Wednesday, December 1, 2010

অতঃপরের সময়

অনেকদিন পর রুদ্রদার কথা খুব মনে পড়ছে। ক্যামেরাটা হাতে নেয়ার পর থেকেই। দারুণ ছবি আঁকত রুদ্রদা, বলত, তোরা ক্যামেরায় ছবি তুলিস কেন? জীবনকে হাতের কারসাজিতে ফুটিয়ে তুলতে হয়, ক্যামেরায় তোলা ছবিতে তাকে আটকে রাখায় কোন কৃতিত্ব নেই। মুগ্ধ হয়েছিলাম কথাটায়। কবিতাও লিখত খুব ভাল। হয়ত এখনও তেমনই আছে। ভাবতে অবাক লাগে আমি কিভাবে এমন একটা মানুষের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। আব্বার মৃত্যুর পর যখন মুরুব্বীরা সবাই আমার বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগলেন, আমি চোখে আঁধার দেখছিলাম। কি করে বলি তাদের বেছে নেয়া বিলাতফেরত সুদর্শন তরুণের চেয়ে রোগাপটকা রুদ্রদাকেই আমার অনেক বেশি পছন্দ! তখনও আমি ভার্সিটিতে পড়ি, আব্বার ইচ্ছা ছিল না মাস্টার্সের আগে আমি বিয়ে করি। কিন্তু মরে গিয়ে তিনি আমাদের পুরো পরিবারটাকে অনিশ্চয়তার সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন। আমি দেখতে ভাল না, আমার পর আরও দুই বোন আছে, টাকাপয়সাতেও আমরা খুব একটা স্বচ্ছল না এসব কারণ হঠাৎ করে অনেক বড় হয়ে গেল। কাউকে বোঝাতে পারলাম না আমি আরো অপেক্ষা করতে চাই। অপেক্ষা নিজেকে তৈরি করার জন্য, রুদ্রদাকে আমার মনের কথা জানানোর জন্য।

বলতে বাধা নেই এটা ছিল একেবারেই একতরফা প্রেম। আমাদের কয়েক ব্যাচ সিনিয়র ছিল রুদ্রদা, বাংলা ডিপার্টমেন্টে পড়ত। বন্ধু দীপার মাধ্যমে পরিচয় হলেও খুব দ্রুত আমরাই বন্ধু হয়ে যাই। তার চাহনি, কথার ভঙ্গী, কবি কবি ভাব, গম্ভীরতা কিছুদিনের মধ্যেই আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আত্নভোলা চুপচাপ মানুষ আমার খুব ভাল লাগে। খুব ভারিক্কি হবে, একটু অগোছালো থাকবে, হালফ্যাশনের খবর রাখবে না, রাজনীতি কিংবা স্পোর্টস নিয়ে তর্ক করবে না, আমি ঠিক যা যা চাই তার সব বৈশিষ্ট্যই আছে এই মানুষটার মধ্যে। উঠতে বসতে রুদ্রদা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না। একটা বিধর্মী ভবঘুরে টাইপ ছেলের কথা আমার রক্ষণশীল আব্বা কিভাবে নিবেন একথা কখনও ভাবিওনি। আর রুদ্রদা আমাকে ফিরিয়ে দিবে না এটা নিশ্চিত ছিলাম। আমি বুঝতাম আমাকেও তার ভাল লাগে। এই ভাল লাগা খুব সাধারণ না তাও বুঝতে পারতাম। ঠিক করেছিলাম কেউ রাজি না হলে দুজনে হাত ধরে বেরিয়ে পড়ব। ও ভাল ছাত্র ছিল, চলনসই একটা চাকরি তো জুটবেই, আর আমিও একটা কাজ খুঁজে নিব। ছোটখাটো একটা বাসায় ছবি কবিতা গল্প আর ভালবাসায় জীবনটা কেটে যাবে সুখে। নাহয় স্বপ্নের দার্জিলিং না-ই গেলাম এই জীবনে, নাহয় নিজের মত করে সাজানোর জন্য একটা ফ্ল্যাটবাড়ি না-ই হল আমার। এসব দিয়ে কি করব যদি যাকে চাই সে-ই না থাকে? একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম সেই সময়টা। পৃথিবীতে কাউকে কখনও রুদ্রদার মত এত বেশি ভালবেসেছি বলে মনে হত না। দীপার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ ছিল না। ওর জন্যই এই মানুষটার সাথে দেখা হল।

