিয়ে রাখ। এই সবগুলো ধাপ সফলতার সাথে সম্পন্ন করার পর একদিন কোথাও যাবার দরকার হলে সেই মৃদু সুবাস ছড়ানো পাটভাঙা পোশাকটা পরলাম। ফিটফাট হয়ে বাইরে বের হলাম। খানিকটা পথ পাড়ি দিতে না দিতেই লোমকূপ থেকে দরদর করে ফোয়ারার মত ঘাম ছুটতে শুরু করল। সারা গা ভিজে একসা তো হলই, স্নেহের জামাও জেবড়ে গেল ঘামে। বাড়ি ফিরে মিয়ানো জিনিসটাকে দড়ির উপর লটকে দিতে দিতে হাপিত্যেস না করে উপায় আছে? নিত্যকার অফিসযাত্রীদের ভোগান্তির কথা ভাবলে কষ্ট হয়। প্রতিদিন সাত সকালে উঠে তাদেরকে সুদূরের পথ ধরতে হয়। সকাল আটটার পর লোকাল বাসের ছবিসুরতের খবর কে না জানে। সাধ্যসাধনার পর পা রাখার একটা জায়গা করে ছাতার বাঁটের মত ঝুলতে ঝুলতে সূর্যমামার উত্তাপে কোথায় হারায় ওডিকোলনের ভুরভুরে সুবাস, টাইয়ের জমিনে ইন করে পরা ফর্মাল শার্টের বাহার, রঙ মিলিয়ে তৈরি করা সাধের সালোয়ার কামিজের পরিপাট্য। আর সাড়ে তিনহাত শরীরে বারো হাত শাড়ি প্যাঁচানো মেয়েদের কথা নাহয় ছেড়েই দিলাম। স্কুলকলেজ নাহয় এক আধটু কামাই দেয়া যায়। অফিসে কি এত আয়েশ চলে? রোজকার হাজিরা রোজই টুকে রাখা চাই। সেই তুলনায় আমি তো রাজকন্যার হালে আছি। আর যাদের ঘরে ফ্যান এসি নেই, ইচ্ছে হলেই জিরিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা পানীয়ে চুমুক দিতে পারে না তাদের কথা উল্লেখ করার আদিখ্যেতা দেখানো সাজে না। আমি কেবল নিজের কথা বললাম। কাল রাতে একটা ঝড় বয়ে গেল। ওই মুহূর্তের জন্য ছিল অসাধারণ। কিন্তু আজকে সকাল হতেই সেই একই খেলা। কেবল একটু ছায়া ছায়া। তাতে কি। ফুটন্ত পানি ভরা হাঁড়ির মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেও যেমন ঠিকই ভলকে ভলকে ভাপ বের হতে থাকে আজকে মাটিরও সেই অবস্থা। শুনেছি মতিঝিলের আবহাওয়া নাকি কয়েক কাঠি বেশি উষ্ণ। আর মতিঝিলের নিঃশ্বাস এসে লাগে আমাদের গায়ে। একটা নিষ্পাপ কালবৈশাখির অপেক্ষায় আছি। গর্জন করবে কিন্তু আঘাত করবে না। কেবল জরা আর তাপ উড়িয়ে নিয়ে যাবে, কারো ঘরের চাল বা বয়সী বৃক্ষের শেকড় না।
Friday, May 2, 2008
জীবন কেমন কাটে
অলস সময়ে হঠাৎ ভাবনা এল, আমাদের জীবন আসলে কেমন করে কাটে। জন্মের পর সবার আদর সোহাগে বেড়ে ওঠা, পড়াশোনায় সবসময় প্রথম সারিতে থাকার চেষ্টা করা, সঙ্গী সাথীদের নিয়ে কিছু নির্ভেজাল সুখদুঃখের সময় কাটানো। দেখতে দেখতে শৈশব চলে যায়। তারপর কি? আবারও বইপুস্তকের রাজ্যে হিমশিম খাওয়া, কারো কারো ক্ষেত্রে ফাঁকফোকরে সফল বা ব্যর্থ কোন এক বা একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, ভাল অথবা মন্দ অথবা মাঝারি গোছের একটা রেজাল্ট থলেতে গুঁজে দুয়ারে দুয়ারে চাকরির জন্য উঁকিঝুঁকি মারা। আর তারও পরে? দিনের পর দিন সেই বাসা টু অফিস অফিস টু বাসা কিংবা কারো কারো জন্য কেবলই চার দেয়ালের গন্ডির মধ্যে বসবাস। ছেলেপুলে মানুষ করা, তাদের পেছনে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা। একদিন চুলে পাক, চামড়ায় ভাঁজ আর দেখতে দেখতে ভবলীলার পাট চুকিয়ে অগস্ত যাত্রা। সাকুল্যে তাহলে এই কি জীবন? সময়ের চাকাকে ঘোরানোর জন্যই আমাদের এত আয়োজন? সাধারণ একজন মানুষের জীবন মানে কি? শৈশব থেকেই আমরা চেষ্টা করে যাই সফল হবার। কেমন এই সফলতা? রিপোর্ট কার্ডে A+ পাওয়া। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আচার আচরণে স্থিরতা এবং সততা চর্চা করা। আমরা জেনে নিয়েছি যে জ্ঞান অর্জন আর সুশীল আচরণ আয়ত্ত করা মানেই সুন্দর ভবিষ্যতের চাবিকাঠি হাতে পাওয়া। একদিন নিজের রুটি রুজির পন্থা আবিষ্কার করি। হাতে আসে বিত্তবৈভব। বস্তুগত চাহিদা পূরণ হয় অনেকটাই। আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে হেসেখেলে কাটিয়ে দিই বছরের পর বছর। পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও সঞ্চালিত করি জীবনগঠনের একই মূলমন্ত্র। এই পরিক্রমা চলে আসছে যুগের পর যুগ। এটাই কি জীবন? যদি তা না হত তাহলেই বা কেমন হতে পারত?
Subscribe to:
Posts (Atom)