আমাকে জানানো হল, বড়চাচার পছন্দের ছেলে ইংল্যাণ্ড থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছে মাস কয়েক আগে। সুদর্শন, ভদ্র, মাল্টিন্যাশনালে ভাল বেতনের চাকুরে, উঁচু বংশ এসব লোভনীয় বিশেষণযুক্ত ওই ছেলের পরিবার একদিন হুট করে আমাদের বাসায় হাজির। দরজা খুলেছিলাম আমিই। এই নিয়ে বাসায় চাচাদের কত আপত্তি। এভাবে খবর না দিয়ে আসার কি মানে? মেয়েকে কি আমরা পুতুল করে সাজিয়ে আনতাম? অন্তত পরিপাটি হয়ে তো সে থাকতে পারত। আপ্যায়ন তো ভালভাবে করতে পারতাম। এসব ওদের চালাকি ইত্যাদি ইত্যাদি। দুইদিন পর ফোন এল তাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে। চাচারা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ছেলেপক্ষ নাকি আসলেই যেমন ভদ্রলোক তেমন বুদ্ধিমান। না জানিয়ে আসাটাই তো ভাল, কোন বাহুল্য থাকে না, সত্যিকার আন্তরিকতাটা বুঝতে পারা যায়। সবার মাথা থেকে একটা বোঝা নেমে গেল, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই নাকি করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে হয়ে যাবে। সেই পর্যন্ত বাইরে যাওয়া বন্ধ, নিতান্তই যেতে হলে বড়চাচী অবশ্যই সঙ্গে যাবেন।

আমার ছোটবোন মিতু সবকিছু জানার পর রুদ্রদার সাথে দেখা করেছিল, কয়েকবার। রুদ্রদা নাকি সব শুনে খুব আপসেট হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় উনার মা ছিলেন হাসপাতালে মৃত্যশয্যায়। উনি সময় চেয়েছিলেন, ওই মুহূর্তে এসব চিন্তা করার সময় ছিল না তার। আমার মনে হয় না রুদ্রদা কিছু করত। সংসারধর্ম নিয়ে তার কখনো আগ্রহ ছিল না। হেসেখেলে ঘুরেফিরে চলতে পারলেই তার জন্য যথেষ্ট। মিতুর সাথে অনেক কথাই হয়েছিল ওর। মিতু শুধু আমাকে বলেছিল আমি যেন এসব ভুলে যাই, যা সামনে আছে সেটাকেই গ্রহণ করি। ও এমনটা না বললেও এটাই করতে হত। খুব ভেঙে পড়েছিলাম আমি। সেই সময়কার বিস্বাদ দিনগুলোর একটিতে আমার বিয়ে হয়ে যায়।

আমার কর্পোরেট হাজব্যান্ড আসিফ প্রথম দিন থেকেই আমার সাথে হাসিখুশি আচরণ করে আসছিল। গল্পবাজ ছটফটে ধরণের মানুষ। খুব কথা বলছে, আমার খাওয়ার দিকে লক্ষ্য রাখছে, পানিটা এগিয়ে আনছে, ঘুমিয়ে গেলে কাঁথাটা জড়িয়ে দিচ্ছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন সারাক্ষণ হেসেখেলে কথা বলছে। এতসব যত্নআত্তি অসহ্য লাগত আমার। একদিকে রুদ্রদাকে হারানোর শোক অন্যদিকে কাউকে কিছু বুঝতে না দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা, দুইয়ে মিলিয়ে গিঁট পাকিয়ে যাচ্ছিল। আসিফের দিকে তাকিয়ে আমি কিছু একটা খুব খুঁজতাম, পেতাম না। তবে চেষ্টা করতাম স্বাভাবিক আচরণ করার। ওর এখানে কিই বা দোষ। আমার সাথে একটা বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পেরেছিল ও। অনেক কথা বলত আসিফ। সময় খারাপ কাটত না। ওর কলেজজীবনের কাহিনী শুনতে ভাল লাগত, ইংল্যান্ডের গল্প শুনতে ভাল লাগত। স্বামীসুলভ কোন কর্তৃত্ব করতে দেখতাম না। ধীরে ধীরে কিভাবে যেন আমি আসিফের বশবর্তী হয়ে যেতে থাকি। ওর সাথে আরো বেশি সময় থাকতে চাইতে লাগলাম। ওর বাসায় ফিরতে দেরি হলে অস্থির হতে শুরু করলাম। কিছুদিন পর বাবার বাড়ি থেকে বইপত্র আনিয়ে নিলাম, সামনে পরীক্ষা।

এই বাসায় কবে যে আমার বছর পার হয়ে গেল টেরই পাইনি। উড়ে উড়ে যেন সময় চলে যাচ্ছে। ভয় হচ্ছে কবে না জানি বুড়ো হয়ে যাই। সামনের দিনগুলো নিয়ে আমরা নানা প্ল্যান করি। আসিফকে নিয়ে আমার অনেক কল্পনা অনেক ভাবনা। অসাধারণ একটা মানুষকে আমি পেয়েছি। সবারই প্রিয়পাত্র ও। আমার ছোটবড় সব ব্যাপারে মনোযোগ দেয়। সারাক্ষণই সে হৈচৈ এর মধ্যে আছে, টিভিতে ফুটবল শুরু হলে আর হুঁশ থাকে না। অন্য বউদের মত আমাকে ওর শার্ট প্যান্ট কিংবা টাই মিলিয়ে দিতে হয় না, উলটো ও-ই আমাকে স্টাইল বুঝে কাপড় পছন্দ করে দেয়। খুব গোছালো আর পরিপাটি মানুষ ও। মনে মনে ভাবি, ছোটবেলা থেকে জীবনসঙ্গীর যেসব গুণ থাকুক চাইতাম তার সব কটাই আছে ওর। ওর মত এত বেশি আমি কাউকে কখনো ভালবাসিনি, বাসবও না।

ক্যামেরাটা আলতো হাতে মুছে তুলে রাখলাম। আসিফের শখের জিনিস। খুব ছবি তোলার নেশা ওর। প্রায়ই বলে, প্রকৃতির কোন কিছুই তো আমরা সৃষ্টি করতে পারব না, তাই ফ্রেমে ধরে রাখতে ইচ্ছা করে; ব্যাখ্যাটা ভালই লাগে। আমাকে বলা ওর প্রথম কথাটা ছিল এমন, দেখ মিলি আমার কোন দোষ নেই, আমার এত তাড়াতাড়ি ইচ্ছা ছিল না, তোমার বড়চাচা আর আমার দুলাভাই মিলে আমাদেরকে ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আমার সাথে রাগ করলে কিন্তু চলবে না। আমরা মাঝে মাঝে এই কথা নিয়ে হাসি। সবাইকে বলতে ইচ্ছা করে আমরা খুব সুখে আছি। বড়চাচার প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। তিনি সেইসময় জোর না দিলে আসিফ আজ না জানি কোথায় থাকত, আমি কোথায় থাকতাম।

আমার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ, আগামী সপ্তাহে আমরা তিনদিনের জন্য দার্জিলিং বেড়াতে যাচ্ছি। ভাবতেই ভাল লাগছে।

Tuesday, August 31, 2010

এখন আমি অনেক বড়...

বাংলা ব্যাকরণ বইয়ে পড়া শৈশবস্মৃতি নিয়ে লেখা রচনাগুলো ফেলনা মনে হত। নিজে শিশু ছিলাম বলে, শিশুকাল তখন চলন্ত অধ্যায় ছিল বলেই কিনা জানি না, পাতা উলটে পালটে দেখেও লেখকের জন্য কোন সহানুভূতি তৈরি হত না। সবসময় ভেবেছি এ আর এমন কি। আমি তো ছোটই, ছোট হবার মধ্যে এমন কিছু আনন্দ তো দেখি না যেটার হারিয়ে যাওয়া নিয়ে এত হাপিত্যেশ করতে হবে। সেই ছোট হবার পালা যখন শেষ হয়েই গেল তখন বুঝতে পারি লেখকের সেই আস্ফালনের মর্ম। আয়নার দিকে তাকালে নিজের চেহারাটা কেমন কেমন যেন লাগে।

একসময় ভাবতাম কেমন করে বড়রা ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেয়? একদিন কখন যে হেসেখেলে ম্যাট্রিকটা দিয়ে দিলাম টের পেলাম না। ভাবতাম সত্যিই কি ভার্সিটিতে পড়তে পারব? একদিন তত বড়ও হব? সেশন জ্যামে পড়ে ইলাস্টিক হয়ে যাওয়া ভার্সিটির জীবনটাও যে কখ্ন সহজেই কেটে গেল সেটাও ঠাহর করার সু্যোগ হল না। সামনে জ্বলজ্বলে হয়ে বিয়ের ঘণ্টা বাজতে শুরু হল একসময়, একটা অনিশ্চয়তা, আমি কি পারব অন্যদের মত ঘরসংসার করতে? একটা অন্য বাসায় গিয়ে একটা আস্ত পুরুষমানুষের সাথে বসবাস করার কথা চিন্তা করলেই গায়ে কাঁটা দিত। দিনে দিনে দেখলাম এটাও কোন অংশে কম সহজ না। বিয়ের প্রায় ছয় মাস হতে চলল। এককালে অনেক দূরের অনেক কঠিন মনে হওয়া সব সময়গুলোর কিছু পেরিয়ে গেছি কিছু পেরোচ্ছি।

এখন জীবন অনেকটাই অন্যরকম। সাদা চোখে সেটা ধরা পড়ে না খুব একটা যদিও। হুট করে সবসময়কার জন্য সঙ্গী পেয়ে গেছি একজন। মাঝে মাঝে খুব অবাক লাগে, আমাকে নিয়ে এতটা ভাবার কিংবা আমার জন্য এতকিছু করার কাজটা বাবা মা ছাড়া আরও কেউ পারে? এই বয়সেও উলটা পালটা ছেলেমানুষি কথা মন দিয়ে শুনে প্রশ্রয় দিয়ে ফেলার জন্য আমার একটা সার্বক্ষণিক হাসিখুশি বন্ধু আছে? এখনও আমি থাকা খাওয়া আর ঘুম নিয়ে এত বেশি যত্ম পাই? একধরণের নির্ভার বোধ হয়। এই ভাল লাগাটার তুলনা করার কোন উপায় সত্যিই নেই।

তবু ছেড়ে আসা সময়টা পিছু পিছু ডাকে। মেরুন রঙের পর্দা টাঙানো ঘরটাতে আর এখন রোজ রোজ ফিরে যাই না। রাত হলেই গড়িয়ে গড়িয়ে গিয়ে কালসিটে পড়া পিসিটার সামনে বসা হয় না। আব্বুকে এখন আর প্রত্যেক বিকালে ঠোঙায় ভরে পুরি নিয়ে বাসায় ঢুকতে হয় না। যখনই খুশি আমি পুরানো বাসাটায় ফিরে যেতে পারি, তবু কোথাও যেন একটা অন্যরকম হয়ে যাওয়ার সুতো ঝুলতে থাকে। প্রতিবেশিরা, আত্মীয়রা জিজ্ঞেস করে, কবে এসেছ? কতদিন থাকবে? যেন আমি এই বাসার কেউ না। তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বিশাল আলোচনা করার জন্য রুমের জানালাটায় ছুটে যাওয়া লাগে না, আমার প্রিয় বন্ধুটা এখন দেশের বাইরে চলে গেছে। ওর সাথে রাত করে করিডরে হেঁটে হেঁটে গল্প করা আর কখনও হবে কিনা কে জানে। তিন বন্ধু মিলে বাসায় রাত জেগে হুটোপুটি করাটার হয়ত ইতি ঘটেই গেছে।

একা একা থাকলে হঠাৎ কখনও ফেলে আসা সময়গুলির জন্য কান্না পেয়ে যায়। ভীষণ ইচ্ছা করে কয়েক বছর আগের সময়টাতে ফিরে যাই। কিন্তু তা তো সম্ভব না। আমরা মনে হয় কখনও খালি থাকি না। নতুন ভাল লাগা গুলো যোগ করতে গিয়ে পুরানো ভাল লাগাগুলোকে বিয়োগ দিতেই হয়। আবার পুরানো ভালবাসার বস্তুগুলোকে ফিরে পাওয়ার বিনিময়ে নতুন ভালবাসার বস্তুগুলোকে বিসর্জন দেয়ার সাহসও হয় না...

Saturday, February 20, 2010

দিন যায় দিন চলে যায়

আমাদের বাসাটাকে ছোট বলা যাবে না। কিন্তু এখানে মানুষ খুব কম। দুইটা ঘুমের ঘর, একটা মোটামুটি গোছের মেহমানের ঘর, বসার জন্য একটা ঘর আর বড়সড় একটা খাবার ঘর আছে আমাদের। এখানে বাস করি আমরা মাত্র দুইজন, আমি আর আব্বু। আম্মু দেড় বছর ধরে অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে, আরও কয়েক মাস সেখানে থাকতে হবে তাঁকে। একটা বাসাতে বাবা মা ভাই বোন সবাই থাকবে, গল্পসল্প হৈ চৈ খুনসুটি ঝগড়াঝাটি হবে, তবেই না বাসা বাসা লাগে। আমাদের তেমন না। আমাদের বাসা হল চুপটি বাসা। কোন কাজের লোকও থাকে না এখানে। আমরা দুইজন নিজের নিজের মত থাকি। তিন মানুষের একটা পরিবার সেটাও সবাই একসাথে থাকা হচ্ছে না। তার জন্য অবশ্য খুব খারাপ লাগে তা বলা যায় না। প্রথম যেদিন আম্মু আমাদেরকে রেখে গেলেন আমার এত খারাপ লেগেছিল! ভাবতাম দুই দুইটা বছর কি করে থাকব! কিছুতেই পারব না! এখন দেখি ঠিকই বেশিরভাগ সময়টা থাকতে পেরে ফেলেছি। মানুষের অভ্যাস কিসে না হয়! বাসায় আমরা একটু করে ভাত তরকারি রান্না করি শুধু আমাদের জন্য, সহজ রান্নাগুলো। হঠাৎ কেউ এসে পড়লে তার জন্য কিছুই থাকে না অনেক সময়। তারপর হাঁড়ি বাসন মাজা কিংবা ঘর সাফসুতরা করা সবই আমাদের নিজেদের করা লাগে। আমি মেয়ে বলে সব কাজ আমাকে করতে হয় এমন না। আব্বুও সবই করেন। সত্যি কথা বলতে কি আব্বুর রান্নাই বেশি ভাল। 'বিদেশ' এর মত বাসার সবার কাছে মানে দুইজনের কাছে দুইটা চাবি থাকে দরজার। একজন বাইরে থাকলে পরে সে নিজেই ঢুকতে পারে, কলিং বেল দিয়ে অন্যজনকে ডাকা লাগে না। দুই সপ্তাহ পরপর আম্মু বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা আসলে সেদিন আমাদের আনন্দ। আমি তাড়াতাড়ি করে কিছু কাজ শেষ করে ফেলি যেটা দুই সপ্তাহ আগেই করার কথা ছিল। আব্বু চিন্তায় পড়ে যান, দুপুরের খাবারটা নাহয় কোনমতে হয়েই গেল, রাতে তো ভাল কিছু করা দরকার। যদিও রাতে আলুভর্তা ডাল টাইপ কিছু হবে, পরিকল্পনা থেকে ঘুরে ফিরে এমনটাই বের হয়ে আসে। শুক্রবার দুপুরে আমাদের খাওয়াটা জমে ভাল। হয়ত পুঁই শাক আর ট্যাংরা মাছ, কিন্তু খেতে মজা অনেক বেশি। জানি না আম্মুর রান্না আমাদের চেয়ে ভাল বলে নাকি সবাই একসাথে খেতে বসা হয়েছে বলে। শনিবার এলে আর ভাল লাগে না। কারণ শনিবার রাতের ট্রেনে আম্মু আবার ফেরত। এভাবেই আমাদের দিন বেশ চলে যাচ্ছে।

Sunday, February 7, 2010

যা খুশি তাই ইচ্ছেমতন!

বলা কথাগুলো নাকি ইথার নামের একটা জিনিসের মধ্যে ভেসে থাকে। আমরা যখন যা বলেছি তা এখন উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইথারের মধ্যে, শুঁড়ের মত কিলবিল করে করে নাড়াচাড়া করছে এদিক থেকে সেদিকে। আমি আমার না বলা কথগুলো হাতড়ে বেড়াচ্ছি। কতকিছু বলতে বলতে চেয়েও বলা হয়নি জীবনে। খুব বড় কোন কথা কিংবা খুব সাধারণ কিছু। মা বাবা ভাই বোন বন্ধু কিংবা অন্য ব্যক্তিকে। কখনও সেই মানুষ হারিয়ে গেছে জীবন থেকে, কখনও জীবনই হারিয়ে গেছে মানুষটার কাছ থেকে। তাই সেই বাক্সবন্দী কথাগুলো ভাঁজ করে মনের পকেটেই রেখে দেয়া আছে। দুম করে আগপাছ না ভেবে বলতে গিয়ে কত কিছু হারিয়ে গেল। আবার বুঝে শুনে মুখকে সংযত করতে গিয়েও হয়তবা বঞ্চিত করে ফেলেছি নিজেকে বা অন্য কাউকে। কথা আর ভাবনা সব নিজ থেকেই চেপে চেপে তলানির মত জমে যায়। অবাক লাগে যখন ঘুমের মাঝে অবচেতন চিন্তাগুলো সগর্বে দাপিয়ে বেড়াতে আসে। লুকিয়ে লুকিয়ে ভালবাসা কিংবা গোপনে গোপনে ঘৃণা করা অথবা ফুঁলে ফেঁপে থাকা অভিমান লাগামছাড়া হয়ে স্বপ্নের মধ্যে নেচে উঠে। ঘুম ভেঙে উঠে নিজের কাছে ধরা পড়ে যেতে হয়। "ইস আমি বুঝি এমন করে ভাবি? কি লজ্জার কথা! কি ভয়ংকর ব্যাপার!" আবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচাও যায়, যাক আর কেউ তো জানলো না। আচ্ছা সবাই কি জানে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের থেকে আড়াল করে কিছু কিছু ভাবনা ভাবতে খুব ভাল লাগে? সত্যিকার জীবনের ফাঁকফোকর গলে কল্পনায় আরেকটা পৃথিবীতে বাস করা যেখানে খুব কাছের মানুষগুলোই অন্যভাবে আছে।

Friday, January 15, 2010

চিরকুটটা তোমার জন্য...

জানো আজকে সূর্যগ্রহণ দেখলাম আমার জানালা থেকে। আগে কখনও এভাবে করে দেখা হয় নি। এক্সরে প্লেট দিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখি সূর্যটা চাঁদের মত হয়ে আছে। চাঁদ হলে একে ইংরেজিতে বলতে হত ক্রিসেন্ট। তখন কি ইচ্ছা হচ্ছিল জানো? ইচ্ছা হচ্ছিল তোমাকে ডেকে নিয়ে আসি। বলি, দু'জন মিলে চাঁদ দেখা তো কত জনই করে, চল দু'জন মিলে সূর্য দেখি। আমরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এমন চিকিপিকি সূর্য দেখছি, এমন যদি কখনও না হয় আর? কিন্তু তোমাকে ওই অল্প সময়ের মধ্যে কোত্থেকে যোগাড় করতাম? কিংবা যদি আমার ডাক শুনে এসে হাজির হয়েও যেতে, এতজনের সামনে তোমার হাত ধরে টেনে আমার জানালা পর্যন্ত নিয়ে যেতাম কি করে? একটা মেয়ের ঘরে তোমার মত বয়সের একটা পুরুষমানুষ দুম করে ঢুকতে পারে না যে! ভেবে রাগ হয়ে যাচ্ছে। এই যে তুমি আসলে না এটা তোমারই দোষ বুঝেছ? তোমার দোষ ব্যস।

আমার কি হয়েছে বলি। ইদানিং আমার চমকানোর খুব শখ হয়েছে। তুমি আমাকে চমকে দিতে পার না একটু? কিছু এনে হাজির করতে তো বলছি না। দামী উপহারও চাইছিনা। শুধু একটু চমকে দাও, খুশির কোন চমক, যেন মন ভাল হয়ে যায় খুব। কেমন করে করবে তা তুমি ভাবো। আমি বলতে পারবনা। সবকিছু আমিই বলে দিলে কেমন করে হবে? খুব জ্বালাও তুমি!

শোন, রাত হয়ে গেছে। তোমার খাওয়া হয়েছে? দেখ এটা কিন্তু চাইলেই জিজ্ঞেস করতে পারি, ফোন তো আছেই। কিন্তু করব না। কেন করব না? আমার ইচ্ছা। তোমার খাওয়া হলেই কি, না হলেই কি! ওহো শোন, বেশি ঠাণ্ডা লাগিও না। তোমার অসুখ করলে আমার মন খারাপ হবে।

আরেকটা কথা, আরেকটু বুঝদার হও তো। সবখানে ছেলেমানুষি খাটে না জানোই তো। আমি নাহয় পছন্দ করি কিন্তু সবাই তো করবে না। কেউ যদি কিছু বলে? তোমাকে আমার সামনে কেউ মন্দ বললে আমার শুনতে ভাল লাগে? কিছু বলতে হয় আমি বলব, চাই কি সারাক্ষণই বলব, অন্যেরা কেন বলবে? মনে থাকে যেন। আমার একটা কথাও তো মনে রাখো না।

অনেক লিখে ফেললাম। এখন যাই। খুশিই তো হচ্ছো। আমি যত ছোট করে কম করে লিখব তোমার জন্য পড়তে তত সুবিধা হবে। এটাই তো ভাবছ তাইনা? জানি তো। এমন কেন তুমি? কি হত আজকে সূর্য দেখতে এলে আমার সাথে? তোমার কেন কিছু যায় আসে না বল তো? আমাকে একটু একটু মিস করলে কি হয়? সবসময় পাও তো তাই বোঝ না। একদিন বুঝাবো দাঁড়াও।

শোন আমি এবার সত্যিই রাখছি। পরে কথা হবে। বেশি রাত জেগো না কিন্তু। আর শোন আরেকটা কথা...নাহ থাক। এখন না, একদিন চুপিচুপি বলব। কিংবা বলবই না হয়ত। সব কথা শুনতে হয় নাকি? শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন তোমার।

রাখলাম। ভাল থেকো। থেকো কিন্তু।

Saturday, January 9, 2010

'ছেলে' নিয়ে সেকালে ভাবা ভাবনা

“ছেলেরা পেছনে লাগলে ভালই লাগে, না রে?” এটা ছিল আমার স্কুলজীবনে শোনা অন্যতম সেরা একটা স্বীকারোক্তি। কথাটা বলেছিল আমার এক বান্ধবী। তখন ক্লাস টেনে পড়ি আমরা। ‘ছেলেরা পেছনে লাগা’ বিষয়টার সাথে অল্পবিস্তর পরিচয় সবারই হয়ে গেছে ততদিনে। আমি ওর কথাটা বিবেচনা করে বুঝতে পারলাম পুরোপুরি ভুল বলে নি সে। দুইজন মিলে ভেবে দেখলাম আসলেই ছেলেদের মনোযোগ পেতে বেশ একটা খুশি খুশি লাগে। তবে সেই ছেলে হতে হবে “নর্মাল ছেলে” অর্থাৎ কিছুতেই কোন গুণ্ডামাস্তার গোছের কেউ না, সে ভদ্র টাইপ হবে, লাজুক হবে এবং পছন্দের কথাটা মুখে বলতে আসবে না, আচার আচরণে প্রকাশ হয়ে পড়বে।

আহা কি মজার দিনই না ছিল! কিশোরকাল। বাসার আশেপাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়েও ক্রিকেট খেলতে থাকা ‘ছেলেরা’ নজর এড়াতো না। সারা পথ চিল্লাচিল্লি করতে করতে এলেও ক্রিকেট খেলোয়াড়দের মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় একটু ভাব নিতে হত। সেই সাথে তাদেরকে যেকোন রকম গুজগুজ করতে দেখলেই একটা কপট বিরক্তি-‘এদের সমস্যা কি? মেয়েরা হেঁটে গেলেই আলোচনা শুরু করে। যত্তসব!’ সুন্দর করে সাজগোজ করে কোথাও যাবার সময় কেউ একটুও না দেখলে কি সাজটা ষোলআনা হত কখনও? বন্ধুরা কাউকে নিয়ে খোঁচা দিয়ে কথা বলতে গেলে যতই মেজাজ খারাপের ভান করা হোক না কেন, তলে তলে তো ঠিকই দারুণ লাগত সেই ‘ক্ষ্যাপানো’।

ভার্সিটিতে ধীরে ধীরে ‘ছেলেরা’ স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে। কিন্তু কারো ভাল লাগা পাওয়ার ইচ্ছা তখনও মরে যায় না। মনে মনে আফসোস ঠিকই চলতে থাকে-আমাকে কেউ চোখে দেখে না কেন? কেউ পছন্দ করে ফেলে না কেন? তখন সেই না দেখার পেছনে একটা দোষও বের হয়ে যায়, সেটা হল ‘ছেলেদের’ কাছে সুন্দর চেহারাই সব। কিছুদিনের মধ্যেই মোবাইল ফোন হয়। আবার বান্ধবীদের সাথে আলাপ, ‘আচ্ছা তোরা সবাই দেখি মোবাইল নিয়ে এত ঝামেলায় পড়িস, আমাকে কেউ ডিসটার্ব করে না কেন রে?’ এখানেও আবার একমত হওয়া, একটা ‘ভাল’ ছেলে যদি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ফোন নাম্বারটা যোগাড় করত! সেই ছেলের আবার আমাকে খুব ভাল করে জানতে চিনতে হবে। ফোন করে অবাক করে দেয়ার মত কথা বলবে যেগুলো কারো খেয়াল করার কথা না, জন্মদিনের দিন হ্যাপি বার্থডে উইশ পাওয়া যাবে, কিন্তু কিছুতেই বের করা যাবে না সে কে।

তবে সবসময়ই সব কথার বড় কথা ছিল, ছেলেকে অবশ্যই ভালমানুষ হতে হবে, কারো কোন ক্ষতি করবে না, শুধু দূর থেকে ‘অ্যাডমায়ার’ করে যাবে।

এখন অনেক বড় হয়ে গেছি। এমন কত কি ভাবতাম মনে করে হাসি পেয়ে যায়।

(শেষের একটা লাইন আমি তুলে নিলাম। আমার এক বড় ভাইয়ের একটা মন্তব্য পেয়ে, যেটা এখানে করা হয়নি, আলাদাভাবে পেয়েছি, মনে হয়েছে হয়তবা শেষ লাইনটা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে যেটা কিনা আমার ভাবনার সাথে মিলবে না। ভাইয়াকে ধন্যবাদ। এবং তাকে জানিয়ে রাখছি আমি আসলেই একজনের মনোযোগ নিয়েই খুশি থাকতে পারি। আমি চাই যেন একজন গুণী মানুষ হই আর সবাইকে যেন গুণ দিয়ে জয় করতে পারি, সবার সম্মান পেতে পারি। এর বেশি কিছু না।)

Monday, December 28, 2009

যদি অন্য কিছু হত!

ছেলেটার পাশের বাড়িতে থাকত মেয়েটা। অনেকদিনের প্রতিবেশী। ছোট থেকে তারা বড় হয়েছে এখানেই। ছেলেটার চোখে তখন নানা রঙের স্বপ্ন, জীবন জীবিকা প্রেম ভবিষ্যত এবং হয়ত আরো অনেক কিছু নিয়ে। বহুদিনের পরিচিত কমবয়সী মেয়েটার বাড়াবাড়ি আগ্রহ, অহেতুক কাছ ঘেঁষা তাই তেমন করে লক্ষ্যই করেনি সে। বা করলেও গুরুত্ব দেয়নি। একদিন হঠাত করে একটা চিরকুট হাতের মধ্যে গোঁজা পেয়ে তাই খানিকটা অবাক এবং খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়ল ছেলেটা। সরু করে অল্প যে কয়টা লাইন লেখা ছিল সেগুলোতে একটু অনুরোধ ছিল মেয়েটার বড় হবার জন্য অপেক্ষা করার, অনেকটা অনুনয় ছিল তার সমস্ত জমানো ভালবাসা অকুণ্ঠচিত্তে গ্রহণ করার। ছেলেটা আঁকাবাঁকা লেখাগুলোতে কয়েকবার নজর বুলালো। খানিক ভাবল। তারপর হেঁটে গেল পাশের বাড়ির দরজায় মেয়েটাকে কিছু বলার জন্য। সেই পুরানো জবাব, মেয়ে আমি তো অপেক্ষা করে থাকতে পারব না তোমার জন্য, আমার সামনে অবারিত সম্ভাবনা, তুমি ছোট হতে পার কিন্তু আমি তো বড় হয়েছি, জীবনকে আমি বুঝতে পারি। ভেবো না, আর একটুও দুঃখ কোরো না, তুমি অনেক ভাল থাকবে, দারুণ একটা জীবন হবে তোমার, দেখো তোমার এই ক্ষণিকের মোহ কেটে যাবে কিছুদিনেই কারণ একদিন মানুষ আগের ভাললাগাগুলো ভুলে যায়। এরপর সেই পুরানো প্রতিক্রিয়া, মেয়েটার অঝোর ধারায় কান্নাকাটি, প্রত্যাখ্যাত মনের ভার; কিছু না করতে পেরে ছেলেটারও একটু অপরাধবোধ।

কিছুদিন গড়ালে পরিচিত শহর ছাড়ে ছেলেটা। কাজের সন্ধানে জীবিকার তাগিদে স্বপ্নকে বাস্তব করার তাড়নায় অচেনাদের ভীড়ে দূরের নগরে জীবন শুরু করে। এভাবে অনেক দিন কেটে যায়। কিন্তু এখানেও সেই পুরানো গল্প। থেকে থেকে তার মনে পড়ে ফেলে আসা বাড়ি, মা বাবা, বন্ধুরা, আর সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে চিরকুট আর মেয়েটাকে। তার অনুভব হতে থাকে পেছনে ছেড়ে আসা শহর আর মানুষের কাছে তার প্রাণ বাঁধা পড়ে আছে। হঠাৎ করেই সে বুঝে ফেলে তাকে আসলে সেই মেয়েটার কাছে ফিরে যেতে হবে। বাড়ির পথ ধরে ছেলেটা। খুঁজে পাওয়ার আনন্দ আবার সেই সাথে হারিয়ে ফেলার আশংকা বুকে নিয়ে এবার দৌঁড়ে যায় পাশের বাড়ির দরজায়, যদি সব আগের মত ঠিক না থাকে? শেষ পর্যন্ত তাই হল। এবার মেয়েটার কাছ থেকে তাকে জানতে হল, একদিন সবাই সব কিছু ভুলে যেতে পারে, তাই ছেলেটারওসব ভাবনা একদিন বদলে যাবে, মেয়েটাকে না পাওয়া নিয়ে আর কোন দুঃখবোধ থাকবে না।



কিছুদিন ধরে একটা অদ্ভুত ইচ্ছা হচ্ছে। যদি একটা কিছু ঘটত খুব নাটকীয়! যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমি সাদা না কালো মত দিতে পারি না, আমাকে ধূসর রঙ বেছে নিয়ে বসে থাকতে হয়, এবং অন্য কাউকে আমার হয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হয়, তাই বের করে নিতে পারছি না ঠিক কি ঘটার জন্য এত লোভ হচ্ছে। তারপরও ভাবছি আমি নিজে বা কেউ কিছু একটা করে বসত, যেটাতে আমার অনেক গুছানো হিসাব নিকাশ বদলে যাবে। আর সেই বদলটা অবশ্যই হবে একেবারেই ধনাত্মক। মাঝে মাঝে যখন মনে হয় হাতের খুব কাছের কোন কিছুকে আমি এড়িয়ে যাচ্ছি কেবল চোখ খুলে তাকাচ্ছি না বলে, তখন আর কেউ কিছু করে দিক এমন ইচ্ছাটা করে। যেভাবে করে সবকিছু হচ্ছে তাকে দুম করে পালটে একটা অন্য কিছু করে দিতে পারলে কেমন হত? এমন কিছু যেটা কখনো ধারণা করি নি। জানি না জীবনে ঘোলা দৃষ্টির ভুলে বা বোকা চিন্তার শিকার হয়ে কখনো মূল্যবান কিছু হারিয়ে গেছে কিনা। যদি হারিয়েই থাকে তবে পরে কখনো সেটা টের না পেলেই ভাল।

গল্পটা কনওয়ে টুইটির ‘ডোন্ট ক্রাই জোনি’ গানের। ভাল লাগা গানটা অনেকেরই শোনা। লিংক দিতে গিয়ে আমি ভুল করে ফেলি বলে আর দেয়া হল না।